ও আমায় ভালোবাসেনি- সিজন ২ – Part- 09
সন্ধ্যার দিকেই রাইদের বাসায় চলে আসলো মিথি ।
ওকে বাসায় একা রেখে রাইদ আবার গেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হুট করে জরুরি ফোন চলে এসেছে নাকি ।
বলেছে খুব জলদিই ব্যাক করবে কিন্তু এখনো নেই । এতবড় বাড়িটায় একা থাকতে বড্ড ভয় লাগছে মিথির । টাইমপাস করার জন্য কাপড় চোপড় সব গুছিয়ে আলমারিতে রেখে দিয়েছে , গোছানো ঘরটা আবার গুছিয়েছে । এখন মনে হচ্ছে আরো ধীরেসুস্থে করতে হতো ।
এদিকে রাইদ ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে । সিসিটিভি তে দেখছে মিথি কি কি করছে । ওর বিরক্ত হয়ে বসে থাকা , পায়চারি করা এসব দেখে বেশ হাসি পাচ্ছে ।
ঘড়িতে সময় দেখে নিয়ে ফোন পকেট থেকে বের করে তার টিমের একজন মেম্বার কে কল দিলো রাইদ ।
ফোন রিসিভ করে সে বললো_
— স্যার ম্যাম এসে গেছেন আমরা আপনাকে ভিডিও কল দিচ্ছি আপনি তৈরি থাকুন ।
— সে কি আজ ফেইস দেখাবে?
— না স্যার এমন কোনো রুলস নেই ।
— অদ্ভুত ।
ফোন কেটে অফ করে দিয়ে নড়েচড়ে বসলো রাইদ । দু মিনিটের মাথায় ভিডিও কল আসলো একটা ।
বডি গার্ড গুলোকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে কালো লেদারের চেয়ারের পেছনে ।
চেয়ার টায় বেশ আয়েশ করে বসেছে মেয়েটা ।
মুখে অদ্ভুত মাস্ক আর চোখে ব্ল্যাক গগল । অফহোয়াইট টি শার্ট আর হোয়াইট প্যান্ট পরে পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছে ।
রাইদ কে স্ক্রিনে দেখা যেতেই বেশ টেনে টেনে বললো_
— ওয়েলকাম মাই ডার্ক হিরো ওয়েলকাম ।
— কেমন আছো পার্টনার?
— দারুণ । তুমি কেমন আছো?
— দেখতেই তো পারছো ।
— হু । সব আমাদের প্ল্যান অনুযায়ী হচ্ছে । আচ্ছা এটা বলো এই অন্তর কে কি করবো?
— কিছুই করতে হবে না সে যেমন আছে তেমনই থাক ।
— ও যতটা বোকা নিজেকে বানানোর ট্রাই করে ততটা বোকা ও নয় রাইদ । তুমি ওকে সিরিয়াসলি নাও ।
— তুমি বুঝতে পারছো না কেনো ওরা এখনো জানে না এসবের সাথে আমিও জড়িত আছি । ওরা শুধু জানে একটা মেয়ে লিড করছে সম্পূর্ণ সংগঠন টা । কিন্তু ঐ সব ভিডিও ক্লিপসে তোমার সাথে আমিও আছি । ওটা একবার সরকারের হাতে পড়লে স্পষ্ট হয়ে যাবে টিম লিডার একজন নয় দু’জন । তাই যত দ্রুত সম্ভব আমাদের ঐসব প্রুফ নিজের কাছে নিয়ে আসতে হবে আর এতে হেল্প করবে অন্তর এবং মিথি ।
— মিথি? মানে তোমার বউ?
— হ্যাঁ আমার বউ । আজ অন্তর এসে ওর সাথে পার্সোনালি কথা বলে গেছে এবং আমি শিওর ও মিথির সাথে শেয়ার করেছে ব্যাপারটা ।
— সব দেখছি গড়বড় করে দিয়েছে ছোকরা টা ।
— হ্যাঁ তাই আমাদের ধৈর্য্য ধরতে হবে । আ’ম শিওর খুব জলদি ওরা প্রুফ নিজের কাছে নিয়ে আনবে। একবার প্রুফ হাতে পেলে অন্তর কে শেষ করে দিবো আর ..
— আর তোমার সো কল্ড বউ কেও৷
রাইদ চুপ করে থাকলো ।
— আচ্ছা শোনো রাইদ তোমাকে একটা ইনফরমেশন দিতে ভুলো গেছিলাম যেখানে তুমি শব্দকে মারলে ওখানে তোমার হাতের ব্রেসলেট পাওয়া গেছে ।
— আমার হাতের ব্রেসলেট?
— ইয়েস ডিয়ার । তোমার হাতটা ভালোমতো চেইক করে দেখো ব্রেসলেট নেই হাতে ।
রাইদ তৎক্ষনাৎ হাতের দিকে নজর দিলো । আসলেই নেই । অবাক হয়ে জানতে চাইলো_
— তুমি এই খবর কি করে পেলে?
