না চাইলেও তুই আমার !! Part- 22
মিরা মামা সবাইকে বলে মিরার সাথে তার কি সম্পর্ক।মিরা মিহানের সাথে ওদের পরিচয় করিয়ে দেয়। মিরা আর ওর মামাতো ভাই বোন কিছুক্ষণ কথা বলে, মিথিকে হলুদ লাগিয়ে বাড়ির ভিতরের চলে যেতে চাইলে মিরার মামা আর মামি বাগানের অন্য পাশে নিয়ে যায় কথা বলাল জন্য।
মামা : মিরা বাবা মা কেউ এখানে আসেনি। ইনফ্যাক্ট তেমন কোনো আত্মীয়স্বজন আসেনি। শুভর কিছু বন্ধু আর আমার কিছু পরিচিত লোকজন ছাড়া আর কেউ আসেনি। ঢাকা থেকে চাঁদপুর এত দূর এসে বিয়ে এটেন করা কারো পক্ষে সম্ভব হতো না।আমি বলতে চাচ্ছি তুই কি কাল আমাদের সাথে যাবি? বাবা মা তোকে দেখতে চায়। বাবা অসুস্থ, মা তো তোর আর ভাইয়ার চিন্তার কারনে দুই দিন পর পর হসপিটালে ভর্তি করতে হয়। তাছাড়া তোর মা,,,,,,
মিরা : স্টপ। আমি সবার কথা শুনতে চাই না। ঐ মহিলা যেখানে থাকবে আমি সেখানে কখনো যাবো না।
মামা : ওরা কেউ বিয়েতে আসেনি। আপুর স্বামী কে ডাক্তার দেখাতে মুম্বই গেছে।
মিরা : এসব কথা ভালো লাগছে না। অন্য কোনো কথা থাকলে বলো। কে বিয়েতে আসলো, আর না আসলো তাতে আমার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। এতগুলো বছর মামু আমাকে আগলে রেখেছে। এখন থেকে তো মামু আর মিহান মিলে আমাকে আগলে রাখবে। অন্য কাউকে প্রয়োজন নেই আমার।
এসব বলে মিরা ওখান থেকে চলে যায়।
মামি : মিরাকে মিথ্যা বললে কেনো? তোমার বোনরা তো বৌভাতে আসবে।
মামা : তুমি তো জানো আপু মিরাকে দেখলে কতটা খুশি হবে।
মামি : তোমরা সবাই খুব স্বার্থপর।একবারো ভাবলে না মিরা কি চায়? ওর জায়গায় আমি থাকলে তোমাদের সাথে কোনো যোগাযোগ রাখতাম না। মেয়েটা না পেয়েছে মায়ের ভালোবাসা। আর না পেয়েছে বাবার ভালোবাসা। ভাইয়া একদম ঠিক কাজ করেছে তোমাদের মত খারাপ মানুষগুলোর থেকে ওকে দূরে নিয়ে গেছে।
মামা : আমি কি করেছি? আমি তো তখন এসবের কিছু জানতাম না।
মামি : তা জানবে কেনো? জানবে তো তোমার গার্লফ্রেন্ড দের কথা। আজ মিরার জন্য আমি সত্যি জানতে পারলাম। তুমি ঢাকা চলো আমি তোমার ব্যবস্থা করছি।
মামি মামার সাথে রাগ করে অনুষ্ঠানে ওদিকে চলে যায়।
মিহান অনুষ্ঠান শেষ করে রুমে ঢুকে দেখে মিরা রুম অন্ধকার করে ঘুমিয়ে আছে। মিহান এক নজর দেখে ফ্রেশ হতে চলে। ফ্রেশ হয়ে রুমের আলো জ্বালিয়ে মিরার পাশে শুয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে চোখে পানি মুছে দিয়ে বলে।
মিহান : আমি আমার বউয়ের চোখে পানি দেখতে পারবো না। তুমি চাইলে মিথির বিয়ের পর আমি তোমাকে তোমার মামা বাড়ি নিয়ে যাবো।
মিরা : তেমন কিছু না মিহান ছোট বেলার কথা গুলো মনে পড়ছিল।
মিহান : পরশু আমরা তোমার মামা বাড়ি যাবে?
মিহানে কথা শুনে মিরা মিহানের বুক থেকে মাথা তুলে মিহানের দিকে তাকিয়ে বলে।
মিরা : কেনো?
মিহান : বাগানে তোমার আর তোমার মামার কথা আমি শুনেছি। ঐ বাড়ি গেলে আমার সেজুথি আন্টির সম্পর্কে জানতে পারবো। আর মামুকে তার বাবা মার কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে না।
মিরা আবার মিহানের বুকে মাথা রেখে বলে।
মিরা : আপনি ঠিক বলেছেন। মামুর জন্য আমাদের ঐ বাড়িতে যেতে হবে। কিন্তু আমরা মিথির বৌভাতের পরে যাবো। আমি চাই না আমার কারনে মিথির জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটা দিন নষ্ট হোক।
মিহান : ঠিক আছে তাই হবে বউ এবার ঘুমাও তুমি। আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।
মিহান মিরার হাত বুলিয়ে দিতে থাকে আর মিরা মনে মনে বলে।
মিরা : আমি জানি মিহান আপনি আমাকে খুব ভালোবাসেন।আমি কষ্ট পেলে আপনারো কষ্ট হয়। মামুকে সব কিছু ফিরিয়ে দিয়ে আমরা নতুন করে জীবন শুরু করবো।এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
দেখতে দেখতে বিয়ে শেষ করে মিহানরা ঢাকা চলে আসে। মিরার মামা তাকে ওদের সাথে যেন বলেছে অনেক বার কিন্তু মিরা বার বার এরিয়ে গেছে। চৌধুরী বাড়ি এসেছে পর থেকে মিহানের মম মিরার ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে দিয়েছেন। মিহান বাড়িতে থাকলে কিছুক্ষণ পর পর অনুর সাথে মারামারি করে। মিরা ওদের অবস্থায় দেখে হেসে দেয়। অনু মিরার সাথে সারাক্ষণ থাকে মিহানকে ওর ধারে কাছে ঘেঁষতে দেয়না। মিহান ওর মমের কাছে অনুর নামে নালিশ দিলে মিহানের মম পাত্তা দেয় না। মিরা এমন শ্বশুর শ্বশুরি পেয়ে ওর বাবা মার কথা আর মনে পড়ে না। মিহানের পাপা অফিস থেকে ফেরার সময় অনু আর মিরার জন্য আইসক্রিম আর চকলেট নিয়ে আসে। সন্ধ্যার পর মিরা, অনু, মম, পাপা সবাই মিলে আড্ডা দিয়ে কেরাম খেলে। মিহানের হঠাৎ করে হসপিটালে ইমার্জেন্সি পরে যাওয়ায় মিরার মামার বাড়ি যাওয়া পিছিয়ে যায়। ঢাকায় আসার পাঁচ দিন পর আজ মিহান আর মিরা মিলে মিরার মামা বাড়ি যাবে। দশটার দিকে ওরা বেরিয়ে পরে। মামার বাড়ির সামনে আসতে আসতে এক ঘন্টা লাগে যায়। মিহান গাড়ি থেকে নামতে নামতে বলে।
মিহান : মিরা বিয়ে তো শেষ হয়ে গেছে অনেক দিন তাহলে বাগানে এতগুলো বাচ্চা খেলছে? এরা কি তোমাদের বাড়ির লোক।
মিরা : আমি কি আর সাধে পাগল ডাক্তার বলি আপনাকে। আমি বিশ বছর পর এই বাড়ি এসেছি। তাহলে আমি জানবো কি করে?
মিহান গোমড়া মুখ করে বলে।
মিহান : তাই তো!
মিরা : হয়েছে আর মুখ গোমড়া করতে হবে না। চলুন ভিতরে যাই।
মিরা ডোর বেল বাজালে নিশু এসে দরজা খুলে দেয়া। নিশু বাড়ির লোক ডাকবে তার আগে মিরা ওকে চুপ করে থাকতে বলে। মিরা হল রুমে এসে দেখে নানা, মামা আরো কিছু লোক আছে মিরা তাদের চেনা না। তারা কি নিয়ে কথা বলছে। মিরার মামার চোখ যায় দরজার দিকে মিরাকে দেখে হাসি মুখে কিছু বলবে তার আগে মিরা ইশারায় চুপ করিয়ে দেয়। মিরা কিছু না বলে ওর নানা মুনির আহামেদের পাশের সোফায় বসে বলে।
মিরা : আপনি মুনির আহামেদ?
নানা : এই তুমি কে? আমার নাম ধরে ডাকার সাহস পাও কি করে?
মিরা : আমার সাহস সব সময় একটু বেশী। যাই হোক এখন বলুন আপনি না কি নিয়মিত মেডিসিন খান না। সারাদিন মনমরা হয়ে থাকেন।
মিরার নানা ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে উঠে।
নানা : আমি যা ইচ্ছে করবো তাতে তোমার কি? আর কেই বা তুমি?
মিরার নানার ঝাঁঝালো কন্ঠ শুনে মামি রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। মিরা আর মিহানকে দেখে খুশি হয়ে যায়। মিরা মামা ওর স্ত্রীকে ইশারায় চুপ থাকতে বলে।
মিরা : আমার তো মনে হয় গার্লফ্রেন্ড ছেড়ে চলে গেছে বলে সারাদিন এমন মনমরা হয়ে থাকেন।
মিরার কথা শুনে হল রুমের সবাই মুখ টিপে হেসে দেয়। মিরার নানা রেগে চিৎকার করে বলে।
নানা : এই মেয়ে তোমার সাহস তো,,,,
আর কিছু বলতে না দিয়ে মিরা বেগ থেকে চকলেট বের করে নানার মুখে ঢুকিয়ে দিয়ে বলে।
মিরা : প্রানু এইভাবে চিৎকার করলে তো বাড়িতে একটা কাক চিলও বসতে পারবে না।
নানা কোনো রকমে চকলেট টা খেয়ে মিরার দিকে তাকিয়ে বলে।
নানা : তুমি এসব জানলে কি করে এসব তো একজনই করতো।
মামা : বাবা ও আমাদের মিরা। ও এসব জানবে না তো কে জানবে?
নানা : কি বলছিস এসব তুই?
মামা : হ্যা বাবা ওই আমাদের সেই ছোট্ট মিরা।
নানা মিরার সামনে এসে দাঁড়িয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলে। মিরা নানাকে ছাড়িয়ে নিয়ে মামার দিকে তাকিয়ে বলে।
মিরা : মামা তোমাকে আমি কথা বলতে বলছিলাম।বলছো কেনো? মামি তুমি আজ মামাকে খেতে দিবে না আমার কথা না শোনার জন্য।
মামি হেসে দিয়ে বলে।
মামি : ঠিক আছে। আজ খেতে দিবো না।
মিরা আর মিরার নানা অনেকক্ষণ কথা বলে। এরমধ্যে শুভ আর মিথি এসে যোগ দেয় ওদের সাথে।
চলবে… 🍁