ঝরা ফুলের বাসর !! Part- 20
কথা শেষ হতেই আপুর গালে পরলো এক চড়! আপু গালে হাত রেখে রেগে মুখ তুলে সামনে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে মেঘ স্যারকে দেখে থেমে যায়। গলার কন্ঠস্বর নরম করে বলে ওঠে মেঘ তুই এখানে?
মেঘ স্যার আপুকে টেনে ধরে ঝাঁকিয়ে বলেন কি ছিলো না আমার ভালোবাসায়।তোকে আমি কতবার বলেছি ভালোবাসি।আর তুই দিনের পর দিন এতগুলো অন্যায় করে আজ ফুলকে বলছিস আমায় ভালোবাসিস? তোর সুখের জন্য আমি অপরাধ না করা স্বত্বেও জেল খাটতে চেয়েছিলাম।আজ তুই কত সহজে বললি আমাকে ভালোবাসিস।তাহলে কেন আমায় ফাঁসিয়ে ছিলি? এতোই ঠুনকো তোর ভালোবাসা যে অন্য কাউকে কস্ট দিতে আমায় এতোটা অপমান করলি?
আপু স্যারকে শান্ত হতে বলে।চেয়ার টেনে স্যারকে বসিয়ে এক গ্লাস পানি ঢেলে স্যারের মুখের সামনে এনে বলে মেঘ তোর বুঝতে কোথাও ভুল হচ্ছে।
স্যার উঠে দাড়িয়ে পানির গ্লাসটা ছুড়ে মেরে আপুর দুই কাঁধ খামচে ধরে বলেন বুঝতে ভুল হচ্ছে আমার? নিজের কানে তোর বলা প্রত্যেকটা কথা শুনেছি আমি। তোর মুখে আর একটা কথাও আমি শুনতে চাই না।হৃদকে কোথায় আটকে রেখেছিস বল?
আপু চোখমুখ ছোট করে মাথা নাড়িয়ে বলতে পারবে না বলে।স্যার রেগে আপুকে ধাক্কা দিয়ে দূরে ফেলে দেয় টেবিলের কোণায় ছিটকে পরে আপুর কপালটা লেগে কেটে যায়। আর জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।স্যার আপুর ফোনটা উঠিয়ে ওই নাম্বারে মেসেজ করে লেখে হৃদকে তোমরা ছেড়ে দাও।ছেলেগুলো আপুর ফোন থেকে মেসেজ যাওয়ায় হৃদের হাত, পা, মুখের বাঁধন খুলে দিয়ে বলে চলে যাও তুমি।আর হৃদ অবাক হয়ে ওদের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হসপিটালে চলে আসে।
স্যার আপুকে উঠিয়ে সোফায় নিয়ে শুইয়ে দিয়ে চোখে মুখে পানির ছিটা দিতে থাকেন।আপুর হাতের তালুতে নিজের হাত ঘঁষতে থাকেন।কেঁদে উঠে আপুকে পাগলের মতো চিৎকার করে ডেকে দেখলেন আপুর জ্ঞান ফিরছে না।আমি এগিয়ে এসে আপুর পায়ে তলায় নিজের হাত ঘেঁষে বলতে থাকলাম আপু প্লিজ ওঠো।স্যার আমাকে বললেন এখান থেকে যাও ফুল।হৃদ আসছে।তুমি তোমার হৃদের কাছে যাও।
আমি বললাম আপুর জ্ঞান ফিরলে যাবো।স্যার শুনলেন না।উনি বললেন নূর এখন আমার স্ত্রী। আমি আছি ওর কাছে।ও অনেক অন্যায় করেছে তোমার সাথে।আমি চাই না ও আর কারও ক্ষতি করুক।স্যার অনেক রিকুয়েষ্ট করাই চলে আসলাম আমি। সিঁড়ি থেকে নিচে নামছিলাম এমন সময় হৃদ হসপিটালের মধ্যে ঢুকলো।ওকে দেখামাত্র আমি নাম ধরে চিৎকার করে ডাকলাম। আমার চিৎকার শুনে পুরো হসপিটালের নজর আমার দিকে পরলো।হৃদের শরীরের জাগায় জাগায় ক্ষত।আমি ছুটে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলাম।পড়নের বেনারসির আঁচলটা ছিড়ে ওর হাতের ক্ষত স্থানটায় বেঁধে দিলাম।ওর গালটা ধরে বললাম ওরা কি তোমাকে খুব মেরেছে হৃদ? হৃদ কোনো উত্তর না দিয়েই আমাকে জড়িয়ে ধরল।আমাকে বলল ভুল বোঝার জন্য ছরি।আমি টেনে হৃদকে সামনে এনে বললাম না হৃদ তোমার কোনো ভুল হয় নি।
পেছনের থেকে মাম্মাম আর কাকি মণি এসে বলে উঠলো এসব কি হচ্ছে? হৃদ এমন অবস্থা কি করে হলো? আর ফুল তুই হৃদের কাছে এভাবে? এটা নূর আর মেঘ দেখলে কি হবে?
