আড়ালে ভালোবাসার সংসার

আড়ালে ভালোবাসার সংসার !! Part- 19

বিধানকে এমন ভাবে দেখে শুধু তিশাই নয় পুরো ভার্সিটিই ভয়ে কাপছে। কারণ বিধানকে ব্যক্তিগতভাবে কেউ না চিনলেও তার রাগ সবারই জানা গণমাধ্যমের দ্বারা। তাই পুরো ভার্সিটিতেই কেমন একটা থমথমে ভাব। বিধান চোখ বন্ধ করে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছে তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। কিন্তু হঠাৎই বিধান চিৎকার উঠে এতোটা জোরেই যে ভার্সিটি টিচার্স ও প্রিন্সিপালও ছুটে আসা। প্রিন্সিপাল ও টিচার্স তো বিধানকে ভার্সিটিতে দেখে অবাক।
বিধানঃ তিশাহ! তিশা কে? এখনই আমার সামনে আসো! ( চিৎকার করে )
তিশা ভয়ে থরথর কাপছে এবং বিধানের আচমকা চিৎকারে থতমত হয়ে গিয়েছে। তাই বিধানের ডাকে সাড়া দিলো না। অন্যদিকে বিধান তো এতে আরও রেগে গেলো।
বিধানঃ আই’ম সেয়িং সামথিং ইউ ফুল! ডোন্ট ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড! কাম ইনফ্রন্ট অফ মি রাইট নাও! ( রেগেমেগে )
এমন অবস্থা দেখে ভার্সিটির প্রিন্সিপাল এগিয়ে এলো। ভার্সিটির প্রিন্সিপাল তিশার বাবা আর এজন্যই তিশা ভার্সিটিতে এতো অহংকার নিয়ে চলে।
প্রিন্সিপালঃ স্যার এনি প্রব……..
আর কিছু বলার আগেই বিধান তাকে হাত দেখিয়ে থামিয়ে দেয়।
বিধানঃ আই’ল টক টু ইউ ল্যাটার! তিশাহ! ( আবার চিৎকার করে )
এবার তিশা সামনে এসে দাঁড়ায়। বিধান একবার তিশাকে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখে।
তিশাঃ আ-আমি ত-তি-তিশা!
প্রিন্সিপালঃ স্যার ও আমার মেয়ে। ও কি কিছু করেছে? করে থাকলে ক্ষমা করে দিন! ( বিনীতভাবে )
বিধানঃ ওহ আপনার মেয়ে! ভেরি গুড। ( বলে বাকা হাসে )
প্রিন্সিপালঃ হ্যাঁ স্যার! ও কী করেছে?
বিধানঃ আমি মিস তিশার সাথে কথা বলি ততক্ষণ আপনি আরিশা থেকে ঘটনাটা জেনে নিন!
আরিশাঃ হ্যাঁ স্যার শুনেন…… ( আরিশা তিশার বাবাকে সম্পূর্ণ ঘটনা খুলে বলতে থাকে )
বিধানঃ সো মিস তিশা আপনি বিথীকে বলেছেন তার আমার ওয়াইফ হওয়ার কোনো যোগ্যতা নেই কতাই সে আমার বউ হতেই পারে না, তাই না? ( শান্ত কণ্ঠে বললেও চোখে রাগ স্পষ্ট )
তিশাঃ নিশ্চুপ!
বিধানঃ আচ্ছা বিথীর কথা বাদ দিলাম সে তো আমার বউই! আপনার আমার মতো ছেলের বউ হওয়ার যোগ্যতা আছে?
তিশাঃ নিশ্চুপ!
বিধানঃ আমার তো মনে হয় আপনার মতো মেয়ের আমার কেন কোনো রিকশাচালকেরও বউ হওয়ার যোগ্যতা নেই! কারণ……..
বিধান এসব বলতে বলতেই প্রিন্সিপাল আরিশার থেকে সব ঘটনা শুনে ফেলে। তাই সে ছুটে যায় বিধানের কাছে এবং কথার মাঝেই থামিয়ে দিয়ে ক্ষমা চাইতে লাগলেন কারণ বিধানের রাগ তার সম্পর্কে তার জানা আছে।
প্রিন্সিপালঃ স্যার ওকে ক্ষমা করে দিন! আমি ওর পক্ষ থেকে ক্ষমা চাচ্ছি।
বিধানঃ ওখেহ করলাম ক্ষমা। বাট আমারও কিছু শর্ত আছে কারণ মিস তিশা তো শর্ত দিতে অনেক ভালোবাসে তাই না তিশা?
তিশাঃ নিশ্চুপ!
প্রিন্সিপালঃ কি শর্ত? ( বিনীতভাবে )
বিধানঃ আমার ওয়াইফকে পা ধরে ক্ষমা চাইতে বলেছিলেন না এখন নিজে তার পায়ে ধরে মাথা নিচু করে ক্ষমা চাইবেন!
প্রিন্সিপালঃ ঠিক আছে স্যার আপনি যা বলবেন ও তাই-ই করবে! ( বিনীতভাবে )
তিশাঃ বাবা তুমি কি বলছো! আমি কিছুতেই এই মেয়ের কাছে ক্ষমা চাইবো না।
বিধানঃ এই মেয়ে না ম্যাম বলেন! মিসেস বিধান চৌধুরী সে আর ক্ষমা চাইতে বাধ্য আপনি! ( পৈশাচিক হাসি দিয়ে )
তিশাঃ না! কিছতেই না!
