না চাইলেও তুই আমার !! Part- 25
মাঝ রাতে হঠাৎ কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দের মিরার ঘুম ভেঙ্গে যায়। মিরা সোয়া থেকে উঠে মিহানকে না দেখে মনে মনে বলে।
মিরা : মিহান কোথায়? আমি তো ওর বুকের উপর ঘুমিয়ে ছিলাম। এত রাতে আবার কোথায় গেলো। আর কিসের একটা শব্দ হলো না। মিহান ঠিক আছে তো?
মিরা উঠে বারান্দায় দেখে কিন্তু মিহান সেখানেও নেই। রুমে ঢোকার সময় খেয়াল করে ওয়াশরুমের আলো জ্বলছে। মিরা দরজা নক করে বলে।
মিরা : মিহান তুমি কি ওয়াশরুমে?
ভিতর থেকে কোনো সারা শব্দ আসছে না।
মিরা : মিহান তুমি সাড়া দিচ্ছো না কেনো?
মিরা আরো কয়বার ডাকে কিন্তু ভিতর থেকে কোনো শব্দ আসছে না। মিরার মনে ভয় বাসা বাঁধতে শুরু করে। চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করে। মিরা আর সময় নষ্ট না করে ওদের মমের রুমের দরজা নক করে। মম দরজা খুলে দিয়ে বলে।
মম : কি হয়েছে? তোকে এমন দেখাচ্ছে কেনো? কান্না করছিস কেনো?
মিরা : মম।
পাপা : মিহান তোমাকে বকা দিচ্ছে। চলো আমি ওর মজা দেখাচ্ছি।কত বড় সাহস আমার মাকে বকা দেয়।
মিরা কান্না করতে করতে বলে।
মিরা : না পাপা ও কিছু বলেনি আমাকে।
মম : তাহলে কি হয়েছে কান্না করছিস কেনো?
মিরা : মম আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দে আমার ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম থেকে উঠে মিহানকে পাশে না পেয়ে বারান্দায় খুঁজে ওয়াশরুমে খুঁজতে গিয়ে দেখি ওয়াশরুম লাইট জ্বলছে ভিতর থেকে লক করা। অনেকক্ষণ মিহানকে ডাকা ডাকি করেও ভিতর থেকে কোনো শব্দ পাইনি। আমি আর না পেরে তোমাদের ডাকতে চলে এসেছি। মম আমার খুব ভয় করছে।
মম নিজেকে সামলে নিয়ে বলে।
মম : চিন্তা করিস না চল আমরা দেখছি।
মম আর পাপা ডাকা ডাকি করলেও ভিতর থেকে কোনো সাড়া শব্দ পাওয়া যায়নি। মিরা পাপাকে দরজা লক ভেঙ্গে ফেলতে বলে। মিরার কথা মত পাপা ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকে থমকে দাঁড়ায়। মিরা ভিতরে ঢুকে মিহান বলে জোরে চিৎকার দিয়ে মাথা ঘুরে পরে যেতে চাইলে মম মিরাকে ধরে ফেলে।
মম : মিরা মিরা কি হয়েছে তোর? মিরা।
পাপা : মিরা বোধহয় মিহানের এই অবস্থায় দেখে সেন্সলেস হয়ে গেছে তুমি মিরাকে নিয়ে গিয়ে সোয়াও আমি মিহানকে নিয়ে আসছি।
মিরা পিটপিট করে চোখ খুলে অনুভব করে কেউ ওরে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। অন্ধকার রুমে ভালো করে দেখতে পাচ্ছে না। তার নিঃশ্বাস জানান দিচ্ছে সে মিরার আপন কেউ। বাতাসে বারান্দার পর্দা সরে গেলে এক গুচ্ছ আলো এসে রুমে পড়ে। মিরা ভালো করে তাকিয়ে দেখে মিহান ওকে জড়িয়ে ধরে আছে। মাথায় ব্যান্ডেজ করা। আস্তে আস্তে মিরার রাতের কথা মনে পড়ে যায়। পাপা লক ভেঙ্গে ওয়াশরুমে ঢুকলে। মিরাও পিছন পিছন ঢুকে দেখে মিহান ফ্লোরে পড়ে আছে আর ফ্লোরে রক্ত ভেসে যাচ্ছে। মিরা মিহানকে এই অবস্থায় মেনে নিতে না পেরে মিহান বলে চিৎকার দেয়। তারপর আর কিছু মনে নেই মিরার। মিরা মিহানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়। কান্নার শব্দে মিহান জেগে যায়।
