জীবনের গল্প !! Part- 13 (Last-Part)
আর আমি নীল কে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতে করতে তাকিয়ে দেখি,
নিব্রাস আর তিয়ারা দাঁড়িয়ে…
-নীলাদ্রীস, (তিয়ারা)
নীলাদ্রীস তিয়ারার কথা শুনে আমাকে ছেড়ে দেয়।
-কি হচ্ছে এসব নীলাদ্রীস?
-না মানে আসলে,
-কি হয়েছে তা আমি বলছি তোমাকে তিয়ারা।
-নিব্রাস,ভাই আমার।
তুই তিয়াসাকে ভুল বুঝিস না।ও খুব ভালো মেয়ে।খুব ভালো মেয়ে ও।
ওর কোন দোষ নেই বিশ্বাস কর।
-ভাই প্লিজ,
আমার বউকে আমার চেয়ে বেশি তুমি তো আর চেনোনা।
সো প্লিজ এত কথা বলোনা।
-মানে?
-কি বুঝাতে চাইছো তুমি আমাকে?
তিয়াসা ভালো মেয়ে এইতো?
হা হা হা।আমি জানি সেটা ভাই।আমি জানি সেটা।
আর ও কতটা লক্ষী,ধৈর্য্যশীল সেটাও জানি।
আর জানি তোমার প্রতারণার কথাও।
নিব্রাসের কথা শুনে আমি আর তিয়ারা চুপ করে আছি।
-তুই সব জানিস ছোট?
-ভাই,আমি সব জানি।
আমার অপ্সরী আমার কাছ থেকে কিছুই লুকোয়নি।
-কবে বলেছে ও তোকে?
-যেদিন তুমি ওকে ফোন দিয়ে থ্রেট দাও সেদিন।
ও আমাকে সব খুলে বলে।
আর আমাকে এও বলে,এরপরেও কি আমি ওকে বিয়ে করতে চাই কিনা।
আমি ওকে বলি,তুমি আমার ভাইয়ের প্রেমিকা আগে ছিলে,এখন নেই।
আর আমার ছোট বেলার ভালবাসা তুমি।
তো বলো,আমি তোমাকে ছাড়বো কি জন্য?
তবে কি ভাই জানো,
ওকে এভাবে কষ্ট দেয়া তোমার ঠিক হয়নি।
কিন্তু ধন্যবাদ ওকে আমার হবার সুযোগ করে দেয়ার জন্য।
নইলে তো আমি এত ভালো একটা মেয়েকে আমার জীবন সঙ্গীনি করে পেতাম না।
তিয়ারা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে কাঁদছে।
-তিয়ারা, (নীল)
-আমিও সব জানি,কিচ্ছু বলতে হবেনা আমাকে।
-তুমিও?
-হ্যাঁ, নিব্রাস ভাইয়াই আমাকে সব বলেছে।আর সব কিছু বুঝিয়ে দিয়েছে।
যাতে কখনো আমি আমার বোনকে ভুল না বুঝি।
আর সেদিনই বলেছে,যেদিন তুমি আমার বোনকে ভয় দেখাচ্ছিলে।সব বলে দিবে বলে..
নিব্রাস ভাইয়া চায়নি ভুল করেও আমি কোন দিন আমার লক্ষী বোনটাকে কখনো ভুল বুঝি।
আমার নিষ্পাপ বোনটার সাথে তুমি এমনটা না করলেও পারতে।
-আমি ভুল করেছি তিয়ারা,এটা আমি মানছি।
আর আমি তিয়াসার কাছেও ক্ষমা চাচ্ছি।
আমি ওর সাথে অনেক বড় অন্যায় করেছি।
আমি কাঁদছি ওদের কথা শুনে।
নিব্রাস আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
তুমি কাঁদছো কেন পাগলী?
আজ তো তুমি জিতে গেছো।
সে বুঝতে পেরেছে তুমি কত মূল্যবান।
নিজেকে কখনো ছোট ভাব্বেনা।
আমি চোখের জল মুছে বললাম,
-আমি তো সেদিন থেকেই নিজেকে স্বার্থক মনে করি।
যেদিন তুমি আমার জীবনে এসেছো।তোমাকে আমি পেয়েছি।
-তিয়ারা,তুই নীলকে ভুল বুঝিস না,
যা হবার হয়ে গেছে।
যা হয়ে গেছে তা ছিলো অতীত।
এখন বর্তমান নিয়ে ভাবার সময়।
আর তোর বর্তমান নীল।
আর আমার বর্তমান আমার নিব্রাস।
যাকে আমি খুব ভালবাসি।
:
এরপর তিয়ারা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
আপু তুমি কেন আমাকে সব কিছু খুলে বল্লেনা?
তাহলে আমি কোন দিনই নীলাদ্রীসকে বিয়ে করতাম না।
নিজের বোনের ভালবাসাকে কি আমি কেড়ে নিতাম বলো?
তুমি আমার জন্য কেন তোমার ভালবাসাকে স্যাক্রিফাইস করলে?
-শোন পাগলি, আল্লাহ্ তায়ালাই আমাদের কিসমত একেক জনের সাথে জুড়ে রেখেছেন।
আমরা চাইলেও সেটা লংঘন করতে পারবোনা।
ভাগ্যের লিখন না যায় খন্ডন।
আমি আল্লাহ্র কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া জানাই।
তিনি যে নিব্রাসকে আমার জন্য তৈরি করেছেন।
হয়েছে হয়েছে,এসব কথা থাক।
এসব নিয়ে আর কোন কথা নয়।আজ থেকে সবাই সব অতীত ভুলে যাও।
আর শোনো একটা গুড নিউজ,
আমরা সবাই নিব্রাসের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালাম।
-গুড নিউজ?
নিব্রাস একটা টেস্ট রিপোর্ট পকেট থেকে বের করে আমার হাতে দিয়ে বল্লো,
দেখো এটা।
এটা আনতেই নিচে গিয়েছিলাম।
আমি কাগজ টা খুলেই দেখতে পাই,
রেজাল্ট পজিটিভ।আলহামদুলিল্লাহ্।
তারমানে আমি মা হতে চলেছি,
আর নিব্রাস বাবা।
-নিব্রাস,
-ইয়েস।আমরা বাবা মা হতে যাচ্ছি।
আমি নিব্রাসকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম।
নীল আর তিয়ারা আমাদের শুভ কামনা জানিয়ে নিচে চলে গেলো।
-কাঁদেনা পাগলি,কাঁদেনা।
নিব্রাস আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।তবুও আমার কান্না থামেনা।
এ যে খুশির কান্না।
তখন নিব্রাস হুট করে বলে উঠে,
কই দেখি তো আমার মোবাইল টা,
বের করতে দাও আমার মোবাইল টা,
কয়েকটা ফটো তুলি,
আমাদের ছেলে মেয়েকে এই ফটো দেখিয়ে বলবো,
দেখ মা/দেখ বাবা,তোর মা তোর আসার কথা শুনে খুশি হয়নি।
বরং কি কান্নাটাই না কেঁদেছে।
আমি নিব্রাসের বুক থেকে মাথা তুলে ওর বুকে কয়েকটা কিল ঘুষি দিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বলতে লাগলাম,
যা পঁচা ছেলে কোথাকার।
তোর সাথে কথাই নাই আর।
-ওই কই যাও আমায় রেখে,
দাঁড়াও তো আমার গুল্লু সোনার মা।
আমার প্রেগন্যান্সির কথা শুনে মা বাবা,আম্মু আব্বু সহ বাড়ীর সবাই খুশি।
বিশেষ করে আমার নিব্রাস।
পৃথিবীর সব সুখ যেন আমার আঁচলে ঢেলে দিয়েছেন আমার আল্লাহ্।
মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব থেকে সুখী মেয়েটাই বুঝি আমি।
সত্যি বলতে আল্লাহ্ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।
তাই আল্লাহ্র উপর সব সময় বিশ্বাস রাখবেন।
ইনশাআল্লাহ্ আল্লাহ্ তায়ালা আপনাকে নিরাশ করবেন না।
(সমাপ্ত)
বিঃ দ্রঃ “ লেখাঃ তিতিশ্মা মুসাররাত কুহু” লেখকের লেখা অন্য গল্প গুলো পড়তে এখানে ক্লিক করুন !!