তুই যে শুধুই আমার

তুই যে শুধুই আমার ! সিজন- ২ !! Part- 14

রাতে🌚
সায়রা আধশোয়া হয়ে শুয়ে আছে পাশেই জান্নাত বসা। সায়রার শরীর অসুস্থ বলে সে রয়ে যায় সায়রার কাছে।
সায়রা আড়চোখে জান্নাতকে দেখে চলেছে।জান্নাত সেই কখন থেকে নক চিবিয়ে যাচ্ছে। কিছু একটা বলতে চাচ্ছে কিন্তু বলতে পারছে না। সায়রা এইবার আগ বাড়িয়েই বলে।

সায়রাঃ কিরে কিছু বলবি??

এমন কথা জান্নাত একটু চমকে উঠে অতঃপর নিজেকে সামলিয়ে বলে।

জান্নাতঃ আব,, ইয়ে মানে,, হ্যাঁ।

সায়রাঃ তহ বলে ফেল না। মেয়েদের মত তোতলাচ্ছিস কেন??

জান্নাতঃ আব হুম।। অন্য মনষ্ক হয়ে। অতঃপর সায়রার কথা বুঝে বলে।
– এক মিনিট কিহ বললি তুই। মেয়েদের মত তোতলাচ্ছি মানে কি আমি কি মাইয়া না!!

সায়রাঃ আমি কেমনে বলবো? আমি কি তোর জেন্ডার চেক করেছি নাকি। শান্ত ভাবেই।

জান্নাতঃ সায়রার বাচ্চা!!!!

সায়রাঃ আমার বাচ্চা এখনো হয় নি হইলে বলুম নে।। তখন ওরে ডাকিস সায়য়ার বাচ্চা। আপাতত আমি মার বাচ্চা মানে ইমার বাচ্চা।

জান্নাতঃ তোর সাথে কথা বলাই বেকার। হুহ।

সায়রাঃ আচ্ছা বলিস না। এখন বল তখন কি বলতে চেয়েছিলি??

জান্নাতঃ আব ইয়ে মানে…..

সায়রাঃ স্পিক আপ!!

জান্নাতঃ তুই কি আবার খান হাউসেই জয়েন করবি?? মানে তুই কি আদো সেখানে কাজ করতে ইচ্ছুক??

সায়রা এই কথা শুনে এক দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। তারপর জান্নাতের উপর স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে জবাব দেয়।

সায়রাঃ হঠাৎ তুই এই কথা জিজ্ঞেস করছিস কেন?

জান্নাতঃ না এমনেই জানতে ইচ্ছে হলো তাই। বল না!!

সায়রাঃ আপাতত না।

জান্নাতঃ আপাতত মানে!! বুঝলাম না কিছু। কনফিউজড হয়ে!!

সায়রাঃ এখন আমার এই জবটা করার বিন্দু মাত্র ইচ্ছা নেই। যদি পরে মুড চেঞ্জ হয় তাহলে করবো। কিন্তু এর আগে একটা অসম্পূর্ণ কাজ পূর্ণ করবো।

জান্নাতঃ গুড গুড। করিস না কাজ টা। কেন করবি বল। যেখানে তোকে এত অপমান করা হলো এত অত্যাচার করা হলো সেখানে না যাওয়াই বেটার।। বাট ওইটা আলাদা কথা যে ওইটা তোর আপু ড্রিম। ওইটা আলাদা কথা এই জবটা তোর জন্য Passion.. ওইটা আলাদা কথা যে তুই তাদের ওইখানে ৬ বছরের কন্ট্রাক করেছি।

সায়রা এইবার ভ্রু কুচকিয়ে জান্নাতের দিকে তাকায়। তারপর সন্দেহ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে।

সায়রাঃ তুই কি আমারে জব ছাড়তে কনভেন্স করছিস নাকি জব করতে?? কোনটা??

জান্নাতঃ আব আব।। কি যে বলিস। আমি কেন তোকে জব করতে বলবো।।😅😅 আমি তহ জাস্ট ফ্যাক্ট গুলা বললাম।। জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে।

সায়রাঃ আমাকে কি হ্যাসট্যাগ মনে হয় যে আমার সাথে হ্যাসট্যাগ ফ্যাক্ট গুলা লাগাইতে হইবো।😒😒

জান্নাতঃ আব না।।

সায়রাঃ তুই এই কয়েকদিন ধরে একটু বেশি তুতলাস। কিছু লুকাইতাসোস নি আমার থেকে। সন্দেহের দৃষ্টিতে।

জান্নাতঃ কি লুকাবো আমি। আমার কি গুপ্তধন আছে নাকি যে লুকাবো।

সায়রাঃ ২১ শতকে এসে গুপ্ত ধন কই পাইলি।। এখন তহ হারিকেন নিয়া বের হয়েলেও ১ টাকা পাবি নি সন্দেহ তারউপর গুপ্তধন।

জান্নাতঃ হুহ।

সায়রাঃ আমার ঘুমে ধরসে আমি ঘুমাইলাম বাই।

জান্নাত কিছু বলার আগেই সায়রা ধাপ করে শুয়ে পরলো আর চোখের পলকেই ঘুম। তা দেখে জান্নাত বলে।