মিহান : জান কি হইছে কান্না করছো কেনো? এই দেখো আমি ঠিক আছি।
মিরা মিহানকে সরিয়ে দিয়ে উঠে মিহানের মুখে অনেকগুলো চুমু দেয়। মিহানের মাথার ব্যান্ডেজে আসতে আসতে হাত বুলিয়ে দিয়ে সেখানেও অনেকগুলো চুম দিয়ে মিহানকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে। মিহান আসতে উঠে মিরার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে।
মিহান : আমি তো ঠিক আছি। কান্না থামাও এবার।
মিরা কোনো মতে কান্না থামিয়ে বলে।
মিরা : তোমার এই অবস্থায় কিভাবে হয়েছে?
মিহান : ওয়াশরুমের ফ্লোরে শ্যাম্পু না জানি সাবানের পানি পরে ছিল আমি খেয়াল করিনি। দরজা লক করে ঘুরতেই পা পিছলে পড়ি গিয়ে বেসিংয়ের কোনায়। মাথায় হাত দিয়ে দেখি রক্ত পড়ছে। কিছু বোঝার আগেই চারদিকে অন্ধকার হয়ে আসে তারপর চোখ খুলে দেখি মম আর পাপা পাশে বসে আছে। তাদের কে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারি। তুমি কিছু পরে যাবার শব্দ শুনে ঘুম থেকে উঠে যাও।ওয়াশরুমের দরজা নক করলেও আমি কোনো সাড়া শব্দ দেই না তখন মম আর পাপার রুমে গিয়ে তাদের ঢেকে আনো। পাপাকে ওয়াশরুমের লক ভেঙ্গেতে বলো। তারপর আমার ঐ অবস্থায় দেখে তুমি সেন্সলেস হয়ে পড়ো। পাপা ডাক্তার ডেকে আমাকে ব্যান্ডেজ করায় তোমাকেও দেখায় একেতো তুমি দুর্বল ছিলো তার উপরে আমার এই অবস্থায় দেখে শক পেয়ে সেন্সলেস হয়ে যাও।
মিরা : জানো তোমাকে ঐ অবস্থায় দেখে আমার দুনিয়া থমকে গেছিলো।
মিহান মিরাকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলে।
মিহান : ভালোবেসে ফেলেছো আমায়?
মিরা : না বাসি না।
মিহান মিরার কথা শুনে একটু হেসে বলে।
মিহান : জানি আমি বাসো কি বাসো না।
মিরা মিহানকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে।
মিরা : জানো যখন তাহলে জানতে চাচ্ছো কেনো? এখন ঘুমাও আর একটাও কথা বলবে না। আমি নিচ থেকে আসছি।
মিহান : আমি তোমাকে ছাড়া ঘুমাতে পারবো না। এখন তুমি জানো কি করবে তুমি?
মিহানের কথা শুনে রাগি চোখে মিহানের দিকে তাকায় কিন্তু মিহানের কোনো হেলদোল নেই। নিজেই শুয়ে পড়ে মিরার হাত ধরে টান দিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে নেয় মিহান।
মিহান : এখন কোথায় যেতে হবে না। একটু যদি নড়াচড়া করছো তো তোমার খবর আছে।
মিরা কিছু বলবে তার আগে অনু ভাইয়া ভাইয়া বলতে বলতে রুমে ঢুকে। মিরা মিহানের উপর থেকে সরে যেতে চাইলে মিহান মিরাকে শক্ত করে ধরে রাখে।
অনু : ভাবী তোমাকে উঠতে হবে না তুমি ভাইয়ার বুকে শুয়ে থাকো। তুই একটু দেখে চলতে পারিস না। আজ তো বড় অঘটন ঘটে যেতে পারতো।
মিহান : সরি বোন এরপর থেকে দেখে শুনে চলবো। আর বকিস না।
অনু : সত্যি তো?
