না চাইলেও তুই আমার

না চাইলেও তুই আমার !! Part- 05

এতক্ষণ সবাই চুপচাপ সবকিছু শুনছিল। মিরার মামুর মিরার এসব বিষয়ে তিনি জানেন কিন্তু মিরার বাড়ির লোকজন ভাবতেই পারিনি মিরা রেগে গেলে এত ভয়ানক। মামু মিহানের কাছে গিয়ে বলে।
মামু : তুমি কে? আর তখন থেকে মিরার সাথে কি আজে বাজে কথা বলে যাচ্ছো।
মিহান : এখানে আজে বাজে কথার কি আছে?আমি মিরাকে ভালোবাসি।কাল আমি প্রথম মিরাকে দেখে ভালোবেসে ফেলি। আমি মিরাকে এখন বিয়ে করতে চাই।
নিলয় : তোমার নাম কী? তোমার বাবার নাম কী?
মিহান : আমি ডাক্তার মিহান চৌধুরী। বাবা আকাশ চৌধুরী।চৌধুরী গ্রুপ অফ কোম্পানির ওনার।
মামু : তুমি যে তোমার ভালোবাসার মিথ্যা নাটক করে মিরাকে ফাসাছো না তার কি প্রমান আছে?
মামুর এমন কথায় মিহান খুব রেগে যায় তারপরও মাথা ঠান্ডা করে বলে।
মিহান : বলুন কি প্রমান দিতে হবে আমায়?
মামু : তুমি পারবে তোমার ভালোবাসা দিয়ে ওর কষ্ট দূর করতে?পারবে তোমার ভালোবাসা দিয়ে ওকে আগলে রাখতে?
মাহিন ভাবতেই পারেনি মিরার মামু ওকে এমন করে প্রমান দিতে বলবে।
মিহান : পারবো আমি।ওর জন্য আমি সব করতে পারবো।কিন্তু ওর কিসের কষ্ট সেটাই তো আমি জানি না।
মামু : তুমি আমাদের সাথে পাশের রুমে চলো।সবকিছু বুঝিয়ে বলছি।
মিহান মিরার মামু আর বাবার সাথে পাশের রুমে গেলে ওরা মিহানকে মিরার জীবনের সবকিছু ভিতান্তররে বলে। মিরার বাবা মায়ের ডিভোর্সের কথা একটু একটু বদলে যাওয়ার কথা।সবকিছু বলে মিহানকে।মিহার মিরার মামু আর বাবাকে কথা দেয় মিহান ওর ভালোবাসা দিয়ে মিরাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনবে।প্রায় দুই তিন ঘন্টা কথা বলে তারা।মিহান বলে দুই একদিনের মধ্য ওর বাবা মা এসে বিয়ের বেপারে কথা বলে যাবে।মিহান হল রুমে এসে দেখে মিরার দুই ভাইয়ের বউ আর নিঝুম বসে কি নিয়ে কথা বলছে।মিরার বাবা কিছুক্ষন আগে দেওয়ালে কিছু ছবি দেখিয়ে সবার নাম বলেছিলো।মিহান নিঝুমকে ডাক দিয়ে বলে।

মিহান : নিঝুম শোনো একটু!
নিঝুম : জ্বি বলুন।
মিহান : এখন তোমার আপু কোথায়?
নিঝুম : আপনি সত্যি আপুকে ভালোবাসেন?
মিহান মুচকি হেসে বলে।
মিহান : কেনো আমাকে জিজু হিসাবে পছন্দ না?
নিঝুম : কেনো পছন্দ হবে না।আপনার মত‌ একজন Handsome জিজু ভাবতেই আমার আনন্দ লাগছে।
মিহান : এখন বলো তোমার আপু কোথায়?
নিঝুম : আপুকে দেখলাম নিরাকে নিয়ে বাড়ির বাইরে গেছে।মেবি বাড়ির বাগানে আছে।
মিহান : থ্যাংক ইউ সুইট শালিকা আমার।
মিহান হাটতে হাটতে বাগানে চলে যায়। গিয়ে দেখে মিরা দোলনায় উপর শুয়ে আছে। নিরা মিরার বুকের উপর শুয়ে আছে মিরা নিরাকে দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে আছে। মৃদু বাতাসে দোলনা হালকা দুলছে। মিহানের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। মিহান আস্তে আস্তে মিরার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।বাতাসে মিরার অবাধ্য চুলগুলো এলোমেলো হয়ে মুখের উপর আছড়ে পড়ছে মিহান একটা আঙ্গুল দিয়ে চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে এক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। মিহান ফোন বের করে মিরার ঘুমন্ত মুখের ছবি তুলে বিড়বিড় করে “ভালোবাসি” বলে বেরিয়ে যায়।

