না চাইলেও তুই আমার !! Part- 28
পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মিরা আর মিহান ফ্রেশ হয়ে নিচে যায়। সবাই মিরা আর মিহানের জন্য ব্রেকফাস্ট টেবিলে অপেক্ষা করছিলো। সবাই খাওয়া শুরু করলে মিরা ওর মামুকে বলে।
মিরা : মামু আমি ইমেইলে মালয়েশিয়ার অফিসের ম্যানেজারকে সব দ্বায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছি। আমরা কবে না কবে যাবো তার ঠিক নেই।
মামু : ভালো করেছিস।
সেজুথি আন্টি : মিরা তোমরা না কি আজ চলে যাবে?
মিরা : হ্যা মামনি।
নানু : কাল এলি আর আজই চলে যাবি?
নানা : আজকে তোরা থেকে যা। তোর সাথে আমার এখনো কত কথা বাকি আছে।
পাপা : মিরা, মিহান তোমরা না হয় আজ থেকে যাও। আমি তোমাদের মম আর অনু চলে যাই। আমার মিটিং আছে না হলে আমিও থেকে যেতাম।
মিহান : ঠিক আছে পাপা কিন্তু আমাকে একবার হসপিটালে থেকে ঘুরে আসতে হবে। মিরাও তো অফিসে যাবে।
মামা : দুজনে কাজ শেষ হলে সোজা আমাদের বাড়িতে চলে আসবে।
সবাই আরো কিছুক্ষন কথা বলে যে যার মত খেয়ে উঠে পরে। মিরা আর মিহান যে যার কাজে চলে যায়। খান বাড়ির সবাই ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে গেছে। মিরার নানু আজ হুকুম দিয়েছে তার দুই বৌমার উপর মিরার পছন্দের খাবার তৈরি করার। অবশ্য মিরা আর দুই মামার পছন্দ প্রায় এক। মিথি আর নিশু মিরার দুই মামিকে রান্না করতে সাহায্য করছে। রান্না করতে করতে মামি সেজুথি আন্টিকে বলে।
মামি : শুভর বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার চার পাঁচ দিন পর মিরা আর মিহান এসেছিল এ বাড়িতে। আমি মনে করছি সবার সাথে দেখা করতে এসেছে কিন্তু না সে এসেছিল তোমার খোঁজে। কি পাকা মেয়ে ভাবো নিজের বিয়েতে শর্ত দেয়, ভাইয়া বিয়ে না করলে ও বিয়ে করবে না।
সেজুথি আন্টি হেসে দিয়ে বলে।
সেজুথি আন্টি : তা যা বলেছো। না হলে কেউ বরকে পাগল ডাক্তার বলে। আচ্ছা কাল নবীনের সাথে মিরার কি হয়েছিল।
মামি গোমড়া মুখ করে বলে।
মামি : আপু তুমি তোমার দেবরের কথা আমাকে জিজ্ঞাসা করবে না।
সেজুথি আন্টি : কেনো কি হয়েছে?
নিশু মুখ টিপে হেসে বলে।
নিশু : আসলে হয়েছে কি বড় মা। বাবা বিয়ের আগে অনেকগুলো গার্লফ্রেন্ড ছিলো তা বাবা বিয়ের পর মাকে কিছু বলেনি কিন্তু মিরা আপু সব ফাঁস করে দিয়েছে মায়ের কাছে।
সেজুথি আন্টি : হা হা হা। মিরাকে দেখে তো বোঝা যায় না ও যে এত দুষ্টু।
মিথি : আমিও বাবার কাছে শুনেছি আপু না কি ছোট বেলায় প্রচুর দুষ্টুমি করতো।
এরকম আরো অনেক কথা বলতে বলতে রান্না করতে থাকে।
মিহান কাজ তাড়াতাড়ি শেষ এক গুচ্ছ গোলাপ নিয়ে মিরার অফিসে চলে আসে। একটু এগিয়ে একটা মেয়েকে দেখে বলে।
মিহান : Excuse me!
মেয়েটি : Yeah.
মিহান : আপনাদের মিরা মেমের সাথে দেখা করা যাবে?
মেয়েটি : মেম তো এপারমেন্ট ছাড়া কারো সাথে দেখা করে না। আপনি এপারমেন্ট নিয়ে এসেছেন।
মিহান উদাসীন ভাবে উত্তর দেয়।
মিহান : না তো।
এরমধ্যে আর একটা মেয়ে এসে মেয়েটাকে বলে।
অন্য মেয়েটি : মৌ কে রে ছেলেটা?
