জীবনের গল্প

জীবনের গল্প !! Part- 10

নিব্রাস যদি আজ এই মধুর লগণে জানতে পারে তারই নববধূ।
তারই এক মাত্র ভাইয়ের সাবেক প্রেমিকা।
আর তার ভাইয়ের বউ হয়ে আসার জন্য এক সময় পাগল ছিলো।
তাহলে আজকের এই লগণ টা মধুময় থাকবেতো তিয়াসা?
নাকি বিষময় হয়ে যাবে বলোতো?
আমি কোন কিছু বলে উঠার আগেই নিব্রাস চলে আসে।
-ভাসুর আর ছোট ভাইয়ের বউ কি কথা হচ্ছে হুম?
-এইতো,বলছিলাম আমার ভাইকে কেমন লেগেছে সেই কথা।
তাইনা তিয়াসা?
-জ্বী ভাইয়া।
-আচ্ছা থাক তোরা।আমি যাই একটু ওদিকটায়।
আমি শুধু চিন্তা করছি,নীলাদ্রীস এমন টা কিভাবে হতে পারে?
এমন একটা মানুষকে আমি ভালবেসেছিলাম?
ভাবতেই কেমন লাগছে।
রাত হয়ে আসে অনেকটা।
তাই নিব্রাসের মা আমাদের খেতে ডাকে।
আমরা সবাই টেবিলের সামনে যাই।
আত্মীয় স্বজনরাও আছেন ওখানে।
সবার সামনে খাওয়া দাওয়া করবো,
লজ্জা লাগছে।
নিব্রাস বার বার বলছে,
খাও।
কিন্তু আমি যে লোক জনের সামনে খেতেই পারিনা।
তবুও কোন রকম দুই লোকমা তুলে মুখে দিলাম।
পেটের ক্ষুধা পেটে রেখেই বললাম আর খেতে ইচ্ছে করছেনা।
তিয়ারাও সেইম,অচেনা লোকজনের সামনে খেতে পারেনা।
ও নিজেও উঠে গেলো খাওয়া রেখে।
বাসর ঘর সাজানো শেষ।
ওই দিকে খাওয়া দাওয়া শেষ করিয়ে আমাদের দুই বোনকে এক জায়গায় বসিয়ে রেখেছে।
যারা বাসর ঘর সাজিয়েছে তারা দুই ভাইকে ডাকছে।
১০ ১০= ২০ হাজার টাকা না দিলে তারা নাকি দুই বউকে দুই রুমে ঢুকতে দিবেনা।
নীলাদ্রীস আর নিব্রাস কথা কাটাকাটি করে দুই ভাই ১০ হাজার টাকা দিয়ে ঘরে ঢুকে যায়।
সাথে আমাদেরও নিয়ে যায়।
আমি বাসর ঘরে ঢুকেই বললাম,
-নিব্রাস,আমি ফ্রেশ হবো।
-এখনই?
তোকে দেখি না বধূ বেশে কিছু ক্ষণ।
-আচ্ছা দেখ।
আমি খাটে গিয়ে বসলাম।
-একটু ঘোমটা টা দিয়ে মুখ টা ঢাকবি?
-কেন?
-আমি ঘোমটা খুলবো।
-ইচ্ছে করছে,তোকে না।উফফ
আমি ঘোমটা টা টেনে নিলাম।
এবার নিব্রাস আমার ঘোমটা তুলে বল্লো,
মাশাআল্লাহ্‌।
আমি কেন যেন লজ্জা পেয়ে চোখ টা বন্ধ করে ফেললাম।
তারপর নিব্রাস আমাকে চমকে দিয়ে একটা প্যাকেট দিলো আমার হাতে।
-কি আছে এতে?
-খুলেই দেখ।
-আমি খুলে দেখি পিজা।
-পিজা?
-আমি বুঝেছিলাম তুই সবার সামনে লজ্জায় খেতে পারছিলিনা।
এই নে এখন খেয়ে নে।
-উফফ,কি যে খিধে পেয়েছে জানিস না।
দে খাই।
আমি খেয়ে নেই।
ধরতে গেলে সারাদিন ই না খাওয়া আমরা দু বোন।
সকাল থেকে পার্লারের লোক জন সাজানো শুরু করেছে,আর খাই ই নি সাজ নষ্ট হয়ে যাবে বলে।
আর রাতেতো খিধে থাকার পরও খেতে পারলাম না।
খাওয়া শেষে বল্লো,
দাঁড়া এবার।
-কেন?
-উফফ উঠে দাঁড়া না একটু।
-আচ্ছা দাঁড়ালাম।
আমি দাঁড়াতেই নিব্রাস আমাকে জড়িয়ে ধরে।
-থ্যাংক ইউ আমার লাইফে আসার জন্য।
থ্যাংক ইউ।
তারপর ওর চোখের কোনের জল মুছতে মুছতে অন্য দিকে ঘুরে আমাকে বলে,
যাও ড্রেস চেঞ্জ করে নাও তাহলে।
ফ্রেশ হয়ে নাও।
অনেক রাত হয়েছে ঘুমাবে।
আমি ফ্রেশ হয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে নেই।
-নিব্রাস আমাকে একটা শাড়ী বের করে দিয়ে বলে,
বাসর ঘরে নাকি বউকে কিছু দিতে হয়।
আমার তো অত টাকা নেই।
থাকলে তোকে আমি একটা আংটিই দিতাম।
আপাতত এই শাড়ীটা রাখ।
আমি আমাদের প্রথম ম্যারেজ ডে তেই তোকে দামী কিছু দিবো।
প্লিজ কোন খোটা দিস না যে আমার বর আমাকে বাসর ঘরে শাড়ী দিছে।
-পাগল হয়েছিস তুই?তুই যে আমাকে এই শাড়ীটা দিয়েছিস এটাই আমার কাছে অনেক দামী।
-পাগল একটা।
যা শুয়ে পড়।
আমারো ঘুম পাচ্ছে খুব।
-আজ থেকে তুই আমার স্ত্রী।
আর আমি তোর বর।
লাইফের যে কোন ডিসিশন আমরা দুজন মিলেমিশে নিবো,কেমন?
-আচ্ছা।

