জীবনের গল্প

জীবনের গল্প !! Part- 12

খারাপ হবার মত কিই বা এমন করেছে আমার বউ?
-কি করেছে তোর বউকেই জিজ্ঞেস কর।
-না,যেহেতু তুমি আমার বউ এর দিকে আঙুল তুলেছো সেহেতু তোমার মুখ থেকেই আমি শুনতে চাই।
-কি বলতে চাইছো তুমি নীলাদ্রীস?
-না কিছুনা।ঘরে চলো।
-না,তুমি বলে যাও কি জন্য তুমি এ কথা বললে তিয়াসার নামে।
-আরে ফানও বুঝিস না তোরা।হা হা হা।
আমি তো মজা করে বলেছিলাম,
তোদের রিয়েকশন দেখতে।
-ওহ তাই বলো।
আপু তুমি কিছু মনে করোনা।নীলাদ্রীস মজা করেই কথা টা বলেছে।
চলো,এবার ঘরে চলো।
নীলাদ্রীস আমার চোখের দিকে তাকিয়ে চলে গেলো তিয়ারাকে নিয়ে।
নিব্রাস আমার মাথার চুল এলোমেলো করে দিয়ে বল্লো,
চলো এবার পাগলি।

এরপর কেটে গেলো দুই মাস।
নিলাদ্রীস বেবী নেয়ার চেষ্টা করছে এর মাঝেই।
হয়তো আমাকে দেখানোর জন্যই।
আমি আমার বসকে বলে এর মধ্যে নিব্রাসের জন্য একটা চাকুরী ঠিক করে দিলাম।
নিব্রাস আর নীল দুজনই এখন একই অফিসে জব করে।
নিব্রাস আর আমি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কেও আবদ্ধ হয়েছি এখন।
নিব্রাসের ভালবাসা, যত্ন আমাকে নীলের কষ্ট গুলো ভুলিয়ে দিয়েছে।
আমি আমার জীবনে এমন কাউকে পাবো,
যে আমাকে এত ভালবাসবে তা আমি কল্পনাও করতে পারিনি।
দেখতে দেখতে কেটে যায় বিয়ের চার চারটি মাস।
এদিকে তিয়ারা বেবী কনসিভ করেনা।
কিন্তু নীলের যে আমাদের আগে বাচ্চা লাগবেই।
নিব্রাসের বাবা মা আমাদের দুই বউকেই খুব ভালবাসেন।
নিব্রাস পরিবারে নিয়মিত টাকা দেয়।
কিন্তু নীল তা দেয়না।
তিয়ারা আর নীল দুজনই শপিং করে টাকা উড়ায়।
আমি আর নিব্রাস বিবাহিত জীবনে যতটা সুখী।
নীল আর তিয়ারা যেন ততটাই অসুখী।
ওদের মধ্যে সমোঝতার অভাব।
দেখতে দেখতে আমাদের বিবাহিত জীবনের এক বছরও কেটে যায়।
আমার ম্যারেজ ডে এর সারপ্রাইজ এর কথাতো আমি জীবনেও ভুলবোনা।
ঘড়ির কাটা রাত ১২ টা বেজে ১ মিনিট।
আমি অপেক্ষায় আছি সারা দিন।
রাত কখন হবে,
আর কখন নিব্রাস আমাকে উইশ করবে।
কিন্তু নিব্রাস আমাকে উইশ করেনা।
আমি মন খারাপ করে এদিক ওদিক ঘুরতে থাকি।
কিন্তু হঠাৎ আমাকে চমকে দিয়ে আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে জড়িয়ে ধরে নিব্রাস আমাকে বলে,
-আমি ভুলিনি বউটা।
শুধু মাত্র তোমার এক্সপ্রেশন দেখছিলাম।
-পঁচা কোথাকার।মন টাই খারাপ করে দিয়েছো আমার।
তারপর নিব্রাস আমাকে ছোট্ট একটা আংটি আমার আঙুলে পরিয়ে দেয়।
আমি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকাতেই আমাকে বলে,
-স্যালারি থেকে জমিয়ে জমিয়ে কিনেছি।
তোমার বরের সামর্থ্যে যতটুকু কুলিয়েছে ততটুকুই দিয়েই দিলাম।
আপাতত এতটুকুতেই খুশি হও প্লিজ।
সামনে আরো বড় উপহার পাবে তুমি।
আমি ওর মুখ টা আমার হাত দিয়ে আটকে ধরে ওর চোখে চোখ রেখে বলি,
আমি আমার বরের এই উপহারেই অনেক খুশি।
খুব খুশি।
আর তারপর বুকের মধ্যে মাথা রেখে চোখের কোনের জল মুছতে মুছতে বলি,
ভালবাসি নিব্রাস।
ভালবাসি।
-ভালবাসি আমার অপ্সরী।