মৌ : মেমের সাথে দেখা করতে এসেছে। তুই কিছু বলবি রিয়া?
রিয়া : হ্যা তুই এখানে কি করছিস মেমের মিটিং শেষ করে তোকে এখানে দেখলে আর দেখতে হবে না। কিছুক্ষনের মধ্যেই মিটিং শেষে হবে।
মৌ : ঠিক বলছিস। এই যে আপনি এখন আসুন কেমন। মেম দেখলে আর দেখতে হবে না। না জানি কি করে বসে।
মিহান ওদের কথা শুনে মুচকি হাসি দেয়। মেয়ে দুটো চলে যেতে যেতে কিছু কথা বলে তা মিহানের কানে আসে।
রিয়া : ছেলেটা কি handsome রে।
মৌ : তা ঠিক বলেছিস।
রিয়া : আমি তো দেখেই ক্রাশ খাইছি। একদম নায়কের মত দেখতে।
মৌ : পরে কথা বলছিস এখন কাজে চল।
মিহান ওখানে দাঁড়িয়ে সব কাজ করা দেখতে থাকে। পাঁচ মিনিটের মাথায় মিরা লিফট থেকে বের হয়ে ওর কেবিনের দিকে হাঁটা শুরু করলে মিহান পিছন থেকে মিরাকে ডাক দেয়।
মিহান : মিরা!
সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। সবাই ভাবছে না জানি ওদের মেম কি করে বসে। মিরা পিছনে ফিরে মিহানকে দেখে মিষ্টি হাসি দিয়ে মিহানের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলে।
মিরা : কখন এসেছো তুমি? এই বুঝি তোমার সারপ্রাইজ?
মিহান : একটু আগে এসেছি। আর এটা তোমার সারপ্রাইজ না। সারপ্রাইজ সন্ধ্যায় পাবে।
মিরা মিহানের হাতের দিকে তাকিয়ে ফুলগুলো দেখে বলে।
মিরা : ফুলগুলো কি আমার জন্য?
মিহান একটু ভাব নিয়ে বলে।
মিহান : না তোমার জন্য না। এগুলো আমার বউয়ের জন্য।
মিহানের কথা শুনে মিরা মুচকি হেসে বলে।
মিরা : দিয়ে দেও তোমার বউকে।
মিহান হেসে মিরার হাতে ফুল দিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে।
মিহান : ভালোবাসি বউ নিজের থেকেও বেশি।
মিরা : কেবিনে চলো। তোমাকে বেশিক্ষণ বাইরে রাখা যাবে না। যেখানে সেখানে তুমি শুরু হয়ে যাও।
মিহান : কাজ শেষ তোমার? আর কিছু বাকি নেই?
মিরা : না। শেষ কাজ এখনি যাবো। একটু ওয়েট করো ব্যাগ নিয়ে আসছি।
মিহান কিছু না বলে সবার সামনে মিরাকে কোলে তুলে নেয়।
মিরা : মিহান এটা অফিস। নামাও আমাকে কোল থেকে।
মিহান : তো কি হয়েছে? ডেনি?
ডেনি : Yeah Sir.
মিহান : মিরার ব্যাগ, ফাইল, ল্যাপটপ যা কিছু আছে তুমি চৌধুরী বাড়ি নিয়ে যাও। আমার আর মিরার আসতে দেরি হবে।
ডেনি : ওকে স্যার।
মিহান হাটা শুরু করলে মিরা বলে।
মিরা : কিন্তু আমরা কোথায় যাচ্ছি?
মিহান : প্রেম করতে।
মিরা মিহানের কথা শুনে মুচকি হেসে গালা জড়িয়ে ধরে মিহানের বুকে মাথা রাখে। মিহান মিরাকে নিয়ে বেরিয়ে গেলে অফিসের সবাই হা করে তাকিয়ে থাকে। ডেনি ওদের অবস্থা বুঝতে পেরে বলে।
ডেনি : হা করে কি দেখছো সবাই কাজে মন দেও।
মৌ নামের মেয়েটি ডেনিকে বলে।
মৌ : ডেনি স্যার। উনি মিরা মেমের কি হয়?
