আড়ালে ভালোবাসার সংসার

আড়ালে ভালোবাসার সংসার !! Part- 20

বিধান বিথীকে রুমে এসে তন্য তন্য করে খুজেও কোথাও পাচ্ছে না। ছাদ, বাগান, লিভিং রুন, কিচেন কোনো জায়গা বাদ রাখেনি। বিথীর ফোনে কল করলেও ফোন বন্ধ বলছে।
বিধানঃ গেলো কোথায় মেয়েটা? ধুররর কোথায় খুঁজবো পাখিটাকে! কোনো বিপদ হলো নাতো আবার!
বিধান এসব ভাবতে ভাবতেই ওর ফোনে একটা কল আসে আননোন নাম্বার থেকে কল আসে। কল করা ব্যক্তিটির কথা শুনে বিধান গাড়ির চাবি নিয়ে দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। তার চোখে মুখে রাগ স্পষ্ট।
অন্যদিকে বিথী বিধানকে না বলেই দিপ্তদের বাসায় চলে এসেছে। দিপ্তদের বাসায় বিথীর নিজস্ব বেডরুম আছে কারণ বিথী নিজের বাসার চেয়ে এখানেই বেশি থাকতো। বর্তমানে বিথীর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে আবার কান্নাও পাচ্ছে। বিথী এখন বুঝেই উঠতে পারছে না রাগের জন্যে ফোসফোস করবে নাকি জোরে জোরে কান্না করবে।
বিথীঃ রাক্ষস না তুই একটা খবিশ, নেঙটা ইঁদুর, সাদা কুমির, তাড়ছিড়া বান্দর, মাথামোটা আর…..আর…..ধুররর মনে পড়ছে না! আমাকে সুন্দরী মেয়ে পেয়ে ভুলে গেলি রাক্ষস……থাক তুই সাদা পেত্নির গলায় ঝুলে! হুহহহ!
,
,
,
ঘন্টা দুয়েক পূর্বে……
মেয়েটিঃ কিরে বিধুর বাচ্চা কথা বলিস না কেনো?
বিধানঃ দিশা তুই এখানে…… হোয়াট আ প্লেজেন্ট সারপ্রাইজ!
দিশাঃ আই নো!
বিধানঃ তুই ইউএসএ থেকে কবে ফিরলি?
দিশাঃ গতকালই! বাই দ্য ওয়ে এই মেয়েটা কে? তোর অফিসের স্টাফ?
বিধানঃ না আমার একমাত্র বউ! ( মুচকি হাসি দিয়ে )
দিশাঃ কিহহহ! তুই বিয়ে করছিস আমাকেও বললিও না? ছোট মা আর পুচকি তোমরাও না? ( রেগে বলল )
বিথী এতক্ষণের ঘটনা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখছিলো। তার অনেক হিংসা হচ্ছে মন চাচ্ছে মেয়েটাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ঘরে থেকে বের করে দিতে কিন্তু কেন এমন লাগছে বিধান বুঝতে পারছে না।
বিথীঃ কেন রে সাদা পেত্নি তোরে কেন বলতে হবে? তুই কি এই রাক্ষসের গলায় ঝুলতি নাকি আমাকে সরিয়ে! ( মনে মনে কথাটা বলে দিশার দিকে তাকিয়ে ভেঙচি কাটে )
মিসেস চৌধুরীঃ আর বলিস না দিশা! সব এতো তাড়াতাড়ি হলো যে কাউকে ঠিক মতো বলাই হয়নি।
দিশাঃ আমি এখান কাউকে হয়ে গেলাম! ( মুখ ফুলিয়ে )
বিধানঃ তুই তো কাউ অর্থাৎ গরুই ছিলি খালি এখন একটু কমেছিস। ( ঠাট্টা করে )
দিশাঃ ছোট মা! ( চিৎকার করে )
মিসেস চৌধুরীঃ আরে তোদের আজাইরা কথা রাখতো! একটু পর লাঞ্চ করবো বিধান আর বিথী মামনি যাও রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো।
দিশাঃ ওয়েট! ওয়েট! আমার সাথে তো পরিচয়টাই করে দিলে না!
