জীবনের গল্প !! Part- 11
তাহলে কি ভেঙে যাবে আমাদের দু বোনের সম্পর্ক?
না না,এ আমি হতে দিবোনা।আমার আজই সব কিছু জানতে হবে।
আমি তিয়ারার সাথে একা কথা বলার সুযোগ খুঁজছিলাম।
হঠাৎ তিয়ারাকে একা পেয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলাম।
-কি হয়েছে আমার পাখিটার?
-ছাড়োতো।
-কি হয়েছে বলবিতো?
কেমন যেন মন মরা মন মরা দেখছি তোকে।
আমার সাথে ভালো মত কথাও তো বলছিস না।
কি হয়েছে শুনি?
-উফফ যাও তো।সরো,আমাকে একা থাকতে দাও।
-কি হয়েছে বলবিতো?হঠাৎ তুই এমন করছিস কেন আমার সাথে?
-কি করবো তোমার সাথে বলো?
তুমি যা করছো তারপর আর কেমনই বা করবো।
-কি করছি আমি?
-কি করোনি তুমি বলো?
এই যে সবার বাহ বাহ কি সুন্দর করে লুটিয়ে নিচ্ছো।
সবাই পারেতো তোমাকে মাথায় করে রাখে।
সবার মুখে তোমার গুণগান।
কই, কেউ তো আমার গুণ গাইছেনা।
আমাকে সুন্দর বলছেনা।
লক্ষী বউ বলছেনা।
কেন বলবে বলো?
তুমি আমার সাথে প্রতিযোগিতা করে ওয়েট লস করে স্লিম হয়ে আগের থেকেও অধিক সুন্দরি হয়ে গেলে।
তুমি আমার সাথে হিংসা করে নিব্রাস ভাইয়ার বউ হলে।
আমার সুখ দেখে একই বাড়ীতে পা রাখলে।
বাড়ীর ছোট বউ হয়ে সংসারের দায়িত্ব তুমি নিলে।
রান্নাবান্না সব কিছুর দায়িত্ব তুমি নিলে।
অথচ বাড়ীর বড় বউতো তুমি নও।
নীলাদ্রীসের বউ তো তুমি নও।
ওর বউ আমি।
এ বাড়ীর বড় বউ আমি।
সব দায়িত্ব আমার থাকার কথা।তোমার না।
না তা না।
নিজেই সব দায়িত্ব নিয়ে আমাকে ছোটা কাজের মেয়ের মত এ বাড়ীতে রেখে দিয়েছো।
আর তুমি কায়দা করে হয়ে গেছো এ বাড়ীর রাণী।
এ বাড়ীর বড় বউ যেন তুমিই।
-তিয়ারা, (ধমক দিয়ে,নিব্রাস)
এসব কি হচ্ছে?বড় বোনের সাথে কেউ এমন ব্যবহার করে?কেউ এভাবে কথা বলে নিজের বড় বোনের সাথে?
-বড় বোন আগে ছিলো,এখন ও আমার ছোট জা।তাই আমি ওর সাথে এভাবে কথা বলতেই পারি।
কিন্তু তুমি তো দেখছি নিজের স্থান টাও ভুলে গেছো।বড় ভাবীকে কিভাবে সম্মান দিয়ে কথা বলতে হয় জানা নেই নাকি?
-ওহ তাইতো।
আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম আসলে,আমার স্থান কোথায়।
আমি তো তোমার দেবর ছিলাম আগে।
আর এখন আমি তোমার কি হই?
