না চাইলেও তুই আমার

না চাইলেও তুই আমার !! Part- 26

পরের দিন বিকালে সেজুথি আন্টির বাড়িতে মিরা আর মিহান যায়। ডোর বেল বাজালে বাড়ির কাজের লোক হল রুমে বসতে বলে বাড়ির লোক ডাকতে যায়। দশ মিনিটের মধ্যে হল রুমে সবাই এসে যায়। সেজুথি আন্টি, তার মা, সিরাজ, নিতু এবং তাদের ছেলে সজীব। মিরাকে দেখে নিতু অবাক হয়।
সেজুথি আন্টির মা : তোমরা কে তোমাদের কি চিনলাম না তো?
মিরা : আমি মিরা চৌধুরী। আমার বর মিহান চৌধুরী।
সিরাজ : তুমি মিরা?
সেজুথি আন্টির মা : তুই চিনিস না কি ওদের?
নিতু : মা ও,,,,,
নিতুকে কিছু বলবে না দিয়ে মিরা বলে।
মিরা : নানু তোমার সাথে আমার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা ছিলো।
সেজুথি আন্টির মা : কি কথা?
মিরা : নানু তুমি বোধহয় জানো তোমার মেয়ে মানে সেজুথি আন্টি একজনকে খুব ভালোবাসতো?
সেজুথি আন্টির মা : হ্যা ও তো বলেছিল ওর বাবা আর আমাকে। সেই ছেলেটা না কি ওকে ভুল বুঝে ছেড়ে চলে যায়। কিন্তু তুমি এসব কথা জানো কি করে?
মিরা : তোমরা সে ছেলের নাম বা বাড়ির ঠিকানা কিছু জানতে?
সেজুথি আন্টির মা : না! আমরা বারবার জানতে চেয়েছি ও কখনো কিছু বলেনি।
মিরা : নানু তোমার মেয়ে যাকে ভালোবাসতো সে তোমার বৌমার বড় ভাই ফাহিম আহামেদ।
সবাই চমকে উঠে মিরার কথা শুনে।
সিরাজ : কি!
নিতু : ভাইয়া!

সেজুথি আন্টির মা : কি বলছো এসব?
মিরা : যা সত্যি তাই বলছি।
সেজুথি আন্টির মা : সেজুথি এই মেয়েটা কি বলছে? এটাকি সত্যি?
সেজুথি আন্টি : হুম। মিরা সত্যি কথা বলছে। আমি আর ফাহিম একে অপরের ভালোবাসতাম।
সেজুথি আন্টির মা : কি বলছিস আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
মিরা : আমি বলছি বাকিটা । ফাহিম আহামেদ আমার মামু। সেজুথি আন্টি আর মামু একে অপরের ভালোবাসতো। মামু তার বোন আর বোনের স্বামী যখন ডিভোর্স হয়ে যায় তখন তার বোনের সাথে তোমার ছেলের সাথে বিয়ে হয়।মামু মনে করে তোমার ছেলের জন্য তার বোন আর বোনের স্বামীর ডিভোর্স হয়েছে। এর জন্য মামু সেজুথি আন্টিকে ভুল বুঝে তাকে ছেড়ে চলে যায়।
সেজুথি আন্টির মা চোখে পানি নিয়ে মিরার দিকে তাকিয়ে বলে।
সেজুথি আন্টির মা : তুমি সেই মিরা যার জন্য ফাহিম সব ছেড়ে চলে গেছিলো?
মিরা : হ্যা।
সেজুথি আন্টির মা : তুই আমাদের এসব কথা আগে কেনো বলিসনি। তুই এত কিছু আমাদের থেকে লুকিয়ে গেলি কেনো?
মিহান : আমার মনে হয় সেজুথি আন্টি আপনাদের ভালোর কথা ভেবে এসব কিছু লুকিয়ে গেছে।
সিরাজ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। শুধু তার কতগুলো জীবন নষ্ট হয়ে গেছে সে ভেবে পাচ্ছে না।
মিরা : ওসব কথা এখন থাক। আমি চাচ্ছি মামুর সাথে সেজুথি আন্টির বিয়ে দিতে। সে জন্য আমরা এখানে এসেছি।
সেজুথি আন্টির মা : আমি কি বলবো। আমার সে মুখ কি আছে। আমার ছেলের জন্য শুধু আমার মেয়েকে জীবন নয়, তোমার জীবন, তোমার মামুর জীবন নষ্ট হয়ে গেছে। আমার ছেলের জন্য সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে তোমার।
মিরা : আমি এসব কথা ভুলে গেছি। তুমি যদি বিয়েতে রাজি থাকো তাহলে কালকে বিয়েটা হবে।