মিসেস চৌধুরীঃ হ্যাঁ তাই তো। বিথী শুনো ও তোমার…….
দিশাঃ আমি তোমার স্বামী অর্থাৎ বিধানের চাচাতো বোন ও বেস্ট ফ্রেন্ড! আর তুমি বিথী বিধানের বউ তাই তো!
বিথীঃ হ্যাঁ রে পেত্নি আমিই এই রাক্ষসের বউ এবার একটু দূরে যেয়ে দাঁড়া! ( মনে মনে বলে মাথা ঝুলালো )
বিধানঃ আচ্ছা তুই বস এখন আমরা ফ্রেশ হয়ে আসি।
দিশাঃ ধুরররর! না! কতদিন পর আমাদের দেখা হলো এখন আমরা আড্ডা দিবো।
বিধানঃ কিন্তু……
দিশাঃ কোনো কিন্তু নয়। বিথীর সাথে তো সবসময়ই থাকিস এখন আমাকে সময় দে, তাই না বিথী?
বিথীঃ কেন রে রাক্ষসটা কি তোরও জামাই লাগে নাকি! ( মনে মনে বলে মুখে জোরপূর্বক হাসি টেনে মাথা ঝুলালো সম্মতি স্বরূপ )
তারপর বিধান লিভিং রুমে বসে দিশার সাথে আড্ডা দিতে লাগলো। আর বিথী রাগে ফুসতে ফুসতে বেডরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে দেখে বিধান ও দিশা হসাহাসি করছে কিছু নিয়ে আর কথার ছলে বিধানের গায়ে হাত দিচ্ছে বারবার। যা দেখে বিথী এতোটাই রেগে গেলো যে সোজা বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো।
,
,
,
বর্তমানে…….
বিথী মনে মনে কিছুক্ষণ আগের ঘটনা চিন্তা রাগে ফুসছিলো। ঠিক তখনই কেউ বিথীর বেডরুমের দরজায় নক করে। বিথী এতে প্রচন্ড বিরক্তবোধ করে।
বিথীঃ ধুরর! এমনেই আমার টেম্পার হাই তার মধ্যে আবার কে এলো?
ঠক! ঠক!
বিথীঃ আরে আস্তে আস্তে! দরজা ভেঙে যাবে! ( রেগে )
বিথী উঠে গিয়ে দরজার লক খুলে দিলো। বিথি দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাকে দেখে অনেক অবাক হলো। যদিও অন্যান্য সময় হলে অবাক হতো না তবে এখন তার উপস্থিতি বেশ বেমানান লাগছে। সামনে দাঁড়িয়ে থাকে মানুষটির নাম নীলাভ্র। নীলাভ্র দিপ্ত ফুপাতো ভাই এবং বেশ বড়লোক ঘরের ছেলে। বিধানের আগে নিলাভ্রের সাথেই বিথীর বিয়ের কথা চল বিয়ের কথা চলছিলো কারণ ছেলেটা বিথীকে বড্ড পছন্দ করতো ভালোই বাসতো বলা যায়। বিথী যখনই এবাড়িতে যখনই আসতো বিথীর পছন্দের কিছু নিয়ে। সে যাই হোক বিথী একই কারণে মানা করায় বিয়েটা আর হয়নি। তবে বিধানের সাথেই কি করে জানি বিয়ে হয়ে গেলো। বর্তমানে চিন্তার বিষয় এটা সে তো বিবাহিত এটা জেনেও এই লোকটা এখানে কেনো।
বিথীঃ নিল ভাই আপনি!
নীলাভ্রঃ হুম আমি! শুনলাম তুমি এসেছো তাই দেখা করতে এসে পড়লাম। তাছাড়া তোমার স্বামীকেও তো দেখা হয়নি বিয়ের দাওয়াতটা দিলে না যে।
বিথীঃ আপনি তো জানেনই কতো তাড়ার মধ্যে বিয়েটা হয়েছে!
নীলাভ্রঃ হুম শুনলাম দিপ্ত থেকে! তা রুমে ঢুকতে দিবে না নাকি?
বিথীঃ না! না! আসেন সোফা বসি।
নীলাভ্রঃ না! চলো তোমার পছন্দের ব্যালকনিতেই বসি।
নীলাভ্র ও বিথী ব্যালকনির বেতের চেয়ারে বসে কথা বলতে থাকে। নীলাভ্র কখনো এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে তো কখনো কোনো হাসির কথা বলে বিথীকে হাসাচ্ছে।
,
,
,
বিধান গাড়িতে ড্রাইভ করছে আর রাগে নিজের চুল টানছে।
বিধানঃ এই মেয়েটা আমাকে শান্তি দিবে না! না বলেই বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো………..একবারো ভাবলো না একজন তার চিন্তায় অস্থির হয়ে যাবে। দিপ্ত না বললে তো আমি জানতামই না ও আব্বি-আম্মির বাড়িতে গিয়েছে। আজ তোমার খবর আছে বিথী সোনা একবার খালি যাই সেখানে! ( শয়তানি হাসি দিয়ে )
বিধান বাসায় ঢুকতেই বিথীর আম্মিকে সালাম দিলো। সে বিধানকে সোফায় বসালো। মেয়ের জামাই প্রথম বাড়ি এসেছে কি ছেড়ে কি করবে বুঝতে পারছে না।
বিথীর আম্মিঃ বাবা ভেবো না প্রথমবার শ্বশুরবাড়ি আসলাম কোনো বিশেষ আপ্যায়ন পেলাম না। আসলে মেয়েটা না বড্ড ফাজিল হয়েছে। আমাকে একবার বলেও নাই তোমরা আজ আসবে নাহলে আমি……….
বিধানঃ আরে আম্মি থাক! থাক! এতোকিছু করা লাগবে না। আমাকে জাস্ট এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি দিন ও বিথি কোথায় সেটা বলুন। আসলে একটু দর…….
বিথীর আম্মিঃ আচ্ছা! আচ্ছা বুঝেছি বলা লাগবে না। তুমি সিড়ি দিয়ে উঠে বামপাশের যেয়ে ডোরটা দেখবে টেডির ডেকোর করা সেটাই! আর আমি রহিমের হাতে পানি পাঠাচ্ছি! ( বলে মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেলেন )
বিধান বিথীর রুমের সামনে যেয়ে দেখলো দরজা খুলে এবং ভিতর থেকে দুজনের হাসির আওয়াজ আসছে। তার মধ্যে একজন যে বিথী তা বিধানের বুঝতে বাকি নেই। বিধান আওয়াজ অনুসারে ব্যালকনির কাছে যায়। ব্যালকনির ভিতরে চোখ যেতেই রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে যায় বিধানের।
বিধানঃ বিথীইইইই! ( চিৎকার করে )
আচমকা চিৎকারে বিথী ও নীলাভ্র দুজনেই অবাক হয়ে যায়। দুজনে দরজার সামনে তাকাতেই বিধানকে দেখতে পায়। বিধানকে দেখে বিথীর আত্মাও ভয়ে কাপছে কারণ বিধানের চোখ-মুখ সকালের মতো ভয়ানক লাল হয়ে আছে।
বিথীঃ আ-আপনি।
নীলাভ্রঃ বিধান বিথী উনি কে?
বিথীঃ উনি বিধান আমার……
বিধানঃ বিথীর হাজবেন্ড। ( জোরপূর্বক হেসে )
নীলাভ্রঃ ওহ আপনিই তাহলে সেই লাকি ম্যান যে এই মায়াবতীকে পেয়েছেন।
বিধানঃ মায়াবতী! জী এই মায়াবতীটা আমার। ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড আমার বিথীর সাথে কিছু কথা আছে পারসোনাল……
নীলাভ্রঃ ইয়াহ! আই’ম গোয়িং। ( বলে নীলাভ্র চলে গেলো )
বিধান নীলাভ্র যেতেই বিথীকে কোলে তুলে নিলো। আর বিথী তো ছটফট করছে তার মতো কিন্তু ছাড়া কি আর পাবে বিধান থেকে।

চলবে,,,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *