অজানা কারণ

অজানা কারণ !! Part- 02

সারা রাতের পাশবিক অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে কখন যে জ্ঞান হারিয়েছি নিজেও জানিনা। সকাল ঠিক আটটায় আমার ঘুম ভেঙে গেল। বিছানা থেকে উঠে বসার জন্য অনেক চেষ্টা করলাম ।কিন্তু শরীরের প্রতিটা জোড়ায় জোড়ায় এতোটা ব্যথা যে, বারবার পড়ে গেলাম।
হাল ছেড়ে আমি যখন আবার শুয়ে পড়তে নিলাম। ঠিক তখন মিনহাজ আমাকে পেছন থেকে ধরে বলল,

_খুব বেশি কষ্ট হয়েছে নাকি? যদি বেশি কষ্ট হয়ে থাকে বলতে পারিস। তোর ব্যাথার উপযুক্ত ট্রিটমেন্ট করে দিব।
মিনহাজের কথাবার্তা এতটাই স্বাভাবিক লাগছে যে, কেউ বুঝতেও পারবে না রাতে আদৌ কিছু ঘটেছিল।
আমি মিনহাজ এর হাত সরিয়ে দিয়ে শক্ত করে চাপ দিয়ে বসে বললাম,

_আমার কোন ট্রিটমেন্টের প্রয়োজন নেই। আমি ভালো আছি। কিন্তু আমি ভাবছি এতকিছুর পরও আপনি স্বাভাবিক কিভাবে আছেন? আমার সামনে এসে দাঁড়াতে আপনার খারাপ লাগছে না?
মিনহাজ হাসতে হাসতে উঠে দাঁড়ালো। তবে কোন উত্তর না দিয়েই ঘর থেকে বের হয়ে গেল।

আমি ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশ রুমে গেলাম। ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখি মিনহাজের ছোট বোন খাটে বসে মিটমিট করে হাসছে।
আমি ওর কাছে গিয়ে বসে বললাম,
_দিয়া তুমি হাসছো কেন? হাসার মত কিছু ঘটেছে? যদি ঘটে থাকে তাহলে বলো আমিও একটু হাসতে চাই।

দিয়া কিছু বলার আগেই মিনহাজ ঘরের ভিতর ঢুকলো। মিনহাজের অফিস যাওয়ার তাড়া আছে। তাই ঘরে এসেই তৈরি হতে শুরু করে দিল।
আমি দিয়াকে আবারো বললাম,
_কি ব্যাপার দিয়া বল!

দিয়া হেসে গড়াগড়ি খেতে খেতে বলল,
_ভাবি মজার কিছু ঘটেছে কিনা সেটা তো আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করব। তুমি কেন আমাকে জিজ্ঞাসা করছো? তাছাড়াও কালকে তোমার জীবনের একটা সুন্দর মুহূর্ত ছিল। অবশ্যই সব মেয়েদের এই রাত নিয়ে অনেক স্বপ্ন থাকে। এখন বলো তোমার ঘুম কি ঠিকঠাক হয়েছিল? নাকি সারারাত,,,,,,?

কেন জানি দিয়ার এই প্রশ্ন আমার ভিতর তীরের মত আঘাত হানলো। হৃদয় ভেঙে খান খান হয়ে যাওয়ার উপক্রম হল। শুকনো একটা হাসি দিয়ে দিয়াকে বললাম,
_অনেক ভালো ঘুম হয়েছে রাতে! এই জীবনে এত সুন্দর ঘুম আর কখনো হয়নি। আর জানো কালকের রাতটা আমার খুব স্পেশাল ছিল। অন্য সব মেয়েদের থেকে অনেক বেশি স্পেশাল!

দিয়া বিস্ময়ভরা চোখে তাকিয়ে বলল,
_ওমা তাই নাকি? এত বেশি স্পেশাল !
কাহিনী কি? আচ্ছা ভাবি আগে এটা বলো ভাইয়া নিশ্চয়ই তোমাকে বিরাট কোনো গিফট দিয়েছে?

এবার নিজের চোঁখের জলও বাঁধ মানছে না। এমন সময় নিজের মন ও নিজের সাথে বেইমানি করে থাকে। মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে চোঁখের জল মুছে বললাম,
_হ্যাঁ দিয়া!
তোমার ভাইয়া আমাকে অনেক বিরাট একটা গিফট দিয়েছে। এমন গিফট খুব কম ভাগ মেয়েদের কপালে জুটে। ভাগ্যিস আমার ভাগ্যে ছিল এমন গিফট!
আমার জীবনে যদি তোমার ভাইয়াকে না পেতাম। তাহলে তো এই গিফটটা হাতছাড়া হয়ে যেত।

আমার কথা বলা শেষ হওয়ার পর আমি মিনহাজ এর দিকে তাকালাম। মিনহাজ ও আমাকে আড়চোখে দেখছে। মিনহাজের চোঁখের ভাষা বোঝার অনেক চেষ্টা করলাম।এ চাহনি কি কটাক্ষের নাকি আমার প্রতি অবিচার এর পর অনুতপ্তের সেটা বুঝতে পারলাম না।