— আমাকে সব খবরই রাখতে হয় রাইদ ।
— শিট এতবড় ভুল আমার দ্বারা কি করে হয়ে গেলো!
— কামডাউন ওটা সরানোর ব্যবস্থা আমি করবো । তুমি তোমার বউয়ের দিকে নজর দাও দেখো ওরা কবে প্রুফ গুলো সরায় ।
— হু ।
— নর্মালি নেক্সট প্ল্যান কি?
— এই উইক থেকে আবার কাজে যাওয়া শুরু করবো । একটা নর্মাল লাইফ লিড করতে হবে নয়তো সন্দেহ হয়ে যাবে ।
— ওকে যা করার সাবধানে করো । কাজ শেষ হলে ব্যাক করো জলদি ।
— তুমি আজও তোমার ফেইস দেখালে না?
— খুব জলদিই দেখতে পারবে ডিয়ার ।
— ওকে দ্যেন বাই?
— আচ্ছা শোনো? আই লাভ ইউ
জবাবে একটা হাসি দিলো রাইদ । ফোন কাটার পূর্ব মুহুর্তে মেয়েটার পায়ের দিকে নজর গেলো । ডান পায়ের দ্বিতীয় আঙ্গুলে পরা রিং টা দেখে হঠাৎ মনে হলো এই রিং কোথাও দেখেছে ।
কিন্তু বিশেষ নজর না দিয়ে ফোন রেখে দিলো ।
বাসা থেকে বেরিয়ে একা ড্রাইভ করেই রওয়ানা হলো ঢাকার উদ্দেশ্যে ।
পথেই ভেবে নিলো ও মিথি কে মারবে না । এই মেয়েকে ভালো না বাসলেও এর জন্য মনে একটা সফট কর্ণার আছেই । রফিক কে ইজিলি বলতে পেরেছে রাইদের সাথে নাম জুড়ে গেলেই ওর জীবন কলঙ্কিত কিন্তু গত রাতে ওর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করার পর থেকে মন ঘুরে গেছে ।
ও রাইদ কে বাঁধা দেয়নি শুধুমাত্র তিন কালিমা পড়ে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে জন্য আর তাছাড়াও আসার পথে ওর মা রাইদের হাত ধরে বলেছিলেন , “বাবা আমার মেয়েটার মাত্র তেরো বছর বয়স ছিলো তখন । যা বোঝানো হয়েছে তাই বুঝেছে । বারবার বলছি বাবা অতীত মনে রেখে আমার মেয়েটাকে কষ্ট দিও না”
মিথির মায়ের কথাগুলো কানে বাজছে রাইদের । মেয়েটাকে দেখলে মনে অদ্ভুত অনুভূতিও হয় । সব মিলিয়ে কনফিউশনে আছে কি করবে আর কি করবে না ।
অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে গেছে মিথিলা । রাইদ বাসায় যখন ফিরলো তখন রাত আড়াইটা । পুরো বাড়ির লাইট জ্বালানো দেখে ভাবলো মিথি মনে হয় এখনো জাগনা কিন্তু সিঁড়ি দিয়ে ওপরের ঘরে গিয়ে ওকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে বুঝতে পারলো ও আসলে ভয় পেয়ে গেছিলো তাই লাইট জ্বালিয়ে রেখেছে ।
আজ প্রথমদিন এই বাসায় ওকে একা রেখে যাওয়া উচিৎ হয়নি তবে কাল থেকে একা থাকতে হবে না । এই উইক টা তো রাইদ বাসাতেই আছে তাছাড়াও কাল থেকে নীরা নামক মেয়েটি আসবে আবার ।
প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছে রাইদের তাই ফ্রেশ না হয়েই আবার নিচে নেমে আসলো ।
রান্নাঘর সাফ কিছুই রান্না করা হয়নি ফ্রিজ খুলে কেক , পেস্ট্রি পাওয়া গেলো কিন্তু এখন ঝাল ঝাল কিছু খেতে ইচ্ছে করছে ।
চিন্তাভাবনার সময় নেই । ওপরে গিয়ে ও ধাক্কে ধাক্কে মিথিলা কে জাগালো ।
মিথিলা ঘুমের ঘোরেই উঠে বসলে বললো_
— এই মুহুর্তে ঝাল কিছু রান্না করো যাও আমার প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছে ।
মিথিলা না বুঝে ওর দিকে চেয়ে থাকলো । বোকার মত তাকিয়ে থাকতে দেখে ধমক দিলো রাইদ_
— যাও না? ক্ষুধা লেগেছে আমার ।
ধমকে হালকা কেঁপে উঠলো মিথিলা । এবার ঘুমটা পুরোপুরি কেটে গেছে ।
রাইদ ক্লজেট থেকে কাপড় চোপড় বের করে ওয়াশরুমে চলে গেছে ।
