না চাইলেও তুই আমার

না চাইলেও তুই আমার !! Part- 14

রাত তিনটার বেশি বাজে।মিরার অনেকক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজে ভিজা কাপড়ে ড্রাইভ করে খান বাড়িতে আসে ততক্ষণে মিরার গায়ের ভিজা কাপড় গায়েই শুকিয়ে যায়। অনেকবার ডোর বেল বাজার পর রুমা এসে দরজা খুলে দেয়। রুমা অবাক কন্ঠে মিরাকে বলে।
রুমা : আপা আপনি এত রাতে এইখানে? বাড়ির আর সবাই কই?
মিরা ভাবলস হীন ভাবে উত্তর দেয়।
মিরা : পাখিরা বোধহয় বাসায় ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
রুমা : কি বলছেন আপা? পাখি,প্রস্তুতি কিছুই বুঝতে পারছি না।
মিরা : কষ্ট, খুব বেশি কষ্ট কখনো পেয়েছো?
রুমা : আপা আপনি কি নেশা জাতীয় কিছু খেয়েছেন?
মিরা : কষ্টের নেশা করেছি আমি। কষ্টের নেশা!
এই বলে রুমার পাশ দিয়ে হেঁটে হেঁটে নিজের রুমের দিকে যেতে শুরু করে। রুমা তাড়াতাড়ি করে দরজা বন্ধ করে মিরার পিছন পিছন যেতে শুরু করে। মিরা তাচ্ছিল্য শুরে আবারও সেই কথাটা বলতে বলতে মাতালের মত হেঁটে চলেছে।
মিরা : যদি জানতেম আমার কিসের ব্যথা তোমায় জানাতাম।
কে যে আমায় কাঁদায় আমি কী জানি তার নাম।।
কোথায় যে হাত বাড়াই মিছে, ফিরি আমি কাহার পিছে–
সব যেন মোর বিকিয়েছে, পাই নি তাহার দাম।।
এই বেদনার ধন সে কোথায় ভাবি জনম ধ’রে।
ভুবন ভরে আছে যেন, পাই নে জীবন ভরে।
সুখ যারে কয় সকল জনে বাজাই তারে ক্ষণে ক্ষণে–
গভীর সুরে “চাই নে’ “চাই নে’ বাজে অবিশ্রাম।।
[ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ]

মিরা এইটুকু বলতে বলতে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। রুমা কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। মিরার ভাব গতি রুমার ভালো ঠেকছে না। রুমা আর কিছু না ভেবে ওর রুমে গিয়ে অনামিকা কে ফোন করে।
অনামিকা : কি রে রুমা এত রাতে ফোন দিলি সব ঠিক আছে তো?
রুমা : আম্মা মিরা আপা!
অনামিকা মিরার নাম শুনে উত্তেজিত হয়ে বলে।
অনামিকা : হ্যা বল মিরা কি?
রুমা : আম্মা একটু আগে মিরা আপা বাড়ি এসেছে।পাগলের মত কি সব কথা বলছে!পাখির বাসা,কষ্ট,কষ্টের নেশা কিসব বলছে।আবার একা একা কবিতা ও বলছে।নিজেও রুমের দরজা বন্ধ করে আছে।আমি কি করবো কিছু বুঝতে পারছি না আম্মা!
অনামিকা : কি বলছিস এসব?
রুমা : হ্যা আম্মা সত্যি বলছি!
অনামিকা : আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিরে আসার চেষ্টা করছি।তুই একটু ওকে সামলে রাখিস।
রুমা : আম্মা আমার খুব ভয় করছে!
অনামিকা : ভয় পাস না।আমরা তাড়াতাড়ি ফিরে আসছি।রাখি এখন ওর দিকে খেয়াল রাখিস।
অনামিকা ফোন রেখে তার স্বামীকে সব কথা খুলে বলে তারা দুইজনে যায় মিরার মামুর রুমে।মিরার মামু ফোনে কার সাথে কথা বলছিল ওদের দেখে ফোন রেখে বলে।
মামু : কিছু বলবি?মিহান ফোন করেছিল ও ঢাকার বাইরে চলে এসেছে।সকালের আগেই পৌঁছে যাবে।
মিরার বাবা : ফাহিম মিরা খান বাড়িতে!একটু আগে সেখানে গেছে।রুমা বললো ও কেমন পাগলের মত ব্যবহার করছে।আমাদের তাড়াতাড়ি রওনা দিতে হবে।
মামু : কি বলছিস?এখন কি হবে?
অনামিকা : আমরাও তো তাই ভাবছি?রুমা কে বলেছি মিরার খেয়াল রাখতে।এখন আমাদেরও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিরে যেতে হবে।

মামু কিছুক্ষন ভেবে মিরার বাবাকে বলে।
মামু : মিহান তো ঢাকার কাছেই আছে ওকে ফোন করে বলি।মিহান ই পারবে মিরাকে সামলাতে।
অনামিকা : ভাইয়া আপনি তাই করুন।মিহান কে ফোন করুন।
মিরার বাবা : কিন্তু মিরার হঠাৎ করে কি হলো?অনুষ্ঠান ছেড়ে চলে গেলো কেনো?মিহানেও তো অনেক সময় লাগবে পৌঁছতে!
অনামিকা : সেসব কিছু পরে ভাবা যাবে এখন ভাইয়া আগে মিহান কে ফোন করে নিক।
মামু : হ্যা তাই করছি!
মামু মিহানকে ফোন করে সবকিছু খুলে বলে।মিহানও তাড়াতাড়ি করে গাড়ি ঘুরিয়ে নেয়।না জানি মিহানের মিরা এখন কেমন আছে?মামু মিহানের সাথে কথা বলে ডেনিকে সব ব্যবস্থা করে ফেলতে বলে ওরা কাল সকালে বেরিয়ে যাবে।
মিরা শাওয়ার নিয়ে ভেজা চুল না শুকিয়ে বেডে বসে মাথা চেপে ধরে বলে।
মিরা : উফ এখন মাথাটাও কষ্ট দিতে শুরু করেছে।আমাকে কি সবাই কষ্ট দিতে ভালো লাগে।আমার উচিৎ হয়নি বাংলাদেশে আসা।আবার পুরনো ক্ষতগুলো অসহ্য ব্যথা শুরু হয়েছে।আর কয়েক ঘন্টা তারপর আমি চলে যাবো এখান থেকে।এখানে থাকলে আমি এই যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে মরে যাবো।মাথাটা খুব ব্যথা করছে এখন কিছুক্ষন ঘুমিয়ে নেই।
মিরা মাথার যন্ত্রণা আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পড়ে।
ভোর পাঁচটায় পৌঁছায় খান বাড়িতে মিহান।ভোরের আলো ভালো ভাবে এখনো ফোঁটেনি।ডোর বেল বাজালে রুমা ঘুম ঘুম চোখে দরজা খুলে দেয়।রুমা কিছু বলার আগে মিহান বলে।
মিহান : মিরা কোথায়?

রুমা : ভাইজান আপনি আসছেন!আপা কাল‌ অনেক রাতে এসেছে এসে থেকে কেমন পাগলের মত ব্যবহার করছে যেনো মনে হয় নেশা করে আছে।কি সব বলছিল পাখির বাসা,কষ্ট,কষ্টের নেশা আবার একা একা কবিতা ও বলছে তারপর নিজে রুমের দরজা বন্ধ করে আছে।

মিহান : আচ্ছা চলো আমি দেখছি!

রুমা : চলেন ভাইজান।

মিহান আর রুমা মিরার রুমের দরজা নক করে যাচ্ছে কিন্তু মিরা দরজা খুলছে না।

মিহান : মিরা কি হলো?অনেকক্ষন ধরে তো ডাকছি এবার দরজা খুলো।

রুমা : ভাইজান আপা কিছু করে ফেলেনি তো?

মিহান রুমার কথা‌ শুনে ধমক দিয়ে বলে।

মিহান : কি আজে বাজে কথা বলছো!একদম চুপ করে থাকো।

মিহানের ধমক শুনে রুমা চুপ হয়ে যায়।মিহান আরো দুই তিনবার মিরাকে ডাকে কিন্তু মিরার কোনো সারা শব্দ নেই।মিহান আর না পেরে রুমাকে বলে।

মিহান : এই রুমের ডুবলিকেট চাবি কোথায় জানো?

রুমা : আমি তো জানি না ভাইজান!

মিহান : দেখি তাহলে পাশে সরো দরজা ভাঙ্গতে হবে।

রুমা পাশে সরলে মিহান দুই তিনটা ধাক্কা দিয়ে দরজা ভেঙ্গে ফেলে।মিহান তাড়াতাড়ি করে রুমে ঢুকে দেখে মিরা বেডে শুয়ে আছে।মিহান মিরার গালে হাত দিয়ে ডাকতে গেলে চমকে উঠে বলে।

মিহান : অহহহ মাই গড জ্বরে তো গায় পুরে যাচ্ছে।

মিহান মিরার মাথায় হাত দিয়ে পরিক্ষা করে রুমার দিকে তাকিয়ে বলে।

মিহান‌ : তুমি এক বোল পানি আর একটা রুমাল নিয়ে এসো।

রুমা : জ্বি ভাইজান আমি এখনি আনছি।

রুমা চলে গেলে মিহান ফোন বের করে ওর মম কে ফোন করে।

মম : কি রে মিহান এত সকালে এক রুম থেকে আর এক রুমে ফোন দিচ্ছিস যে?

মিহান : মম আমি বাড়িতে নেই।

মম : তাহলে কোথায়?

মিহান : মম আমি খান‌ বাড়িতে‌। তুমি এখনি একটু খান‌ বাড়িতে আসতে পারবে?

মম : কেনো কি হয়েছে?

মিহান : মম মিরার ভিশন জ্বর কোনো সেন্স নেই।এর আগে আমি অনেক পেশেন্ট দেখছি কিন্তু আজ আমার খুব ভয় করছে মম। আমার মিরার কিছু হলে আমি বাঁচবো না মম। ওর উজ্জল চেহারা টা কেমন ফেকাসে হয়ে গেছে।

মম : তুই উত্তেজিত হস না আমি এখনি আসছি।

মিহান : আচ্ছা মম তাড়াতাড়ি এসো।

মিহান ফোন রেখে দেখে রুমা পানি নিয়ে চলে এসেছে তারপর মিরার মাথায় হাত বুলিয়ে জল পট্টি দিতে শুরু করে।

চলবে… 🍁