ঝরা ফুলের বাসর

ঝরা ফুলের বাসর !! Part- 18

চিৎকার শুনে হৃদ আর আমি ছুটে নিচে এসে দেখলাম সিঁড়ির নিচে আবির চৌধুরী পরে আছে।তার কপাল থেকে রক্ত ঝরে ফ্লোর ভিজে আছে।মেঘ স্যার উনার কাছে যাবার চেস্টা করছে।কিন্তু আপু কাউকে উনার কাছে যেতে দিচ্ছে না।উনি মিটমিট করে চেয়ে আস্তে করে বলছে ডা.নূর কেউ যেন আমার কাছে না আসে।মেঘ স্যার অনেক মিনতি করছে তার বাবার কাছে যাবে নূর আপু মেঘ স্যারকে এড়িয়ে পাশ কেটে কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী নার্স ও ওয়ার্ড বয়ের সাহায্যে নিয়ে আবির চৌধুরীকে অপারেশন থিয়েটারের মধ্য ঢুকিয়ে দিলো।আপু ভেতরে ঢুকার আগে ঘুরে স্যারকে চিৎকার করে বলল এটা তোর জন্য হয়েছে। ফুলের সাথে বিয়ে ঠিক হবার পরও তুই অন্য মেয়েকে কোলে নিয়ে ঘুরেছিস।তোর বাবা এটা দেখে সহ্য করতে পারে নি।তাই অন্য মনষ্ক হয়ে হাঁটছিলো।আর সিঁড়ি থেকে পরে গেছে।তুই ভালো করেই জানিস ফুলকে উনি নিজের পুত্রবধূ হিসেবে পছন্দ করেছে।তারপরও তুই কেন এমনটা করতে পারলি বল?

স্যার নিশ্চুপ হয়ে কাঁদছে। বাবার এমন অবস্থা দেখে কিছু বলার সাহশ পাচ্ছে না।আপু স্যারের মুখের সামনে দরজাটা বন্ধ করে দিলো।
চার ঘন্টা পর অপারেশন থিয়েটার থেকে বেড়িয়ে এলো আপু।হৃদ স্যারের কাঁধে হাত রেখে শান্তণা দিচ্ছিলো।আপুকে দেখা মাত্র স্যার ছুটে আসলো।নিজের বাবার কাছে যেতে লাগলে আপু হাতটা পেছনের থেকে টেনে ধরে বলল তোর বাবা তোর মুখ দেখতে চাই না।তার অবস্থা এখন ঠিক না।আমি আছি তাকে দেখার জন্য।আর একটা কথা তোকে জানিয়ে দিই অপারেশন সাকসেসফুল হলেও উনি বিপদ মুক্ত নয়।সামান্য টেনশনে মারাও যেতে পারে।
স্যার চিৎকার করে কেঁদে উঠে বলল আমার বাবার কিছু হবে না।

আপু বলল তাহলে বিয়ে কর ফুলকে।দেখ উনার একমাত্র ইচ্ছা এইটাই।তুই যদি ফুলকে বিয়ে করিস তাহলে অবশ্যই উনার মনের উপর এতো পেশার যাবে না।
স্যার আপুর হাত দুটো শক্ত করে চেপে ধরে বলল ফুল হৃদের স্ত্রী।আপু হাত ছাড়িয়ে নিয়ে হেসে উঠে বলল কি প্রমাণ আছে? তবে আমার কাছে একটা প্ল্যান আছে।কথাটা বলে আপু স্যারের হাত ধরে আমার সামনে এগিয়ে এসে দাড়িয়ে অন্য হাতটা দিয়ে আমার হাত ধরে টেনে নিজের চেম্বারে আনলো।দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ করে ঘুরে তাকিয়ে বলল দেখ মেঘ তোর সাথে আমার কোনো শত্রুতা নেই।কিন্তু এই ফুলের সাথে আছে। ছোটবেলা থেকে আমার সব আদর সব ভালোবাসা বাবা-মায়ের থেকে শুধু একা পেয়েছে ফুল।আপন না হয়েও আপনের থেকেও বেশি পেয়েছে সবকিছু। আমি শুধু চাই ওর জীবনটা কস্টে ভরে দিতে। আর এটা তখন হবে যখন হৃদ ওর থেকে দূরে সরে যাবে।ও ঠিক ততোটাই কস্ট পাবে হৃদের ভালোবাসা না পেয়ে যতোটা কস্ট হোস্টেলে থেকে ছোটবেলা থেকে আমি পেয়েছি।তাই আমি চাই ফুল তোর স্ত্রী হোক।
আমি সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলাম অসম্ভব। হৃদ আমার স্বামী। তুমি ভাবলে কি করে আপু আমি অন্য কাউকে বিয়ে করবো?
আপু আমার থুতনিতে হাত রেখে বলল মানবতার খাতিরে। তুই তো উদার মনের মানুষ।মেঘকে বাঁচাতে ওর সন্তানের মা পর্যন্ত হতে পেরেছিলি তাহলে ওর বাবার জীবন বাঁচাতে ওকে বিয়ে করতে পারবি না?

