না চাইলেও তুই আমার

না চাইলেও তুই আমার !! Part- 23

মিরা কিছুক্ষণ সবার সাথে কথা বলে।মিরার মামা বাড়ির অন্যসব অতিথির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।মিরা সবার জন্য কিছু গিফট এনেছিল তা সবাইকে দিয়ে দেয়। মিরার নানু বিয়েতে বেশি হাঁটা চলার কারায় পায়ের ব্যাথার কারনে ঘরে আছে। মিরা, নানা, শুভ, মিথি, আর মিশু মিলে মিরার নানুর রুমে যায়। এদিকে মামা মিহানকে বলে।
মামা : মিহান তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেনো বসো।
মিহান : আমি ঠিক আছি মামা।
মামা : কি যে বলো না তুমি? তুমি এ বাড়ির জামাই। তোমাকে নিয়ে সবার আগে ভাবতে হবে।
মামি : বলছি কি শোনো না।
মামা : বলো।
মামি : বলছি মিরার মা মানে নিতু আপুরা উপরে তাদের রুমে আছে। ব্রেকফাস্ট করে বিশ্রাম নিচ্ছে। মিরা যদি জানতে পারে ওনারা এই বাড়িতে আছে তাহলে মিরা আর এই বাড়িতে এক মুহূর্ত থাকবে না। তখন কি হবে?
মামা : যা হবে দেখা যাবে। তুমি মেয়ে জামাইয়ের খাবার ব্যবস্থা করো।
এসব কথা শুনে মিহান মনে মনে বলে।
মিহান : যার জন্য এতদিন পর আসলাম সেই কি না এই বাড়িতে! মামি আপনি আর কি রান্না করবেন? আমি শিওর দুই ঘন্টার ভিতরে এই বাড়িতে ঝড় শুরু হবে।
মিরারা সবাই ওর নানুর রুমে গিয়ে দরজার সামনে দাঁড়ায়।শুভ গিয়ে মিরার নানুকে বলে।
শুভ : দাদু তুমি এখানে শুয়ে আছো আর তোমার বুড়োর এক গার্লফ্রেন্ড এসেছে এ বাড়িতে।তোমার বুড়োকে না কি নিয়ে যাবে তার সাথে।
নানু তেতে উঠে বলে।
নানু : কি বলিস এসব? তোর দাদা এখন কোথায় রে? আজ ওর একদিন কি আমার একদিন।
শুভ : ঐ তো তার গার্লফ্রেন্ড নিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
নানু : কেই দেখি সর তো।

মিরা ওর নানার এক হাত জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। এটা দেখে মিরার নানু রেগে মেগে মিরার দিকে তেরে এসে বলে।
নানু : এই মেয়ে তোমার সাহস হয় কি করে ওর হাত জড়িয়ে ধরার।
নানুর কথা শুনে সবাই মিটমিট করে হাসছে।
নানা : তোরা আর ফাজলামি করিস না।মানুষটা অসুস্থ।
নানু : কে কি ফাজলামি করছে?
মিথি : দাদি আমি বলি।তোমার নাতি এতক্ষণ তোমার সাথে মজা করছে। আর যে মেয়েটা দাদার সাথে আছে সে হলো তোমার আদরের নাতনী মিরা।
নানু ছলছল চোখে নানার দিকে তাকালে তিনি মাথা নেড়ে হ্যা বলে। নানু ধীর পায়ে মিরার সামনে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়।মিরা নানুকে ছাড়িয়ে নিয়ে চোখের পানি মুছে বলে।
মিরা : কান্না করো না নানু। আমি তো এখন তোমার সামনে ই আছি।
নানু : কেমন আছিস তুই? দেশে কবে এসেছিস? তোর মামু কেমন আছে?
মিরা : আমি ভালো আছি। দুই সপ্তাহের বেশি হবে দেশে এসেছি। মামুও ভালো আছে।
মিরা ওর নানুর সাথে কথা বলতে থাকলে এরমধ্যে নিশু এসে বলে।
নিশু : আপু মিহান জিজু তোমাকে ডাকছে।
নানু : মিহান কে রে নিশু?
মিরার নানুর কথা শুনে সবাই জোরে হেসে দেয়। আর মিরা চুপ করে বসে আছে।
নানা : কি রে তোরা হাসছিস কেনো এরকম?
মিশু : হাসবো না তো কি করবো। তোমাদের আদরের নাতনীর বর হলো মিহান।
নানু অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে।
নানু : মিরার বিয়ে হয়ে গেছে?
শুভ : হ্যা দাদু। সাত দিন আগে বিয়ে হয়েছে আপুর।

