এরেঞ্জ ম্যারেজ

এরেঞ্জ ম্যারেজ পর্ব- ০৪ (শেষ পর্ব)

ক’দিন যাবত ভাবছি নাদিয়াকে আর ফ্লোরে ঘুমোতে দিবো না, তাকে নির্লজ্জ বেহায়া মেয়ে মনে করে লুঙ্গির বদলে আর জিন্স প্যান্ট পরে ঘুমোতে যাবো না, সবকিছুর জন্য ক্ষমা চাইতে হবে ওর কাছে, যে মেয়েটা বাসর রাত থেকে আজ অবধি আমার কাছ থেকে শুধু অপমান অবহেলা পেয়েও বলতে পারে সে শপ্ন দেখে আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমোচ্ছে, আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, যে মেয়ে স্ত্রীর মর্যাদা না পেয়েও মা-বাবার সেবায় এতটুকু ক্ষমতি রাখছে না, তাকে বাসর রাত থেকে আমার বুকে জায়গা না দিয়ে দিলাম ফ্লোরে !? কবে হলাম এতো পাষান !? কেন হলাম ? তিশার শুকে এমন হয়েছি ? তিশাকে হারানোর শুকে আমি পাথর মানুষে পরিণত হয়েছি ? কিন্তু তিশাকে হারানোর পিছনে নাদিয়ার তো কোনো দোষ ছিল না ? তাহলে, তাহলে নাদিয়ার সাথে আমি এমন করলাম কেন ? নাদিয়ার মতো অপমান আবহেলা যদি আমি তিশাকে করতাম ? তিশা কি আমার সাথে এতদিন থাকতো ? অবশ্যই না ।
এগুলো ভাবতে ভাবতে আমার মাথা পুরো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে, কিছুই বুচ্ছিনা, কি করা উচিৎ।
তবে নাদিয়াকে পেয়ে কেন জানি আব্বু-আম্মুকে জরিয়ে ধরে খুব কাদতে ইচ্ছে করছে, তাদের জন্য আজ আমি নাদিয়াকে পেয়েছি।
বাহিরে গেলাম, গিয়ে আম্মুর প্রিয় খাবার দই আর আব্বুর প্রিয় খাবার পাটিসপ্তা কিনলাম। হটাৎ মনে হলো নাদিয়ার জন্য কি নেয়া যায় ? ওর পছন্দ সম্পর্কে আমার কিছুই জানা হয়নি, তবে মেয়েরা কিটকাট পছন্দ করে, নিলাম কিটকাট। বাসায় আসার পথে বাদাম দেখে মনে হলো, বাদাম নিলে কেমন হয় ? আজ ছাদে গিয়ে না হয় নাদিয়ার সাথে চাঁদ দেখতে দেখতে বাদাম খাবো ? বাদাম আর মোমবাতি নিয়ে বাসায় গেলাম, রুমে ঢুকে দেখি নাদিয়া এশার নামাজ শেষ করে সালাম ফিরালো, নাদিয়ার সাথে ফ্রেন্ডশিপ করায় ও এখন ফাজলামোর ছলে একটু বেশি বেশি করে আমাকে বন্ধু ডাকে। আমি ছাদে চলে গিয়ে মোমবাতি জ্বালিয়ে নাদিয়াকে মেসেজ দিলাম; বান্ধবী বিয়ের লাল শাড়ী পরে ঘোমটা ছাড়া একটু ছাদে আসতে পারবা ?
নাদিয়া মেসেজ সিন করেছে,
নিজের বউয়ের সাথে আর ফ্রেন্ডশিপ রাখতে আমার আর ভালো লাগছেনা, আজ সবকিছুর সমাধান করতে হবে।
নাদিয়া আসলো, বউয়ের সাজে আসলো, আমি তাকিয়ে আছি নাদিয়ার দিকে, আমার কিছুটা নার্ভাস লাগছে , নাদিয়াকে একটা চেয়ারে বসতে দিয়ে আমি ওর কাছাকাছি চেয়ার নিয়ে বসলাম, নাদিয়া নিরব দর্শকের ভুমিকা পালন করছে, আমি বাদাম এগিয়ে দিয়ে বললাম আজকের চাঁদটা দেখো নাদিয়া, তোমার সাথে যেনো প্রতিযোগিতায় নেমেছে, আমি বিচারক; আমাকে বিচার করতে হবে আকাশের ঐ চাঁদটা সুন্দর নাকি আমার পাশের চাঁদটা বেশি সুন্দর।
কথা শুনে নাদিয়া মুচকি হেসে আমার কাধে মাথা রাখলো।
আচ্ছা নাদিয়া তুমি কি কখনো প্রেম করেছিলে ?
-নাদিয়া চাঁদের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে বললো “বিয়ে টিক হবার পর প্রথম যেদিন তোমার ছবি দেখেছিলাম, সেদিন থেকে আমার জিবনে প্রেম-ভালোবাসা এসেছিল । প্রতিরাতে তোমার ছবির দিকে তাকিয়ে বাসর রাত নিয়ে আমি শপ্ন দেখতাম”।
তাহলে তুমি কি বাসর রাতের সেই শপ্ন আমি ঘুমিয়ে যাবার পর পূরণ করেছিলে ??
