এরেঞ্জ ম্যারেজ

এরেঞ্জ ম্যারেজ পর্ব- ০৩

নাদিয়া আমার বেডে ঘুমিয়ে আছে, আমি রুমে আসছি সেটা বোধহয় ও বুঝতে পারেনি। কি করবো ? প্রতিদিনের মতো অপমান করে ফ্লোরে যেতে বলবো ? না থাক, টেবিলে ভাত রাখা আছে খেয়ে আসি। খাওয়া শেষ করে রুমে এসে দেখি নাদিয়া ফ্লোরে চলে গেছে।
নাদিয়ার মাঝে আজকাল কিছু পরিবর্তন এসেছে, এখন আর আগের মতো আমাকে বিরক্ত করেনা, হাজার অপমানের পর ও আমি ঘুমিয়ে গেলে বেহায়ার মতো আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে আসেনা। আমার স্পর্ষ পাওয়ার জন্য বাহানা খুজে না।
নাদিয়া হয়তো জানেনা, আমি তিশাকে হারানোর শুকে যে পাথর মানুষে পরিণত হয়েছিলাম, সেই পাথর মানুষ এখন আর আমি নেই। আমার মাঝে মুগ্ধতা ফিরে এসেছে, বাহির থেকে এসে যখন বাসার কলিং বেল বাজাই, ভেতর থেকে সে দরজা খুলে দিয়ে যখন হেটে চলে যায়, আমি তখন পেছন থেকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি, ওর চুল দেখে মুগ্ধ হই, লাল ব্লাউজের সাথে সবুজ শাড়ীতে তাকে দেখে মুগ্ধ হই, সে আমার বুতা অনুভূতিগুলো জাগিয়ে তুলেছে। দিন দিন আমি পাথর মানুষটা ওর প্রতি দুর্বল হয়ে যাচ্ছি।
আচ্ছা, নাদিয়া কি এখন ঘুমিয়ে গেছে? নাকি চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে, ডেকে দেখি ? না থাক মেসেজ দেই।
মেসেজ দিলাম; “আপনি ঘুমিয়ে গেছেন নাকি” ?
তাকিয়ে দেখলাম মেসেজের রিং বাজতেই নাদিয়া মোবাইল হাতে নিয়ে টাইপ করছে।
-কিছুক্ষণ পর রিপ্লে আসলো; “না এখনো ঘুম আসেনি, কেন, মশারি টাঙিয়ে দিতে হবে বুঝি” ?
আমি বললাম; না, বলছিলাম আজকে আপনি বেডে এসে ঘুমান আর আমি ফ্লোরে যাই।
-রিপ্লে দিলো; “তাই নাকি ? কিন্তু আমার যে ভালোবাসার মানুষটাকে ফ্লোরে ঘুমোতে দিয়ে বেডে ঘুম আসবেনা, তার চেয়ে বরং আপনি বেডে ঘুমান”।
আমার কেন জানি ইচ্ছে করছে ওকে বলি; তাহলে এসো দুজন একিই বেডে ঘুমাই, কিন্তু বলতে যেয়ে ও কিরকম আটকে যাচ্ছি।
তবে আটকে থাকলে আমার চলবেনা, তিশা আমার জন্য থেমে নেই, এখন সে বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে সুখের সংসার করছে, আমার ও এখন নাদিয়াকে নিয়ে সুখে সংসার করতে ইচ্ছে হয়।
আচ্ছা, নাদিয়ার সাথে আমি এতদিন এতো খারাপ ব্যবহার করলাম কেন ? নাদিয়ার তো কোনো দোষ নেই, আব্বু-আম্মুর জন্য আমি তিশাকে পাইনি, কোনোভাবে আমি সেই রাগ নাদিয়ার উপর মেটাচ্ছি না তো ? সবকিছুর জন্য নাদিয়াকে সরি বললে কেমন হয় ? সরি বলতে এখন কেমন জানি আত্মসম্মানে লাগছে। তার চেয়ে বরং আগে ওর সাথে ফ্রেন্ডশিপ করি।
নাদিয়াকে মেসেজ দিলাম; আমরা কি ফ্রেন্ডশিপ করতে পারি ?
-নাদিয়া রিপ্লে দিলো; “তাই, টিক আছে, তবে একটা শর্ত আছে, আমাকে আপনি করে না বলে তুমি করে বলতে হবে, এবং কথায় কথায় এই মেয়ে বলা বন্ধ করে এই নাদিয়া বলে ডাকতে হবে, পারবে তুমি ?
হুম পারবো ।
-নাদিয়া মেসেজ দিলো; “রাত অনেক হলো, এখন ঘুমিয়ে পড়ো”।
আমি বললাম ঘুম আসছেনা, তুমি ঘুমাও ।
তাকিয়ে দেখলাম নাদিয়া মোবাইল হাত থেকে রেখে শুয়ে পড়ছে।
আমিও অন্যদিনের মতো ওকে শুয়ে শুয়ে দেখছি, দুষ্ট ফ্যানের বাতাস আজ নাদিয়ার চুলগুলোর সাথে সবুজ শাড়ীর আঁচল নিয়ে ও খেলায় মেতেছে।
এই দৃশ্যগুলো দেখে নাদিয়ার ইচ্ছের সাথে আজ আমার ইচ্ছের মিলন ঘটছে , সেটা হচ্ছে আমার ও খুব ইচ্ছে করছে নাদিয়াকে বুকে জরিয়ে ধরে ঘুমোতে, ওর চুল একটু ছুয়ে দেখতে, ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে ।
আমি বিছানা থেকে উঠে ওর পাশে গেলাম, কেমন জানি লাগছে, যদি ও বুঝে ফেলে ?
আবার চলে আসলাম বেডে, চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লাম, কিছুক্ষণ পর মোবাইলে রিং বাজলো, মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলাম নাদিয়া মেসেজ দিছে; ” নিজের বউকে চুরি করে দেখার কি আছে বন্ধু” ??
মেসেজ পড়ে আমি লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ঘাপটি মেরে শুয়ে পড়লাম, নাদিয়া আজ একটু সাহস পেয়েছে বোধহয়, আমার পাশে এসে শুয়ে পড়েছে, আমি বুঝতে পেরেও কিছু না বলে চোখ বন্ধ করে আছি, নাদিয়া আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর গুনগুন করে গান গাচ্ছে; ” আমি পাথরে ফুল ফোটাবো
শুধু ভালবাসা দিয়ে,
আমি সাগরের ঢেউ থামাবো
শুধু ভালবাসা দিয়ে।
বিঃ দ্রঃ নিচে Next >> ক্লিক করলে পরবর্তী পর্ব পাবেন..!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *