না চাইলেও তুই আমার !! Part- 13
রাত এগারোটা বাজার পর পর ঝড় বৃষ্টি শুরুর কারনে তাড়াতাড়ি নিধিদের বাড়ির অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যায়।মিহান রাত আটটার পর থেকে মিরাকে ফোন করে যাচ্ছে কিন্তু মিরার ফোন বন্ধ। মিহান অনেকবার মিরার মামু আর বাবাকে ফোন করেছে কিন্তু তারা অনুষ্ঠানে থাকার কারনে ফোন রিসিভ করতে পারে নি।হল রুমে বসে সবাই কথা বার্তা বলতে থাকলে ডেনি এসে বলে মিরার মামুকে বলে।
ডেনি : স্যার মেম কি ঘুমিয়ে পড়েছে অনেকক্ষন ধরে তাকে দেখছি না।
মামু : ভালো কথা বলছো আমিও অনেকক্ষন ধরে মিরাকে দেখছি না।দাঁড়াও আমি একটা ফোন করে দেখি।
মামু ফোন বের করে দেখে মিহান অনেকবার ফোন করেছে।মামু মনে মনে মনে বলে।
মামু : মিহান এতবার ফোন করেছে কেনো?কোনো সমস্যা হয়নি তো?একবার ফোন করে দেখি না কি হয়েছে?
মামু মিহানকে ফোন দিলে একবার রিং হওয়ার আগেই রিসিভ করে ফেলে।
মিহান : হ্যালো মামু।
মামু : হ্যা মিহান বলো।এতোবার ফোন দিলে কোনো সমস্যা হলো না তো?
মিহান : এদিকের সব ঠিক আছে।কিন্তু মিরা ফোন বন্ধ কেনো?আটটা থেকে ওকে ফোন করে যাচ্ছি!কিছু কি হয়েছে মামু?আমার মিরা ঠিক আছে তো?
মামু : আশেপাশে আছে হয় তো!ও কোথায় আছে দেখে তোমাকে ফোন দিচ্ছি কেমন?
মিহান : আচ্ছা মামূ।
মিহান ফোন রেখে দিলে মামু ডেনির দিকে তাকিয়ে বলে।
মামু : দেখো তো মিরা কোথায় আছে ওকে বলো আমি ডাকছি!
ডেনি মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে মিরাকে খুঁজতে চলে যায়।
মিহান আজ রাতে খেতে নিচে নামেনি বলে ওর মম খাবার নিয়ে রুমে এসে দেখে মিহান খুব চিন্তিত দেখাছে।বেডের পাশের টেবিলে খাবারগুলো রেখে মিহানকে জিজ্ঞাসা করে।
মম : মিরার সাথে রাগা রাগি করেছিস?
মিহান : নো মম।
মম : তাহলে?
মিহান : মম ওর ফোন বন্ধ।ও কি আমার উপর রাগ করে ফোন বন্ধ করে রেখেছে?আজ সারাদিনে ফোন দেইনি তার জন্য?
মম : ধুর বোকা তা কেনো হবে।হয়তো ফোনে চার্জ নেই।
মিহান : কিন্তু মম আমার মনটা খুব অস্থির হয়ে আছে।আমার মনে হচ্ছে ও ভালো নেই।
মম : তেমন কিছু না।দেখেছিস বাইরে ঝড় বৃষ্টি বেরেই চলেছে আমারও খুব ঘুম পাচ্ছে এখন আয় তোকে খাইয়ে দিয়ে আমি যাই।
মিহান : হুম।
নিরিবিলি নিজন রাস্তায় দাঁড়িয়ে মিরা অনেকক্ষণ ধরে বৃষ্টিতে ভিজছে। চারিদিকে পিপিনে নীরবতা।জন মানবের ছিটে ফোটা নেই।বৃষ্টির ফোঁটার কারনে মিরার চোখের পানি আড়াল হয়ে যাচ্ছে। জোরে বাজ পড়লে মিরা আকাশের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করতে করতে বলে।
মিরা : যদি জানতেম আমার কিসের ব্যথা তোমায় জানাতাম।
কে যে আমায় কাঁদায় আমি কী জানি তার নাম।।
কোথায় যে হাত বাড়াই মিছে, ফিরি আমি কাহার পিছে–
সব যেন মোর বিকিয়েছে, পাই নি তাহার দাম।।
এই বেদনার ধন সে কোথায় ভাবি জনম ধ’রে।
ভুবন ভরে আছে যেন, পাই নে জীবন ভরে।
সুখ যারে কয় সকল জনে বাজাই তারে ক্ষণে ক্ষণে–
গভীর সুরে “চাই নে’ “চাই নে’ বাজে অবিশ্রাম।।
[ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ]
মিরা এইটুকু বলে চোখ বন্ধ করে নিঃশ্বাস নিয়ে বলতে থাকে।