মিহান : একদম সত্যি।
অনু : তোরা রেস্ট নে। আমি এখন যাই।
অনু চলে গেলে মিরা মিহানের বুকে আলতো করে চুমু দেয় মিহান যেনো বুঝতে না পারে।মিরা মনে মনে আওড়াতে থাকে।
মিরা : বাসি! বাসি! খুব ভালোবাসি তোমায়। তোমার হাসি মুখে ঘায়েল হতে ভালোবাসি। তোমার পাগলামি গুলোকে ভালোবাসি। না চাইতেও তোমার জোর করে নেওয়া ভালোবাসাকে ভালোবাসি। মাঝে মাঝে আমার মুখে হাসি ফোটানোর জন্য তোমার বোকা বোকা কথা খুব ভালোবাসি। আমার জীবনে তুমি আর মামু ছাড়া কেউ নেই। কাল তোমার ঐ অবস্থায় দেখে আমার তখন মনে হয়েছে এই বুঝি তোমাকে আমি হারিয়ে ফেলেছি। তখনকার কথা মনে পড়লে আমার কলিজা কেপে উঠে বারবার। পারবো না হারাতে তোমাকে কোনো মতে। তুমি সব সময় একটা কথা বলো না!#না_চাইলেও_তুই_আমার ঠিক তেমনি তুমি না চাইলেও তুমি আমার। তোমার ভালোবাসার মায়াজালে আটকে গেছি আমি। এবার শুধু তোমার রঙে রাঙিয়ে নেওয়া বাকি।
মিরা যতই আস্তে করে মিহানের বুকে ঠোঁট ছোঁয়াক না কেনো মিহান ঠিকই টের পেয়ে যায়।মিহান ঠোঁটের কোণে হাসি টেনে মনে মনে বলে।
মিহান : আমি জানি জান তুমি আমাকে ভালোবেসে ফেলছো। তোমার চোখে আমি আমাকে হারানোর ভয় দেখছি। এই ভয়ের কারনে প্রথম ভালোবাসার ছোঁয়া পেয়েছি তোমার। আমাকে তখন বুকের ভিতর ঢুকিয়ে ফেলতে পারলে বোধহয় তুমি শান্তি পেতে। মুখে স্বীকার না করলেও আমি তোমার মনের কথা বুঝতে পারি জান। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা কবে তুমি নিজের অধিকার খাটিয়ে বলবে। #না_চাইলেও_তুই_আমার।
আজ দশ দিন হয়ে গেছে মিহান মাথা ফাটিয়েছে।এতগুলো দিন মিরা মিহনকে ছেড়ে কোথাও যায়নি এমনকি মিহনকে হসপিটালেও যেতে দেয়নি। মিরার মামু এসে দেখে গেছে মিহানকে। মিহানের কখন কি লাগবে সব মিরা দেখেছে এই কয়দিন। মম মিরাকে এই কয়দিনে শাড়ি পরা শিখিয়ে দিয়েছে। মিরা আগে কিছু রান্না জানতো তারপরও চৌধুরী বাড়ির সবাই কে কি পছন্দ করে সেসব রান্না কম বেশী শিখেছে। মাঝে মাঝে মিহানের রোমান্টিক অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে মিরাকে। সব মিলিয়ে এই দশ দিন ভালো কেটেছে মিহান মিরার। কাল রাতে মিহানের জোরাজুরিতে সেজুথিকে মিরা ফোন করে পরিচয় গোপন কথা বলে। আজ বিকালে একটা রেস্টুরেন্টে দেখা করবে মিরা আর সেজুথি। মিহান দুপুরে হসপিটাল থেকে এসেছে। মিরা রেডি হচ্ছে। এখন সবে তিনটা বাজে চারটার সময় সেজুথির সাথে দেখা করার কথা। মিরার মিহানের হাব ভাব মোটেও ভালো লাগছে না। টিভি চালিয়ে সেদিক না তাকিয়ে মিরার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মিরা শাড়ির কুচি ঠিক করতে করতে বলে।
মিরা : টিভির দিকে না তাকিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছো কেনো?
