এরেঞ্জ ম্যারেজ পর্ব- ০২
এখন আর লুঙ্গী পরে ঘুমোতে যাইনা, ঐ রাতের ঘটনার পর থেকে ভেবে নিয়েছি আর লুঙ্গী পরে ঘুমাবো না। বাসর রাতেই মেয়েটা এতো নির্লজ্জ হয়ে যাবে আমি ভাবিনি।
আজ সারাদিন বন্ধুদের সাথে বাহিরে আড্ডা দিয়ে রাত ৯-টায় বাসায় ফিরতেছি। বাড়িতে থাকলে নাদিয়ার সাথে একই রুমে থাকতে হবে, এটা আমার কাছে খুব অস্বস্তির একটা ব্যাপার। নাদিয়ার চোখে চোখ পড়লে আমি এখন বিব্রতবোধ করি। বাসর রাতের ঘটনার পর থেকে এমনটা হচ্ছে ।
আমার মাঝেমাঝেই ইচ্ছে করে নাদিয়াকে গিয়ে জিজ্ঞেস করি বাসর রাতে কে আমার লুঙ্গী খুলেছিল ??
অথবা জিজ্ঞেস করি সেদিন সাতসকালে কেন সে গোসল করেছিল।
আজকে বাসায় গিয়ে কি জিজ্ঞেস করে ফেলবো ? না থাক, ওর সাথে কথা বাড়াতে ভালো লাগেনা।
আজকাল নাদিয়াকে আমার খুব হিংসে হয়, সারা বাড়িটা দিনদিন ওর দখলে চলে যাচ্ছে, আব্বু-আম্মু সবাই এখন ওকে নিয়ে সারাক্ষণ মেতে থাকে।
আম্মুর সাথে যখন নাদিয়াকে মাখামাখি করতে দেখি তখন আমার নিজেকে রোহিঙ্গা রোহিঙ্গা মনে হয়।
রাত অনেক হয়েছে, দরজার সামনে এসে কলিং বেল বাজালাম।
নাদিয়া দরজা খুলে দিলো, ওর পরনে আজ সবুজ রঙের শাড়ী, লাল ব্লাউজ, চুলগুলো কোমরের বাজে এসে পড়েছে, দরজা খুলে যখন ও হেটে যাচ্ছে আমি তখন পিছন থেকে ওকে দেখছি। অপরুপ সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে।
তাতে আমার কি ?? ওর রুপে মজে যাবার মতো ছেলে আমি না, আমার তিশা ও কম সুন্দর ছিলনা। আব্বু-আম্মুর খামখিয়ালে আমি তিশাকে হারিয়েছি।
বাসায় ঢুকতেই আম্মু-আব্বু বকা শুরু করলো। কারণ নতুন বউ রেখে সারাদিন বাহিরে ছিলাম। কোনো কথা না বলেই আমি রুমে গিয়ে ঘাপটি মেরে বসে থাকলাম।
কিছুক্ষণ পর নাদিয়া রুমে আসলো।
-গ্লাসে পানি ঢেলে একটু ন্যাকামি করে আমাকে বললো, “পানি চলবে” ?
আমার যথেষ্ঠ পানির পিপাসা থাকার পর ও বললাম, “আমি কি বলছি পানি লাগবে, আগ বাড়িয়ে কোনোকিছু করবানা”।
আমার কথা শুনে নাদিয়ার হাসিখুশি মুখটা নিমিষেই মলিন হয়ে গেলো। পানির গ্লাস রেখে চলে গেলো রান্নাঘরে।
আম্মু খাবার টেবিলে ডাকলো, চলে গেলাম খাবার টেবিলে, আব্বু-আম্মু খাবার খাচ্ছে আর নাদিয়ার রান্নার প্রসংসা করতেছে। রান্না আসলেই খুব ভালো হয়েছে তারপরও আমি চুপচাপ খেয়ে রুমে গিয়ে এসে শুয়ে পড়লাম।
পরনে জিন্সের প্যান্ট, নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারবো, আজ খুব মাথা ব্যাথা করতেছে, তাড়াতাড়ি ঘুমোতে পারলেই হয়, বিছানায় গা হেলিয়ে দিলাম।
কিছুক্ষন পর অনুভব করলাম কে জানি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে ।
নির্লজ্জ মেয়ে নাদিয়া ছাড়া আর কেউ না, কিন্তু মাথা ব্যাথার সময় মাথায় হাত বুলানো খারাপ না, আমার ভালোই লাগতেছে।
ভালো লাগাকে প্রশ্রয় না দিয়ে আমি বললাম, “এই মেয়ে এই, তোমাকে না একবার না করলাম আমাকে স্পর্ষ করবানা, যাও ফ্লোরে গিয়ে ঘুমাও, না হয় আমি ফ্লোরে গিয়ে ঘুমাবো “।
নাদিয়া ফ্লোরে চলে গেলো ঘুমোতে।
কিছুক্ষণ পর আবিষ্কার করলাম কে জানি কাদতেছে, খিয়াল করে দেখলাম নাদিয়া বালিশে মুখ চেপে কাদতেছে।
বুঝতেছিনা কি করবো, নাদিয়ার সাথে কি বেশী করে ফেলছি ?
কাদতেছে কেন, আমার কি করা উচিৎ, কি করবো ?? ওকে কি জিজ্ঞেস করবো কাদছো কেন ?? অথবা ওর পাশে বসে একটু গল্প করবো ?? না এসব করা যাবেনা।
হটাৎ আমার মাথায় আইডিয়া আসলো মেসেজে কথা বলি ।
নাম্বারটা আম্মু বিয়ের আগে ফটোর নিচে লেখে দিয়েছিল।
ফটো বের করে মেসেজ দিলাম; ” কাদতেছো কেন” ?
কিছুক্ষণ পর মেসেজ আসলো; “১০০ বার কাদবো, আপনি আমার সাথে এমন করেন কেন, আমার দোষটা কি শুনি !? আমাকে পছন্দ না হলে বিয়ের আগে না করে দিতে পারতেন”।
সত্যিই তো নাদিয়ার দোষ কি ?? আমি ওর এই প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে মেসেজ দিলাম; আপনি কি আমাকে পছন্দ করে বিয়েতে রাজি হয়েছিলেন।
– “হুম, বিয়ের আগে আপনার ফটো দেখেছিলাম, ফটো দেখার পর থেকে আপনাকে শুধু পছন্দ না; খুব ভালোবাসি, জানেন আপনি দেখতে কত সুদর্শন একটা ছেলে, একদম আমার শপ্নের রাজকুমার, আপনার চুলগুলো অনেক সুন্দর, আপনার চেহারায় কেমন জানি একটা মায়া আছে, আমি না বিয়ের আগে আপনার ফটো দেখে শপ্ন দেখতাম, আপনার বুকে মাথা রেখে ঘুমাবো”।
মেসেজের আর রিপ্লে দিলাম না, কারণ নাদিয়ে আমাকে ধীরে ধীরে দর্বল করে ফেলতেছ।
– রিপ্লে না পেয়ে এরিমধ্যে নাদিয়া কয়েকটা মেসেজ দিলো; “রিপ্লে দাও না কেন, কিইই হলো মিস্টার, হ্যালো, হ্যালো”।
কোনো রিপ্লে না দিয়ে ওর বিপরীত দিকে মুখ করে আমি শুয়ে পড়লাম।
এতক্ষণে হয়তো ঘুমিয়ে গেছে নাদিয়া।
ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কেন জানি ওকে দেখতে ইচ্ছে করতেছে,
রুমে হালকা আলো, উপরে ইলেকট্রনিক ফ্যান ঘুরছে, আমি দেখতে পাচ্ছি ঘুমন্ত নাদিয়াকে, ঘুমন্ত অবস্থায় নাদিয়াকে আরো বেশি সুন্দরী দেখাচ্ছে।
হুমায়ুন আহমেদ বলেছিলেন, “যে নারীকে ঘুমন্ত অবস্থায় সুন্দর দেখায় সে নারী প্রকৃত সুন্দরী”।
নাদিয়া বোধহয় হুমায়ুন আহমেদের সেই প্রকৃত সুন্দরী।
ফ্যানের বাতাসে নাদিয়ার চুলগুলো এলোমেলো হয়ে গেছে, চুলের জন্য মুখটা আর ভালো করে দেখা যাচ্ছে না , ইচ্ছে করতেছে গিয়ে ওর চুলগুলো একটু সরিয়ে আসি।
যাবো নাকি ? কিন্তু ও যদি বুঝে ফেলে ?
না থাক, আমি বরং এভাবেই দেখি, দেখতে দেখতে হটাৎ ঘুম চলে আসলো।
সকালবেলা ঘুম ভাঙলো নাদিয়ার কোরআন তিলাওয়াত শুনে, খুব উচ্চস্বরে তিলাওয়াত করছে না, গুনগুন আওয়াজ করে, আমার আবার একটুতে ঘুম ভেঙে যায়।
তিলাওয়াত শেষ করে নাদিয়া রান্নাঘরে চলে গেলো, কিন্তু আমার মশারি কে খুলবে ? আমার মশারি টাঙাতে বা খুলতে যত আলসেমি, বিয়ের আগে না হয় আম্মু খুলতেন, এখনো কি আম্মুকে বলবো মশারি খুলতে ? কিন্তু বউ রেখে আম্মুকে বললে আম্মু কি মনে করবে ?
তারচেয়ে বরং নাদিয়াকে মেসেজ দিয়ে বলি মশারি খুলে দিতে, মেসেজ দিলাম; ” নাদিয়া মশারিটা একটু খুলে দিতে পারবে” ?
– নাদিয়া রিপ্লে দিলো; “অবশ্যই না”
আমি প্রশ্ন করলাম; কেন খুলবে না ?
-কারণ, বিয়ের এতদিন হয়ে গেলো অথচ যে বর এখনো আমাকে সেলোয়ার কামিজের গিট্টু খুলে দেবার কথা বলেনা, আমি তার মশারির গিট্টু খুলে দিতে বাধ্য নই, আমার বয়েই গেছে আপনার মশারি টাঙিয়ে আর খুলে দিতে”।
( ধারাবাহিক চলবে, প্রথম পর্ব যারা পড়েননি তারা আমার প্রফাইলে গেলে পেয়ে যাবেন। )
বিঃ দ্রঃ নিচে Next >> ক্লিক করলে পরবর্তী পর্ব পাবেন..!