জান্নাতঃ তুই মরার আগেই মরার মত ঘুমাস আল্লাহ এই জানে মরলে কেমনে ঘুমাবি।।

তখন সায়রা বলে উঠে।

সায়রাঃ তখন মরার নানার চাচাতো ভাইয়ের পিশির নাতির ঘরের পুতির মত ঘুমামু।।
এই বলে আবার ঘুম।

জান্নাত এইবার মাথায় হাত দিয়ে বসে। এমন সময় জান্নাতের মোবাইলে এক এসএমএস আসে। যাতে লিখা
” ইমো অন করো ”

জান্নাত জানে এসএমএসটা কার তাই কিছু না ভেবেই ইমু অন করে। আর সাথে সাথে তা বেজে উঠে। জান্নাত ফোন রিসিভ করতে স্ক্রিনে আরুশের ছবি ভেসে উঠে। জান্নাত জানে ওর এখন কি করতে হবে।। সায়রা ব্যাক ক্যামেরা অন করে সায়রার সামনে ধরে। বেডের পাশে থাকা ল্যাপশ্যাটের উষ্ণ স্নিগ্ধ আলোয় সায়রার মুখ স্পষ্ট। আরুশ এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে ঘুমন্ত সায়রার দিকে।
আর জান্নাত এইদিকে অসহায় বাচ্চার মত বসে বসে নিজের চুল ছিড়ছে।।

জান্নাতঃ কোন জন্মের শত্রুতা ছিল আমার এর সাথে যে আমার থেকে এমনে শোধ তুলতাসে। মানুষ থেকে ক্যামার ওম্যান হইয়া গেলাম। কোন চকলেট খাইয়া যে এর সামনে গেসিলাম। মনে মনে।


🍂
দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ কেটে যায়।। সায়রা এখন বেশ সুস্থ। একা একাই চলাফেরা করতে পারে। মাথার বেন্ডেজটাও খুলা হয়েছে। মেডিসিন এখনো চলছে। এরই মধ্যে জান্নাত কথায় কথায় সায়রাকে জব কান্টিনিউ করার কথা বলেছে।৷ সরাসরি না বাট ওইযে আপু এর নামে ইমোশনাল কথা বলে বলে। সায়রাও অনেকটা কনভেন্সট। সে ঠিক করেছে সে অফিসে যাবে।
আজ সায়রা অফিসে যাচ্ছে। রেডি হচ্ছিল এমন সময় জান্নাত এসে হাজির। ও দাঁত কেলিয়ে দাড়িয়ে আছে। তা দেখে সায়রা বলে।

সায়রাঃ বুঝেছি আজ দাঁত ব্রাশ করে এসেছিস তা আর বুঝাতে হবে না দাঁত দেখানো বন্ধ কর।

জান্নাতঃ হুহ। ভেংচি কেটে।

সায়রাঃ তা সাত সকাল এইখানে কেন??

জান্নাতঃ তোকে অফিসে দিয়ে আসার জন্য।

সায়রাঃ এম আই আ ছোটা বাচ্চা। নাকি লুলা নাকি কানা যে আমায় অফিসে দিয়ে আসতে হবে।

জান্নাত কিছু বলার আগেই পিছন থেকে আমিনুল সাহেব বলে উঠেন।

আমিনুল সাহেবঃ যা মনে কর তাই। বাট এখন থেকে তুমি একা কোথাও যাবে না। যতদিন না তুমি পুরোপুরি ঠিক হচ্ছো। আমি তোমায় নিয়ে আর কোন রিক্স নিতে চাই না।

সায়রাঃ That’s not fare.. ওইটা জাস্ট একটা এক্সিডেন্ট ছিল আর কিছুই না।

আমিনুল সাহেবঃ আমি কিছু শুনতে চাই না। তুমি এই কয়েকদিন জান্নাতের সাথেই যাওয়া আসা করবে। আর হ্যাঁ এই এক মাস তুমি স্কুটি চালাতে পারবে না।

সায়রাঃ বাবায়ায়ায়া।

আমিনুল সাহেবঃ আমার যা বলার বলেছি এখন তুমি যদি আমার কথা অবাদ্ধ হও তাইলে আমার সাথে তোমার কথা বলা অফ।

সায়রা রাগে দুঃখে কিছু না বলে জান্নাতকে টানতে টানতে নিয়ে যায়। তারপর একটা রিকশা ঠিক করে ওইটা চড়ে বসে আর রাগে ফুসতে থাকে।



🍂

অফিসে এসে এক দফা ঝাটকা খায় সায়রা। তার কেবিন শিফট করা হয়েছে। তাও আবার আরুশের কেবিনের পাশেরটাই ওকে দেওয়া হয়েছে৷ যা সায়রার মোটেও পছন্দ হয় নি। কিন্তু সে কিছু না বলে কেবিনে ঢুকে যায়।
বেশ কিছুক্ষণ পরেই সব কলিগরা এসে কুসল বিনিময় করে যায়। সবাই আসলেও আরুশ আসে নি। কিন্তু সায়রার মাথা ব্যথা নেই। সে আজ অন্য কাজে ব্যস্ত। অফিসের কেবিনে বসে কাজ করছে সায়রা। এমন সময় পিওন এসে বলে স্যার নাকি তাকে ডাকছে।সায়রা কিছু না বলে তার কেবিনের দিকে অগ্রসর হয়।

