না চাইলেও তুই আমার !! Part- 04
মিরা নিরাকে কোলে নিয়ে অফিসে ঢোকে।নিরাকে মিরার কেবিনের টেবিলের উপর বসিয়ে চুলগুলো ঠিক করে কপালে চুমু দিয়ে বলে।
মিরা : মামনি তুমি একটু এখানে বসো।আমি একটু কাজ করে আসি।কোনো সমস্যা বা কোনো দরকার পড়লে ডেনি আঙ্কেলকে বলো।তারপর আমরা দুজন ঘুরতে যাবো কেমন!
নিরা হাসি মুখে বলে।
নিরা : ওকে মমনি।
কিছুক্ষন পর মিরা এসে নিরাকে সাথে নিয়ে একটা পার্কে যায়।নিরা আর মিরা দুজনে সারা পার্ক দৌড়াদৌড়ি করে।মিরা ক্লান্ত হয়ে ঘাসের উপর বসে পড়লে নিরাও দৌড়ে এসে ওর পাশে বসে পড়ে।
নিরা : মামনি তুমি আগে কেনু আমাল কাথে আসোনি?তাহুলে আমি আর তুমি অনেক খেলা করতাম।
মিরা নিরার কথা শুনে নিরাকে সুরসুড়ি দিতে দিতে বলে।
মিরা : তাই না পাকা বুড়ি!
নিরা হাসতে হাসতে বলে।
নিরা : অহহহয় মামানি।
মিরা : আচ্ছা চলো এখন একটু শপিং মলে যাবো তারপর বাড়ি যাবো।কেমন!
নিরা : তিক আথে মামনি।
শপিং এসে মিরা নিরাকে অনেকগুলো চকলেটের বক্স কিনে দেয়।মিরার কিছু দরকারি জিনিস কিনে আসার সময় নিরা একটা খেলনার দোকানে টেডির দিকে তাকিয়ে আছে।মিরা বিষয়টা খেয়াল করে মুচিকে হেসে দোকানের দিকে যায়।নিরা যা যা পছন্দ করেছে মিরা নিরাকে সব কিনে দিয়েছে।নিরার থেকে ডাবল সাইজের চারটা টেডি কিনে দিয়েছে।নিরার খুশি দেখে কে?নিরা খুশি হয়ে চুমু দিয়ে সারা মুখ ভরিয়ে দিয়েছে মিরার।মিরা হাসি মুখে নিরাকে কোলে নিয়ে এক হাতে নিরার চকলেটের প্যাকেট নিয়ে ডেনি আর জনকে খেলনাগুলো নিয়ে আসতে বলে মিরা আর নিরা বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হয়।
এদিকে অনামিকা তার স্বামী আর ছেলেদের আজ দুপুরে বাড়িতে খেতে আসতে বলেছে।খান বাড়ির সবাই আজ একসাথে খাবে।অনামিকার কথা শুনে তারাও বাড়িতে চলে আসে।নিধি আর নিঝুম মিরার বাবা আর ভাইদের নিরা আজ সকালে মিরার সাথে কি কি করেছে তা সোফায় বসে বর্ননা দিচ্ছে।মিরার মামু জানতো মিরা এখানে কিছুদিন থাকলে মিরার রাগ কমে যাবে।এরমধ্য ডোল বেল বেজে উঠে নিঝুম উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেখে মিরা আর নিরা এসে গেছে।নিঝুম হাত ভারিয়ে নিতে চাইলে নিরা যাবেনা বলে দেয়।মিরা নিরাকে নিয়ে হল রুমে এলে নীলা এসে বলে।
নীলা : আজ মাম্মার কথা একটুও মনে পড়েনি তাই না?
নিরা : মাম্মা জানু আমি আল মামানি আদ খুব মদা কলছি।মামনি আমালে কত কিথু তিনে দেয়েছে।
নীলা : তা কি কি কিনে দিয়েছে তোমার মামনি?
নিরা কিছু বলবে তার আগে ডেনি এসে বলে।
ডেনি : মেম এই খেলনাগুলো কোথায় রাখবো?
