তারে আমি চোখে দেখিনি ! সিজনঃ-2 !! Part- 02
লাবন্য রেগে বাড়িতে ঢোকে।সব জিনিসপত্র ভাংচুর করতে থাকে।কেউ লাবন্যকে সামলাতে পারে না।নেহা বাড়িতে ঢুকেই লাবন্যর এমন কান্ড দেখে ছুটে আসে।এসে লাবণ্যকে বলে,
নেহাঃ ওহহ লাবু, মাই বেবি কি করছো এসব?
লাবন্যঃ মম সরে যাও আমার সামনে থেকে। আমাকে ভাংতে দাও।
বলেই সবকিছু ধরছে।আর ছুঁড়ে ছুঁড়ে মারছে।সারা রুমের কাচের আসবাবগুলো ভেঙে টুকরো টুকরো করে ফেলেছে।এক পর্যায়ে হাঁপিয়ে সোফায় এসে বসে পরে।
লাবন্যকে একটু শান্ত হতে দেখে এবার নেহা লাবন্যর কাছে এসে বসে আর জানতে চায়।
নেহাঃ কি হয়েছে বেবি মমকে বলবা না?
নেহা কথাটা বললেই লাবন্য নেহাকে ঝাপটে ধরে।আর কাঁদতে কাঁদতে বলে।
লাবণ্যঃ মম মেঘ বলেছে আমাকে বিয়ে করতে পারবে না।আমি কি দেখতে খুব খারাপ বলো? তাহলে মেঘ কেন আমায় বিয়ে করবে না মম? কেন?
নেহাঃ ধূর এরজন্য এতোটা কস্ট পেতে আছে? একটা কথা মনে রাখবা যার টাকা আছে তার সব আছে।আমার এই বিষয় আসয় সয় সম্পত্তি সবই তো একদিন তোমার হবে, তাই না?
লাবন্যঃ হুমমমম
নেহাঃ তাহলে এতো চিন্তা করো নাতো।এই টাকার লোভেই দেখবে মেঘ তোমার কাছে ছুটে এসেছে।তোমার পিছে পিছে ঘুরছে।
লাবন্যঃ সেটা কিভাবে মম?
নেহাঃ সেটা তুমি আমার উপর ছেড়ে দাও।আমার লাবু আমার কাছে কখনো কিছু চেয়েছে আর আমি দিয় নি এমনটা কখনো হয়েছে?
লাবন্যঃ নাহ!
নেহাঃ তাহলে নিশ্চিন্ত থাকো।সব ঠিক হয়ে যাবে।
,
,
,
মির্জা প্যালেসে,,,
আয়াত অসুস্থ রুসার হাতটা ধরে বসে আছে। আর নিজের মনের সব কথা রুসাকে বলছে।যদিও রুসা আজ কথা বলতে পারে না।হাঁটতে চলতে পারে না।কারণ ২০ বছর আগের সেই অঘটনটা সবকিছু এলোমেলো করে দিয়েছে।অনেকগুলো জীবন আজ বেঁচে আছে কিন্তু তাদের আত্না পরে আছে অন্য কারও কাছে।
আয়াতঃ যানো ফুপ্পি আজকে আমি আর মাম্মাম ভার্সিটিতে এ্যাডমিশন নিতে গিয়েছিলাম।আর ওখানে একটা মেয়ে খুব অপমান করছিলো মাম্মামকে।যা আমি সহ্য করতে পারি নি।ওর মুখের উপর জবাব দিয়ে আসছি।আমি কি ভুল বলেছি বলো?
কথাটা বলে রুসার কপালে একটা চুমু দেয় আয়াত।
,
,
,
,
ওদিকে আবির রুসার ছবিটা দেখছে আর চোখের জল ফেলছে।আজ নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয় আবিরের। সব থেকেও যেন কিছু একটা নেয়। মনের মধ্যে শুধু শূণ্যতায় ভরপুর।
আবিরকে এমনভাবে রুসার ছবি দেখে কাঁদতে দেখে দূর থেকে চিৎকার করে ওঠে নেহা।
নেহাঃ আবিরররর!