আমি আপুর হাতটা থুতনি থেকে নামিয়ে দিয়ে বললাম ওটা মিথ্যা ছিলো। আপু বলল বিয়েটাও মিথ্যাই করবি।
আমি আর স্যার আপুর মুখের দিকে তাকালাম।আপু বলে উঠলো আবির চৌধুরীকে বাঁচাতে চাইলে আমার কথা তোদেরকে শুনতে হবে।মেঘ স্যারের দুই কাঁধে হাত রেখে ঝাঁকিয়ে বলল আপু আমি বিয়ে করবো তোকে।ঠিক সেইভাবে যেভাবে ফুল বিয়ে করেছিলো হৃদকে।সবাই জানবে ফুলের সাথে তোর বিয়ে হচ্ছে। কিন্তু কবুল বলব আমি।বল বিয়ে করবি আমায়? তোর বাবার জন্য?

স্যার আর আমি অনেক্ষণ ভেবে আবির চৌধুরীর কথা ভেবে রাজি হয়ে গেলাম।মনে জোর আনলাম বিয়েটা যখন আপু করবে তখন একজন ভালো মানুষের জীবন বাঁচাতে আরেকটা মিথ্যার সাহায্য আমাকে নিতে হবে।কিন্তু আপু স্বত্ত দিয়েছে হৃদও যেন কিছু জানতে না পারে।আপুর আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে হৃদের জীবন থেকে আমাকে দূরে সরিয়ে দেওয়া। আমাকে কস্ট দেওয়া। আমি মেনে নিলাম আপুর স্বত্ত।

পুরো হসপিটাল ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। বাড়িতে খবর দেওয়া হয়েছে সকলে এসেছে। আপুর মুখে স্যারকে আমি বিয়ে করবো শুনে একবার শুধু জিজ্ঞাসা করেছিলো হৃদ আমি এতে সহমত কিনা।আপুর সামনে কিছু বুঝাতেও পারলাম না ওকে।আমার মুখে হ্যাঁ শুনে ও খুব রেগে হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে গিয়েছে। খুব চিন্তা হচ্ছে ওর জন্য। যদি নিজের কোনো ক্ষতি করে বসে? এদিকে আপু, কাকি মণি আর মাম্মাম আমাকে বধূ বেসে সাজিয়ে দিচ্ছে।বিয়ের সময় আপুর প্ল্যান অনুযায়ী পর্দার আড়াল থেকে আপু কবুল বলল।তারপর বিয়ের কাজ সম্পন্ন হলেই আবির চৌধুরী মেঘ স্যারকে নিজের কাছে যেতে দিলো।আমাকে আর স্যারকে অনেক দোয়া করলো।তারপর অসমাপ্ত থাকা ভোটে কার্যক্রম শুরু হলো।ভোট গুনন চলছে। যে কোনো সময় রেজাল্ট চলে আসতে পারে।কিন্তু হৃদ এখনো হসপিটালে আসে নি।আমার খুব ভয় হচ্ছে।মনে হচ্ছে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিলাম নাতো? ওর কিছু হলে আমি কখনো নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না।
চলবে,,,,,