মিরা : এগুলো সব নিরার রুমে নিয়ে যাও।
চারজন লোক, ডেনি আর জন জন মিলে সব খেলনাগুলো নিরার রুমে নিয়ে যায়।মিরার ফুপি অবাক হয়ে বলে।
ফুপি : এত খেলনা কিনে দেওয়ার কি দরকার ছিলো।একটা বা দুইটা কিনে দিলেই তো হতো!
মিরা : আমার এঞ্জেলকে আমি এইগুলো কিনে দিয়েছে তোমরা এত কথা বলছো কেনো?মামনি তুমি তোমার মাম্মার কাছে যাও,ফ্রেশ হয়ে আসো একসাথে লাঞ্চ করবো কেমন!
নিরা : আথা মামনি!
মিরা আর কিছু না বলে নিরাকে নীলার কোলে দিয়ে উপরে চলে যায়।মিরার মামু মিরার বাবাকে বলে।
মামু : আমি তোকে বলেছিলাম না মিরা এখানে কিছুদিন থাকলে আর তোদের উপর রাগ করে থাকতে পারবে না।দেখলি তো আজ তার প্রমান পেলি।
নিলয় : তুই সত্যি বলছিস আমার মেয়েটা আগের মত হয়ে যাবে?
মামু : চিন্তা করিস না এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা!
কিছুক্ষনের মধ্যে মিরা ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে আসে।সবাই একসাথে খেতে বসে।সবাই খাওয়া শুরু করলে মামু মিরাকে বলে।
মামু : মামনি তুই তো অনেক বছর পর বাংলাদেশে এলি,এখন কিছুদিন দেশটাকে ভালো করে ঘুরে দেখ,আর অফিসের কাজ না হয় ততদিন আমি সামলে নেবো।
মিরা খেতে খেতে বলে।
মিরা : আইডিয়া টা খারাপ না কিন্তু আমি তো কিছুই চিনি না আর একা একা ঘুরে দেখে মজা পাবো না।তাছাড়া আজ পর্যন্ত যতোবার ঘুরতে গেছি তোমাকে সাথে নিয়ে গেছি।
মামু : তুই কিছু চিন্তা করিস না।আরিফ, জারিফ, নীলা, নিধি, আর নিঝুম এরা তোকে ভালো করে ঘুরে দেখাবে।
মিরা : ঠিক আছে।
মামু আর কিছু বলার আগে ডেনি এসে হাজির।
ডেনি : মেম ডাক্তার মিহান চৌধুরী এসেছে আপনার সাথে দেখা করতে।
মিরা : এই মিহান চৌধুরী টা আবার কে?
এইটুকু বলে মিরা পানি খেতে শুরু করে।
ডেনি : কাল যে ডাক্তার আপনার ট্রিটমেন্ট করেছিল সে হলো ডাক্তার মিহান চৌধুরী।
এই কথা শুনে মিরা বিষম খেয়ে কাশতে শুরু করে।কোনো মতে নিজেকে সামলে নিয়ে বলে।
মিরা : ঐ পাগল ডাক্তার এখানে কি করছে?
এরমধ্যে কেউ একজন বলে।
-আমার জান যেখানে থাকবে আমিও তো সেখানে থাকবো তাই না।
মিরা তাকিয়ে দেখে ডাক্তার মিহান চৌধুরী।মিরা চোখ মুখ শক্ত করে বলে।
মিরা : কাল থেকে আপনার ফাজলামি করে যাচ্ছেন আমার সাথে।এখন আমার বাড়ি পর্যন্ত চলে এসেছেন।কি চাই?