প্রায় ১৫ মিনিট ধরে সায়রা আরুশের সামনে দাড়িয়ে আছে কিন্তু আরুশের এতে কোন হেলদুল নেই৷ সে আপন মনে একটা ফাইল চেক করে চলেছে। সায়রা এইবার অতিষ্ঠ হয়ে বলে।

সায়রাঃ কিছু কি বলবেন নাকি আমি চলে যাব।

আরুশঃ বিকালে ছুটির পর আমার জন্য ওয়েট কইরো।

সায়রাঃ কিইই!! কিন্তু কেন।

আরুশঃ আমি বলেছি তাই। নো মোর কয়েশচেন। ব্যাক টু ওয়ার্ক নাও।

সায়রা কিছু না বলে গটগট করে যায়। রাগে ফুসছে সে। এক তহ সরি বলে নি। দ্বিতীয়ত্ব এত ক্ষন দাড় করিয়ে রাখলো। তৃতীয়ত্ব আবার রুড বিহ্যাভ করলো।
সায়রার মন চাচ্ছে এই মি. উগান্ডার মাথাটা ধরে ফাটাতে। কেবিনে এসে এক গ্লাস পানি খেয়ে সে চুপচাপ কিছু ক্ষন বসে থাকে তারপর কাজে মন দেয়।


বিকেল বেলা⛅⛅

অফিস গেটের বাইরে সায়রা জান্নাতের জন্য ওয়েট করছে। এমন সময় একটা ডার্ক ব্রাউন কালারের গাড়ি এসে ওর সামনে থামে। সায়রা সে দিকে খেয়াল না করে জান্নাতের জন্য ওয়েট করতে থাকে।
এমন সময় গাড়ির ভিতর থেকে আরুশ বেড়িয়ে আসে। এসে সায়রার সামনে দাড়ায়। কিছু বুঝার আগেই আরুশ সায়রাকে কোলে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দেয় এন্ড দরজা অফ করে দেয়। নিজে গিয়েও সিটে বসে।
ঘটনাটি এত দ্রুত হওয়ায় সায়রা বেকুব বনে রয়ে গেল। কি থেকে কি হলো কিছুই বুঝতে পারছে না। যখন বুঝলো তখন চেঁচাতে শুরু করলো।

সায়রাঃ এই আপনি মাত্র কি করলেন??

আরুশঃ কি করলাম। ডোন্ট কেয়ার একটা ভাব নিয়ে।

সায়রাঃ একদম সাধু সাজার ট্রাই করবেন না। আপনার সাহস কিভাবে হলো আমায় কোলে নেওয়ার।

আরুশঃ আমার সাহসের সম্পর্কে তোমার ধারণা নেই। তাই এত ভেবে তোমার লাভ নেই এখন চুপচাপ বসো।

সায়রাঃ আমি যাব না আপনার সাথে। দরজা খুলেন আমি এখনই নামবো।

আরুশঃ তুমি কোথাও যেতে পারবে না যতক্ষণ না আমি বলবো। তাই ভদ্র মেয়ের মত বসে থাকো।

সায়রাঃ নামান বলছি নামান। এই বলে হাত পা ছুড়াছুড়ি শুরু করে দেয়।

আরুশ এইবার না পেরে সায়রাকে টান দিয়ে নিজের সামনে নিয়ে আসে। এতে সায়রা ফ্রিজড হয়ে যায়।। আর বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকে। আরুশ একবার সায়রাকে দেখে নেয়। ব্লু লং কামিজ সাথে মেচিং হিজাব। মুখে কোন সাজ নেই। খারাপ লাগছে না একবারে বেশ ভালোই লাগছে। আরুশ সায়রার একদম কাছে এসে লো ভয়েসে বলে।

আরুশঃ এমন কিছু করতে আমায় বাধ্য করো যে পরে তোমাকেই অনুতপ্ত হতে হয়। চুপচাপ বসে থাকো এক জায়গায় নিয়ে যাব। সেখানে তোমার সাথে আমার কথা আছে।

এই বলে সায়রাকে ছেড়ে দেয়। সায়রা এইবার চুপ করে বসে থাকে। আরুশ ড্রাইভ করা স্টার্ট করলো।

একটা পার্কের মধ্যে বসে আছে আরুশ আর সায়রা। দুইজনের মধ্যে কোন কথা নেই। পিন পিন নিরবতা। যা সায়রার মোটেও ভালো লাগছে না। পরিবেশটা ভুতরে লাগছে আর নিজেকে হোরোর মুভির নায়কা মনে হচ্ছে।

সায়রাঃ এইখানে কি খাম্বার মত বসিয়ে রাখতে আসছেন নাকি?? কিছু কি বলবেন নাকি চলে যাব??

আরুশ এক দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলে।

আরুশঃ I want to marry you __________________



#চলবে