-নাদিয়া মুচকি হেসে বললো, ” ঐ রাতে তোমার মুখে তিশা তিশা শব্দ শুনে আমার মধ্যরাতে হটাৎ ঘুম ভেঙে যায়, তারপর দেখলাম তোমার লুঙ্গী হাটুর নিচে চলে গেছে, আমার কাছে ব্যাপারটা কেমন জানি অস্বস্থির লাগছিলো, তাই তোমার লুঙ্গি একটু উপরে দিতে গেলাম, তখন তুমি তিশা তিশা বলে আমাকে জরিয়ে ধরলে, আমি শেষমেশ তোমার বুকে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে পড়লাম”।
নাদিয়ার কথা শুনে আমার গলা শুকিয়ে আসছে, লজ্জা লাগছে নিজের কাছে, আমি প্রশ্ন করলাম; তাহলে, তাহলে সাতসকালে গোসল করার ব্যাপারটা কি ছিল ?
-প্রায় অর্ধেক রাত একটা পুরুষ আমাকে তার ভালোবাসার মানুষ মনে করে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়েছে, তাই গোসল ছাড়া ফজরের নামাজ পরা আমার কাছে ভালো দেখাচ্ছিলো না। আর সকালে রহস্যময় আচরণ করছিলাম আমার ভালোবাসার মানুষটাকে একটু রাগানোর জন্য, তার চমকে যাওয়া চেহারা একটু দেখার জন্য, আর এতে তুমি আমাকে নষ্টা বেহায়া নির্লজ্জ মেয়ে মনে করে প্রতিদিন প্যান্ট পরে ঘুমোতে যেতে। কথাটা বলেই নাদিয়া চেয়ার থেকে উঠে চলে গেলো।
আমি বসে আছি, আমি পাথর মানুষটার চোখ দিয়ে আজ অঝোরে পানি পড়ছে, নিজেকে খুব ঘৃণা হচ্ছে, নিজের বিবেকের বিচারে আজ আমি নিজেই অপরাধী।
রুমে ঢুকে দেখি নাদিয়া আয়নার সামনে দাড়িয়ে সাজুগুজু করছে, সে নিশ্চিত বুঝতে পারছে আজ ওর ভালোবাসার মানুষটা তাকে আর ফ্লোরে ঘুমোতে দিবে না, আজ তার শপ্ন পূরণের রাত, নাদিয়া সাজুগুজু করছে আর আমি প্রতিদিনের মতো পেছন থেকে তাকিয়ে দেখছি, আয়নায় আমাকে দেখে নাদিয়া মুচকি হাসলো। আমি এগিয়ে গিয়ে নাদিয়াকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরলাম, আয়নায় আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি নাদিয়ার চেহারা, আমি জরিয়ে ধরার সাথেসাথেই সে চোখ বন্ধ করে ফেললো। কিছুক্ষণ পর নাদিয়ার গাল বেয়ে পানি পড়তে লাগলো। আমি বললাম, আজ তোমার গুনগুন করে গাওয়া সেই গান বাস্তব হয়েছে নাদিয়া, “আমি পাথরে ফুল ফুটাবো
শুধু ভালোবাসা দিয়ে”।
তুমি সেটা খুব সফলভাবে পেরেছো।
আজ তুমি কান্না না করে বিজয়ের হাসি হাসো।
নাদিয়া আমার হাত ছাড়িয়ে ফ্লোরে গিয়ে শুয়ে পড়লো।
আমিও নাছোড়বান্দা মতো ওর পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লাম, নাদিয়া এখন মুচকি হেসে বেডে চলে গেলো।
আমিও আবার বেডে চলে গেলাম, নাদিয়া এখন অভিমান করে সময় নষ্ট না করে আমার বুকে মাথা রাখলো, আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।
নাদিয়া কিছুক্ষণ পর আমার কানের কাছে এসে বললো; “এই জানো ? তোমার বউ একটা ভার্জিন মেয়ে”।
আমি ওর কানের কাছে গিয়ে বললাম; বালিকা সেটার বড়াই আর বেশিক্ষণ করতে পারবা না ।
কথাটা শুনে নাদিয়ার মুখটা লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।
আমি নাদিয়ার কোলে মাথা রাখলাম, নাদিয়া আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে গুনগুন করে রবিন্দ্র সঙ্গীত গাচ্ছে; “ভালবেসে সখি নিভৃতে যতনে আমার নামটি লিখো
তোমার মনেরও মন্দিরে।।
আমারও পরাণে যে গান বাজিছে তাহার তালটি শিখো
তোমার চরণ মঞ্জিরে”।।

One thought on “এরেঞ্জ ম্যারেজ পর্ব- ০৪ (শেষ পর্ব)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *