ঝরা ফুলের বাসর

ঝরা ফুলের বাসর !! Part- 19

আবির চৌধুরীর কেবিনের পাশ থেকে প্রিয়া যাচ্ছিলো।হঠাৎ আপুর কথা শুনে থেমে গেলো প্রিয়া।আপু বলল স্যার আপনার এক্টিংটা কিন্তু বেশ ছিলো।তবে আমিও কম কস্ট করিনি।মেঘ আপনার কাছে আসলে বুঝে ফেলতো ফ্লোরে পরে থাকা রক্ত আপনার না।আর আপনার কপালে মেকাপের ক্ষত।
এটুকু শুনেই চমকে উঠলো প্রিয়া।ফোন বের করে রেকর্ড করতে শুরু করল তাদের কথা।আবির চৌধুরী বললেন এটুকু অভিনয় আমার করতেই হতো।ফুল আমার মেঘের সন্তানের মা হতে চলেছে। মেঘ যদি পরে ওকে বিয়ে না করতে চাই তাহলে তো ফুলের জীবনটা নস্ট হয়ে যেতো।

আপু হেসে উঠে বলল সে না হয় বুঝলাম। কিন্তু আমি যেটা চেয়েছিলাম? আপনার এতো উপকার করলাম আমি আর আমাকে আমার পাওনাটা বুঝে দেবেন না?
চিন্তা করো না ভোটে তোমার স্বামী হৃদই বিজয়ী হবে।আবির চৌধুরীর মুখে কথাটা শুনে আপু একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বেড়িয়ে আসলো কেবিন থেকে।
প্রিয়া এসে এই রেকর্ডটা আমাকে শুনালো।আমি বুঝতে পারলাম আবির চৌধুরী আমার কথা ভেবেই এই অভিনয়টা করেছে।কিন্তু আমি তো না জেনেই উনার জীবন বাঁচাতে আপুর এই সিদ্ধান্তে রাজি হয়েছিলাম।আপু এতো বড় গেম খেলল।নিজের নোংরা খেলায় আবির চৌধুরীকেও টেনে নিলো।উনি তো যানেনও না আপু কি গেম খেলেছে।
প্রিয়াকে আমি অডিও রেকর্ডিংটা মেঘ স্যারকে দেখাতে বলে ছুটে আপুর চেম্বারে আসলাম।দরজায় শব্দ পেয়ে আপু বসা ছেড়ে উঠে দাড়ালে আমি এগিয়ে এসে আপুর কাঁধ ধরে ঝাঁকিয়ে বললাম কেন করলে এমনটা আপু? আবির চৌধুরীকে তুমি নিজের নোংরা খেলায় শামিল করলে কেন?
আপু আমাকে বলল আমি কোনো খেলা খেলি নি।
আমি বললাম আমার কাছে প্রমাণ আছে আপু।প্রিয়া তোমাদের সব কথা রেকর্ড করে নিয়েছে। এখন আমি নিজে গিয়ে আবির চৌধুরীকে তোমার সব নোংরা খেলার কথা একটা একটা করে শোনাবো।

আমি চলে আসতে নিলে আপু আমার হাতটা টেনে ধরলো।আমাকে বলল এতো চালাকি করার চেস্টা করিস না। ভেবে দেখ আবির চৌধুরী যদি জানতে পারে তুই প্রেগনেন্ট না তাহলে তোর ক্যারিয়ার নস্ট হয়ে যাবে।

হোক ক্যারিয়ার নস্ট।আমি হৃদকে আর কস্ট পেতে দেবো না।উনাকে বলব আমার হৃদ কোনো অপরাধ করে নি।হৃদ আমাকে বলেছিলো পেশেন্টের পেটে অপারেশনের সময় মেঘ স্যারের আংটি তুমি ফেলিয়েছিলে ওই নার্সসটাকে টাকা খাইয়ে।হৃদ তো পরেরদিন সত্যটা জেনেছে।তোমার জন্য সকলের সামনে হৃদ অনেক অপমানিত হয়েছে।আজ পুরো হসপিটাল ওর বিরুদ্ধে শুধুমাত্র তোমার জন্য।ওকে কেউ পছন্দ করে না।তুমি ওকে ভোটে জিতিয়ে আবার কোনো নোংরা খেলা খেলে নিচে নামাবে আর নিজের আগের পজিশনটা আবার পেয়ে যাবে এটাই চাও তাই না? তাই যদি না হতো তাহলে নিজের ভালোবাসার মানুষকে কখনোই সকলের সামনে নিচে নামাতে না।সেদিন তোমার ভয় হচ্ছিলো হৃদ যদি সত্যিটা সবার সামনে বলে দেয় এজন্য হৃদকে সাপোর্ট করে ওর মুখ বন্ধ করে রেখেছিলে।আসলে তুমি একটা স্বার্থবাদী। শুধু নিজেরটাই বোঝো।
আপু আমার হাত খামচে ধরে বলে উঠলো ওই ফুল অনেক বলছিস তুই।কি ভেবেছিস আবির চৌধুরী তোর সবকথা মেনে নিয়ে তোকে ক্ষমা করে দেবে?
অবশ্যই দেবে।উনি খুব ভালো মানুষ।আমি উনাকে বলব মেঘ স্যারকে তুমি বিয়ে করেছ।আর আমি প্রেগনেন্ট নই।উনি যদি একটা মেয়ের সুখের কথা ভেবে এতো বড় একটা খেলায় তোমার সাথে হাত মেলাতে পারে তাহলে আমিও পারি মেঘ স্যারের মতো নির্দোষ কাউকে বাঁচাতে প্রেগনেন্ট হওয়ার অভিনয় করতে।তোমার খেলা শেষ।অনেক পাপ করেছো আপু।এখন জেলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হও।আমি জানি মেঘ স্যার তোমাকে ভালোবাসে কিন্তু তুমি তার ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নও।
আপু আমার সামনে হাত জোর করলো। কেঁদে উঠে বলল প্লিজ ফুল এমনটা করিস না।আমার পা ধরতে গিয়ে বলল আমি তোর পায়ে পরি ফুল।
সঙ্গে সঙ্গে আমি কিছুটা পিছিয়ে গিয়ে দাড়ালাম।আপুর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম সত্যি চোখে পানি। আমার মনে হলো আপু হয় তো মন থেকে নিজের ভুলটা মানছে।আমি আপুকে কিছু বলতে যাবো তার আগেই আপু অট্ট হাসিতে লুটিয়ে পরলো।হাসতে হাসতে চোখের পানি মুছে নিয়ে বলল কি ভেবেছিস এই ভাবে আমি তোর পায়ে পরে নিজেকে ছোট করবো? কক্ষনোই না।আপু ভিডিও কল করে চোখের ইশারায় কিছু একটা বোঝালো ওপাশের মানুষটাকে।তারপর ফোনটা ঘুরিয়ে আমার দিকে ধরে বলল সারপ্রাইজ।দেখ আমি কাঁচা খেলা খেলি না।

আমি আপুর ফোনের দিকে তাকালে হৃদের হাত, পা, মুখ বাঁধা অবস্থায় দেখতে পেলাম।আমি হৃদ বলে চিৎকার দিয়ে উঠলে আপু ফোনটা বন্ধ করে পাশে রেখে সঙ্গে সঙ্গে আমার মুখটা চেপে ধরল।চোখ বড় করে তাকিয়ে বলল উসসস! আস্তে শব্দ যেন না হয়।তাহলে তোর হৃদ শেষ।কথাটা বলে আমার মুখটা ছেড়ে দিলো।
আমি আপুর দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে হাত জোড় করে বললাম কেন তুমি হৃদকে ওভাবে বেঁধে রেখেছো আপু?
আপু সয়তানি হাসি হেসে বলল উপায় ছিলো না।আমার প্ল্যানটাই জেনে গিয়েছিলো তোর হৃদ।তাই অপহরণ করে নিলাম।এখন তুই ওর কথা ভেবে কস্ট পাবি আর আমি আনন্দ।তখন তুই ঠিকই বলেছিস হৃদকে আমি ভালোবাসি না।ভেবেছিলাম ওকে ভোটে জিতিয়ে ওর দ্বারা ভুল করিয়ে আমি আবার আমার আগের পজিশনটা পাবো।কিন্তু ওতো বন্দী হয়ে গেলো আমার খাচায়।এখন ব্যাপারটা আরও সহজ।ওর অনুপস্থিতিতে স্ত্রী হিসেবে ওর পজিশনটা এখন আমার।আর মেঘকে কেন বিয়ে করলাম জানিস? কারণ মেঘকে আমি ভালোবাসি।কিন্তু আমার ভালোবাসাটা তোর প্রতি ঘৃণার চেয়ে বেশি না।
চলবে,,,