তুই যে শুধুই আমার

তুই যে শুধুই আমার ! সিজন- ২ !! Part- 13

হসপিটাল থেকে বের হওয়ার প্রায় ৩০ মিনিট পর ওরা সায়রার বাসায় পৌঁছায়। সায়রাকে ইমা বেগম আর জান্নাত দুইজন ধরে আস্তে আস্তে ওর রুমে নিয়ে যায়।। রুমে গিয়ে সায়রা আর জান্নাতের চোখ ছানাবড়া। কেউ তার চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছে না এইটা কি আদো সত্যি কিনা।
সায়রা রুমের মাঝে ইয়া বড় একটা টেডি বিয়ার। গুলুমলু প্লাফি একটা টেডিবিয়ার। সায়রা এইরকম টেডিবিয়ার শুধু মোবাইলেই দেখেছে। ওর অনেক শখ ছিল এই রকম টেডিবিয়ার কিনার। কিন্তু আফসোস কিনা হয়। কিন্তু আজ তা ওর সামনে। ভাবতেই সায়রার মুখে এক চিল্লিক হাসি ফুটে উঠে।
সায়রা আর জান্নাত এগিয়ে গেলে দেখে খাটের উপরে এক কার্টন ক্যাডবেড়ি ডেরি মিল্ক সিল্ক। সায়রা আর জান্নাত দুইজন দুইজনের দিকে চাওয়া চাওয়ি করছে। ওরা লাইফে এতগুলো চকলেট একসাথে দেখে নি। দুইজনই চকলেট খোর বাট এতটি চকলেট কখনো এক সাথে কিনে নি তারা। সায়রা এইসব দেখে ওর মাকে জিজ্ঞেস করে।।

সায়রাঃ মা এইসব কে এনেছে??

ইমা বেগমঃ কি জানি।। সকালে যখন তোকে নিতে বের হবো তখন দরজার সামনে এইগুলা পড়ে থাকতে দেখি। জিনিসগুলো হাতে নিয়ে উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখতে গেলে দেখি কার্টনটার উপর তোর নাম লিখা আর আমাদের ঠিকানা দেওয়া।

সায়রাঃ কে পাঠিয়েছে তার ঠিকানা নেই।

ইমা বেগমঃ না নেই। আচ্ছা তোকে এইগুলা কে পাঠালো।

সায়রাঃ আজীব তহ আমি কিভাবে বলবো! আমাকে কি তোমার মনবিজ্ঞানী বা জোতেষনী মনে হয়!! নাকি কালা মেজিক জানা বুইড়া মহিলা যে দেখেই চট করে বলে দিব।😒

ইমা বেগমঃ তুই আর সুদরাইলি না। মনে করেছিলাম এইবার মাথায় ব্যথা পেয়ে নরমাল হবি। তারপর তোকে ভালো দেখে একটা ছেলের সাথে তুলে আমি দম নিব কিন্তু তুই দেখি আমার সব আশায় পানি ফেলে দিলি। অসহায় ফেস করে।

সায়রাঃ হাহ, ভেরি ফানি। মুখ ঘুরিয়ে

ইমা বেগমের কথা শুনে জান্নাত দুষ্টুমি করে সায়রার কানের সামনে গিয়ে ফিসফিস করতে থাকে।।

জান্নাতঃ ওই মাইয়া, তোরে এগুলা কে দিল রে। তোর কোন লাভার টাভার আসে নাকি রে?? থাকলে বইলা দে আমি লাইন ক্লিয়ার কইরা দিমু নে। দাঁত কেলিয়ে।

এই কথা শুনে সায়রা যেই হাত দিয়ে জান্নাতের হাত ধরেছিল সেই হাত দিয়ে জান্নাতের হাতে নখের আঁচড় বসিয়ে দেয়।। আর জান্নাত ‘আহ’ বলে কুকড়িয়ে উঠে।

সায়রাঃ কর না লাইন ক্লিয়ার। কে মানা করসে।কতদিন ধরে আমার বাসায় পাইপ লাইনটা ডিস্টার্ব করতাসে একটু লাইনটা ক্লিয়ার করে দিয়ে আইনা যা যা। দাঁতে দাঁত চেপে।

জান্নাত কিছু বলতে যাবে এর আগেই ইমা বেগম বলে উঠে।

ইমা বেগমঃ জান্নাত মা তুমি সায়রাকে একটু ফ্রেশ করিয়ে দাও না। আমি ওর জন্য কিছু নাস্তা তৈরি করে নেই। ওকে খায়িয়ে আবার ঔষধ ও খাওয়াতে হবে।

জান্নাতঃ আচ্ছা আন্টি আপনি যান আমি ওকে ফ্রেশ করিয়ে দিচ্ছি।

ইমা বেগম যেতেই জান্নাত দাঁত কেলিয়ে সায়রার সামনে দাড়ায়। তা দেখে সায়রা বলে।

সায়রাঃ আমার ইজ্জত লুটবি নি যে এমন ভিলেন মার্কা হাসি দিতাসোস। 😕

জান্নাতঃ কে কইবো তুই অসুস্থ।😒

সায়রাঃ আমি ভাবলেই হইবো।

জান্নাতঃ হুহ

🍁

সায়রা ঘুমিয়ে আছে। একটু আগেই ইমা বেগম এসে ওকে খাইয়ে ঔষধ দিয়ে গেছেন। ঔষধের সাইড ইফেক্টের জন্য সায়রা ঘুমিয়ে গিয়েছে।
আর জান্নাত এই ঘুমের লাভ লুফে নিচ্ছে। সে তার ডিটেক্টিভ গিরি শুরু করে দিয়েছে। টেডি বিয়ার আর চকলেটের কার্টনটা উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখছে। ওর কেন জানি সন্দেহ হচ্ছে এই কাজটা আরুশের। তাই সে ক্লু খুঁজার ট্রাই করছে।
জান্নাত যখন তার সূক্ষ্ম দৃষ্টি দিয়ে এইসব পর্যবেক্ষণ করছে তখন ওর ফোনটি বেজে উঠে। জান্নাত তখন এক রাশ বিরক্তি নিয়ে ফোনটা হাতে নেয়।। হাতে নিয়ে দেখে আননোন নাম্বার। জান্নাত নাম্বারটি পর্যবেক্ষণ করতে করতেই ফোনটি কেটে যায়। কিছুক্ষণ বাদে ফোনটি আবার বেজে উঠে জান্নাত এইবার ফোনটি রিসিভ করে কানের সামনেই ধরতে একটি ছেলে মানুষের কন্ঠ কানে ভেসে আসে। জান্নাতের এইবার বুঝতে দেরি নেই যে এই ফোন দাতার মালিক কে।

আরুশঃ কি গো শালি সাহিবা। এত খুঁজে টুঁজে কোন ক্লু পেলেন কি।

এই শুনে জান্নাত এখন অবাকের চরম পর্যায়ে। সে কেমনে জানলো যে আমি ক্লু খুঁজছি।

জান্নাতঃ আপনি কেমনে জানলেন??

আরুশঃ ইটস দ্যা মেজিক অফ আরুশ খান। তা আপনার না জানলেও চলবে।

জান্নাতঃ হুহ ত্যারা। বিরবির করে। তা ফোন দিয়েছেন কি আমার গুনাগুন গুলো বলতে??

আরুশঃ তা কেন হবে। আমি তহ শুধু এইটা জানতে ফোন দিয়েছিলাম যে আমার জান পাখির গিফট গুলো কেমন লেগেছে?

জান্নাতঃ তার মানে আমার সন্দেহ ঠিকই ছিল। এইগুলা আপনার কেড়ামতি।

আরুশঃ ইয়াপ। তা এখন বলেন আমার জান পাখির গিফট গুলো কেমন লেগেছে?

জান্নাতঃ এইটাইপ গিফট পেয়ে নিশ্চয়ই কেউ কাঁদবে না। খুশি হওয়ার গিফট দিয়েছেন তাহলে তহ সে খুশি হবেই।😕

আরুশঃ তা তহ হতেই হবে। আমি গিফট দিয়েছি বলে কথা।

জান্নাতঃ হুহ।

আরুশঃ সে যাই হোক মেইন পোয়েন্টে আসি।

জান্নাতঃ কিতা কোন।

আরুশঃ মানে!!

জান্নাতঃ কিছু না।। বলেন আপনি শুনাতাসি আমি।। কান খোলা আছে আমার।

আরুশঃ সায়রার পাশ থেকে একটু দূরে গিয়ে কথা বলো।

জান্নাতঃ আচ্ছা।
এই বলে জান্নাত বারান্দায় চলে যায়। তারপর বলে

জান্নাতঃ এইবার বলেন

আরুশঃ দ্যান লিসেন!!
____________________________________

জান্নাতঃ ইম্পসিবল। আমি এইগুলা জীবনেও করবো না।

আরুশঃ করতে তুমি বাধ্য।

জান্নাতঃ যদি এইসবের কথা সায়রা আঁচ ও করতে পারে না আমারে ওই জিন্দা কবর দিয়া দিব।

আরুশঃ ও কিছু জানবে না। জাস্ট আমি তোমায় যা যা বলছি তাই করো। ওকে আমার হতেই হবে বাই হুড ওর বাই কুক।

জান্নাতঃ আপনি যে একটা সাইকো তা জানেন নি। নিজে তহ কুয়ারা হয়ে মরবেনই সাথে আমার মত নিষ্পাপ মাসুম বাচ্চা মাইয়ারেও মারবেন।

আরুশঃ হা হা।। ভেরি ফানি।। তুমি এত টেনশন নিও না। সায়রা সব জানবে বাট তখন ও চাইলেও কিছু করতে পারবে না। কেন না ততক্ষনে সে আমার হবে।। আরুশের সায়রা হবে সে।

জান্নাতঃ তা পরে দেখা যাবে। তার আগে আপনি আমায় এইটা বলেন আপনি সায়রারে আসলে কত আগে থেকে চিনেন??

আরুশঃ দেড় বছরের বেশি হবে।

জান্নাতঃ কিন্তু ও তহ আপনার অফিসে কাজ করে মাত্র ৭ মাস ধরে। তাহলে?

আরুশঃ ইটস আ লং স্টোরি। অন্য একদিন বলবো। এখন তুমি তোমার কাজে কন্সেন্ট্রেট করো। যেমনে যেমনে বলেছি ঠিক সেমনে সেমনেই যেন হয়।

জান্নাতঃ হুহ।

আরুশ আর কিছু না বলে ফোন কেটে দেয়। আর জান্নাত ফোনের দিকে তাকিয়ে এক দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।


🍁

রাতে🌚

সায়রা আধশোয়া হয়ে শুয়ে আছে পাশেই জান্নাত বসা। সায়রার শরীর অসুস্থ বলে সে রয়ে যায় সায়রার কাছে।
সায়রা আড়চোখে জান্নাতকে দেখে চলেছে।জান্নাত সেই কখন থেকে নক চিবিয়ে যাচ্ছে। কিছু একটা বলতে চাচ্ছে কিন্তু বলতে পারছে না। সায়রা এইবার আগ বাড়িয়েই বলে।

সায়রাঃ কিরে কিছু বলবি??

এমন কথা জান্নাত একটু চমকে উঠে অতঃপর নিজেকে সামলিয়ে বলে।

জান্নাতঃ আব,, ইয়ে মানে,, হ্যাঁ।

সায়রাঃ তহ বলে ফেল না। মেয়েদের মত তোতলাচ্ছিস কেন??

জান্নাতঃ আব হুম।। অন্য মনষ্ক হয়ে। অতঃপর সায়রার কথা বুঝে বলে।
– এক মিনিট কিহ বললি তুই। মেয়েদের মত তোতলাচ্ছি মানে কি আমি কি মাইয়া না!!

সায়রাঃ আমি কেমনে বলবো? আমি কি তোর জেন্ডার চেক করেছি নাকি। শান্ত ভাবেই।

জান্নাতঃ সায়রার বাচ্চা!!!!

সায়রাঃ আমার বাচ্চা এখনো হয় নি হইলে বলুম নে।। তখন ওরে ডাকিস সায়য়ার বাচ্চা। আপাতত আমি মার বাচ্চা মানে ইমার বাচ্চা।

জান্নাতঃ তোর সাথে কথা বলাই বেকার। হুহ।

সায়রাঃ আচ্ছা বলিস না। এখন বল তখন কি বলতে চেয়েছিলি??

জান্নাতঃ আব ইয়ে মানে…..

সায়রাঃ স্পিক আপ!!

জান্নাতঃ তুই কি আবার খান হাউসেই জয়েন করবি?? মানে তুই কি আদো সেখানে কাজ করতে ইচ্ছুক??



#চলবে