-আর পারলে এবার একটু তুমি বলার চেষ্টা করিস প্লিজ।(চোখ বন্ধ করে লজ্জা পেয়ে)
-আহারে আমার তুমি গো।
যা ঘুমা।
পরের দিন সকালেই আমি উঠে ফ্রেশ হয়ে নিব্রাসের মায়ের কাছে যাই।
গিয়ে জিজ্ঞেস করি,
-কিছু করা লাগবে মা?
-না,তুই গিয়ে রেস্ট কর।
একটু পরেই তো আবার সাজগোজ করাতে চলে আসবে তোর ডিম্পি আপু।
ডিম্পি আপু নিব্রাসের ফুফাতো বোন।
আমি রুমে যাবো আর দেখি তিয়ারা,
-কিরে,
-আর বলোনা,খুধায় জান যাচ্ছে।
-ইশ তুইও তো আমার মত লজ্জায় খেতেই পারিস নি কাল।
-তোমার খিধে পায়নি?
-আমাকে নিব্রাস পিজা এনে দিয়েছিলো।
-ইশ কি ভালবাসা।
আর আমার টার সাথে আমারতো আগে থেকেই বিয়ে হয়েছিলো।
অথচ ফাজিল টায় আমার জন্য কিচ্ছু আনলোনা।
-বাদ দে।
নাস্তা খেয়ে নিস ভালো মত।
লজ্জা রাখিস না আর।
-হুম।
কিছু ক্ষণ পর নাস্তা করলাম আমরা সবাই মিলে।
নাস্তা করার কিছু ক্ষণ পর ডিম্পি আপু আসলেন সাজানোর জন্য আমাদের।
রিসিভশনের প্রোগ্রামের জন্য।
নিব্রাস তো ডিম্পি আপুকে সোজাসুজি বলে দিলো।
আপু তোমার হাতে ধরি প্লিজ তুমি আমার বউকে সাজিওনা।
বুঝলাম না কেন এমন করছে নিব্রাস।
পরে আমাকে নিব্রাস বল্লো,ডিম্পি আপু যেভাবে সাজায়,ওমন সাজ দেখলে যে কেউ অজ্ঞান হবে।
তুমি সেজোনা প্লিজ।