আমি হৃদের বুকে মাথা চেপে ধরে বললাম আমি কোনো ভুল করি নি।
মাম্মাম রেগে আমার হাত টেনে ধরে বলে চল আমার সাথে।তোকে বোঝাচ্ছি ভুল করেছিস কিনা।পেছনের থেকে হৃদ আমার অন্য হাতটা টেনে ধরে বলে ওঠলো দাড়াও কাকি মণি ফুল আমার স্ত্রী। মাম্মাম ঘুরে হৃদের মুখোমুখি হয়ে দাড়ায়।আর এমন সময় আবির চৌধুরী নিচে নেমে ভীর ঠেলে আমাদের সামনে এসে বলেন কি হয়েছে এখানে এতো ভীর কেন? ভোটের রেজাল্ট কি ঘোষণা করা হয়েছে? সকলে আমাদের দিকে একবার আর আবির চৌধুরীর দিকে একবার তাকাচ্ছে।উনি আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন কি হয়েছে বৌমা? হৃদের দিকে চোখ যেতেই ওকে দেখে বলেন কোথাও মারপিট করে এসেছো নাকি? হসপিটালে এসেছো ধরে যা যা কান্ড করছো। দেখও শেষবারের মতো বলে রাখছি তোমার ভুলের জন্য যদি আমার হসপিটালের আর কোনো পেশেন্টের ক্ষতি হয় তাহলে তোমায় আমি জেলে পাঠাতে এবার পিছপা হবো না।
সঙ্গে সঙ্গে আমি বলে উঠলাম এভাবে আপনি হৃদের সাথে কথা বলতে পারেন না।কিছু করে নি ও আপনার হসপিটালের। আর না করেছে কোনো পেশেন্টের ক্ষতি।হৃদকে ফাঁসানো হয়েছে।হৃদ নির্দোষ।আপুর করা এক একটা অন্যায়ের কথা বললাম আমি।সব বলার পর হৃদকে আবির চৌধুরীর সামনে এনে দাড় করিয়ে বললাম কোনো অন্যায় করি নি আমরা শুধু আপনার বিশ্বাসের সাথে খেলেছি।এছাড়া আমার কাছে কোনো উপায় ছিলো না।কিছু বলতেও পারছিলাম না।শুধু সঠিক সময়ের অপেক্ষা করছিলাম।এখন আপনি পারেন আমাদের শাস্তি দিতে।এই হসপিটাল থেকে বের করে দিতে।
মাথাটা নিচু করে দাড়িয়ে আছি আমি আর হৃদ।আবির চৌধুরী আমাদের দুজনের মাথায় হাত রেখে বললেন কোনো ভুল করো নি তোমরা।দোয়া করি তোমরা সুখি হও।তবে কস্ট লাগছে এটা ভেবে ফুলের মতো একটা মেয়েকে আমি হারালাম।ভেবেছিলাম মেঘের সাথে বিয়ে হলে ফুল আমার মেয়ে হয়ে বাড়িতে আসবে।ঠিক সময়ে আমায় ওষুধ খাওয়াবে।মেঘ আর ফুলের সন্তানের সাথে আমি অনেক খেলবো।আমার সব স্বপ্নই মিথ্যা হয়ে গেলো।এই সবকিছু যার জন্য হলো তাকে আমি শাস্তি দিতে চাই।কোথায় সে? ডা.নূর কোথায়?
চলবে,,,,