তোকে চাই

তোকে চাই – Season 2 ! Part- 06

“তোমার রাগী ফেসের ওই রক্তিম আভায় খুন হয়েছি আমি।তোমার গলার ওই কালো তিলটা বড্ড জ্বালায় আমায়।ওকে বলে দিও..আমাকে আবার এভাবে পুড়ালে আবারও শাস্তি পেতে হবে তাকে”- লেখাটা পড়ে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম আমি।কে হতে পারে এই ব্যক্তি?গলার চিনচিনে ব্যাথায় ভাবনা কাটলো আমার।।ভার্সিটির ওয়াশরুমের আয়নার সামনে দাঁড়াতেই চোখ আটকে গেলো আমার।।গলার নিচের দিকে কামড়টা স্পষ্ট।তিলের জায়গাটা লাল হয়ে ফুলে গেছে একদম।।রাক্ষস নাকি লোকটা।একবার হাতে পেলে খুন করে ফেলবো তাকে।।ভীতুর ডিম কোথাকার।এখন এই দাগের কি করবো? বাসায় গেলেই কতো প্রশ্নে জর্জরিত হতে হবে আমায়।।ওড়নাটা গলায় ভালো করে জড়িয়ে নিয়ে চুল গুলোও ছড়িয়ে দিলাম কাঁধে,, এখন শেষ রক্ষা হলেই হলো।
.
.
গেইটের কাছে আসতেই শুভ্র ভাইয়ার গাড়িটা চোখে পড়লো।সকালে একবার দেখেছিলাম উনাকে এই গাড়িতে।উনার কথা মনে পড়তেই রাগটা মাথায় চাড়া দিয়ে উঠলো।ব্যাগ থেকে পানি আর জুসের বোতল বের করে ড্রাইবিং সিটে ঢেলে দিলাম পুরোটা।। এখন বুঝো ঠেলা।।হুহ!!আমার সাথে পাঙ্গা!! কাজটা কমপ্লিট করে পিছে তাকিয়ে দেখি উনারা আসছেন কোনোরকম দৌড়ে সরে এলাম সেখান থেকে।রাস্তায় দাঁড়িয়ে কোমরে হাত রেখে হাঁফাচ্ছি।হঠাৎ খেয়াল করলাম লাল রং এর একটা গাড়িতে বসে থাকা একটা ছেলে আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে।ব্যাটার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই মনে পড়লো…” ও মোর আল্লাহ্,, এই ছেলেই সেই কামড়ে দেওয়া ছেলে নয় তো?” ইচ্ছে তো করছিলো গিয়ে শার্টের কলার টা ধরে দিই কয়েকটা থাপ্পড় কিন্ত আশেপাশে মানুষ না থাকায় সাহসে কুলাতে পারলাম না।।যদি কিডন্যাপ করে নেই আমায়??মনে মনে দোয়া দুরুদ পড়ে চারদিকে তাকাচ্ছিলাম যদি একটা রিক্সা পেয়ে যাই।।কিন্তু রোদ বিপদে পড়েছে আর রিক্সা এসে হাজির হয়েছে তা কখনোই পসিবল নয়।।আমার লাইফে রিক্সা হলো বাংলা সিনেমার পুলিশদের মতো ওলওয়েজ লেইট।।ছেলেটাকে আড়চোখে দেখলাম,, সে এখনো আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।।কি অসভ্য ছেলেরে বাবা।আর রিস্ক নেওয়া ঠিক হবে না ভেবে উল্টো পথে হাঁটা দিলাম।ওমা!!!একি?এই ছেলে তো আমার পেছন পেছনই গাড়ি ছুটিয়ে আসছে।।হাঁটার গতি দ্বিগুন বাড়িয়ে দিলাম কিন্তু কাজে লাগলো না গাড়িটা একদম আমার সামনে এসে থামলো।।কি করবো ভাবছিলাম,,আমার কাছে বডিস্প্রে টাইপও কিছু নেই যে নাটকের নায়িকার মতো চোখে মেরে দৌড়ে পালাব।।ছেলেটাকে দেখে হাই সোসাইটির বলেই মনে হচ্ছে যথেষ্ট স্মার্ট।ছেলেদের গায়ের রং যেমন হওয়া উচিত ঠিক তেমন তার গায়ের রং ওই সাদা বিলাইয়ের মতো সাদা তো একদম নয়,,উজ্জল শ্যামা।।মাথা ভর্তি হালকা কুঁকড়ানো চুল।।গায়ে ফুল ফরমাল গেটাপ।।এমন একটা ছেলে আমার পেছনে কেন লেগেছি বুঝতে পারছি না।।হাতটা ব্যাগে ঢুকিয়ে কিছু একটা খুঁজছি যদি বাঁচার উপায় কিছু একটা পেয়ে যাই….হঠাৎই হাতে বাজলো আপুর জন্য প্যাক করে নেওয়া কোল্ড কফি আর বার্গার।।এই দুটোই এবার শেষ ভরসা আমার।ছেলেটা হাসি হাসি মুখ নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসতেই কোল্ড কফিটা ছুড়ে মারলাম তার মুখে।।আচমকা এমনটাই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো সে।এই সুযোগে বার্ডারের চিজ সাথে থাকা ক্যাচাপ সবকিছুই ঘষে দিলাম তার মুখে।।ক্যাচাপটা যে উনার চোখে চলে গেছে বুঝতে পারলাম।।বারবার চোখ ডলছেন উনি।।উনার মুখটা চেনার উপায় নেই পুরাই জোকারদের মতো লাগছিলো তাকে।।ইচ্ছে করছিলো হুহা করে হেসে দিই।কিন্তু তার আগেই পেছন থেকে একজন বলে উঠলো…