মিরা : আমি আর কারো জন্য কষ্ট পাবো না।তারা আমাকে ছেড়ে ভালো আছে তাহলে আমি কেনো কষ্টে থাকবো?কালকেই আমি চলে যাবো এ দেশ ছেড়ে।এ দেশ শুধু আমার থেকে সব কিছু কেড়ে নিয়েছে।আমাকে শুধু কষ্ট দিয়েছে এ দেশ।কিছু ফিরিয়ে দেয় নি।নতুন করে আর কোনো কষ্ট সহ্য করতে পারবো না।নতুন করে কষ্ট পাবার আগে আমাকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে।থাকুক তারা তাদের মত!আমি আমার মত করে আমার জীবন গুছিয়ে নেবো। আমি আর কারো কথা ভাববো না। কাউকে চাই না আমার কাউকে না।
জোরে জোরে কয়েকটা বাজ পড়লে মিরা রাস্তায় হাটু গেড়ে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে।
অনামিকা অনেক রাত হওয়ার কারন সবাইকে ঘুমাতে পাঠিয়ে দেয়। হল রুমে অনামিকা, মিরার বাবা, মামু, ফুপি, আরিফ, বিজয় আর নিপা বসে আছে।অনেকক্ষণ পর ডেনি আসে মিরার মামুর কাছে।ডেনি বৃষ্টিতে পুরো ভিজে গেছে।মামু ডেনিকে দেখে বলে।
মামু : সেই কখন পাঠালাম তোমাকে আর তুমি এখন এলে?
ডেনি : সরি স্যার। মিরা মেম কে কোথাও খুঁজে পাই নি।
ফুপি : খুঁজে পাই নি মানে কি? ভালো করে খুঁজে দেখেছো?
ডেনি : মিরা মেম পার্টি শুরু হওয়ার পর ড্রাইভারের কাছ থেকে চাবি নিয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায়।মেম এর ফোন বন্ধ তাই লোকেশন বের করতে পাচ্ছি না। আমি গাড়ি নিয়ে আশেপাশে খুঁজে দেখেছি কিন্তু ঝড় বৃষ্টির কারনে বড় রাস্তায় একটা গাছ পড়ে আছে তাই গাড়ি নিয়ে বেশি দূর যেতে পারি নি।
অনামিকা : কি বলছো এসব মিরা বাংলাদেশের কিছু চেনে না কোথায় যাবে ও?
বাবা : ডেনি তুমি বড় রাস্তার পাশের পার্কটা দেখে এসেছো?
ডেনি : জ্বী স্যার আমি আশেপাশে ভালো ভাবে দেখে এসেছি।
বিজয় : আমার মনে হয় মিরা বৃষ্টির কারনে কোথাও আটকে আছে!
আরিফ রেগে ডেনিকে বলে।
আরিফ : তুমি না আপুর বর্ডিগাড?তোমার তো সারাক্ষন আপুর সাথে থাকার কথা!তখন আপুর সাথে না থেকে কোথায় ছিলে তুমি?
মামু : তোমরা চিন্তা করো না আমি দেখছি।পুলিশ কমিশনার সাথে আমার পরিচয় আছে আমি তাকে সব কিছু বলছি! মিরার গাড়ি কোথায় আছে এখন আশা করি খুব তাড়াতাড়ি জানতে পারবো।
মামু পুলিশের সাথে কথা বলে উঠতে না উঠতে মিহান আবার ফোন করে।
মামু : হ্যা বলো মিহান!
মিহান : মামু প্লিজ সত্যি বলেন মিরা কেমন আছে?আমার মন বলছে ও ভালো নেই।
মামু : মিহান মিরা বাড়ির কাউকে কিছু না বলে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেছে।আমি পুলিশকে ইনফম করেছি। তারা তাদের খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছে।
মিহান উত্তেজিত হয়ে বলে।
মিহান : আপনি এই কথাটা আমায় এখন বলছেন? এতগুলো মানুষের সামনে দিয়ে ও বেরিয়ে গেলো আর আপনার কেউ দেখতে পেলেন না!
মামু : তুমি চিন্তা করো না। আমরা তো খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছি। ও এর আগেও এরকম অনেকবার করেছে।
মিহান : আমি এখনি রাজশাহী রওনা দিচ্ছি।
মামু : তুমি এই ঝড় বৃষ্টির মধ্যে আসবে কি করে? মাঝে মাঝে তো বাজ ও পড়েছে।
মিহান : মিরা কোথায় কি অবস্থান আছে আমি জানি না।আমি এখানে হাতের উপর হাত উঠিয়ে বসে থাকতে পারি না। ওকে খুঁজে বের করতে হবে। আমি আসছি আপনি চিন্তা করবেন না।
মিহান ফোন রেখে গাড়ির চাবি নিয়ে অনুকে ডেকে ওকে সবকিছু বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।
চলবে… 🍁