দিয়া ঘর থেকে চলে যাওয়ার পর মিনহাজ আমার দিকে এগিয়ে আসলো। ইতিমধ্যে মিনহাজের এগিয়ে আসার ধরণ আমার চেনা হয়ে গেছে। এই এগিয়ে আসাটা সুবিধাজনক নয়। আমার ভাবনা টাই সত্যিই ঘটলো ‌। মিনহাজ আমাকে শক্ত করে বিছানার সাথে চেপে ধরে বলল,

_ তোর সাথে ঘটে যাওয়া এই ঘটনাগুলো আকার-ইঙ্গিতে দিয়ার সাথে শেয়ার করা টা কি খুব বেশি জরুরি? দেখ তোকে আমি বলে রাখছি বেশি বাড়াবাড়ি আমার কখনোই সহ্য হয় না। এই ধরনের বাড়াবাড়ি যদি আর দ্বিতীয়বার করিস ‌।তাহলে গত দুইবারের থেকেও ভয়ঙ্কর কিছু ঘটবে তোর সাথে।

মিনহাজের কথায় আমি ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে গেলাম। মিনহাজের থেকে ভয়ে দূরে সরতে থাকলাম।আমি কিছু বোঝার আগেই হঠাৎ করে মিনহাজ শরীরের সব শক্তি দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরল।

একবারের জন্য কেন জানি আমার মনে হল মিনহাজ আমাকে ভালবাসতে শুরু করেছে।
মিনহাজের স্পর্শের মাঝে এতটা কমলতা ছিল যে ,আমি আমার সাথে ঘটে যাওয়া সব দুঃখ-কষ্ট ভুলে গেলাম।

আমাকে অবাক করে দিয়েই মিনহাজ ওর দুই হাত দিয়ে আমার মুখ উপরে তুলে বললো,
_সারা জীবন তোমাকে অনেক ভালবাসতে চাই! ভালোবাসতে দিবে আমাকে?
আমি আর কিছু বলতে পারলাম না।বাঁধ ভাঙ্গা হৃদয়ে উপচে পড়া খুশির জোয়ার নিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম মিনহাজকে।

কিছু সময় এভাবে থাকার পর মিনহাজ আমাকে ধাক্কা মেরে বিছানায় ফেলে দিল। আমি উঠে মিনহাজের হাত ধরে বললাম,
_আবার কি হয়ে গেল আপনার? একটু আগেও তো সব ঠিক ছিল। আপনি খুব অন্যরকম হয়ে গিয়েছিলেন। আপনি আমাকে ভালোবাসতে চেয়েছিলেন।

মিনহাজ আমাকে দেয়ালের সাথে ধাক্কা দিয়ে লেপ্টে ধরে বলল,
_তোর কি মনে হয় আমি তোকে ভালোবাসতে পারি? আচ্ছা তুই এ সব ভাবিস কি করে? তোকে ভালবাসবো এ কথা ভাবতেও আমার ঘেন্না লাগে।

আমি ব্যথায় কঁকিয়ে উঠে বললাম,
_কিন্তু আপনি একটু আগে আমাকে বলেছেন আপনি আমাকে ভালবাসতে চান। যদি আপনার এতটাই ঘেন্না লাগে তাহলে এ কথা কেন বলেছিলেন?

মিনহাজ এবার আমাকে ছেড়ে দিয়ে হাসতে হাসতে বলল,
_কি বোকা তুই তাই না? মা এসে গিয়েছিল। তাই মা কে দেখানোর জন্য আমি এসব কিছু বলেছি। মা তো আমাকে সুখে আছি দেখতে চায়। আর আমি মাকে সেটাই দেখিয়েছি। তোকে আলাদা করে ভালবাসার কোন ইচ্ছে আমার নেই।

আমি হেঁচকি দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললাম,
_সুখে থাকার জন্য তো আরো অনেক মেয়ে ছিল। আমাকে কেন আপনার বিয়ে করতে হল? আপনার মা তো আমাকে বিয়ে করতে আপনাকে বাধ্য করেনি। বরং আপনি বাধ্য করেছেন আমাকে আপনার সাথে বিয়ে করতে। কিন্তু কেন করছেন আপনি আমার সাথে এরকম? না নিজে সুখ পাচ্ছেন আর না আমাকে সুখ দিচ্ছেন!

মিনহাজ আর কোন কথা না বলে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। আমি অনবরত কেঁদেই যাচ্ছি। এমন সময় শাশুড়ি মা এসে আমার কাঁধে হাত রেখে বললেন,
_মা রাতে তোমার ঘুম ভালো হয়েছে? শরীর কি ঠিক লাগছে?