সন্ধ্যার পর থেকে একটা অননোন নাম্বার দিয়ে মিরাকে ফোন করে যাচ্ছে।মিরা বাধ্য হয়ে ফোন silent করে রেখেছে।অফিসের কাজ করতে করতে কখন যে রাত আটটা বেজে গেছে তা টেরই পায়নি।কাজ শেষ করে কি মনে করে মিরা ফোন হাতে নিয়ে বেশ অবাক হয়। সন্ধ্যার পর থেকে সেই নাম্বারটা থেকে ৭২ টা মিসকল।কে হতো পারে চিন্তা করতে করতে আবারো ফোন বেজে উঠে।এবার মিরা ফোন রিসিভ করে কানের কাছে নিয়ে কিছু বলবে তার আগে ঝাঁঝালো কন্ঠে কেউ বলে উঠে।
সেই সন্ধ্যা থেকে ফোন করে যাচ্ছি একবার তো ফোনটা তুলে দেখে কে ফোন করেছে। এদিকে আমি তোমার চিন্তায় চিন্তায় কোনো কাজে মন বসাতে পারছি না সেদিকে কারো খেয়াল নেই।
মিরা অবাক হয়ে বলে।
মিরা : কে আপনি? আর আমাকেই এই কথাগুলো বলছেন কেনো?
প্রথম প্রশ্নের হল কে আমি? আমি মিহান চৌধুরী। দ্বিতীয় প্রশ্ন আমি কেনো তোমাকে এসব কথা বলছি তোমাকে বলবো না তো কাকে বলবো।
মিরা দাঁতে দাঁত চেপে ধরে বলে।
মিরা : আমার ফোন নাম্বার আপনি কোথা থেকে পেয়েছেন?
মিহান : তোমার জন্য সবকিছু করতে পারি সেখানে তোমার নাম্বার টা তো সামান্য ব্যাপার।

মিরা : আমাকে আর ফোন দিয়ে বিরক্ত করবেন না।

মিহান : তোমাকে ফোন করবো না তো কি পাশের বাড়ির জরিনাকে ফোন করবো?

মিরা : আপনি এসব কথা আমাকে বলছেন কেনো?

মিহান : শোনো আজ হসপিটালে অনেক কাজের চাপ না হলে আমি যে কি করতাম তা নিজেও জানি না।

মিরা : কি করতেন আপনি?

মিহান : আজকেই তোমাকে বিয়ে করে আমাদের বাড়ির ব‌উ করে নিয়ে যেতাম!

মিরা রেগে গিয়ে বলে।

মিরা : আমি আপনাকে ভালোবাসি না আর কতবার বলতে হবে এই কথাটা!

মিহান : তোকে আমাকে ভালোবাসতে হবে না। শুধু আমি ভালোবাসলেই হবে। আমি সহজে রাগি না একবার রেগে গেলে কিন্তু আমি কি করবো আমি নিজেও জানি না।কাল যখন তোকে প্রথম দেখেই প্রেমে পড়ে যাই তখন থেকে তুই শুধু আমার। তোর উপর তোর কোনো অধিকার নেই শুধু আমার অধিকার আছে। #না_চাইলেও_তুই_আমার।

মিরা : আপনি কিন্তু আপনার সীমানা ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। আপনার সাহস দেখে আমি অবাক না হয়ে পারছি না। আমাকে তুই বলার সাহস পান কোথা থেকে আপনি?

মিহান : আমার সাহস তুমি। তোমার ভালোবাসা। শোনো জান এখন রাখি একটু কাজ পরে গেছে। রাতে কথা হবে। bye & I love you .

মিরা ফোনটা বিছানার উপর ছুঁড়ে ফেলে নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। একা একা বিড়বিড় করে বলছে।

মিরা : না এই লোকটাকে কিছু একটা করতে হবে।

পরেরদিন সকালে ছয়টা বাজে বাজে অবস্থা। জানালার পর্দা ফাক দিয়ে একগুচ্ছ নতুন ভোরের আলো এসে মিরার চোখে পড়ে। মিরা পিটপিট করে চোখ খুলে পাশে কেউ আধসোয়া অবস্থায় দেখে লাফ দিয়ে উঠে। সে আর কেউ নয় মিহান।মিরাকে রাতে অনেকবার ফোন করেছে কিন্তু মিরা ফোন রিসিভ করে নি। মিহার ভোর রাতে হসপিটালের কাজ শেষ করে এখানে চলে এসেছে।মিরার ঘুমন্ত মুখ দেখতে দেখতে কখন যে চোখ টা লেগে গেছে তা টের পাইনি। মিরার লাফ দেওয়ার কারনে মিহানের ঘুম ভেঙ্গে যায়।

মিরা : আপনি এখানে কি করছেন?

মিহান চোখ মুখ লাল করে বলে।

মিহান : তোমার ফোন কোথায়?

মিরা : কেনো?

মিহান : যা জিজ্ঞাসা করছি তাই বলো!

মিরা ফোন খুঁজতে খুঁজতে ফোনটা বালিশের নিচে পায়।মিরা ফোনের লক খোলার আগেই মিহান ছো দিয়ে হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নেয়। মিরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই মিহান ফোনটা ফ্লোরে আছাড় মারে।মিরা একবার ফোনটার দিকে তাকায় আর একবার মিহানের দিকে তাকিয়ে রেগে বলে।

মিরা : আপনি এত বড় সাহস কে দিয়েছে আমার ফোন ভাঙ্গার? আপনি আমার রুমে আমার বেডে কি করছেন?

মিহান শান্ত গলায় বলে।

মিহান : তুমি আমার ফোন যতবার রিসিভ করবে না আমি ততবার তোমার ফোন ভাঙ্গবো।

মিরা আর কিছু না বলে নিচে হল রুমে গিয়ে চিৎকার করে ডেনিকে ডাকে কিন্তু কোনো খোঁজ নেই। এদিকে মিরার চিৎকারে বাড়ির সবাই হল রুমে উপস্থিত হয়ে যায়। এরমধ্যে মিহান ডোন্ট কেয়ার ভাবে আস্তে আস্তে সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসে।

ফুপি : কি হয়েছে পরি? সকল সকল এত রেগে আসিস কেনো?

মিরা মিহানকে দেখিয়ে বলে।

মিরা : এই লোকটাকে বাড়িতে ঢুকতে দিয়েছে কে?

অনামিকা : তোমার মামু বলেছে।মিহান এ বাড়িতে এলে যেনো কোনো অসুবিধা না হয়।

মিরা : মামু কোথায়?

ফুপি : তুই ভুলে গেলি তোর বাবা আর মামু শহরের বাইরে গেছে কি যেনো কাজে।

মিহান এতক্ষণ সবকিছু দেখে বাঁকা হাসছিল। নিজের চুল ঠিক করতে করতে মিরার সামনে এসে বলে।

মিহান : এই দুই দিন আমি হসপিটালের কাজে ব্যস্ত থাকবো। আমি যখন ফোন করবো তুমি তখন ফোন রিসিভ করবা না হলে ঐ ফোনটার মত তোমাকে তুলে আছাড় মারবো।

মিরা চোখ লাল করে মিহানের দিকে তাকালে মিহান মুচকি হেসে চলে যায়। মিহান চলে যাবার সাথে সাথে ডেনি হল রুমে এলে মিরা চিৎকার করে বলে।

মিরা : কোথায় ছিলে এতক্ষণ?

ডেনি : আমি তো বাগানে Exercise করছিলাম। আসার সময় মিহান স্যার এটা আপনাকে দিতে বলেছে।

ডেনি একটা ফোন মিরার দিকে এগিয়ে দেয়। মিরা ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে ওর ফোনের মত সেম একটা ফোন।মিরা ফোনটা দেওয়ালে ছুড়ে মেরে রেগে হনহানিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।

চলবে… 🍁