ভালবাসি।
ওইদিকে নীল আর তিয়ারার আগে কাবিন হলেও,ওরা আমাদের বিয়ের ডেটই ম্যারেজ এ্যানিভার্সারি হিসেবে পালন করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়।
কিন্তু সারা রাত সারাদিন কেটে গেলেও নীল তিয়ারাকে কোন গিফট তো দূরের কথা।
মুখে এক বার উইশ পর্যন্ত করেনা।
সন্ধ্যাবেলা আমিই বাসায় বিরিয়ানি রান্না করি।
শাড়ী পরি।
নীল এই এক বছরে আমাকে আর নিব্রাসকে দেখে কত যে জ্বলেছে তার হিসেব নেই।
ও আমাকে সুযোগ পেলেই বলতো আমি যেন ওর সামনে নিব্রাসের সাথে কোন রঙ তামাশা না করি।
আমি আসলেও নীল আর নিব্রাস অফিস থেকে ফিরলে দরজা খুলে দিয়ে চলে যেতে চাইতাম।
কিন্তু নিব্রাস প্রায়ই ওর ভাইয়ের সামনে আমার হাত টেনে ধরতো।
নীল এই দৃশ্য দেখে চলে যেতো।
আর নিব্রাস তারপর আমাকে জড়িয়ে ধরতো।
বুঝিনা কেন নিব্রাস নীলের সামনে এমন করে।
আর বেশির ভাগ সময় নীলের সামনেই আমাকে আদর করে ডাকে।
আমাকে লক্ষী বউ,সোনা বউ,অপ্সরী বউ বলে ডাকে।
ম্যারেজ এ্যানিভার্সারির রাতে আমাকে কোলে করে ছাদেও নিয়ে যায় নিব্রাস।
তাও আবার ওরই ভাইয়ের সামনে।
আর একটা কথাতো বলাই হয়নি,
এই এক বছরে হুট করেই তিয়ারা অনেকটা মুটিয়ে যায়।
কিভাবে যে ও এমন মোটা হলো তা কল্পনার বাহিরে।
হয়তো বাইরের খাবার বেশি খাবার ফল।
আর যখনই তিয়ারা মুটিয়ে গেলো তখন সবাই বলতে লাগলো নীলকে,
তোর বউ তো হাতি হয়ে গেছে।
কোন দোকানের চাউল খাওয়াস?
যেই বন্ধুরা নীলকে একদিন বলেছিলো,জিতছো ভাই জিতছো।
তারাই আজ নীলকে তিয়ারার মোটাপার জন্য অনেক বাজে মন্তব্য করে।
নীল ধীরেধীরে তিয়ারার উপর থেকে আকর্ষণ হারিয়ে ফেলে।
আসলে কারো উপর আকর্ষণ হলে সেটা বেশি দিন থাকেনা।
যদি না তা ভালবাসা হয়।
আর নীল আর তিয়ারার সম্পর্কটা জাস্ট ছিলো আবেগ+মোহ।
নীল তিয়ারার সৌন্দর্য্যের মোহে পড়েছিলো।
আর তিয়ারা পড়েছিলো আবেগে।
আর যার ফল স্বরুপ দুজনের সম্পর্ক আজ এমন অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে।
আমিও যখন নিব্রাসকে নিয়ে বাসায় যাই,তখন যখন সবাই তিয়ারার সামনে বলে আমার বর এলাকার শ্রেষ্ঠ জামাই।
সব থেকে সুন্দর জামাই।
তখন তিয়ারাও আফসোস করে।