ডেনি : কেনো কিছু হয়েছে?
মৌ : আসলে উনি এসে আমাকে বলেছিল মেমের সাথে দেখা করতে চায় কিন্তু মেম তো এপারমেন্ট ছাড়া কারো সাথে দেখা করে না। তাই আমি উনাকে না করে দেই।
ডেনি হাসি মুখে বলে।
ডেনি : উনি তোমাদের মেমের বর। ডাক্তার মিহান চৌধুরী।
মৌ অবাক হয়ে বলে।
মৌ : মেমের বিয়ে হয়ে গেছে?
ডেনি : পারিবারিক ভাবে বিয়ে টা হয়েছে। এখনো অনুষ্ঠান হয়নি। তাই তেমন কেউ জানে না। আর তুমি চিন্তা করো না মিহান স্যার হয়তো তোমার সাথে মজা করছে। মিহান স্যার খুব ভালো মানুষ।
মৌ : ঠিক আছে। আমি এখন কাজে যাচ্ছি।
খান বাড়িতে অনামিকা, মিরার ফুপি আর দাদি একসাথে বসে মিরার বিষয়ে কথা বলছে।
দাদি : মিরা চৌধুরী বাড়িতে যে ভালো আছে তা ওকে দেখেই বোঝা যায়।
অনামিকা : হুম মা। আমি তো আর মা হতে পারলাম না। ও যে একটা নতুন মা পেয়েছে এতেই খুশি আমি।
দাদি : মিরাকে ওর শ্বশুরবাড়ির সবাই খুব ভালোবাসে।
ফুপি : কিন্তু ও তো আমাদের সাথে ঠিক করে কথা বলে না। কিছু জিজ্ঞাসা করলে হা বা না ছাড়া কিছুই বলে না।
দাদি : সব ঠিক হয়ে যাবে চিন্তা করিস না।
অনামিকা : আমি চিন্তা করছি মিরাকে কিছুদিন আমাদের বাড়িতে এসে থাকতে বলবো। আপনি কি বলেন মা?
দাদি : আমি কি বলবো? এটা মিরার বাড়ি মিরা যখন খুশি আসবে এতে বলার কি আছে।
অনামিকা : তাহলে আমি সব ব্যবস্থা করে ফেলছি।
মিহান মিরাকে গাড়িতে বসিয়ে নিজে ড্রাইভ করতে শুরু করে।
মিরা : আমরা এখন কোথায় যাবো?
মিহান : তোমার মামা বাড়ি যাবো।
মিরা : অফিসে সবার সামনে কোলে নিয়ে আসার কি দরকার ছিল?
মিহান : আমি আমার বউ কে কোলে নিয়েছি তাতে তোমার কি?
মিরা ভেংচি কেটে বাইরে তাকিয়ে থাকে। মিহান এক নজর মিরাকে দেখে হেসে দেয়।
মিহান : পিছনের সিটে শপিং ব্যাগ আছে। তোমার জন্য একটা কালো রঙের শাড়ি আছে।আজ বিকালে তুমি শাড়িটা পড়ে রেডি হয়ে থেকো।
মিরা : কেনো কোথায় যাবো আমরা?
মিহান : বললাম না সারপ্রাইজ।
মিরা : কোন ঘোড়ার সারপ্রাইজ দেবে তুমি?
মিহান : যাইহোক শোনো কিছু খাবে এখন?
মিরা : আইসক্রিম খেতে পারি।
মিহান : তুমি গাড়িতে বসো আমি নিয়ে আসছি।
মিহান গাড়ি থেকে নামলে মিরা বলে।
মিরা : এই শোনো অনেকগুলো আনবে কিন্তু।
মিহান : ওকে জান।
মিহান কিছুক্ষণ পর হাতে দুই ব্যাগ ভর্তি করে আইসক্রিম নিয়ে আসে।
মিহান : এই নাও তোমার আইসক্রিম। এত আইসক্রিম দিয়ে কি করবে?
মিরা মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে।
মিরা : মামু আর মামাকে দেখিয়ে দেখিয়ে খাবো।
মিহান অবাক হয়ে বলে।
মিহান : কী?
মিরা : ও তুমি বুঝবে না। তুমি গাড়ি চালাও।
মিহান মিরার কথা না বুঝে গাড়ি চালাতে শুরু করে দেয়।
চলবে… 🍁