নেহার চিৎকারে কেঁপে ওঠে আবির।তারপর নেহা এগিয়ে এসে আবিরের হাত থেকে রুসার ছবিটা কেড়ে নেয়।
নেহাঃ ভুলে যেও না আবির আমি তোমার স্ত্রী। আমাদের মেয়ে লাবন্য। তোমার লজ্জা করে না এই বয়সে এসেও পুরোনো প্রেমিকার ছবি দেখে কাঁদছো।
আবিরঃ ছবিটা দাও নেহা?
নেহাঃ নাহ!
আবির একটান দিয়ে নেহার হাত থেকে ছবিটা নিজের কাছে নিয়ে আসে।তারপর ছবিটা বুকে জড়িয়ে নেহাকে বলে।
আবিরঃ রুসা আমার ভালোবাসা ছিলো।আর সারাজীবন থাকবে।তুমি আমার স্ত্রী হয়েছো ঠিকই কিন্তু কখনো আমার ভালোবাসা পাবে না এটুকু মনে রেখও।আর যদি বলো লাবন্যর কথা।তাহলে বলবো হ্যাঁ আমি আমার মেয়েটার মুখের দিকে চেয়ে এতোগুলা বছর তোমার সাথে থেকেছি।তবে আমার শরীর মন কিছুই তোমাকে দেয় নি।কারণ এই সবকিছু শুধুই রুসার।লাবন্য তোমার নোংরা খেলার ফসল।সেদিন পার্টির রাতে যদি তুমি আমার সাথে ওই নোংরা খেলাটা না খেলতে তাহলে আজ আমি আমার রুসার কাছেই থাকতাম।
নেহাঃ উফফ! তোমার মুখে শুধু ওই একটা কথাই।কি দেয় নি তোমাকে আমি? টাকা-পয়সা, ধন-দৌলত।সব দিয়েছি আবির।শুধু একটু ভালোবাসা দিতে পারছো না আমায়?
আবিরঃ নাহ পারছি না।কারণ তোমার ওই টাকা-পয়সা, ধন-দৌলত দিয়ে সব কেনা যায় শুধু আমার ভালোবাসা না।আমি শুধুই রুসার।আর সারাজীবন রুসারই থাকবো।
কথাটা বলেই আবির বেড়িয়ে যায় রুম থেকে। আর নেহা রেগে পাশ থেকে কাচের জগটা উঠিয়ে দূরে ছুড়ে মারে।
,
,
,
,
মেঘ বাড়িতে তার মাকে গিয়ে জানায় লাবন্যকে সে বিয়ে করতে পারবে না।এবং কেন পারবে না তার সবকিছুই মাকে খুলে বলে যা যা সকালে ঘটেছে।মেঘের মা শুধা।
শুধাঃ আচ্ছা মেঘ, মা মেয়ে দুজনেই কি ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে?
মেঘঃ হ্যাঁ মা।
শুধাঃ এই বয়সেও কেউ লেখাপড়া করে?
মেঘঃ করে! সব মেয়েটার জন্য হয়েছে মা। ছোটবেলা নাকি মাকে কেউ অশিক্ষিত বলেছিলো।তাই শর্ত দেয় যদি মা তারসাথে লেখাপড়া না করে তাহলে সেও করবে না।
শুধাঃ তারপর?
মেঘঃ তারপর আর কি! মা মেয়ে একসাথে মিলে লেখাপড়া করলো।আর আজ একসাথে ভার্সিটিতে।
শুধাঃ আচ্ছা মেয়েটাকে দেখতে কেমন রে?
মেঘঃ জানি না মা #তারে_আমি_চোখে_দেখিনি।
শুধাঃ মানে?
মেঘঃ মানে, মেয়েটার আপাদমস্তক বোরখার আবরণে ঢাকা ছিলো।আর কথাগুলোও খুবই শালীনতা বজায় রেখে বলে।আজকের দিনে এমন মেয়ে দেখতে পাওয়া যায় না।
শুধাঃ আচ্ছা ওকে তোর বউ করলে কেমন হয়?
মেঘঃ ধূর! কি যে বলো না মা।
কথাটা বলেই মেঘ তার মায়ের কোল থেকে মাথাটা উঠিয়ে রুমে চলে আসে।
চলবে,,,,