যদি নীলের প্রতি ভালবাসা থাকতো তাহলে অবশ্যই আফসোস করতোনা।
আবার তিয়ারা যখন মুটিয়ে গেলো তখন নীলও তিয়ারাকে ইগ্নোর করতে লাগলো বন্ধুদের কথায়।
যদি নীল সত্যিকারের ভালবাসতো তিয়ারাকে ,তাহলে অবশ্যই ওর মুটিয়ে যাওয়া নিয়ে কোন সংকোচ থাকতোনা।
আমিও তো মোটা ছিলাম।
কিন্তু কই,
নিব্রাসতো আমাকে ওই শরীরেই ভালবেসেছে।
নিজে এত সুদর্শন হয়েও।
আসলে মন টাই আসল।
যেটা সারাজীবন একটা বন্ধনকে স্থায়ী করে রাখতে পারে।
দেহের সৌন্দর্য আর কত দিন।
আজ আছে তো কাল নেই।
নিব্রাস আমাকে কোলে করে ছাদে নিয়ে এসে নিচে নামিয়ে দেয়।
আর পকেটে হাত দিতেই বলে,
-উফফ,জিনিশ টাই তো আনিনি।
তুমি দাঁড়াও আমি এক্ষুণি আসছি।
আমাকে দাঁড় করিয়ে ও নিচে যায়।
আর তখনই হঠাৎ নীল এসে পেছন থেকে আমার কাঁধে হাত রাখে।
আমি নিব্রাস মনে করে হাসি দিয়ে ফিরে তাকাতেই দেখি নীল।
আর আমার হাসি মুখ টা ফ্যাকাসে হয়ে যায়।
-তিয়াসা,
-ভাইয়া আপনি?
-এভাবে ভাইয়া কেন বলো তুমি আমাকে সবার সামনে?
-সম্পর্কে আপনি আমার ভাসুর হোন।
আমার স্বামীর বড় ভাই,তাই ভাইয়াই তো ডাকবো।
প্লিজ তিয়াসা,এভাবে বলোনা।
-কিছু বলবেন আপনি?বলুন এবং তাড়াতাড়ি বলেই চলে যান।
আমার নিব্রাস চলে আসবে এক্ষুণি,
-তুমি কেন করলে ওকে বিয়ে বলোতো?
আমার যে তোমাদের রঙ ঢং দেখতে খুব কষ্ট হয়।
আমি সহ্য করতে পারিনা তোমাদের এই ন্যাকামো গুলো।
-কি সব আবোলতাবোল বলছেন?
এসব ন্যাকামো হতে যাবে কেন?
এগুলো আমাদের ভালবাসা।
-প্লিজ তিয়াসা চুপ করো।
আমি ভুল করেছি,
আমি ভুল করেছি তোমাকে বিয়ে না করে তিয়ারাকে বিয়ে করে।
কিন্তু কি করবো বলো,
পরিবার যে মানলোনা।
কিন্তু যখন আমি আবার গ্রামে এলাম।
তিয়ারাকে দেখে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলাম না।
ওকে ভালো লেগে গেলো।
মাকে বললাম তিয়ারার কথা,
মাও কেন যেন রাজি হয়ে গেলো।
আর করে ফেললাম তিয়ারাকে বিয়ে।
একটাবারও ভাবলাম না যে তোমার কথা বলি বাসায়।
যদি বলতাম,তাহলে হয়তো তারা রাজি হতেও পারতো।
কিন্তু আমি তিয়ারার সৌন্দর্যে এতটাই মুগ্ধ হয়ে গেলাম যে তোমার কথা আর মনেও করলাম না।
-কারণ আমি যে তখন মুটিয়ে গিয়েছিলাম।
হা হা হা।
ভালবাসা আমার মুটিয়ে যাওয়া শরীরের পেছনে ঢাকা পড়ে গিয়েছিলো।
সৌন্দর্য তখন জিতে গিয়েছিলো।
আর হেরে গিয়েছিলো আমার ভালবাসা।
-প্লিজ তিয়াসা প্লিজ,এভাবে বলোনা।
প্লিজ প্লিজ প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও।
কাঁদতে কাঁদতে নীল আমাকে জড়িয়ে ধরে।
আর আমি নীল কে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতে করতে তাকিয়ে দেখি,
নিব্রাস আর তিয়ারা দাঁড়িয়ে…
চলবে