এসব কি করছো সানশাইন?কে এটা?
.
পেছনে তাকিয়ে দেখি শুভ্র, সাহেল ও সাব্বির ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে।।সাহেল ভাইয়ার কথায় বিরক্তি হলেও বলে উঠলাম…
.
আমার বয়ফ্রেন্ড, কোনো সমস্যা??(মুচকি হেসে)
.
এটা সিরিয়াসলি তোমার বিএফ??(অবাক হয়ে)
.
জি হ্যা।আমি আপনাকে মিথ্যা কেন বলবো বলুন তো?
.
উনার মুখে এসব কি?কেউ বিএফের সাথে এমন বিহেভ করে নাকি??(ভ্রু কুচঁকে)
.
কেউ করে না আমি করি।আর এসবে ও অভ্যস্ত এটাই আমার ভালোবাসা।।এবার আপনারা যেতে পারেন।।
.
শুভ্র ভাইয়া ফোনে কার সার্ভিসের সাথে কথা বলছিলেন।।আমার মুখে “বয়ফ্রেন্ড” কথাটা শুনে ফোনটা কেটে পকেটে পুড়ে কিছুক্ষণ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ছেলেটির দিকে।।তারপর আমার দিকে ক্ষিপ্ত নজরে তাকিয়েই দ্রুতবেগে হাঁটা দিলো সেখান থেকে।।তারসাথে সাহেল আর সাব্বির ভাইয়াও দৌড় লাগালো।।এবার আমি ভ্রু কুঁচকে ছেলেটার দিকে তাকিয়েই বলে উঠলাম….
.
চোখ জ্বলছে আপনার?
.
হুম অঅননেক..
.
বেশ হয়েছে।আমাকে ফলো করতে আসলে এমনই হবে।অসভ্য ছেলে!!সাহস কি করে হয় আপনার আমাকে ফলো করার??(কমোড়ে হাত রেখে)
.
রোদ?আমি তোমায় ফলো করছিলাম না বোন।আমি অভ্র!!!
.
আপনি অভ্র হোন আর আকাশ পাতাল সব হোন আমার কোনো যায় আসে না।।আমার হাতে ক্যাচাপের বোতল থাকলে পুরোটাই ঢেলে দিতাম আপনার চোখে।।লুচু ছেলে কোথাকার!!!বাড়িতে মা-বোন নাই??
.
মা আছে।।বোন আছে একটা সে আমার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে।।রোদ আমি তোমার মামুর ছেলে,,তোমার অভ্র ভাইয়া।।
.
কথাটা শুনেই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলাম আমি।।ওমা!! এটা মামুর ছেলে?সর্বনাশ করেছে।এখন কি হবে??
.
সসরি ভভাইয়া।আমি আসলে বুঝতে পারি নি।।সরি সরি।

