না চাইলেও তুই আমার !! Part- 24
নিতুর সাহস হচ্ছে না মিরার সামনে যাবার। কিন্তু এত বছর পর মেয়েকে দেখার লোভ সামলাতে পারছে না নিতু। নিতু এক নজর মিরাকে দেখবে বলে হেটে হেটে হল রুমে চলে আসে। কিন্তু আশেপাশে কাউকে দেখাতে পারছে না। হল রুমে এক কোণে দাঁড়িয়ে থাকে চুপ করে। হঠাৎ করে কারো ফোন বেজে ওঠে শব্দ অনুসরণ করে তাকায় নিতু। পরীর মত সুন্দর একটা মেয়ে নেমে আসছে সিড়ি দিয়ে। মিরা আসছে সিড়ি দিয়ে নেমে। মিরা মামির রুম থেকে বেরিয়েছে নানুর রুমে যাবে বলে তার আগে মিরাকে ওদের মম ফোন করে। মিরা ফোন রিসিভ করে বলে।
মিরা : হ্যা মম বলো।
মম : তোরা কখন আসবি আমি তোর জন্য বিরিয়ানি রান্না করে বসে আছি।
মিরা : আমাদের আসতে একটু দেরি হবে তুমি খেয়ে নাও মম।
মম : আচ্ছা। তাহলে আসার পথে তোর আর আমার জন্য অনু যে চুরগুলো অডার করেছে সেগুলো নিয়ে আছিস।
মিরা : আচ্ছা মম। তুমি চিন্তা করো না আমরা সময় মত বাড়ি পৌঁছে যাবো।
মিরা ফোনে কথা বলতে বলতে ওর নানুর রুমের দিকে চলে যায়। নিতু মিরার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। তিনি এখানো চিনতে পারছেন না এই কি তার মেয়ে মিরা? তিনিও মিরার পিছন পিছন চলে যায় সত্যি টা জানার জন্য। মিরাকে রুমে ঢুকতে দেখে নানু বলে।
নানু : হ্যা রে মিরা আমার এই হিরার টুকরো নাত জামাইকে কোথায় পেয়েছিস তুই।
মিরা হেসে দিয়ে বলে।
মিরা : হসপিটালে।
নানু : মানে?
মিরা : ওর সাথে আমার প্রথম দেখা হয় ওর হসপিটালে।
নানু : জানিস তোর বর আমাকে কয়েকটা ব্যায়াম করিয়ে পায়ের ব্যাথা ভালো করে দিয়েছে।
মিরা মিহানের দিকে তাকিয়ে বলে।
মিরা : মিহান মম ফোন করেছিল। মম তাড়াতাড়ি ফিরতে বলছে।অনু যে চুরগুলো আমার আর মমের জন্য অডার করেছিল সেগুলো ফেরার পথে নিয়ে যেতে বলেছে মম।
মিহান : নানু আজ আমার আসি কেমন।
নানা : মিরা আজ তুই কত বছর পর এ বাড়িতে এসেছিস কিছু না খেয়েই চলে যাবি।
মিরা : নানা আজ যাচ্ছি ঠিকই কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি আমি মামুকে নিয়ে এ বাড়িতে আসবো। মামু আর আমি একসাথে পাত পেরে খাবো। আজ আর বাধা দিও না।
কেউ কিছু বলার আগে নিতু দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলে।
নিতু : মিরা!
কারো গলার আওয়াজ শুনে সবাই দরজার দিকে তাকায়। মিরা সামনে থাকা ব্যক্তিকে চিনতে খুব বেশি অসুবিধা হয়নি। মিরা চোখ মুখ শক্ত করে বলে।
মিরা : মিহান চলো আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে।
নিতু : মিরা মা আমার কেমন আছিস তুই?
মিরা : জ্বী আমাকে কিছু বলছেন?
