না চাইলেও তুই আমার !! Part- 03
মিরা সকালে ঘুম থেকে উঠে নিচে হল রুমে বসে ল্যাপটপ আর কিছু ফাইল নিয়ে অফিসের কাজ করতে থাকে। আশেপাশে কি হচ্ছে না হচ্ছে সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। আরিফ আর নীলার মেয়ে নিরা কখন যেনো সুযোগ পেয়ে নিচে এসে মিরার ফাইলের কাগজপত্র দিয়ে খেলতে শুরু করে।নীলার ছোট বোন নিঝুম এসে নিরা এই অবস্থায় দেখে ও দৌড়ে গিয়ে নীলা আর নিধিকে ডেকে আনে।ওরা তিনজন নিচে এসে দেখে নিরা কাগজ ছিঁড়ে ফেলেছে।ওরা একে অপরকে দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিলে নীলা ধীর পায়ে মিরার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে ভয়ে ভয়ে বলে।
নীলা : আআআপু!
কারো কথা শুনে মিরা ল্যাপটপ থেকে মুখ তুলে তাকায়।
নীলা : আআপু সরি।
মিরা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করে।
মিরা : সরি কেনো?
নীলা : নিরার জন্য তোমার ইম্পর্ট্যান্ট ফাইল নষ্ট হয়ে গেছে।
মিরা ফাইলের কথা শুনে ফাইলগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখে একটা ফাইল সম্পন্ন নষ্ট করে ফেলেছে।মিরা রেগে কিছু বলবে তার আগে চোখ যায় বাচ্চার দিকে।মিরার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হেসে দেয়।বেশ মিষ্টি দেখতে বাচ্চাটাকে।মিরা সোফা থেকে উঠে গিয়ে নিরার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে জিজ্ঞাসা করে।
মিরা : নাম কি তোমার?
নিরা : নিলা।
মিরা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে।
মিরা : নীলা?
নীলা : আপু ওর এখনো স্পষ্ট কথা বলতে পারে না।তোতলিয়ে কথা বলে।ওর নাম নিরা।
মিরা এবার বেশ গম্ভীর হয়ে নিরাকে প্রশ্ন করে।
মিরা : তুমি আমার এই কাগজগুলো নষ্ট করেছো কেনো?জানো এই কাগজগুলো আমার দরকারি কাগজ।
নিরা : আমি তি তোরবো? আমি তো নিঝুম তনিকে আমার সাথে খেলা তরতে বলেথি তিন্তু তনি তো আমার থাথে খেলা না করে শুধু থেলপি তুলে।তাই তো আমি একা একা খেলা করি।
মিরা ওর কথা কিছু না বুঝলে নীলার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করে।
মিরা : ও কি বলছে?
নীলা হেসে দিয়ে বলে।
নীলা : ও সকালে আমার ছোট বোন নিঝুম মানে ওর নিঝুম মনিকে ওর সাথে খেলতে বলেছিল কিন্তু নিঝুম ওর সাথে না খেলে সেলফি তুলতে থাকে।তাই ও একা একা খেলছে।
ইটুকু মেয়ের পাকা পাকা কথা শুনে মিরার ঠোঁটের কোনায় হাসি ফুটে উঠে।
নিরা : আচ্ছা তুমি তে? তোমাকে তো আগে কখুনো দেখিনি।
নীলা : এটা তোমার ফুপি মা। এতদিন বিদেশে ছিলো।
নিরা লাফ দিয়ে মিরার সামনে গিয়ে ওর গালে চুমু দিয়ে গলা ধরে ঝুলে থাকে জিজ্ঞাসা করে।
নিরা : তুপি মা আমার থাথে খেলবে?
মিরা হেসে দিয়ে বলে।
মিরা : সোনা তুমি আমাকে মামনি বা পিপি বলে ডেকো।তুপি মা বলতে হবে না।
নিরা : আথা তাহলে আমি মামনি বলে ডাকবু।
মিরা : আচ্ছা ডেকো।
নিরা : এখুন তুমি আমাল থাথে থেলবে?
মিরা : না আমার কিছু কাজ আছে। পড়ে খেলবো।
নিরা মুখ গোমড়া করে বলে।
নিরা : যাকেই খেলা করতে বলি তার শুদু কাদ কাদ।
মিরা নিরাকে কোলে নিয়ে গিয়ে সোফায় বসে বলে।
মিরা : এখন তুমি আর আমি কার্টুন দেখবো। তারপর দুজনে ঘুরতে যাবো কেমন?
নিরা খুশি হয়ে বলে।
নিরা : সত্যি?
মিরা : হুম।
মিরা ল্যাপটপের এক সাইটে নিরাকে কার্টুন ছেড়ে দেয়।নিরা মিরার কোলে বসে কার্টুন দেখতে থাকে।আর অন্য সাইটে মিরা অফিসের কাজ করতে থাকে।মিরার অনেকক্ষন ধরে লক্ষ্য করছে নীলা,নিধি আর নিঝুম বোকার মত ওর দিকে তাকিয়ে আছে।মিরা ল্যাপটপে কাজ করতে করতে ওদের জিজ্ঞাসা করে।
মিরা : কিছু বলবে তোমরা?
নীলা আমতা আমতা করে বলে।
নীলা : না মানে আমি কফি বানাতে যাবো। তোমার জন্য আনবো?
মিরা : আনো তবে আমার কফি মগে শুধু এক চামচ চিনি।
নীলা : আচ্ছা।তোরা দুজন এখানে বস আমি কফি বানিয়ে নিয়ে আসছি।
নিধি আর নিঝুম সোফায় বসলে নিঝুম মিরাকে জিজ্ঞাসা করে।
নিঝুম : একটা কথা বলবো আপু?
