ও আমায় ভালোবাসেনি

ও আমায় ভালোবাসেনি- সিজন ২ – Part- 10

আরেকটা রাত নির্ঘুম কাটানোর পর অবশেষে সকালের দেখা পেলো মিথিলা । রাইদ নিশ্চিন্তে ওর বুকে মুখ গুঁজে ঘুমুচ্ছে । রাইদের মাথায় হাত বুলিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো মিথি । বাইরে পাখির কিচিরমিচির শব্দ শোনা যাচ্ছে, খুব ইচ্ছে করছে তাদের সাথে দু’টো সুখ দুঃখের কথা বলতে ।
পাখিগুলো অবশ্য তার জন্যই আনা । গতকাল সন্ধ্যায় কাজ থেকে ফিরে দেখে বারান্দায় একজোড়া ময়না পাখি কিচিরমিচির করছে ।
প্রথমে অবাক লাগে ঘরে এসে রাইদ কে প্রশ্ন করতেই সে জবাব দেয়_
— এ বাড়িতে একজনের তো আমার মত অমানুষের সাথে গল্প করতে বাঁধে । কথা জমিয়ে রাখতে রাখতে মানসিক রোগী হলে আবার দোষটা আমার ঘাড়েই আসবে তাই পাখি এনে দিলাম । অন্তত তাদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলুক , গল্প করুক মনটা ভালো থাকবে ।
এ কথা শুনে যেমন অবাক লেগেছিল তেমনই খুশিও লেগেছে মিথির । এই রাইদ যেন অচেনা তার কাছে ।
তারপর মনে হয়েছে নাহ্ মানুষটাকে সে যতটা খারাপ ভাবে ততটাও খারাপ নয় সে ।
একটু ক্রুয়েল হওয়ার চেষ্টা করে একটু বাঁকা বাঁকা কথা বলে কিন্তু দিনশেষে কেয়ারনেস ভাবটা লুকিয়ে রাখতে পারে না ।
রাইদের চুলে হাত বুলিয়ে আলতো করে চুমু খেলো ওর মাথায় তারপর একটু সরে আসতে চাইলে রাইদ ওর কাপড় চেপে ধরলো ঘুমের মধ্যেই ।
বিরক্তি প্রকাশ করে ঘুম জড়ানো অস্পষ্ট গলায় বললো_
— খবরদার নড়বা না আমার ঘুম কমপ্লিট হয়নি ।
— আমার তো ঘুম ভেঙে গেছে আমি উঠবো ।
— তুমি নিশাচর ঘুমাওনি আবার ঘুম ভাঙবে কি করে । মেজাজ খারাপ করবে না আমার চুপচাপ শুয়ে থাকো ।
— আমাকে অফিসে যেতে হবে ।
— আজ শ্যুট নেই মিথ্যে বলে লাভ নেই ।
— আরে কালকের জন্য কয়েকটা ড্রেস রেডি করতে হবে তো ।
— উফফ আর একটা কথাও না , সব পরে । আগে আমার ঘুম ।
হাত পা দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মাথাটা বুকে বেশি করে চেপে ধরে ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো রাইদ ।
মিথি অস্বস্তি তে ওর মাথায় হাত রেখে শুয়ে থাকলো ।
মারজুক অপেক্ষা করছিল মিথির জন্য । অলরেডি কয়েকবার মেসেজ করেছে কিন্তু কোনো রিপ্লাই পায়নি । প্রচন্ড রেগে আছে ।
ন’টার দিকে না পেরে কল দিলো । মারজুকের কল দেখে ভয়ে ভয়ে রিসিভ করলো মিথি ।
মারজুক বিরাট এক ধমক দিয়ে বললো_
— এই মুহুর্তে যদি অফিসে তোমাকে না পেয়েছি তা’হলে চাকরি নট । আধঘন্টার মধ্যে আসবা নয়তো টার্মিনেশন লেটার পৌঁছে যাবে তোমার ঠিকানায় ।
— না না স্যার আমি আসছি । এক্ষুনি আসছি ।
— লেটস সী ।
ফোন কাটতেই মিথি রাইদ কে ডাকাডাকি শুরু করলো । রাইদের আহ্লাদীপনার শেষ নেই । সে চারবার ডাকে একবার হু বলে ওঠে ।
শেষে ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে উঠতে হলো মিথি কে ।
ক্লজেট থেকে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে যখন যাচ্ছিলো তখন রাইদ আঙ্গুল তুলে শাঁসিয়ে বললো_
— বাসায় এসো হচ্ছে তোমার ।