নানা : আমি তো খেয়াল করিনি তোর সাথে কে এসেছে।
নানু : দেখি সর আমি আমার নাত জামাই কে দেখে আছি। তার আপায়নের ব্যবস্থাও করতে হবে।
মিরা : নানু তুমি বসো। তোমার পায়ে ব্যাথা নিয়ে যেতে হবে না। আমি মিহানকে ডেকে আনছি।
নানা : আমাদের সেই ছোট্ট মিরার বিয়ে হয়ে গেছে ভাবতেই অবাক লাগে।
মিরা : তোমরা বসো আমি এখনি আসছি।
মিরা ওর নানুর রুম থেকে বেরিয়ে হল রুমে এসে মিহানের পাশে সোফায় বসে বলে।
মিরা : কিছু বলবেন?
মিহান : কি আর বলবো তোমার যে একটা বর আছে এখানে এসে তোমার তো তা মনেই নেই।
মিহানের কথা শুনে মিরা মুচকি হেসে বলে।
মিরা : মনে আছে আমার বরের কথা। এখন আপনি আমার সাথে চলুন নানা নানুর সাথে দেখা করবেন।
মিহান : আমি না হয় নিশু বা মিশুর সাথে চলে যাবো। তুমি এখন মামির কাছে গিয়ে সেজুথি আন্টির কথা জিজ্ঞাসা করো।
মিরা : ভালো কথা বলেছেন। আপনি ওদের সাথে যান। আমি মামির কাছে যাচ্ছি।
মিহান : ওকে জান।
মিরা মুচকি হেসে রান্না ঘরে চলে যায়। মামি মিরাকে রান্না ঘরে আসতে দেখে বলে।
মামি : তুমি আবার রান্না ঘরে আসতে গেলে কেনো?
মিরা : মামি তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
মামি : বলো।
মিরা : এখানে না তোমার রুমে চলো।
মামি : চলো তাহলে।
মিরার মামি মিরাকে নিয়ে তার রুমে চলে যায়। মিরা ওর মামির পাশে বেডে বসে বলে।
মিরা : মামি তুমি সেজুথি নামে কাউকে চেনো?
মামি : নিতু আপুর ননদের নাম সেজুথি। খুব ভালো মানুষ সেজুথি আপু। কেনো কি হয়েছে?
মিরা : তেমন কিছু না।আচ্ছা তার কি বিয়ে হয়েছে?
মামি : আরে না। সেজুথি আপু কলেজ লাইফে একজনকে খুব ভালোবাসতো। কিন্তু সে সেজুথি আপুকে ভুল বুঝে তাকে ছেড়ে চলে যায়। এরপর থেকে সেজুথি আপু সব সময় মনমরা হয়ে থাকতো তা দেখে সেজুথি আপুর বাবা ভাই মিলে বিয়ে ঠিক করে। সেজুথি আপুকে অনেক কষ্টে বিয়ের জন্য রাজি করায় কিন্তু বিয়ের দিন বর যাত্রী এসে যখন লোক মুখে সেজুথি আপুর ভাইয়ের কীর্তির কথা জানতে পারে। তখন তারা বিয়ে ভেঙে দিয়ে চলে যায়। এরপর আবার যখন সেজুথি আপুর বাবা তাকে বিয়ে সম্পর্কে বলেছে তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন সে বিয়ে করবে না। আর যদি কেউ তাকে জোর করে তাহলে সে বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে।কিন্তু তুমি এসব কথা জানতে চাচ্ছো কেনো?

মিরা মুচকি হাসি দিয়ে বলে।

মিরা : কিছুদিন পর বুঝতে পারবে মামি। এখন বলো তো সেজুথি আন্টির ফোন নাম্বার আছে তোমার কাছে।

মামি : আছে বোধহয় বিয়ের সময় সবাইকে ফোন করতে হয়েছিল। আমি একটু দেখি দাঁড়াও।

মিরা : আচ্ছা।

মামি ফোন নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে করতে পাশের রুম থেকে জোরে হাসাহাসির আওয়াজ আসছে। তা শুনে মামি বলে।

মামি : বাবা মা কখনো তো এমন করে হাসে না কি হলো হঠাৎ আজ?

মিরা : মিহান আছে না ওখানে তাই এমন হচ্ছে।

মামি : মিহান খুব হাসি খুশি ছেলে তাই না?

মিরা : হ্যা। শুধু মিহান না আমার শ্বশুর বাড়ির সবাই ভিশন ভালো। আমার ননদ যতক্ষণ বাড়ি থাকবে আমাকে এক মিনিটের জন্য ছাড়ে না। মম আর পাপার কথা কি বলবো। দুজনেই আমাকে চোখে হারায়।

মামি মিরার কথা শুনে একটু হাসি দিয়ে বলে।

মামি : এই নাও নাম্বার পেয়ে গেছি।

মিরা নাম্বারটা নিয়ে হাসি মুখে বলে।

মিরা : থ্যাংকু ইউ। মামি।

ঐদিক নিতু তার বাবা মার হাসির আওয়াজ শুনে ওদের রুমের সামনে এসে দেখে ওর বাবা মা একটা ছেলের সাথে হেসে হেসে কথা।নিতু ওখান থেকে সরে রান্না ঘরে নিশুকে দেখে বলে।

নিতু : বাবা মার ঘরে ঐ ছেলেটা কে রে নিশু?

নিশু : মিহান জিজুর কথা বলছো?

নিতু : তুই চিনিস?

নিশু চুপ করে আছে। কি বলবে তাকে ভেবে পাচ্ছে না নিশু।

নিতু : কি রে চুপ করে আছিস কেনো।

নিশু : ন,, না মানে।

নিতু : কি না না করছিস। চিনিস কি না বলে দিলেই তো হয়।

নিশু চোখ বন্ধ করে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে বলে।

নিশু : হ্যা চিনি মিহান জিজু হচ্ছে মিরা আপুর বর। দাদা দাদীর আদরের নাত জামাই।

নিতু ধীর কন্ঠে বলে।

নিতু : মিরা এসেছে?

নিশু : হ্যা।

নিতু : কখন এসেছে?

নিশু : অনেকক্ষণ। আমি এখন যাই ফুপি এই খাবার গুলো জিজুকে দিতে হবে।

নিশু খাবারের ট্রে নিয়ে চলে যায় রান্না ঘর থেকে। নিতু এক মনে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।

চলবে… 🍁