— এহ্ এসেছেন মহারাজ অর্ডার করে যাচ্ছেন খাবার দাও রাত তিনটার সময় তার খাবার চাই ।
দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে মুখ ভেঙ্গিয়ে বললো তারপর উঠে তরতর করে নিচে নেমে গেলো ।
হাত খোঁপা করে ফ্রীজে দেখলো কি রান্না করা যায় । ফ্রীজে কোনো তরকারিই নেই দেখে মেজাজ খারাপ হলো ভীষণ তারপর রান্নাঘরে কন্টেইনার গুলো খুলে খুলে দেখতে থাকলো ।
নুডলস আর পাস্তা’র প্যাকেট পাওয়া গেলো ওখানে । দু’টোই বের করে রেঁধে ফেললো আধ ঘন্টার মধ্যে ।
রাইদ ওপর থেকে আওয়াজ দিয়েছে দু’বার ।
দু’টো বোলের মধ্যে পাস্তা নুডলস আর ফ্রীজ থেকে ফ্রুট জুস নিয়ে ওপরে চলে গেলো ।
রাইদের সামনে খাবার রাখলো নিঃশব্দে । রাইদ ফোন চাপছিলো ঐ মুহুর্তে । সেও একবার শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে পাস্তার বোল টা তুলে নিয়ে খেতে শুরু করলো ।
ওর মধ্যে ভদ্রতার লেশমাত্র নেই এই ব্যাপারটা খুব হতাশ করলো মিথিলা কে ।
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নুডলস নিয়ে খেতে শুরু করলো ও ।
রাইদের খাওয়া আগেই শেষ হলো । ও জুস অর্ধেকটা খেয়ে ফোন চার্জিংয়ে লাগিয়ে মিথিকে বললো_
— এসব জলদি রেখে হাত ক্লিন করে বিছানায় আসো আই নিড ইউ ।
খাবার খাওয়া থামিয়ে ভ্রু কুঁচকে একবার তাকালো রাইদের দিকে । ওর কোনো নড়চড় নেই ।
মিথির রাগ আর কান্না দু’টোই পেলো । এই লোকটা অদ্ভুত আচরণ শুরু করেছে । তার বউ তার সাথে ইজি হতে পারছে না , সম্পর্কে ভালোবাসার ছিঁটেফোঁটা নেই , কথাবার্তা ঠিক নেই , কমিটমেন্ট নেই অথচ ইন্টিমেসি আছে ।
বিয়ের দু’টো দিনেই এই অবস্থা । ভবিষ্যতে আরো কি হবে?
— কি হলো কতক্ষণ লাগবে তোমার?
রাইদের গলা পেয়ে খাবার অর্ধেকেই রেখে দিলো , সব ঢেকে রেখে ওয়াশরুম থেকে হাতমুখ ধুয়ে আসলো ।
রাইদ তখন বিছানায় শুয়ে পড়েছে ।
টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে মিথি এগিয়ে আসছিলো , বিছানার কাছে আসতেই রাইদ ওকে নিজের কাছে টেনে নিলো ।
আজ সে লাইট অফ করারও প্রয়োজন মনে করলো না ।
একটা সপ্তাহ কেটে গেলো খুব দ্রুত । এর মাঝখানে বাসায় কেয়ারটেকার হিসেবে নিযুক্ত হয়েছে নীরা সহ আরো তিনজন । রফিকও এখানেই থাকে ।
তাছাড়াও এই সাতদিনে অনেক গেস্ট এসেছে । রাইদের অনেক কলিগ এসেছে তার মধ্যে মারজুক ও ছিলো ।
মারজুক মিথি কে বলে দিয়েছে রোববার থেকে কাজে আসতে হবে ।
মারজুকের কথায় যেন শান্তি পেয়েছে মিথি । কাজ আর ক্লাসের মধ্যে থাকলে রাত্রিবেলাকার বাজে স্মৃতি গুলো মনে পড়বে খুব কম ।
জীবনটা যান্ত্রিক হয়ে গেছে তার । চব্বিশ টা ঘন্টার মধ্যে বাঈশ ঘন্টাই যায় রাইদ কে খুশি করতে আর বাকি দু ঘন্টা তার নিজের ।
মাঝেমধ্যে অবাক লাগে অন স্ক্রিনে প্রেমিকের রোল প্লে করা এই মানুষটা বাস্তব জীবনে একজন খারাপ স্বামী ,
যে তার স্ত্রী কে ভালোবেসে কাছে টানতেই পারেনা ।
কিছু কিছু মানুষের জীবনে সুখ , ভালোবাসা এসব লেখা থাকেনা । মিথিলা ভেবেই নিয়েছে তারমধ্যে সে একজন ।
নইলে প্রথম ভালোবাসা অধুরা থেকে গেলো , দ্বিতীয় বার আসি আসি করে আসলো না । রাইদের মধ্যে ভালোবাসা নেই । তা’হলে এই সংসারের ভবিষ্যত কি?
চলবে,