নিতু : তুই আমার সাথে এভাবে কথা বলছিস কেনো?মিরা : আমার জানা মতে অপরিচিত মানুষের সাথে এভাবে কথা বলতে হয়।
নিতু : কি বলছিস আমি তোর অপরিচিত মানুষ কেনো হতে যাবো আমি তোর মা।
মিরা : আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে আমার যখন পাঁচ বছর বয়স তখন একটা এক্সিডেন্টে আমার বাবা মাকে হারিয়ে ফেলি।
মিরার কথা শুনে নিতু বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চোখের পানি ফেলছে। মিরা সেদিকে না তাকিয়ে মিহানকে বলে।
মিরা : মিহান আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে চলো।
মিহান : চলো।
মিহান আর মিরা সবাইকে বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। নিতু কাঁদতে কাঁদতে নিজের রুমে চলে যায়।নিতুকে কাঁদতে দেখে সিরাজ বলে।
সিরাজ : কি হলো কাঁদছো কেনো?
নিতু কিছু না বলে কাঁদে যাচ্ছে।
সিরাজ : কি হলো বলবে তো?
নিতু : আজ মিরা এসেছিল এই বাড়িতে।
সিরাজ : কখন এসেছে? এখনো কি আছে বাড়িতে?
নিতু : না চলে গেছে আমার সাথে অপরিচিতা মত ব্যবহার করছে। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। এতগুলো বছর পর ওকে কাছে পেয়ে জড়িয়ে ধরতে পারলাম না।
সিরাজ : আমাদের ভুলের জন্য ও এমন ব্যবহার করছে।
নিতু : তুমি তো সব জানো নিলয়ের সাথে বিয়ের পর সব ঠিক ঠাক ছিলো। মিরা যখন পৃথিবীতে আসে তখন থেকে শুরু হয় আমাদের মধ্যে ঝামেলা। নিয়ল ওর ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। ছুটির দিনেও কাজ নিয়ে থাকতো। রাত করে বাড়ি ফেরা। অনেক সময় তো রাতে বাড়িও ফিরতো না। এরপর আমার মনে সন্দেহ বাসা বাঁধতে শুরু করে। কিছু জিজ্ঞাসা করলেও ঠিক মত বলতো না। এরমধ্যে তোমার সাথে আমার পরিচয় হয় ভালো বন্ধু হয়ে উঠি আমরা। তোমার সাথে কথা বললে নিলয় রাগারাগি করতো। এসব ছোট খাটো ঝামেলা করতে করতে এক সময় আমাদের ডিভোর্স টা হয়ে যায়। নিলয় নিজে বলছিল মিরা ওর কাছে থাকবে। আমি আর না করেনি কারণ মিরা সব থেকে বেশী ভালোবাসতো ওর বাবাকে। মিরার জন্য সারাদিন মন খারাপ করে থাকতাম। এরমধ্যে তুমি বাবা মার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেও তারাও রাজি হয়ে যায়। আমার বিয়ের খবর শুনে নিলয়ের বাবা নিলয়েরও বিয়ে ঠিক করে। এরপর তোমার সাথে আমার বিয়ে হয়। নিলয়কে অনেকবার বলেছি মিরাকে আমাকে দিয়ে দেওয়ার জন্য কিন্তু ও না করে দিতো। এরমধ্যে ভাইয়া মালয়েশিয়া থেকে এসে এসব দেখে মিরাকে নিয়ে চলে যায়। আজ কত বছর পর মেয়েকে কাছে পেয়েও একটু আদর করতে পারলাম না।
সিরাজ : কান্না করো না। আল্লাহ উপর ভরসা রাখো তিনি সব ঠিক করে দিবেন।
মিহান গাড়ি ড্রাইভ করছে আর কিছুক্ষণ পর পর মিরাকে দেখছে। মিরার চোখ লাল হয়ে আছে। যেকোনো সময় চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়তে শুরু করবে। মিহান মিরার মনের অবস্থায় বুঝতে পেরে বলে।
মিহান : আমি জানো আজ খুব খুশি।
মিরা : কেনো?
মিহান : বাহ রে আজ তুমি আমাকে নিজে থেকে তুমি করে বলছো।
মিরা অবাক হয়ে বলে।
মিরা : কখন আমি আপনাকে তুমি করে বলেছি?
মিহান : কেনো মনে নেই আসার সময়।
মিরা : ভুলে হয়তো বলে ফেলছি।
মিহান : ভুল করো আর যাই করো এখন থেকে আমাকে তুমি করে বলবে।
মিরা : কিন্তু!
মিহান : দেখো জান আমার রাগ বাড়াবা না। আমার রাগ উঠলে কিন্তু আমি রোমান্স শুরু করে দেবো।
মিরা বিড়বিড় করে বলে।
মিরা : রাগ উঠলে মানুষ মারে, বকে, চেঁচামেচি করে আর এর কি না রোমান্স পায়। আল্লাহ এ আমি কার পাল্লায় পড়লাম।
মিহান : বিড়বিড় করে কি বলো।
মিরা : না কিছু না।
মিহান : যাইহোক জান একটা গান শুনাবে?
মিরা : আমি তো ভালো গান জানি না।
মিহান মন খারাপের অভিনয় করে বলে।
মিহান : অহহহ।
মিরা মিহানের মন খারাপ দেখে ওকে বলে।
মিরা : আপনি বরং আমাকে এখন একটা গান শুনান পরের বার না হয় আমি আপনাকে শুনাবো।
মিহান : আমাকে তুমি করে না বললে তোমার সাথে কথা বলবো না।
মিরা : ঠিক আছে বলছি।
মিহান : হুম বলো।
মিরা জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে বলে।
মিরা : তুমি বরং আমাকে এখন একটা গান শুনাও পরের বার না হয় আমি তোমাকে শোনাবো।
মিহান হাসি মুখে বলে।
মিহান : ওকে জান। পরের বার কিন্তু তুমি আমাকে গান শুনাবে।
মিরা মাথা নেড়ে হ্যা বলে। মিহান এক হাতে ড্রাইভ করছে অন্য হাত দিয়ে মিরার হাত ধরে গান গাইতে শুরু করে।
মিহান :
ভালোবেসে, সখী, নিভৃতে যতনে,
আমার নামটি লিখো তোমার
মনের মন্দিরে।
আমার পরানে যে গান বাজিছে,
তাহার তালটি শিখো, তোমার
চরণমঞ্জীরে।
ধরিয়া রাখিয়ো সোহাগে আদরে,
আমার মুখর পাখি তোমার
প্রাসাদপ্রাঙ্গণে।
মনে ক’রে সখী, বাঁধিয়া রাখিয়ো,
আমার হাতের রাখী তোমার
কনককঙ্কণে।
আমার লতার একটি মুকুল
ভুলিয়া তুলিয়া রেখো, তোমার
অলকবন্ধনে।
আমার স্মরণ শুভ সিন্দুরে
একটি বিন্দু এঁকো তোমার
ললাটচন্দনে।
আমার মনের মোহের মাধুরী
মাখিয়া রাখিয়া দিয়ো, তোমার
অঙ্গসৌরভে।
আমার আকুল জীবনমরণ
টুটিয়া লুটিয়া নিয়ো তোমার
অতুল গৌরবে॥
মিরা মিহানের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মিরা জানে মিহান ওর মন ভালো করার জন্য এসব করছে। মিহানের গান শেষ হয়ে মিরা হাসি মুখে বলে।
মিরা : তুমি তো খুব ভালো গান গাইতে পারো।
মিহান : তেমন কিছু না। কলেজ লাইফে বন্ধুদের সাথে একটু আধটু গাইতাম আর কি।
মিরা : এইটুকে তুমি একটু আধটু বলছো। আমার তো মনে হয় তুমি ডাক্তারি না করে গান টা কে প্রফেশন হিসাবে নিতে পারতে।
মিহান হেসে দিয়ে বলে।
মিহান : গুড জোক।
মিরা : আমি সত্যি বলছি।
মিহান গাড়ি থামিয়ে বাঁকা হেসে বলে।
মিহান : আমার কাছের মানুষ ছাড়া কাউকে আমি গান গেয়ে শুনাইনি। সুতরাং এসব আজেবাজে চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো।আমার ওতো ধৈর্য নেই স্টেজ সো করার। আর আমার ধৈর্য নেই বলে তো তোমার তাড়াতাড়ি আমার বউ করে নিয়েছি। চলো এখন শপিং মলের সামনে চলে এসেছি তোমার আর মমের চুরগুলো নিয়ে আসি।
মিহান গাড়ি থেকে নেমে গেলে মিরা নিজে নিজে বলে।
মিরা : অসভ্য লোক একটা মুখে যা আছে তাই বলে। আমাকে লজ্জায় না ফেললে তো উনার চলে না। অসভ্য একটা।
মিরা গাড়ি থেকে নামলে মিহান মিরার হাত ধরে শপিং মলের দিকে চলে যায়।
চলবে… 🍁