মিহান হাসি মুখে বলে।
মিহান : তোমাকে জান।
মিহানের কথা শুনে খান বাড়ির সবার মাথা ঘুরে যাবার মত অবস্থায়।এই ছেলে বোধহয় পাগল টাগোল কিছু হয়েছে।মিরা কিছুক্ষন ভেবে খাবার রেখে উঠে মিহানের সামনে গিয়ে বলে।
মিরা : ও হ্যালো মিস্টার কাল থেকে কি আজে বাজে কথা বলে যাচ্ছেন।আপনি জানেন আমি বিবাহিত আমার Husband আছে। সে কানাডা থাকে।আপনি আর আমাকে বিরক্ত না করলে খুশি হবো।
মিরার কথা শুনে মিহান মুচকি হেসে সোফায় বসে গাড়ির চাবির রিং ঘুরাতে ঘুরাতে বলে।
মিহান : পুরো নাম মিরা খান।জন্মো নিয়েছো বাংলাদেশে কিন্তু বড় হয়ে ওঠা,লেখাপড়া সব মালয়েশিয়া।সবথেকে বেশি ভালোবাসো তুমি তোমার মামুকে।মাত্র সতের বছর বয়সে বিজনেস জয়েন্ট করো।বিজনেস ওয়ার্ল্ডে তোমাকে বিজনেসর লেডি মাফিয়া বলে ডাকে।সবথেকে পছন্দের খাবার হলো Spicy খাবার।তুমি অবসর সময়ে ঘুরতে ভালোবাসো।সবথেকে বেশি তুমি পাহাড়ে ঘুরতে ভালোবাসো।খুব সুন্দর প্রকৃতির ছবি তুলতে পারো তুমি।আর তাছাড়া গান চালাতে পারো।সাতার জানো নাচ জানো কেটাটে জানো আর আর ধুর আর মনে পড়ছে না।যাই হোক সো আমাকে মিথ্যা কথা বলে লাভ নেই আমি তোমার ব্যাপারে সবকিছু জানি জান।
খান বাড়ির সবাই হা হয়ে গেছে মিহানের কথা শুনে।এতকথা তো ওরাও জানে না।মিরা বেশ অবাক হয় মিহানের কথা শুনে এতকিছু কি করে জানলো সে?সবথেকে বড় কথা এখন আবার কি পাগলামি শুরু করে কে জানে?মিহার উঠে এসে মিরার সামনে এসে বলে।
মিহান : শোনো এতো কথা ঘুরিয়ে পেচিয়ে বলতে পছন্দ করি না আমি।কাল যখন তোমাকে দেখেছি তখন মনে হয়েছে তোমাকে আমি অনেক আগে থেকে চিনি।যেনো তোমার সাথে যেনো আমার আত্মার সম্পর্ক।মম আমার বিয়ের জন্য এতদিন মাথা খারাপ করে দিতো কাল রাতে আমি তোমার কথা মম আর পাপাকে বলে দিয়েছি তারা তো পারে না আজই বাড়ির বউ করে নিয়ে যায়।কাল রাতে তোমার কারনে আমি ঠিক করে খেতে পারিনি।তোমার কারনে কাল সারা রাত আমি ঘুমতে পারিনি।যখন একটু চোখ বোঝার চেষ্টা করেছি তোমার মায়াবি চেহারা বারবার আমার চোখের সামনে ভেসে উঠেছে।অনেক কষ্টে ভোর রাতের দিকে একটু ঘুমাতে পারি।ঘুম থেকে উঠে দেখি ১০ টা বাজে।তখন কোনো মতে ফ্রেশ হয়ে হসপিটালে ছুটি কিন্তু গিয়ে যখন তোমাকে পাই না মাথা খারাপ হয়ে যায় তখন আমার রিশেপসন থেকে তোমার নাম বাড়ির ঠিকানা পাই।তোমার কাছে আসবো বলে বের হতে গেলে একটা ইমারজেন্সি পড়ে যায়।এখান আসার সময় গাড়িতে বসে কি মনে করে Social Media তোমার নাম লিখলে এরপর তোমার নামের অনেকগুলো Article পেয়ে যাই।
মিরা রেগে থাকলেও বেশ শান্ত গলায় বলে।
মিরা : সবিই তো যখন জানের তখন এটা জানেন না কেউ আমাকে প্রপোজ করলে তাদের সাথে আমি কি করি?যাই হোক আমি বলে দিচ্ছি।আমার বিজনেস পার্টনারে ছেলে আমাকে যখন প্রপোজ করেছিলো আমি কি করেছি জানের তার ডান পায়ে একটা গুলি করেছিলাম।মামুর বন্ধুর ছেলে আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলো।মামুর বন্ধুর ছেলে বলে মেরে হাত পা ভেঙে দিয়েছিলাম মামুর জন্য বেশি কিছু করিনি।এখন যদি আপনি আপনার ভালো চান তাহলে এখান থেকে চলে যান।
মিরা এসব বলে উপরে চলে গেলে মিহান মিরার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয়।
চলবে…🍁