জুনিয়র বর

জুনিয়র বর—— পর্ব -০৪

খানিকবাদে অভি রুমে আসলে আমি
অবাক দৃষ্টিতে ওর দিকে চেয়ে রইলাম।
ও বললো স্যরি,, আসলে ভাইয়া বাহিরে
এসেছিলো তাই ভাইয়াকে শুনিয়ে এ কথা
বলেছিলাম।
আমি বললাম হু,,
মনটা কেমন জানি খারাপ হয়ে গেলো।
বিয়ে নিয়ে কতো স্বপ্নই না ছিলো
আমার।
ভেবেছিলাম বর যখন বাসর ঘরে ঢুকবে তখন
আমি লম্বা ঘোমটা টেনে বসে থাকবো।
এরপর বর কাছে এসে আমার ঘোমটা যেই
তুলতে যাবে অমনি আমি উনার হাত ধরে
বলবো খোলা আকাশের নিচে চাঁদের
আলোতে আমার বদনখানি দেখতে হবে।
তারপর আমি আমার শাড়ির আচঁল দিয়ে
উনার চোখ বেধে এসব বৈদ্যুতিক আলোর
পরিবেশে ছেড়ে আমরা প্রাকৃতিক
আলোর কাছে যাবো। এরপর উনার চোখের
বাঁধন খুলে দিবো তারপর আমি চোখ বন্ধ
করে থাকবো। এরপর উনি চাঁদের আলোতে
আমাকে দেখবেন। এরপর আমরা অনেক সময়
নিয়ে ওখানে পিঠে পিঠ ঠেকিয়ে গল্প
করবো। তারপর যখন ঘুম ধরবে তখন আমরা
রুমে এসে ঘুমিয়ে পরবো। সমস্যা নেই,
তখনো অভির ওই কোল বালিশ আমাদের
মাঝে দেয়াল হয়ে থাকবে।
হিহিহি কিসব যে ভাবছি আমি। এমন হয়
নাকি,,!!
কোনো মেয়ে কি এভাবে তার বরকে
বলতে পারে,,?
এভাবে বললে বর ভাববে মেয়েটার
লজ্জা বলতে কিছুই নেই।
ধুরর,,ভাবলে ভাববে।জীবনে তো এমন রাত
একবারই আসে,, তাহলে ক্ষতি কি আমার এ
স্বপ্ন পুরন করলে,,?
কি ইচ্ছে রে আমার,,!!
আমার বর তো আমাকে দেখেছে। তাহলে
এসব ভেবে কি হবে,,?
একটু পর অভি আমাকে বললো নদী, ঘুম
আসছেনা।
আমি ঠাস করে বলে দিলাম মাদুর নিয়ে
চলো আমরা ছাদে গিয়ে চাঁদনী রাত
দেখি।
ও কেন জানি বলে দিলো আজ না। অন্য
রাতে তোমাকে নিয়ে চাঁদনী রাত
দেখবো, সে রাত তোমার এবং আমার
স্পেশাল রাত হবে।
এরপর ও বললো তোমার জীবনে ঘটেছে
এমন হাসির কোনো ঘটনা আছে কি?
আমি বললাম হু আছেই তো,,,
ও বললো কি সেটা,,
এরপর বললাম ওই যে আমি আর তুমি ঝগড়া
করতে করতে তোমার মাথার চুলে চুইংগাম
লাগিয়ে দিয়েছিলাম,, তোমার মনে
নেই,,?
—হু মনে আছে। ওইটা কি ভুলে যাওয়ার
মতো ঘটনা নাকি,,?
তোমার পাগলামোর জন্য সেবার
পরিক্ষার আগেই আমাকে নাড়িয়া করতে
হয়েছিলো। স্কুলে সবাই আমাকে
নেড়াপোলা বলে ডাকতো। তখন তো
আমি ক্লাস এইটে ছিলাম। বড়ই ছিলাম।
ওই সময় তোমার উপর আমার খুব রাগ ছিলো।
—হু তুমিও তো আমার
বিছানায় অনেকগুলি পিঁপড়া
রেখেছিলে,,?
সেগুলোর কামড়ে তো আমার ও অনেক কষ্ট
হয়েছিলো।
—হু। তুমি আমাকে কষ্ট দিবে আর আমি
তোমাকে আদর করবো তাই না,,,?
এসব হবেনা। তুমি যেমন করবে তার ফল ও
ঠিক তেমনি পাবে।
— আচ্ছা বাদ দাও। প্রচুর ঘুম পাচ্ছে। তুমিও
ঘুমাও।
পরদিন সকাল এগারোটায় ঘুম থেকে
উঠললাম। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে শাশুড়ি
মায়ের কাছে এলাম। এসে দেখি
অনিকের বউ রান্না করছে। আজ নাকি
দুপুরের রান্না নতুন বউ দুজন করবে।
ভেবেছিলাম এভাবে দেড়িতে উঠার
কারনে হয়তো শাশুড়ি মা রাগ করবেন।
কিন্তু তিনি রাগ করেন নি।
শাশুড়ি মা আমাকে পাশে বসিয়ে সযত্নে
খাইতে দিলেন।
আমি ন্যাকোসুরে বললাম মা আপনি ক
খাইয়ে দিবেন?
আম্মু প্রায় সময় আমাকে খাইয়ে দিতো,,,,,
আমার কথা শুনে উনি আমার মাথায় হাত
বুলিয়ে আদর করে দিলেন। আর বললেন এক
মাকে ছেড়ে এসে আরেক মাকে
পেয়েছো তো। আজ থেকে একদমই এসব
ব্যাপারে আফসোস করবেনা। আমি আছি
তো,,,,
শাশুড়ি মায়ের কথা শুনে খুশিতে নাচতে
ইচ্ছা করছিলো,, টিডিং টিডিং,,,,,,,
খাওয়া শেষে শাশুড়ি মা বললেন, এবার
তোমার বড় জা তুশির সাথে রান্নায়
সাহায্য করো।
আমি কিচেনে আসলাম। এসেই দেখি
ভাবী মুখে কালি মেখে রান্না করছে।
আমি ভাবিকে বললাম কিছু রাঁধতে হবে
কি?
উনি বললেন হু,,
সব রান্না করেছি। তুমি টমেটোর চাটনি
আর মুরগির মিষ্টি রোষ্ট করো। এ কথা
বলেই উনি বেরিয়ে গেলেন।
আমি তো বিপদে পরলাম। এসব তো আমি
রান্না করিনি কখোনো।
কিন্তু রাঁধতে হবে তো,, নইলে লজ্জার
বিষয় হয়ে যাবে।
এরপর আম্মুকে ফোন করে রেসিপি নিয়ে
রান্না করলাম।
অনিকের বউ ইচ্ছে করেই বুঝি আমাকে
বিপদে ফেলতে চেয়েছিলো।
এরপর সবাই মিলে লাঞ্চ করতে বসলাম।
আমার বুক তো ধুকপুক করে কাঁপছে। শুধু মনে
হচ্ছিলো আমার রান্নার চেয়ে বুঝি
অনিকেরবউ এর রান্না ভালো হবে,,,,
,
চলবে,,,