একগাদা বকুনি খেয়ে কাজ শুরু হলো অফিসে ।
পরবর্তী শ্যুটে মডেল দের ড্রেস চুজ করে রাখা হলো ।
এরপর নতুন কোনো আসন্ন শীতকালীন পোশাকের কিছু আইডিয়া স্কেচবুকে সংগ্রহ করে রাখা হলো ।
মোটামুটি কাজ শেষ হলো সাড়ে তিনটার মধ্যে । দুপুরের খাবার না খেয়ে একটানা কাজ করে গেছে সবাই ।
মিথিলা টায়ার্ড হয়ে বসে ছিলো রিসিপশানের অপজিটে সোফায় । দু একজন অফিস স্টাফের সাথে গল্প করছিল কাজ নিয়ে ঐ সময়ে মারজুক আসলো ।
ওকে দেখে সবাই তটস্থ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো ।
মারজুক ভ্রু কুঁচকে বললো_
— তোমরা এখনো অফিসে?
— স্যার আপনি তো যেতে বলেন নি ।
— কাজ শেষ হয়েছে অফকোর্স চলে যাবা বলতে হবে কেনো? এমনি সময় কাজ ফেলেই চলে যাও আজ আবার পারমিশানের জন্য অপেক্ষা করছো?
— স্যরি স্যার আমরা এখুনি যাচ্ছি ।
— ইউ তুমি থাকো । মিথির দিকে ইশারা করে বললো ।
মিথি মনে মনে বিরক্ত হলেও দাঁড়িয়ে পড়লো ।
মারজুক হালকা কেশে জিজ্ঞেস করলো_
— লাঞ্চ করেছো?
— না স্যার সুযোগ দিলেন কোথায়!
— আমিও লাঞ্চ করিনি । তুমি চাইলে আমার সাথে আসতে পারো ।
— ইটস ওকে স্যার আমি বাসায় গিয়ে খেয়ে নেবো ।
— তোমার হাজবেন্ড ও আসছে । আমি ইনভাইট করেছি । বাসায় একা খাওয়ার চাইতে আমাদের সাথেই এসো?
— ওকে স্যার আমি ব্যাগ নিয়ে আসছি ।
— এসো আমি গাড়িতে ওয়েট করছি ।

রেস্টুরেন্টে রাইদ আগেই পৌঁছে গেছে । এক সাইডে বসে খুব মনযোগ দিয়ে ফোন চাপাচাপি করছিলো ও ।
মারজুক টেবিলে একটা টোকা দিয়ে বললো_
— হ্যালো ব্রো?
— ওহ্ হাই ।
ফোন রেখে উঠে দাঁড়িয়ে হাগ করলো রাইদ , মারজুক কে ।
মারজুক বসতে বসতে বললো_
— দেখো কাকে নিয়ে এসেছি? আজ কিন্তু তোমরা ট্রিট দিচ্ছো আমাকে ।
— ইয়াহ শিওর । আমার বউ তোমাকে ট্রিট দিবে তাইনা জান?
মিথির হাত ধরে পাশে বসিয়ে দিলো রাইদ ।
মিথি বিস্ফোরিত চোখে তাকালো । ওর কাছে একদমই টাকা নেই আসার পথে তাড়াহুড়োয় পার্সটা ফেলে এসেছে ।
মারজুক বিস্তর হাসলো_
— ওয়াও গ্রেইট । তা’হলে আমি খাবার অর্ডার দিই কি বলো?
— হ্যাঁ দাও দাও ।
মেন্যু কার্ডটা মারজুকের হাতে ধরিয়ে দিলো রাইদ ।
ওয়েটার কে ডেকে একে একে অর্ডার দেয়া শুরু হলো । খাবারের নাম যত বাড়ছিলো মিথির গলা তত শুকিয়ে আসছিল ।
রাইদ আর মারজুক মিলে অলমোস্ট সাতটা আইটেম অর্ডার করে ফেলেছে ।
মিথি স্রেফ ভাবছিলো এত খাবার খেয়ে এরা ফিট কি করে থাকে?
সব শেষে মারজুক মিথি কে জিজ্ঞেস করলো ও কি খেতে চায়?
মিথি কোনো রকমে বললো_ পানি ।
— এ্যাঁ শুধু পানি?
রাইদ মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বললো_
— হ্যাঁ আমার বউ ওয়াটার ফাস্টিং ডায়েটে আছে । বেশ মোটা হয়ে গেছে তো তাই এই ব্যবস্থা ।
— কই মোটা নাহ্ ঠিকই তো আছো তুমি । কি দরকার এসবের?
— না না ইটস ওকে ইটস ওকে । ওয়েট টা ব্যালেন্সে থাক ওর তাইনা মিথি?
— হু ।

মাথা নেড়ে হাসবার চেষ্টা করলো মিথিলা ।
খবার আসা পর্যন্ত অনেক গল্প গুজবে মেতে থাকলো রাইদ আর মারজুক , বেশ কয়েকটা সেলফিও নিয়ে নিলো ।
তারপর বললো রাইদ আর মিথির কয়েকটা ছবি তুলতে চায় ।
মিথির মন মেজাজ খুব খারাপ ছিলো রাইদের অত্যাচারে । ও বারবার স্যাড লুক দিচ্ছিলো আর মারজুক ওকে বারবার রাইদের দিকে তাকাতে বলছিলো ।
মিথি যখন তাকাচ্ছিলো না তখন রাইদ হুট করে ওর কাঁধে হাত রেখে মুখটা ঘুরিয়ে ওপরে তুলে নিলো যার ফলে মিথি চোখ বড় বড় করে রাইদের দিকে তাকালো ।
রাইদ আস্তে আস্তে ওর হাতটা কাঁধ থেকে নামিয়ে কোমরের দিকে নিয়ে যেতেই মিথি একহাত দিয়ে রাইদের বুকের কাছে শার্ট খামচে ধরলো , ওর শরীর কাঁপছে । কিন্তু এটা শুধু রাইদই ফীল করতে পারছিলো ।
এদিকে মারজুক সব রকম এঙ্গেলে ওদের কাপল পিক ক্যাপচার করে নিয়ে বিশ্ব জয়ের একটা হাসি দিয়ে বললো_
— অল ডান । রাইদ তোমাকে হোয়াটস আ্যাপে সব পাঠিয়ে দিচ্ছি কেমন?
রাইদ মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো ।
এর মধ্যেই ওদের খাবার এসে গেলো । টেবিল ভর্তি খাবার কিন্তু মিথি শুধু পানির গ্লাস নিয়ে বসে আছে । এক চুমুক দিচ্ছে আর মারজুক-রাইদের গোগ্রাসে খাবার খাওয়া দেখছেsara

মারজুক আবার খেতে খেতেই ভদ্রতা করে মিথির দিকে পাস্তার বোল টা এগিয়ে দিলো ।
মিথি হাতও দিতে পারছে না রাইদের একটা কথার জন্য , এদিকে ভেতরে ক্ষুধায় কাতর হয়ে আছে ।
রাইদ ওর কার্যক্রম ই দেখছিলো খাওয়ার ফাঁকে । ওর যে প্রচুর খিদে পেয়েছে এটা রাইদ বুঝতে পারলো । নাহ্ বেচারি কে আর কষ্ট দেয়া ঠিক হবে না এই ভেবে ওকে খেতে বলে দিলো ।

মিথি যেন মুখিয়ে ছিলো রাইদের পারমিশানের জন্য । ও চট করে বোল টা টেনে নিয়ে খেতে শুরু করলো । ক্ষুধার পেটে সবই অমৃত ।
খুব মজা করে খাবারটা খাচ্ছে মিথি । লাস্ট বাইট মুখের সামনে নিয়েছে মাত্র ঐ মুহুর্তে রাইদ চট করে মিথির হাত ঘুরিয়ে নিজের মুখে নিয়ে নিলো ।
মিথি ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই রাইদ হেসে ওর ঠোঁটে একটা চুমু খেয়ে নিলো ।
মিথি দ্বিতীয় বার বিস্ফোরিত এবং হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকলো রাইদের দিকে ।
রেস্টুরেন্ট টায় তেমন মানুষ নেই এই সময়ে এবং মারজুকও খাওয়ায় ব্যস্ত থাকার ফলে বুঝতে পারলো না কি হয়েছে ।
কিন্তু মিথি রাইদের এসব অসভ্যতামী আর অদ্ভুত আচরণ দেখে শকড হয়ে বসে আছে ।
ওর এরকম চেহারা দেখে রাইদ কানে কানে বললো_
— সো রোম্যান্টিক না??
মিথি কি উত্তর দিবে বুঝতে না পেরে বোকার মত মাথা নাড়লো ।
রাইদ ওর অবস্থা দেখে ঠোঁট কামড়ে মুচকি হাসলো
চলবে?