সেজুথি আন্টির মা : আমার কোনো আপত্তি নেই। আমার মেয়ের আমার সংসারে সুখ শান্তির জন্য এতদিন চুপ করে ছিলো। আমি মা হয়েও মেয়ের কষ্ট বুঝতে পারি নি। এখন ও যদি ফাহিম কে বিয়ে করে সুখে থাকে তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই।
মিরা : তাহলে আমি কালকে বিয়ের ব্যবস্থা করে ফেলছি।
সেজুথি আন্টির মা হাসি মুখে বলে
সেজুথি আন্টির মা : তাহলে শুভ কাজের আগে মিষ্টি মুখ করতে হয়। তোমরা বসো আমি মিষ্টি নিয়ে আসছি।
সেজুথি আন্টির মা চলে গেলে মিরা গিয়ে সেজুথি আন্টির পাশে বসে বলে।
মিরা : জানো আমি আজ খুব খুশি। তুমি আর মামু এক হতে যাচ্ছো।
সেজুথি আন্টি : তাই বুঝি!
মিরা : হ্যা ভিশন।
সেজুথি আন্টি : তোমার ডাক্তারের সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দেবে না।
মিরা : মিহান এই হলো আমার মামনি মানে তোমারও মামনি। আর মামনি এই এই হলো আমার পাগল ডাক্তার।
সেজুথি আন্টি সাথে মিরা আর মিহান অনেক কথা বলে। মিরা ভুল করেও নিতু, সিরাজের দিকে তাকায়নি। সজীব সব কথা শুনে মাথা নিচু করে ওখান থেকে চলে যায়। মিরা, মিহান তাদের সব কিছু বুঝিয়ে দিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। মিহান চেয়েছিল মিরাকে নিয়ে এখন ঘুরতে যেতে কিন্তু তার আগে মিহানের ফোনে একটা কল আসে।

মিরা : কে ফোন করেছিল?

মিহান : হসপিটাল থেকে।

মিরা : যেতে হবে?

মিহান মুখ গোমড়া করে বলে।

মিহান : হুম।

মিরা : মন খারাপ করো না আমরা না হয় কাল মামুর বিয়ের পর ঘুরতে যাবো।

মিহান : আচ্ছা আমি তোমাকে বাড়ি নামিয়ে দিয়ে যাচ্ছি।

মিরা : ঠিক আছে।

পরেরদিন মিরা ওর মামুকে চৌধুরী বাড়িতে ডাকে। মামু চৌধুরী বাড়ি এসে দেখে মিহান, ওর পাপা আরো দুজন লোক বসে আছে।

মামু : মিহান মিরা কোথায়? আমার সাথে না কি ওর গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।

মিহান : মামু আপনি বসুন। আমি ঢেকে আনছি।

মিরা সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলে।

মিরা : কাউকে যেতে হবে না আমি এসে গেছি।

মামু : মামনি কি এমন কথা বলবি যে এত সকাল সকাল ঢাকলি?

মিরা : বসো বলছি।

মামু বসলে মিরা বলে।

মিরা : আমার আর মিহানের বিয়ের সময় তোমাকে একটা শর্ত দিয়েছিলাম। মনে আছে তোমার?

মামা ঘাবড়ে গিয়ে বলে।

মামু : হুম মনে আছে।

মিরা : আমি তোমার জন্য মেয়ে দেখেছি। আমার তাকে পছন্দ হয়েছে। আমি চাই তুমি তাকে বিয়ে করো।

মামু : কি বলছিস কি তুই।

মিরা : বিয়ের সব ব্যবস্থা করা হয়ে গেছে। একটু পরে তোমার বিয়ে।

মামু : দেখ মা আমি বিয়ে করবো না। তখন আমি তোকে বিয়েতে রাজি করানোর জন্য কথার কথা বলছিলাম।

মিরা : আমি এসব কিছু জানি না। তোমার কথায় আমি মিহানকে বিয়ে করেছি। তুমি যদি এখন বিয়েতে রাজি না হও তাহলে আমি সব ছেড়ে ছুড়ে চলে যাবো।

মামু চিন্তায় পড়ে যায়। মিরা যা জেদি মেয়ে সত্যি যদি চলে যায়। মামু কিছুক্ষন ভেবে বলে।

মামু : আচ্ছা আমি রাজি।

মামুর কথা শুনে সবার ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে।

চলবে… 🍁