আমি নিজেকে সংবরণ করে বললাম,
_হ্যাঁ মা আমি ঠিক আছি। রাতেও ঘুম ভালো হয়েছে। তবে শরীরটা একটু খারাপ ছিল ।তাই ঘুম থেকে উঠতেও বেলা হয়ে,,,,,

শাশুড়ি মা আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,
_না না। ঠিক আছে কোন ব্যাপার না। আমার মেয়েরও শরীর খারাপ হয় মাঝে মাঝে। আর ও তখন বেলা করেই ঘুম থেকে উঠে। তুমিও তো আমার মেয়ে তাইনা?

আমি লাজুক ভঙ্গিতে হেসে মাথা নাড়লাম। বড্ড অবাক লাগছে! এত ভাল একজন মায়ের এত জঘন্য পর্যায়ের ছেলে কিভাবে হতে পারে? সেটাও আবার মায়ের চোখের আড়ালে। মিনহাজ নিজের মায়ের সামনে পৃথিবীর সবথেকে ভালো ছেলে হয়ে থাকে। আর মায়ের আড়ালে??

_শোন মামনি! এটা যে মিনহাজের বাড়ি সেটা তো তুমি জানোই। আমাদেরও আলাদা একটা বাড়ি আছে। আমরা এখানে এসেছিলাম শুধু তোমাদের বিয়ের জন্যই। এখন তো আমাদের ফিরে যেতে হয় তাই না?
আমরা একটু বাদেই বেড়িয়ে যাব। তুমি সাবধানে থেকো !আর হ্যাঁ অবশ্যই নিজের খেয়াল রেখো।
শাশুড়ি মাকে সালাম করে তার থেকে বিদায় নিলাম।

মিনহাজ সহ সবাই আমার থেকে বিদায় নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। আমি একা একা বাড়ির সব রুম ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম। এত বিশাল বাড়িতে মিনহাজ একাই কেন থাকতো ?সেটাই বুঝতে পারলাম না। একজন একা মানুষের জন্য এত বিশাল বাড়ির কোন প্রয়োজন আছে বলে তো আমার মনে হয়না।

হঠাৎ কেউ একজন বেল চাপলো। দরজা খুলতেই আমার চোখ চড়কগাছ। মিনহাজ এসেছে তবে ওর সাথে একটা মেয়েও আছে। যতই হোক মিনহাজ আমার স্বামী। ওর সাথে অন্য কোন মেয়েকে দেখলে আমার খুব খারাপ লাগবে! এটাইতো স্বাভাবিক।
সেই খারাপ লাগা থেকেই আমি মিনহাজ কে বললাম,

_আপনার সাথে থাকা এই মেয়েটিকে? আর আপনি যে চলে এলেন?
মিনহাজ কিছু বলার আগেই ওই মেয়েটি বলে উঠল,
_আমি ওর স্ত্রী জয়া। তুমি কে? আর আমার রাস্তা রুখে দাঁড়িয়েছো কেন?
মেয়েটির কথা শুনে আমি পুরাই বোকা বনে গেলাম।
আমতা আমতা করে বললাম,
_আপনি যদি উনার স্ত্রী হন। তাহলে আমি কে?

মিনহাজ আমাকে ধাক্কা দিয়ে একপাশে সরিয়ে দিয়ে মেয়েটির হাত ধরে ঘরের ভিতর ঢুকলো। তারপর আমার কাছে এসে বললো,
_খবরদার! ফরমায়েশ গিরি করবি না।
আমি কি কখনো বলেছি তুই আমার স্ত্রী?আর তোকে না কালকে বলে দিলাম। আমি তোকে স্ত্রী হিসেবে মানিনা।

মিনহাজ মেয়েটির হাত ধরে একটা ঘরের ভিতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। আর সাথে সাথে আমার ভিতরে থাকা আশার আলো ধপ করে নিভে গেল।
নিজের ভিতরে থাকা কষ্টগুলো এত পুড়ছে যে, চোঁখে জলও আসছে না। হঠাৎ আমার পাশে থাকা ফোনে রিং বেজে উঠল। ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে শাশুড়ি মা,

_মামনি শোনো !
মিনহাজ ভুলে ওর ওয়ালেট আর সেল ফোন টা বাসায় রেখে এসেছে। ড্রাইভার বাসায় যাচ্ছে। তুমি ড্রাইভার এর সাথে ওগুলো দিয়ে দিও।মিনহাজের সময় নেই আমাদের নামিয়ে দিয়ে অফিস চলে যাবে ।তাড়াতাড়ি ও গুলো গুছিয়ে রেখো মা।

_কিন্তু মা মিনহাজ তো,,,,, আমি কিছু বলতে যাব তার আগে মা ফোন কেটে দিলেন। আমি পুরো কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলাম। মিনহাজ যে রুমে আছে দৌড়ে আমি সে রুমের দিকে গেলাম।
দরজার কাছে এসে আমি তিন পা পিছিয়ে গেলাম।
দরজার নিচ দিয়ে ঢালা রক্তের বন্যা লিভিং রুম পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।
কিন্তু এটা ,,,,,,,,,,

(চলুক,,,,,,,,,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *