না চাইলেও তুই আমার

না চাইলেও তুই আমার !! Part- 27

মামুর অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিয়ে হয়ে যায়।বিয়ে সময় মামু মেয়ের নাম শোনেনি। মেয়ে অন্য রুম থেকে কবুল বলেছে। পরে মিরা ওর মামুকে সেজুথির সম্পর্কে সব কিছু খুলে বলে। মামু তার ভুল বুঝতে পেরে সেজুথির কাছে ক্ষমা চায়। সেজুথি প্রথমে অভিমান করে থাকলেও পরে ক্ষমা করে দেয়। মিরা চৌধুরী বাড়ির সবাই, মামু, সেজুথি আন্টি সবাইকে মিরার নানু বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। মিরা আগেই ফোন করে মামাকে সব বলে রেখেছে। মিহান মিরাকে নিয়ে ঘুরতে চলে যায়। মিহান মিরাকে ঢাকা থেকে একটু দূরে নিয়ে আসে একটা নদীর পারে। দুপুরে পাশের একটা রেস্টুরেন্টে খেয়ে নেয়। মিহান মিরাকে সাথে নিয়ে নৌকা বিকাল পর্যন্ত ঘুরা ঘুরি করে। মিরা,মিহাননের ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যার পর হয়ে যায়। মিরা ওর নানা বাড়ি গিয়ে ডোল বেল বাজালে মিথি দরজা খুলে দেয়।

মিথি : এতক্ষণে আসার সময় হলো তোমাদের?
মিহান : তাড়াতাড়ি তো এসেছি।
মিথি : তোর সাথে কথা বলা আর না বলা সমান। ভাবী তুমি চলো আমার সাথে।
মিরা হল রুমে এসে দেখে খান বাড়ির সবাই এসেছে এখানে। মিরা ওর বাবা আর দাদাকে দেখে মনে মনে বলে।
মিরা : নিলয় খান আর আজিজ খান তো এখানে আসার কথা না তাহলে?
মিরাকে দেখে ওর মামা এগিয়ে আসে।
মামা : সারাদিন জামাইয়ের সাথে প্রেম করলে চলবে! আমরা তো কখন থেকে তোদের জন্য অপেক্ষা করছি।
মিরা : আমাদের জন্য অপেক্ষা করছো কেনো? বর বউ আগেই পাঠিয়ে দিয়েছি।
মামা : তাই বলে সারাদিন বরের সাথে ঘুরবি?
মিরা : আমি তো আমার বরের সাথে ঘুরতে গেছিলাম আর তুমি কি করো বলবো মামিকে?
মামা ঘাবড়ে গিয়ে বলে।
মামা : কি বলবি?
মিরা ওর মামির দিকে তাকিয়ে বলে।
মিরা : মামি তোমার বর প্রতিদিন মনিং ওয়াক যাওয়ার নাম করে পাশের বাসার আন্টির সাথে ঘুরতে যায়।

মামা হা করে মিরার দিকে তাকিয়ে আছে এইভাবে তাকে ফাঁসিয়ে দিলো।
মামি : দাঁড়াও তোমার মনিং ওয়াকে যাওয়া বের করছি।
মিরা : মামি তুমি কি দেখে যে মামাকে বিয়ে করলে? তোমার সাথে মামার কোনো তুলনা হয় না কি।
মামি রেগে বলতে থাকে।
মামি : শোনো আজ থেকে তোমার সব বন্ধ। আমার কথার বাইরে গেছো তো আমি ছেলে মেয়েদের নিয়ে সোজা বাপের বাড়ি চলে যাবো। তখন থেকে তোমার গার্লফ্রেন্ডদের নিয়ে।
মামি রেগে কিচেনে চলে গেলে সবাই জোরে হেসে দেয়। মামা করুন চোখে মিরার দিকে তাকিয়ে থাকে। মিরা মুচকি হেসে বলে।
মিরা : লাগবে আর আমার পিছনে পিচ্চি মামা? আমি আগেই বলেছি তোমার ভালো থাকার দিন শেষ। এখন যাই আমি আর আমার বর ফ্রেশ হয়ে আসি।
নিশু : আপু চলো আমি তোমাদের রুম দেখিয়ে দিচ্ছি।
মিরারা ফ্রেশ হয়ে এসে সবার সাথে আড্ডা দিতে বসে যায়। আড্ডার এক পর্যায়ে মিরার নানু ওদের ডিনারের জন্য ডাক দেয়। ডিনার টেবিলে বেশীর ভাগই মাছের রেসিপি দেখে অনু বলে।
অনু : মম!
মম : জানি! তুই আর মিরা আমার পাশে এসে বস।
মিরা : মম আমি মাছ খাবার না। তুমি অনুকে খাইয়ে দেও।
মামি : কি হয়েছে ভাবী?
মম : কি আর হবে। আমার দুই মেয়ের একজনও কাটা বেছে খেতে পারে না তাই মাছের থেকে এরা দুজন দুশো হাত দূরে থাকে। আমি যদি এদের কাটা বেছে না খাইয়ে দেই না হলে কখনো মাছ ছুঁয়েও দেখবে না।

মামি হেসে দিয়ে বলে।

মামি : এর জন্য দুজন মম মম করছে।

মম : হুম। মিরা অনু আমার পাশে বস আমি খাইয়ে দিচ্ছি।

অনু : হুম।

মম মিরা আর অনুকে খাইয়ে দিতে শুরু করে। শুভ মিরাকে জিজ্ঞাসা করে।

শুভ : আপু তুমি মালয়েশিয়া তে তুমি মাছ খেতে না?

মিরা : কেনো খাবো না। আমি তো কাটার জন্য মাছ খেতে ভয় পাই।

নিশু : তাহলে?

মিরা : মামু খাইয়ে দিতো। প্রতিদিন রাতে মামু আমাকে খাইয়ে দিতো আর আমি মামুকে। ছুটির দিনে মামুর আমার পছন্দের রেসিপিগুলো রান্না করতো আর আমি মামুর পছন্দের।

নিধি : ঘুরতে যেতে না?

মিরা : আমি কখনো মামুকে ছাড়া কোথাও ঘুরতে যাইনি।

কথা বলতে বলতে খাবার পর্ব শেষ করে সবাই। বড়রা খেয়ে যে যার মত চলে যায়। বাড়ির ছোটরা সবাই আড্ডা দিতে ছাদে চলে যায়। শুভ গিটার নিয়ে এসেছে গান গাওয়ার জন্য। কম বেশি সবাই গান গেয়েছে। সবাই মিহানকে গান গাওয়ার জন্য জোর করছে।

মিশু : এবার জিজু তুমি একটা গান শোনাও প্লিজ।

নীলা : হ্যা জিজু মিশু ঠিক বলেছে। এবার তুমি একটা গান শোনাও।

মিহান : আমার গান তো তোমরা যখন খুশি শুনতে পাবে। আজ বরং আমার জান তোমাদের গান শোনাবে।

মিরা : কি বলছো আমি আর গান! তুমি গাও না প্লিজ।

মিহান : না তুমি কি বলেছিলে মনে আছে। পরেরবার তুমি আমাকে গান শোনাবে।

নিঝুম : প্লিজ আপু।

অনু : প্লিজ ভাবী রাজি হয়ে যাও না।

মিরা নিঃশ্বাস নিয়ে বলে।

মিরা : ঠিক আছে। কিন্তু আমি অল্প কয়টা গান জানি। কিছুদিন আগে মিহান আমাকে যে গান শুনিয়েছিল সেটাই গাইছি।

শুভ : ঠিক আছে শুরু করো।

মিরা : মিহান তুমি গিটার বাজাবে। ঠিক আছে?

মিহান হাসি মুখে বলে।

মিহান : ওকে জান।

মিহান গিটার বাজানো শুরু করলে মিরা চোখ বন্ধ করে গান গাইতে শুরু করে।

মিরা :