মিরা কাজ করতে করতে বলে।
মিরা : হুম।
নিঝুম : আমার না তোমাকে খুব ভালো লাগছে। তোমাকে দেখতে কি কিউট।
নিঝুমের কথায় মিরা হেসে দেয়। এরকম ওরা টুকিটাকি কথা বলে। এরমধ্যে নীলা কফি নিয়ে হাজির।
নীলা : আপু কফি।নিরা এখন মাম্মার কাছে এসো মামনি কে আর বিরক্ত করো না।
নিরা : না আমি মামনির তাথে থাকবো।
মিরা : আচ্ছা থাকো কেউ নিবে না তোমাকে!
নিরা : মামনি আমলা কখন দুরতে যাবো?
মিরা নিরার চুল ঠিক করতে করতে বলে।
মিরা : প্রথমে তুমি ব্রেকফাস্ট করে রেডি হবে, তারপর আমরা দুজনে অফিসে যাবো আমার কিছু কাজ আছে ওখানে দেন আমি আর তুমি ঘুরতে যাবো। ঠিক আছে?
নিরা : আথা।
মিরা : এবার তাহলে গিয়ে ব্রেকফাস্ট করে নেও।
নিরা ওর মায়ের সাথে চলে গেলে মিরাও রেডি হতে চলে যায়। নয়টার দিকে মিরা রেডি হয়ে মামুর সাথে কথা বলে নিচে এসে দেখে নিরা একদম রেডি হয়ে সোফায় বসে আছে। মিরাকে দেখে নিরা হেসে দেয়।মিরা ব্রেকফাস্ট টেবিলে গিয়ে বসলে নীলা বলে।
নীলা : আপু তুমি জানো না তুমি আমার কত বড় উপকার করেছো?
মিরা কিছু না বুঝে নীলার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালে নীলা বলে।
নীলা : নিরা খাবার খাওয়াতে কম পক্ষে দুই ঘণ্টার বেশি সময় লাগে আর আজ তোমার সাথে ঘুরতে যাবে বলে এক ঘন্টার মধ্যে তার খাওয়া হয়ে গেছে।তাই তোমাকে এতগুলো থ্যাংক ইউ।
মিরা নীলাকে কিছু না বলে নিরার দিকে তাকিয়ে দেখে মুখে হাসি লেগে আছে। এরমধ্যে অনামিকা বলে।
অনামিকা : আজ দুপুরে একটু তাড়াতাড়ি বাসায় আসবা মামনি?
মিরা খেতে খেতে বলে।
মিরা : কেনো?
অনামিকা : কাল এত বড় একটা এক্সিডেন্ট করলে আজ আবার অফিসে যাচ্ছো। একটু তো রেস্টের প্রয়োজন আছে!
মিরা : ঠিক আছে।
মিরার কথা শুনে অনামিকার মুখে হাসি ফুটে উঠে।মিরা খেয়ে নিরার সামনে গিয়ে ওকে কোলে নিয়ে বলে।
মিরা : এই যে পাকনা বুড়ি চলেন আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে।
মিরার কথা শুনে নিরা খিলখিল করে হেসে দেয়।ওরা দুজনে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলে দাদি মিরার ফুপি কে বলে।
দাদি : আজ মিরার মুখে অনেক বছর পর বুড়ি ডাকটা শুনলাম।
ফুপি হেসে দিয়ে বলে।
ফুপি : তোমার মনে আছে মা তুমি ওর কথা না শুনলে কিভাবে তোমার সাথে ঝগড়া করতো।
নিধি অবাক হয়ে বলে।
নিধি : আপু দাদির সাথে ঝগড়া করতো?
ফুপি : মিরা গাছ থেকে ফুল ছেড়া পছন্দ করতো না আর মা ফুল দিয়ে খুব সুন্দর ভাবে ঘর সাজিয়ে রাখতো এই নিয়ে তারা দুজন সারাক্ষণ ঝগড়া করতো। আর বাবা ওদের মাঝে বসে ঝগড়া দেখতো।মিরা যখন কথা দিয়ে আর মায়ের সাথে পেরে উঠে না তখন ও সোজা গিয়ে বাবার কোলে উঠে গলা জড়িয়ে ধরে বলতো।”দাদাভাই তুমি তোমার এই বুড়িকে তার বাপের বাড়ি রেখে এসো,খালি আমার সাথে ঝগড়া করে। তারপর আমি লাল টুকটুকে দেখে একটা বউ এনে দেবো তোমাকে। “একথা শুনে বাবা ঘর কাঁপিয়ে হাসতে থাকতো আর মা রেগে রান্না ঘরে চলে যেতো।বাবা বলতো ” খুব ভালো জব্দ করেছে দাদুভাই আমার বুড়িকে। ” মিরা বাবার গালে চুমু দিয়ে বলতো ” যাই তোমার বউকে আর একটু জ্বালিয়ে আসি।”মিরার পিছন পিছন আমরাও রান্না ঘরে চলে যেতাম।মিরা রান্না ঘরে গিয়ে কোমরে দুহাত রেখে বলতো ” শোনো বুড়ি কিছুদিন পর তো চলেই যাবে যাবার আগে আমাদের একটু ভালো মন্দ রেঁধে খাইও। তুমি আবার চিন্তা করো না আমি আর দাদাভাইয়ের নতুন বউ দাদাভাইয়ের খেয়াল রাখবো। আমরা প্রতিদিন বিকেলে ঘুরতেও যাবো। তুমি তখন আমার আমাদের দেখে হিংসে করো না কেমন!” মা তখন রেগে ফায়ার হয়ে যেতো আর আমাদের হাসতে হাসতে অবস্থায় খারাপ হয়ে যেতো।
চলবে…🍁