তুই যে শুধুই আমার

তুই যে শুধুই আমার ! সিজন- ২ !! Part- 12

রাত ১২ টা বাজে🌚
এক আবছা অন্ধকার রুমে বসে আছে আরুশ। নিচে বসে খাটের সাথে মাথাটাজে হেলিয়ে বসে আছে সে। রুমের সকল আসবাপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। কোথাও কোথাও কাঁচের সূক্ষ্ম টুকরা তহ কোথাও সাজিয়ে রাখা সোপিজ গুলো। আরুশের চোখ দুটো একদম লাল হয়ে আছে। চুল গুলো উষ্কশুষ্ক। এক হাতে খানিকটা রক্ত জমাট বেঁধে আছে আর অন্য হাতে একটা বিয়ারের ক্যান। যা সে একটু পর পর খাচ্ছে আর এক ধ্যানে সামনের দেওয়ালে থাকা এক ছবিটির দিকে তাকিয়ে আছে। রুমের মধ্যে থাকা জলন্ত ফ্যারিলাইটের আলোয় ছবিটা বেশ স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে। ছবিটি আর কাউরো না বরং সায়রার।
আরুশ ছলছল চোখে সায়রার ছবিটির দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ নিজের হাতে থাকা বিয়ারের ক্যানটা জোরে চাপ দিয়ে দিয়ে ধরে।। নিমেষেই ক্যানটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। আরুশ তা জিদ করে অন্য দিকে ছুড়ে মারে। আর কাঁপা কাঁপা পায়ে সায়রার ছবির সামনে যায়। ছবির ডান সাইডে হাত রেখে বলে।

আরুশঃ আমি কিভাবে তোমার এই হাসির পিছনে লুকিয়া থাকা কষ্ট বুঝতে পারলাম। তুমি আমার সামনে ছিলে আমার কাছে ছিলে তাও তোমার এই হাসির পিছনে লুকিয়া থাকা কষ্টটাকে উপলব্ধি করতে পারলাম না। কি নিখুঁতই ভাবেই না নিজের কষ্টটা লুকালে। আমি মনে করেছিলাম তোমাকে আমার থেকে ভালো কেউ চিনে না।। কিন্তু না আমি ভুল ছিলাম। আমি তোমায় আদো চিনতে পারি নি।।

হঠাৎ আরুশের চোখ দিয়ে দুই ফোটা নোনা জল গড়িয়ে পড়লো।

আরুশঃ যাকে সব কষ্ট থেকে দূরে রাখতে চেয়েছিলাম তাকেই আমি এতটা কষ্ট কিভাবে দিতে পারলাম কিভাবে!! যার কষ্ট লাঘব করতে চেয়েছিলাম আজ আমিই তাকে ক্ষতবিক্ষত করে সেই কষ্টকে জাগিয়ে তুললাম। অধিকার তৈরি করার আগেই আমি নিজেই সেই অধিকার থেকে নিজে বঞ্চিত করে ফেললাম। এখন কোন অধিকারে তোমার কাছে গিয়ে বলবো #তুই_যে_শুধুই_আমার। কিভাবে বলবো ভালবাসি কথাটা। যেই ভালবাসি কথাটা বলার জন্য ১ বছর ধরে অপেক্ষা করছিলাম সেই কথাটা বলার জন্য আজ আমার অধিকার নেই। যেই অধিকারের জাল ১ বছর ধরে বুনছিলাম তা আমি আজ এক মূহুর্তেই শেষ করে দিলাম।। সেম অন মি।। কিভাবে করতে পারলাম আমি এইটা কিভাবে!

এই বলে পাশে থাকা সেন্টার টেবিলে পা দিয়ে জোরে এক বারি দেয় আরুশ।

আরুশঃ আমি যাকেই ভালবাসি সেই কেন আমার থেকে দূরে চলে যায়। কেন হারিয়ে ফেলি তাদের। কেন কেন!!

এই বলে সায়রার হাসি মাখা ছবির দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করে।

আরুশঃ না তোমাকে আমি দূরে যেতে দিব না।। কিছুতেই না। তুমি আমার ছিলে আমার আছো আর আমার এই থাকবে। #তুই_যে_শুধুই_আমার শুধুই আমার। এত দিন তোমায় আড়ালে ভালবেসেছিলাম কিন্তু এখন থেকে আর আড়ালে না। বি রেডি মাই স্নো হোয়াইট খুব জলদি তোমায় নিজের করে নিব। যে কষ্ট আমি দিয়েছি সেই কষ্টটা আমিই লাঘব করবো। সকল কষ্ট দূর করে দিব।
এই বলে এক মুচকি হেসে সায়রার ছবিতে ওর গালে হাত রাখে। তারপর গুনগুন করে গাইতে থাকে।

” 🌸হামে তুমসে পেয়ার কিতনা
ইয়ে হাম নেহি জানতে
মাগার জি নেহি সাকতে
তুমহারে বিনা 🌸”

বলে উল্টো ঘুরে দেওয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে সায়রার ভাবনায় মগ্ন হয়ে যায়।


🌼এইদিকে🌼

সায়রা অপারেশন সাকসেসফুলি হয়ে যায়।। ওকে প্রায় ঘন্টা খানিক আগেই কেবিনে শিফট করা হয়েছে।
সায়রা মাথার এক পাশে ওর আমিনুল সাহেব আর অন্য পাশে ইমা বেগম বসে আছে। আমিনুল সাহেব সায়রার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। দুইজনের মুখই একদম শুকিয়ে গিয়েছে। বুঝাই যাচ্ছে তারা দুইজন কতটা না চিন্তিত ছিল।
সায়রা ধীরে ধীরে একটু লড়ে উঠে আর পিটি পিটি করে চোখ খুলতে থাকে। তা দেখে ইমা বেগম উৎফুল্ল সুরে বলে।

ইমা বেগমঃ মা তুই ঠিক আছিস তহ।

সায়রাঃ হ্যাঁ মা আমি ঠিক আছি। এই বলে উঠতে নিলে আমিনুল সাহেব বাঁধা দেন।

আমিনুল সাহেবঃ এই এই কি করছিস। উঠছিস কেন। শুয়ে থাক। ডাক্তার তোকে রেস্ট করতে বলেছে।।

সায়রাঃ আমি ঠিক আছি বাবা।

আমিনুল সাহেবঃ চুপ একদম চুপ। সবসময় ব্রশি বুঝিস না তহ। ধমকের সুরে

সায়রাঃ তুমি আমায় বকলে।। কাদো কাদো হয়ে

আমিনুল সাহেবঃ বেশ করেছি। এখন থেকে তোকে আরও বকবো। নিজের খেয়াল তহ রাখিস না আবার বড় বড় কথা।। এক্সিডেন্ট হয়েছে একবার ফোন করে আমাদের বলেছিস। আর এক্সিডেন্ট করলি তহ করলি হসপিটালে না এসে অফিসে চলে গেলি।। অফিসে এমন কি ছিল যে যেতেই হলো??

সায়রাঃ কাজ ছিল বাবা।। সে যাই হোক তুমি প্লিজ রাগ করো না। তুমি জানো না সবার রাগ আমি সহ্য করতে পারলেও তোমারটা পারি না।। প্লিজ রাগ করে থেক না।

আমিনুল সাহেবঃ তুই তহ ভালো মতই জানিস তুই বাদে আমাদের কেউ নেই। তোর কিছু হলে আমরা কেমনে বাঁচবো শুনি। এক মেয়েকে তহ হারিয়েছি অন্য মেয়েকে কিভাবে হারাই বল। ছলছল চোখে

সায়রাঃ দেখ কাদবে না। তোমার কান্না আমার সহ্য হয় না।৷ প্লিজ কেঁদ না।

ইমা বেগমঃ তাহলে কথা দে এখন থেকে ঠিক মত চলাফেরা করবি আর সাবধানে থাকবি। আমাদের কথা শুনবি।

সায়রাঃ আচ্ছা কথা দিলাম।

দেখতে দেখতে তিনদিন কেটে যায়। সায়রাকে আজ রিলিজ করা হয়েছে। তাকে বাসায় নেয়া হচ্ছে। ইমা বেগম একা সব সামলাতে পারবে না বলে জান্নাত ও তার সাহায্য করতে চলে আসে। গাড়িতে সায়রা জান্নাতের কাঁধের উপর মাথা রেখে চুপচাপ শুয়ে আছে। জান্নাত ওকে আলগা ভাবে জরিয়ে ধরে আছে। কিন্তু এর মধ্যেও জান্নাত কোন এক ভাবনায় মগ্ন।
সে আজ আরুশকে নিয়ে ভাবছে।এই কয়েকদিনে আরুশের কোন খোঁজ খবরই ছিল না। সেইদিনের পর থেকে জান্নাত তহ মনে করেছিল যে আরুশ সায়রার পাশে চব্বিশ ঘন্টা চিপকে থাকবে। কিন্তু তার এই ভাবনাকে ভুল প্রমাণ করলো আরুশ। সে আরুশের কেরেক্টার টা বুঝে উঠতে পারছে না। আদো কি সেইদিনের কথাগুলোর মধ্যে বিন্দু মাত্র সততা ছিল নাকি না। যদি সত্যি হতো তাহলে তহ একবারের জন্যও দেখতে আসতো। কিন্তু সে তহ আসলো না। কিন্তু সে সেইদিন বললো।
উফফ জান্নাত আর ভাবতে পারছে না।। সবই এখন ওর কাছে ধোঁয়াশা ধোঁয়াশা লাগছে। তাই সে এইসব নিয়ে আর না ভেবে সায়রার দিকে নজর দেয়।

প্রায় ৩০ মিনিট পর ওরা সায়রার বাসায় পৌঁছায়। সায়রাকে ইমা বেগম আর জান্নাত দুইজন ধরে আস্তে আস্তে ওর রুমে নিয়ে যায়।। রুমে গিয়ে সায়রা আর জান্নাতের চোখ ছানাবড়া। কেউ তার চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছে না এইটা কি আদো সত্যি কিনা।


#চলবে