ভালোবেসে, সখী, নিভৃতে যতনে,
আমার নামটি লিখো তোমার
মনের মন্দিরে।

আমার পরানে যে গান বাজিছে,
তাহার তালটি শিখো, তোমার
চরণমঞ্জীরে।

ধরিয়া রাখিয়ো সোহাগে আদরে,
আমার মুখর পাখি তোমার
প্রাসাদপ্রাঙ্গণে।

মনে ক’রে সখী, বাঁধিয়া রাখিয়ো,
আমার হাতের রাখী তোমার
কনককঙ্কণে।

আমার লতার একটি মুকুল
ভুলিয়া তুলিয়া রেখো, তোমার
অলকবন্ধনে।

আমার স্মরণ শুভ সিন্দুরে
একটি বিন্দু এঁকো তোমার
ললাটচন্দনে।

আমার মনের মোহের মাধুরী
মাখিয়া রাখিয়া দিয়ো, তোমার
অঙ্গসৌরভে।

আমার আকুল জীবনমরণ
টুটিয়া লুটিয়া নিয়ো তোমার
অতুল গৌরবে॥

সবাই হা হয়ে মিরার দিকে তাকিয়ে আছে। মিরা চোখ খুলে মিহানের দিকে তাকায়। মিহান মুগ্ধ নয়নে মিরার দিকে তাকিয়ে আছে। সবার হাতের তালি শব্দে ঘোর কাটে মিরা মিহানের।

নিধি : অসাধারণ হয়েছে আপু।

নিশু : একদম প্রফেশনালদের মত তোমার কন্ঠটা।

অনু : দেখতে হবে না ভাবী টা কার।

মিরা মুচকি হেসে মিহানের দিকে তাকিয়ে থাকে ওর থেকে কিছু শোনার আশায়।

অনু : ভাইয়া তুই কিছু বলবি না ভাবীকে?

মিহান হেসে বলতে শুরু করে।

মিহান : তার রূপে অনেক আগেই হয়েছি আমি বাকরুদ্ধ। নতুন করে তার কন্ঠস্বরের প্রেমে পড়েছি, নেই কোনো ধদ্ধ!

মিহানের কথা শুনে মিরা লজ্জা পেয়ে বলে।

মিরা : আমার বড্ড ক্লান্ত লাগছে। তোরা ইনজয় কর আমি রুম যাচ্ছি।

মিরা উঠার আগেই মিহান উঠে মিরার হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে এসে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে।

মিহান : গাইস কাল সকালে দেখা হবে। আমি যাই আমার বউয়ের সাথে ঘুমতে।

এই বলে মিহান মিরাকে সবার সামনে কোলে তুলে নেয়। সবাই জোরে হেসে দেয়। মিরা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলে।

মিরা : মিহান কি করছো ছোট ভাই বোনদের সামনে?

মিহান ওদের দিকে তাকিয়ে বলে।

মিহান : বড়দের থেকে ছোটোরা শেখে। তো আমার শালারা তোমাদের কি আরো ভালো করে বুঝতে হবে?

আরিফ হেসে মিহানকে বলে।

আরিফ : না জিজু আমরা বুঝে গেছি।

বলে নীলাকে কোলে তুলে নেয়। জারিফ নিধিকে কোলে তুলে নেয়। শুভ মিথিকে কোলে তুলে নেয়। মিহান ওদের এক নজর দেখে মিরার দিকে তাকিয়ে বলে।

মিহান : চলো জান আমার না খুব ঘুম পেয়েছে।

মিরা একটু হেসে মিহানের গালা জড়িয়ে ধরে। একে একে সবাই চলে গেলে নিঝুম বলে।

নিঝুম : আমাদের কবে যে বিয়ে হবে?

নিশু, মিশু, অনু হেসে দেয় নিঝুমের কথা শুনে।

মিহান মিরাকে বেডে শুইয়ে দিয়ে ডোর লক করতে যায়। মিরা উঠে বসে মিরাকে বলে।

মিরা : তুমি আমাকে সবার সামনে কোলে করে আনলে কেনো?

মিহান বেডে বসতে বসতে বলে।

মিহান : আমার বউয়ের সাথে যা ইচ্ছে তাই করবো তাতে তোমার কি?

মিরা : তুমি দিন দিন ফাজিল হয়ে যাচ্ছে সেটা তুমি জানো?

মিহান মিরাকে বুকে জড়িয়ে ধরে মুচকি হেসে বলে।

মিহান : আই নো জান! এবার ঘুমাও কাল তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে।

মিরা মাথা তুলে বলে।

মিরা : কি সারপ্রাইজ?

মিহান : সেটা কাল জানতে পারবে। এবার ঘুমাও।

মিরা মিহানের কথা শুনে মিহানকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে।

চলবে… 🍁