ঝরা ফুলের বাসর

ঝরা ফুলের বাসর !! Part- 17

হৃদ কি করছো ছাড়ও আমার লাগছে।আমি অসহায় দৃষ্টিতে হৃদের দিকে তাকালাম।হৃদ আমায় দুই কাঁধ খামচে ধরে টেনে গাড়ির সাথে পিঠটা মিশিয়ে দিলো।আমার মুখের সামনে চোখ রাঙিয়ে চিৎকার করে বলল সত্যি কি মেঘের সাথে তোর কোনো সম্পর্ক নেই? তুই আমাকে ঠকাচ্ছিস নাতো ফুল? কি করে ফিরেছিলি মাঝ রাতে মেঘের সাথে?
আমি অবাক চোখে হৃদকে দেখছি।হৃদ আমার গলাটা টিপে ধরলে আমি ছাড়াবার জন্য ওর হাতটা চেপে ধরলাম বলে উঠলাম তোমার জন্য।হৃদ আমায় ছেড়ে দিলো।আর আমি জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলাম।গলাতে হাত রেখে উল্টো ঘুরে বললাম সেদিনের ঘটনাটা।কেন মেঘ স্যারের সাথে মাঝ রাতে হোস্টেলে এসেছিলাম আমি।সব শুনে হৃদ অনুশোচনা বোধ করল।সেদিন যদি আমার কিছু হয়ে যেতো তাহলে নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারতো না হৃদ।
আমি চোখের পানি মুছে চলে যেতে লাগলাম হৃদ আমার হাতটা ধরে বসলো।আমাকে সামনে টেনে এনে ছরি বলল।আমি নিজের মুখটা ঘুরিয়ে নিলাম।হৃদ আমার গালটা ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিতে চাইলে আমি ওকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিলাম।ওর শার্টের কলারটা টেনে ধরে বললাম এইভাবে ভালোবাসো আমায়? একটাবার আমাকে বলার সুযোগ দিয়েছো? আমিও তো তোমাকে ভালোবাসি।কিন্তু কখনো এমন পাগলামো করিনি।তুমি আস্ত একটা পাগল।আচ্ছা ধরেই নাও আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি তাহলে কি মেরে ফেলবে আমায়?

হৃদ নিশ্চুপ হয়ে আছে।আমি ওকে ধাক্কা দিয়ে চলে যেতে লাগলাম এবার ও আমাকে আটকালো না দেখে আমার আরও বেশি রাগ হলো।এগিয়ে এসে ওর সামনে দাড়িয়ে শার্টের কলারটা টেনে ধরে মুখের সামনে আঙুল তুলে বললাম আমার কাছে আসবে না আর কখনো।
এদিকে কাল আপু হৃদের চেম্বারে আমাকে পর্দার পেছনে লুকিয়ে থাকতে দেখার পর দুশ্চিন্তায় পরে গেছে।সারারাত ঘুমাতে পারে নি।সকালে হসপিটালে এসেই আবির চৌধুরীকে বলল মেঘ স্যারের সাথে যত দ্রুত সম্ভব আমার বিয়ে দিতে।কারণ স্যারের ক্যারেক্টর ভালো না।যদি ভালো হতো তাহলে কোনো মেয়েকে বিয়ের আগে প্রেগনেন্ট করতে পারতো না।স্যারের মত পাল্টে যাবার আগেই আমার সাথে বিয়ে দিতে হবে।আবির চৌধুরী আপুর কথায় যুক্তি আছে মনে করে।আর ঠিক তখনই স্যারের গাড়িটা থামে।উপরে জানালার কাঁচে দেখতে পাই স্যার প্রিয়াকে কোলে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে হসপিটালের মধ্যে ঢুকছে।এটা দেখে রাগে নূর আপুর দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলেন তুমি ঠিক বলেছো।এখন আমাকে কিছু একটা করে মেঘের সাথে ফুলের বিয়েটা দিতে হবে।আর এই ব্যাপারে তুমি আমায় সাহায্য করবে।আপু খুশি হয়ে সম্মতি জানালে একটা প্ল্যান শুনায় আপুকে উনি।

আপুর মনে আনন্দ আর ধরছে না।খুব খুশি মনে আবির চৌধুরীর কেবিন থেকে বের হয়ে বাইরে আসতেই চোখে পরে মেঘ স্যারের উপর।স্যার প্রিয়াকে কোলে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে।আর প্রিয়া স্যারের মুখের দিকে তাকিয়ে হাসছে।এই দৃশ্য দেখে আপুর হাসি মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেলো।কি যেন হলো।কিছু না ভেবেই খুব দ্রুত এগিয়ে এসে টেনে প্রিয়াকে স্যারের কোল থেকে নামিয়ে দিলো।আর স্যারের কলারটা টেনে ধরে বলল এটা হসপিটাল কোনো হোটেল না।যে স্টুডেন্টকে কোলে তুলে তুই হসপিটালের মধ্যে হাঁটবি।আসলেই তোর চরিত্রটা খারাপ।
স্যার অবাক চোখে আপুর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।প্রিয়া বসে পরে বলল আহ্ খুব ব্যাথা করছে পায়ে স্যার হাঁটতে পারছি না আমি।
আপু নিচু হয়ে প্রিয়ার কান ধরে বসলো।ধমক দিয়ে বলল এই মেয়ে ওঠ! প্রিয়া ভয়ে কেঁপে উঠলো।আপু কান টেনে উঠানোর চেস্টা করলো প্রিয়া ভয়ে কাঁপতে থাকলো।স্যার আপুর হাত ধরে বলল কি করছিস নূর মেয়েটার পায়ে ব্যাথা হাঁটতে পারছে না দাঁড়াবে কিভাবে?
আপু উঠে দাড়িয়ে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো স্যারের দিকে।প্রিয়া দুজনের মাঝখানে লাফিয়ে উঠে দাড়ালো।পা নাড়িয়ে বলল আমার পা মনে হয় ঠিক হয়ে গেছে।একটু দৌড়ে দেখি ব্যাথা আছে কিনা।কথাটা বলেই দৌড়ে পালালো প্রিয়া।

আপু রেগে স্যারকে এনে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বলল তুই এতো খারাপ? এতোদিন বলেছিস আমাকে ভালোবাসিস।আর কতো মেয়েকে বলেছিস বল?
স্যার বলল বললেও তোর কি? তুইতো হৃদকে ভালোবাসিস, বিয়ে করেছিস তাই না?
কথাটা শুনে আপু স্যারকে ছেড়ে দিলো।দূরে সরে এসে বলল হ্যাঁ আমি হৃদকে ভালোবাসি আর ও আমার স্বামী। তুই ফুলকে নিয়ে সুখে থাক।ফুল আমার বোন এইজন্য আমার চিন্তা হয় তাই আমি তোকে সাবধান করছি কোনো মেয়ের কাছে যাবি না বলে দিলাম।
কথাটা বলে আপু চলে যাওয়ার পর স্যার মনে মনে বলল এখন আরও বেশি করে আমি মেয়েদের কাছে যাবো। আমার মনে হচ্ছে তুইও আমাকে ভালোবাসিস নূর।এটা তোর বুঝতে হবে।আর যাই হোক ফুলকে নিয়ে তুই অতটাও চিন্তা করিস না।যে ওর সুখের কথা ভেবে আমাকে এসে শাসন করবি।যদি করতিস তাহলে হৃদ আর ফুলের জীবন থেকে সরে যেতিস।তবে আমি বুঝি না ফুলের উপর কিসের এতো হিংসা তোর? কিসেরই বা রাগ?
আমি হসপিটালের মধ্যে এসে দেখতে পেলাম হৃদ দাড়িয়ে কথা বলছে কিছু ডাক্তারের সাথে।হৃদ আমার দিকে তাকালে আমি মুখটা ঘুরিয়ে নিলাম। বিরবির করে বললাম আমার আগে চলে এসেছে।আসবেই তো গাড়ি ছিলো তো ওর কাছে।আমি যদি তখন মেঘ স্যারের সাথে চলে আসতাম ভালোই হতো।কতো লেট হলো।নিজের সাথে নিজে কথা বলতে বলতে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে এলাম।

পেশেন্টের কেবিন থেকে বেড়িয়ে আসতেই কেউ আমাকে ঘুরিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে একহাতে চোখদুটো বন্ধ করে নিলো।আমার আর বুঝতে বাকি নেই এটা হৃদই হবে।চোখ খুলবি না বলে চোখ থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে আমার গলায় ওর লকেটটা খুলে পরিয়ে দিতে গেলো।আমি কেন চোখ খুলবো না বলে ঘুরে তাকাতে গেলে ওর হাতের লকেটটা আমার জামার মধ্যে।

আমি ওর দিকে তাকিয়ে হা হয়ে আছি।ও একহাতে আমার কোমড়ে হাত রেখে কাছে টেনে বলল একটা সেকেন্ডও সোজা হয়ে দাড়াতে পারিস না? আমি এদিকে ওদিকে তাকিয়ে কেউ আসছে কিনা দেখে ওকে ঠেলে সরাতে লাগলাম।ও এক ধমক দিয়ে বলল আবার নড়াচড়া করিস?
আমি ওকে এক ধাক্কায় দূরে সরিয়ে দিলাম।ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম হসপিটালের মধ্যে কি শুরু করেছো? আমাকে ভালোবাসা লাগবে না তোমার যাও।রাস্তায় রৌদ্রে পুরে দাড়িয়ে ছিলাম ইজিবাইকের জন্য।আর তুমি ফেলে রেখে চলে এসেছো আমায়।
হৃদ বলল তুই তো বলেছিলি আমার সাথে আসবি না।

আমি হৃদকে টেনে ধরে বললাম ওটা আমার মনের কথা ছিলো না।তারপর ওকে ধাক্কা দিতে দিতে পেছনের দিকে ঠেলতে লাগলাম।ওর বুকে কয়েকটা কিল বসিয়ে দিয়ে জড়িয়ে ধরতেই হসপিটালের সমস্ত লাইট অফ হয়ে গেলো।চারিদিকে অন্ধকার দেখে ওকে ছেড়ে দিয়ে ঘুরে দাড়ালে ও আমার কাঁধের উপর থেকে হাত এনে লকেটটা জামার ভেতর থেকে বের করলো।হৃদের অন্য হাতটা আমি শক্ত করে চেপে ধরে আছি।ও হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে লকেটটা পরিয়ে দিলো।আর সঙ্গে সঙ্গে লাইট জ্বলে উঠলো।সামনে থেকে ভেসে আসলো আবির চৌধুরীর চিৎকার।
চলবে,,,