মিহান : তোমাকে দেখছি আর চিন্তা করছি মম আমার কত বড় একটা সর্বনাশ করেছে।
মিহানের কথা শুনে মিরা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে।
মিরা : মানে?
মিহান : আমার কত শখ ছিলো তোমাকে প্রতিদিন নিজের হাতে শাড়ি পরিয়ে দেবো। মম তোমাকে শাড়ি পরা শিখিয়ে আমার সপ্ন মেরে বালি চাপা দিয়ে দিয়েছে।
মিহানের কথা শুনে মিরা হেসে দেয়। শাড়ির কুচি ঠিক করে মিহানকে বলে।
মিরা : আহারে! আমার কাছে তোমার জন্য একটা অফার আছে।
মিহান : কি অফার?
মিরা : সপ্তাহে একদিন তোমার পছন্দের শাড়ি আমাকে নিজের হাতে পরিয়ে দেবে। তোমার পছন্দের কোনো আমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবে। মাঝরাতে তুমি আর আমি যখন চন্দ্র বিলাশ করবো তখন তুমি আমার পছন্দের গান শুনবে। রাজি কি না তাড়াতাড়ি বলো।
মিরা কথা শুনে মিহান খুশিতে আধখানা হয়ে মিরার সামনে গিয়ে ওর দুই কাঁধে দুই হাত রেখে বলে।
মিহান : এরকম অফার কখনো মিস করতে নেই। আমি রাজি।
মিরা : হয়েছে এবার ছাড়ো।
মিহান : শোনো না আমিও না তোমার সাথে যাই।
মিরা : কেনো?
মিহান : আমি শিওর আজ সবাই তোমার দিকে তাকিয়ে থাকবে। কখন কে আবার আমার জোর করে বিয়ে করা বউটাকে তুলে নিয়ে যায় তাই।
মিরা মিহানের কথা শুনে ওর নাক টিপ দিয়ে হেসে দিয়ে বলে।
মিরা : তুমি নিশ্চিন্তে থাকতে পারো। তোমার বউ তোমারি থাকবে। কেউ চোখ তুলে তাকানোর সাহস পাবে না। কিন্তু তুমি একটা কথা বলো আমাকে?
মিহান : কি?
মিরা : বিয়ের আগে তুমি বিকালে হসপিটালে যেতে রাত দুটো বা তিনটের সময় বাড়ি ফিরতে। কিন্তু বিয়ের পর তোমার রুটিন উল্টে গেলো কি করে। সকালে হসপিটালে যাও বিকালের মধ্যে ফিরে আসো। ঘটনা কি বলতো?
মিহান মিরাকে ঘুরিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে থুতনি রেখে বলে।
মিহান : তখন কাজের চাপ একটু বেশি হলো। হসপিটালে ছয়জন ডাক্তার ছুটিতে ছিলো। তখন একটু কাজের চাপ বেশি ছিলো। বুঝছো এবার?
মিরা : বুঝেছি ছাড়ো এবার দেরি হয়ে যাচ্ছে। অলরেডি সাড়ে তিন টা বেজে গেছে।
মিহান : ঠিক আছে সাবধানে যাবে।
মিরার রেস্টুরেন্টে ঢুকতে ঢুকতে পনের মিনিট লেট হয়ে যায় জ্যামের কারনে। মিরা সেজুথিকে চিনে না তাই রেস্টুরেন্টে ঢুকে তাকে ফোন করে। মিরা খেয়াল করে রেস্টুরেন্টের কোনার টেবিলে একজন মহিলা বসে আছে তার ফোনটা বাজছে। মিরা ফোন কেটে দিয়ে তার সামনে গিয়ে মিষ্টি হেসে বলে।
মিরা : সেজুথি আন্টি?
সেজুথি আন্টি : হ্যা কিন্তু তোমাকে তো চিনলাম না?
মিরা তার সামনে চেয়ারে বসে বলে।
মিরা : ফাহিম নামে কাউকে চিন্তেন?
মিরার কথা শুনে সেজুথি আন্টি চমকে উঠে। আজ কত বছর পর তার প্রিয় মানুষ টার নাম শুনলো।
সেজুথি আন্টি : কোন ফাহিম?
মিরা বুঝতে পারছে অনেক দিনের অভিমান জমে তার মনে। মিরা ঠোঁটের কোণে হাসি টেনে বলে।
মিরা : আপনার ভালোবাসার মানুষ ফাহিম আহামেদ।
সেজুথি আন্টি : তুমি এসব কথা জানো কি ভাবে?
মিরা : আমার থেকে এসব কথা ভালো আর কে জানবে?
সেজুথি আন্টি : মানে কে তুমি?
মিরা : আপনার ভালোবাসার মানুষ ফাহিম আহামেদ আমার মামু।
সেজুথি আন্টি অবাক হয়ে বলে।
সেজুথি আন্টি : তুমি সেই মিরা?
মিরা : হ্যা আমি মিরা। যার জন্য আপনার আর মামুর জীবন নষ্ট হয়ে গেছে।
সেজুথি আন্টি : তোমার জন্য কেনো হবে। এসব আমার ভাগ্য ছিলো।এসব কথা ছাড়ো কেমন আছো তুমি? ছোট বেলায় তোমাকে অনেকবার দেখেছি তোমার মামুর সাথে এসব কথা বোধহয় তোমার মনে নেই।থাকবেই কি করে তুমি তখন খুব ছোট ছিলে। এখন দেখতে আগের থেকেও মিষ্টি লাগছে।
মিরা : আমি ভালো আছি আন্টি।কিন্তু আমার মামু না ভালো নেই।
সেজুথি আন্টি উত্তেজিত হয়ে বলে।
সেজুথি আন্টি : কেনো কি হয়েছে ওর? ও ঠিক আছে তো?
মিরা : আন্টি মামু এখনো আপনার জন্য কষ্ট পায়। শুধু আমার ভাইয়ের জন্য আপনার কাছে ফিরে আসতে চাইছে না। আমার মামু জীবনে অনেক কষ্ট করেছে। আমার জন্য তার পরিবার ছেড়েছে। আমার জন্য তার ভালবাসার মানুষ ছেড়েছে। আমি চাই আপনি আর মামু আবার এক হয়ে যান।
সেজুথি আন্টি : না মিরা তা হয়না। ফাহিম আমাকে ভুল বুঝে আছে আর আমিও চাই না ভুল ভাঙ্গুক।
মিরা : আপনি চান না বাকি জীবনটা আপনার ভালোবাসার মানুষের সাথে কাটিয়ে দিতে?
মিরার কথা শুনে সেজুথি আন্টি চোখের পানি পড়তে থাকে।
সেজুথি আন্টি : চাই এখনো খুব করে চাই।কিন্তু ও আমার থেকে অনেক আঘাত পেয়েছে আমি চাই না নতুন করে আবার কোনো আঘাত দিতে।
মিরা : আন্টি বিশ বছর তো কম সময় নয়। দুজন দূর থেকে আঘাত পেয়ে গেছেন। আর না আন্টি এবার তো রাজি হয়ে যায়।
সেজুথি আন্টি : ফাহিম কি রাজি হবে?
মিরা মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে।
মিরা : আমি যা বলি মামু তাই করে।তুমি একদম চিন্তা করো না মামনি।
সেজুথি আন্টি : মামনি?
মিরা : বারে! আমার মামুর একমাত্র বউ আমার মামনি হবে না তো কি হবে?