সরি পরে বলো বোন আগে পানি দাও।চোখ জ্বলছে তো।
.
ওহ হ্যা।
.
ব্যাগ থেকে বোতল বের করেই হতাশ হলাম।বোতল খালি। সব তো শুভ্র ভাইয়ার গাড়িতে ঢেলে রেখে আসছি।।এখন উপায়??অভ্র ভাইয়ার হাত ধরে একটু হেঁটে চা এর দোকান থেকে পানি নিয়ে উনার হাতে দিলাম।।শেষমেষ উনার চোখ ঠিক হলো।।আমি অপরাধীর মতো উনার দিকে তাকিয়ে আছি।উনি চোখ মুছে আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টিও হেসে বললো…
.
বোন রে তুমি তো খুবই ভয়ংকর।
.
সরি..(কিউট করে)আপনি আগে বললেই তো হতো যে, আপনি মামুর ছেলে!!না বলে ওভাবে তাকিয়ে ছিলেন কেন??(মুখ ফুলিয়ে)
.
আরে ওটা অনেক কাহিনী…বাবা আমাকে ফুপ্পির পিক দেখিয়ে বললো এটা দেখলেই নাকি আমি তোমাকে চিনে নিবো।।আমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।।ত্রিশ বছর আগের পিক দেখে কাউকে কিভাবে চিনা সম্ভব তাও ছবিটা তার নিজের না তার মার….এটা নিয়ে বাজি ধরে অফিস থেকে সোজা এখানে চলে আসলাম।।এতোক্ষণ তোমাকে খেয়াল করে দেখছিলাম কিছু বলতাম তার আগেই তো এতো কান্ড করে ফেললে।।
.
আমি আবারও অপরাধী দৃষ্টিতে বললাম, “সরি” ভাইয়া মুচকি হেসে বলে উঠলেন-
.
ইটস ওকে…চলো এবার?
.
কোথায়?
.
তোমায় পৌছে দিই।তুমি নাকি আইসক্রিম অনেক পছন্দ করো,, বাবা বললো।।চলো তোমায় আইসক্রিম খাওয়াবো..
.
সত্যি?
.
হুমমম…
.
ওকে চলুন।।যাওয়ার সময় আপুর জন্য কোল্ড কফি আর বার্ডারও নিতে হবে।।আগের গুলো তো আপনার মুখে..(হাত দিয়ে ইশারা করে উনার মুখ দেখাতেই দুজনই ফিক করে হেসে দিলাম)

কাল রাতে অভ্র ভাইয়াকে নিয়ে আপুর সাথে এতো এতো গল্প করতে করতে ঘুমাতে বড্ড দেরি হয়ে গেছে।।যার ফলাফল প্রথম ক্লাস মিস।।তাড়াহুড়ো করে ক্লাসের দিকে যাচ্ছিলাম।। তিন তলায় লাইব্রেরী চারতলায় আমাদের ডিপার্টমেন্ট।। তিনতলা পেরিয়ে যখনই চারতলায় উঠবো কেউ একজন টেনে লাইব্রেরীর এক কোনার দেয়ালে চেপে দাঁড় করিয়ে দিলো আমায়।।লাইব্রেরি পুরোটা ফাঁকা আজ।গা ছমছম পরিবেশ।সামনের মানুষটা আরও বেশি ভয়ংকর।।
.
.
#চলবে🍁