তুমি এমনিতেই অনেক সুন্দর।
তাই আমিও আপুকে বললাম,আপু আমার ভাড়ী সাজে এলার্জি গত কাল সাজার পর অনেক প্রবলেম হয়েছে।আজ তাই সাজবোনা।
যদিও আমার বরের কথা রাখতেই আমার মিথ্যেটা বলা লাগলো।
আমি তিয়ারাকেও না করলাম সাজতে।কিন্তু ও আমার কথা শুনলোনা।
ও তো খুশি,ওকে বেশি সুন্দর লাগবে।যেহেতু আমি সাজবোনা।
যেই কথা সেই কাজ।
দুপুরে আমি নরমালি রেডী হয়ে গেলাম।
আর ডিম্পি আপু তিয়ারাকে সাজিয়ে কমপ্লিট করলো।
স্টেইজে আমাদের দুজনকে নেয়ার পর কিছু লোক তো তিয়ারাকে দেখে হাসতে লাগলো।
তিয়ারাও কিছু বলতে পারছিলোনা।
কারণ কিছু ক্ষণ আগেই তিয়ারা পুরো সাজ দেখে একটা চিল্লানি দিয়েছে।
কিন্তু মেহমান এসে যাওয়ায় সব সাজ মুছে আবার নতুন করে সাজার কোন চান্সও ছিলোনা।
নীলও তিয়ারাকে খুব বকে
সাজ দেখে,আর ডিম্পি আপুকেও।
সেদিনও সবাই আমাকে আর নিব্রাসকেই সুন্দর জুটি বলছিলো।
আর নীল এসব দেখে শুধু জ্বলছিলো।
কেটে গেলো বিয়ের প্রোগ্রাম।
আমরা বাবা মায়ের সাথে দেখা করতে এ বাসায় আসলাম।
এ বাসার সবাইও তিয়ারাকে দেখে হাসাহাসি করলো।
বিশেষ করে ওর বান্ধবীরা।
নিব্রাস আমার বাবা মায়ের সাথে পুরো মিলে গেলো।
মনেই হয়না ও এ বাড়ীর জামাই।
মনে হয় ও যেন এ বাড়ীর ছেলে।
লোকজন নিব্রাসের ব্যবহার দেখে মুগ্ধ হয়ে বলতে লাগলো,
তিয়াসার মা,
তোমার বড় জামাই টা অনেক মিশুক।
তোমার বড় মেয়ের ভাগ্য খুব ভালো যে এমন বর পেয়েছে।
ওইদিকে নীল এসব দেখে শুধু তেলে বেগুণে জ্বলতে থাকে।
কেটে যায় তিন চার দিন।
নিব্রাস আর আমার মধ্যে কথা হয়,
আমরা যত দিন না দুজন দুজনের সাথে ইজি হবো তত দিন আমরা শুধু বন্ধুর মতই থাকবো।
শশুড় বাড়ীতে এখন রান্নার দায়িত্ব টা আমিই নিয়েছি।
যদিও মা তিয়ারাকে দায়িত্ব টা দিতে চেয়েছিলেন।
কিন্তু তিয়ারা যে রান্নাই পারেনা ভালো মত।
তাই ওকে টুকটাক কাজের দায়িত্ব দিয়ে আমিই রান্নার দায়িত্ব নেই।
এখন বাড়ীর সবাই আমার রান্নার প্রশংসাও করছে।
আশেপাশের সবাই এসে আমারই গুণগান গায়।
কিন্তু আমি লক্ষ্য করলাম,

তিয়ারা কেমন যেন চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে।
ইদানীং ও আমার সাথে কোন কথা বলেনা।
আমি বলতে চাইলেও ও আমাকে এড়িয়ে যায়।
আমি প্লেটে ভাত বেড়ে দিলে খায়না।
কিন্তু কেন ও এমন করছে?
তাহলে কি নীল ওকে সব বলে দিয়েছে?
ও কি জেনে গেলো,ওর স্বামীর ভালো বন্ধু না,বরং ওর স্বামীর সাবেক প্রেমিকা ছিলো ওর বড় বোন।
তাহলে কি ভেঙে যাবে আমাদের দু বোনের সম্পর্ক?
না না,এ আমি হতে দিবোনা।আমার আজই সব কিছু জানতে হবে।
চলবে…