সেজুথি আন্টি হেসে দিয়ে বলে।
সেজুথি আন্টি : তুমি তো খুব দুষ্টু। শুনলাম তুমি না কি বিয়ে করেছো?
মিরা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে।
মিরা : তোমাকে এত বড় মিথ্যা কথাটা কে বলেছে?
সেজুথি আন্টি : কেনো তুমি বিয়ে করোনি?
মিরা : বিয়েটা হয়েছে। কিন্তু আমি বিয়ে করিনি? মামু জোর করে বিয়ে দিয়েছে আর পাগল ডাক্তার টা জোর করে বিয়ে করেছে।
সেজুথি আন্টি : কি বলছো কিছুই তো বুঝতে পারছি না। আর পাগল ডাক্তার টা কে?
মিরা : পাগল ডাক্তার টা হলো আমার বর। ডাক্তার মিহান চৌধুরী। আমি যেদিন বাংলাদেশ আসি সেদিন আমার গাড়ি এক্সিডেন্ট হয় আমাকে যে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয় সে হসপিটালে পাগল ডাক্তার ছিলো। সেখানে তিনি আমাকে প্রথম দেখে আর তখনি না কি আমাকে ভালোবেসে ফেলে। এরপর আমার সব information কালেক্ট করে মামুকে ইমপ্রেশ করে আর মামুও ফিদা হয়ে যায়। একদিন অফিস থেকে ফিরে শুনি একটু পর আমার বিয়ে। আমি তখন খুব রেগে গেছিলাম কিন্তু মামু আমাকে emotional blackmail করে বিয়েতে রাজি করায়।
মিরার কথা শুনে সেজুথি আন্টি হাসতে হাসতে বলে।
সেজুথি আন্টি : তা না হয় বুঝলাম কিন্তু তুমি ওকে পাগল ডাক্তার বলো কেনো?
মিরা : বলি কি আর সাধে। আমি তো জানতাম না তিনি বিয়ের প্লান করে রেডি হয়ে আছেন। বিয়ের কিছুদিন আগে রাত দুইটা বেশি বাজে তিনি হসপিটাল থেকে সোজা আমার রুমে হাজির। আমাকে ঘুম থেকে তুলে আমার নিজের বাড়ি থেকে চোরের মত পাচিল টপকাতে হয়েছে। আমি গেট দিয়ে যেতে বলেছি। না তিনি পাচিল টপকে যাবেন এটা না কি প্রেমের একটা পার্ট। এতে আনন্দ পাওয়া যায়। আমি মনে করেছি কোনো কাজের জন্য নিয়ে যাচ্ছে কিন্তু না জিজ্ঞাসা করলে বলে। আমাকে চা খাওয়াতে নিয়ে যাচ্ছে।এটা শুনে আমার ইচ্ছে করছিল ওকে কোনো বিলিংয়ের ছাদ ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে পারলে আমি একটু হলেও শান্তি পেতাম। তুমি বলো কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ রাত দুইটা বাজে তখন কাউকে ঘুম থেকে তুলে তার বাড়ি থেকে চোরের মত বের হয় উদ্দেশ্য চা খাওয়াবে বলে। একে পাগল ডাক্তার বলবো না তো আর কি বলবো।
সেজুথি আন্টি হাসতে হাসতে পেট হাত দিয়ে বলে।
সেজুথি আন্টি : তোমার পাগল ডাক্তারের সাথে তো দেখছি একদিন দেখা করতেই হবে।
মিরা : কালকে বিকালে যখন ওকে নিয়ে তোমাদের বাড়ি যাবো তখন ওর সাথে পরিচিত করিয়ে দেবো।
সেজুথি আন্টি খুশি হয়ে বলে।
সেজুথি আন্টি : তুমি আসবে আমাদের বাড়ি?
মিরা : কাল তো যেতেই হবে বিয়ের পাকা কথা দিতে হবে না।
মিরার কথা শুনে সেজুথি আন্টি লজ্জায় গাল লাল হয়ে যায়। আর মিরা ওর মামনির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয়।
চলবে… 🍁