এখন আমি তোমার বড় বোনের স্বামী,
মানে তোমার দুলাভাই।
সো আপনি আপনি করে কথা বলবে।সম্মান দিয়ে কথা বলবে।
শত হলেও বড় দুলাভাই বলে কথা।
-না মানে,
-উঁহু উঁহু, কোন কথা নয়।
তুমি বিয়ের পর আগের সম্পর্ক ভুলে গেছো।
আমিও আমার বিয়ের পর আগের সম্পর্ক ভুলে গেলাম।
তিয়াসা তোমার ছোট জা।
আর তুমি আমার শালী।
কথাটা যেন মাথায় থাকে।
আর তিয়াসা,
কাল থেকে সংসারের সব কাজ তিয়ারাকে বুঝিয়ে দিবে।
মানে রান্নাবান্না,সকালের নাস্তা বানানো সব।
যেই কাজ গুলো এত দিন তুমি করতে সব কাল থেকে ও করবে।
আর তুমি করবে ওর কাজ গুলো।
মানে ছোটা কাজ যে গুলা।
-কিন্তু নিব্রাস,
-কোন কিন্তু নয়,
আমি চাইনা কেউ আমার বউ এর দিকে আঙুল তুলুক।
কথা গুলো বলে নিব্রাস আমার হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে যায়।
পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি ঘর ঝাড়ু দেই,
থালাবাসন ধুই।
আর ওদিকে তিয়ারা রুটি বানানোর চেষ্টা করছে,
আমি মাত্রই ওকে সাহায্য করতে যাবো আর তখনই নিব্রাস এসে আমাকে আটকে দিলো।
কোন রকম বাঁকা আর পোড়া রুটি বানিয়ে নিয়েছে তিয়ারা।
তারপর আলু ভাজি করার জন্য আলু কাটতে গিয়ে আঙুলই কেটে ফেলেছে।
তবুও কোন রকম আলু ভাজি করে সবাইকে খেতে দিয়েছে।
নীল তো সবার সামনে বলেই ফেল্লো,এসব কি?
রুটির কি অবস্থা,আলু ভাজি এগুলো নাকি তেল ভাজি?
এত তেল।
বাবা মা তো না খেয়েই উঠে গেলেন।
দুপুরে আমি ঘর মুছলাম,কাপড় চোপড় ধুয়ে শুকা দিয়েছি।
ওদিকে তিয়ারা রান্না করছে।
দুপুরে খেতে বসে নীলাদ্রীসতো প্লেট ই ছুড়ে ফেলে দিলো।
এসব কি রান্না?
-কে রান্না করেছে এগুলো?
তিয়ারা ধীরেধীরে উত্তর দিলো,
আমি।
-রান্না যদি না ই পারো তাহলে রান্না করতে যাও কেন?
সারাদিন সাজগোজ যার কাজ।
সে কি আর রান্না পারে।
মা ও দু এক কথা শুনিয়ে দিলেন তিয়ারাকে।
-এসব খাওয়া যায় বড় ভাবী?
ছোট ভাবী কি ভালো রান্না করে।আর তুমি,বড় বউ হয়ে কিছুই পারোনা।
সকাল থেকে খুধায় মরছি।(ছোট বোন)
সবাই না খেয়ে উঠে গেলো।
এদিকে আমি তিয়ারার কাছে যেতেই তিয়ারা আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো।
-কিছু বলিস না ওকে।সাহায্যও করবিনা একদম।
ও নিজেই ওর ভুল বুঝতে পারবে ধীরেধীরে।(নিব্রাস)
রাতে তিয়ারা আমাকে ডেকে বলে আমি যেন রান্না করি।
আমি ওর কথা শুনে রাতে রান্না করি।
সবাই ভালো ভাবে খায়।
পরের দিন আবার সকালে দুপুরে তিয়ারা রান্না করে,
রাতেও তিয়ারা রান্না করে।কিন্তু সব খাবার নষ্ট হয়ে যায়।
পরে আমি গিয়ে আবার রান্না করি।
হঠাৎ তিয়ারা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
তুমি এ কয়দিন কত কষ্ট করেছো।
আমার জন্য সহজ কাজ গুলো বেছে দিয়ে কঠিন কাজ গুলো তুমি নিয়েছো।
আর আমি কিনা তোমাকে ভুল বুঝেছি।
আমাকে ক্ষমা করে দিও আপু।
কাল থেকে রান্না তুমিই করো।
আর আমাকে ধীরেধীরে শিখিয়ে দিও।
নয়তো সবাইকে না খেয়ে মরতে হবে।
আর আমি যে তোমাকে যা তা বলেছি এর জন্য অনেক সরি আপু।অনেক সরি।
-ধুর পাগলি কাঁদিস না এভাবে।
সব ঠিক আছে।
ধীরেধীরে তোকেওআমি শিখিয়ে দিবো সব।
তিয়ারা আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে আর হঠাৎ নীল এসে বলে উঠে,
যত টা ভালো তুমি এখন তোমার বোনকে ভাবছো,
ততটা ভালোও কিন্তু না তোমার বোন।
আর তখনই নিব্রাস এসে পালটা প্রশ্ন করে নীলাদ্রীসকে,
-কেন?খারাপ হবার মত কিই বা এমন করেছে আমার বউ?
চলবে…