বিধানঃ আপনি ভুলে যাচ্ছেন আমি এই ভার্সিটি ওনার। যদি ক্ষমা না চান তাহলে আপনাকে তো এক্সপেল করবোই এমনভাবে যাতে কোথাও চান্স না পান, তাছাড়া আপনার বাবার যেই চাকরির জন্য আপনার এতো অহংকার তাও হারাবেন! এখন আপনার কাছে অপশন দুইটা। আমার কথা শুনুন নাহলে সব হারান!
,
,
,
বিথী এতক্ষণ নিরব শ্রোতা ও দর্শক হয়ে থাকলেও এখন মুখ খুললো কারণ বিথীর মনে হচ্ছে এখন বিধান অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করছে।
বিথীঃ আচ্ছা শুনেন! যা হওয়ার তো হয়েছেই বাদ দিন না! চলেন বাসায় যাই।
বিথী বিধানের বকাবকি শুনে আর কিছু বলল না বরং সবার সামনে বকায় রাগে অভিমানে মুখ বন্ধ করে বসে থাকল
বিধানঃ একদম চুপ! ( জোরে ধমক দিয়ে )
বিথীঃ আমি তো….
বিধানঃ যখন জিজ্ঞেস করেছিলাম কি হয়েছে তখন তো মুখে কুলুপ এঁটে বসেছিলে। তাহলে এখনও চুপ করে থাকো নাহলে এক থাপ্পড়ে সব দাঁত ফেলে দিবো! ( রেগে চিৎকার করে )
বিধানের বকাবকি শুনে বিথী আর কিছু বলল না বরং সবার সামনে বকা দেয়ায় মুখ ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
বিথীঃ তিশা চুন্নি তোর জন্য আমারও বকা খাওয়া লাগলো এই রাক্ষসের কাছে। মন তো চাচ্ছে এই রাক্ষসকে ক্যাম্পাসের বট তলায় ঝুলিয়ে পিটাই কিন্তু আমি তো গুড গার্ল তাই কিছু করলাম না! ( মনে মনে এসব বলে ভ্যাঙচি কাটে )
অন্যদিকে বিধান বিথীর গভীর ভাবনা, বিরবির করা ও ভেঙচি কাটা দেখে বুঝে যায় যে বিথী তারই গোষ্ঠীর ষষ্ঠী পূজো দিচ্ছে। তাই বাকা হেসে আবার তিশার দিকে তাকায়।
বিধানঃ সো মিস তিশা কি ভাবলেন! কোনটা করবেন বলেন প্লিজ! ( শয়তানি হাসি দিয়া )
প্রিন্সিপালঃ স্যার ও কি বলবে আমি বলছি ও সরি বলবে ম্যামকে। এই মেয়ে যা বিথি ম্যামকে সরি বল নাহলে আমার বাড়িতে তোর কোনো জায়গা হবে না! ( রেগে বললেন )
তিশা বিধান ও নিজের বাবার কথা শুনে বাধ্য হয়ে তিশার পায়ে ধরে ক্ষমা চাইলো আর বিধান পৈশাচিক হাসি দিলো। অন্যদিকে বিথী তখনও মুখ ফুলিয়ে আছে।
আরিশাঃ জিজু তুমি একদম উচিত শিক্ষা দিয়েছো এই মেয়েকে। ( খুশি হয়ে )
বিধানঃ এখনও তো কোন শিক্ষাই দিলাম না তবে এখন দিবো। ( বাঁকা হেসে )
আরিশাঃ মানে?
বিধানঃ প্রিন্সিপাল সাহেব তিশা আজ থেকে এক মাসের জন্য ভার্সিটির আয়ার কাজ করবে এন্ড আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু হেয়ার নো! ( বলে পৈশাচিক হাসি দিয়ে আচমকা বিথীর হাত ধরে গাড়িতে নিয়ে বসালো )
আরিশাঃ জিজু ইউ জাস্ট রকড ইট! আর তিশা এবার বুঝলে তো কার যোগ্যতা কতটুকু? ( তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে )
তিশাঃ নিশ্চুপ হয়ে মাথা নিচু করে আছে।
প্রিন্সিপালঃ তোর থেকে আমি এটা এক্সপেক্ট করিনি তিশা! আজ শুধুমাত্র তোর জন্য লজ্জায় আমার মাথাটা নিচু হয়ে গেলো।
তিশাঃ বাবা আমি…….
আর কিছু বলতে না দিয়ে প্রিন্সিপাল স্যার চলে গেলেন। আসলে সে একজন সৎ ও নীতিবান মানুষ সেখানে তার মা যে এমন হবে তার জন্য এটা ভাবনাতীত ছিলো।
,
,
,
বিধান এক হাত দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে আর অন্য হাত বিথীর হাতের উপর দিয়ে স্টিয়ারিং চেপে ধরেছে। আর বিথী মুখ ফুলিয়ে জানালার দিকে তাকিয়ে আছে। বিধানের সাথে কথা তো বলছেই না বরং এক পলক বিধানের দিকে তাকাচ্ছেও না। যা বিধানের একদম সহ্য হচ্ছে না।
বিধানঃ কি হয়েছে বিথী পাখিটার? এমন চুপচাপ কেনো!
বিথীঃ নিশ্চুপ।
বিধানঃ রাগ করেছে বুঝি? আচ্ছা তুমিই বলো তোমাকে আমি কতবার জিজ্ঞেস করলাম তুমি কিছুই বলছিলে না। যদি আরিশা না বলতো তাহলে তো জানাই হতো না। তাই এমন করেছি। প্লিজ আর রাগ করে থেকো না!
বিথীঃ নিশ্চুপ।
বিধানঃ কি হলো জান কথা বলবে না এখনো? আই’ম সরি তো! ( ড্রাইভ করতে করতে বিথীর গালে আচমকা চুমু দিয়ে )
বিথীঃ দেখেন গাড়ি চালানোর সময় এমন করবেব না। আমার এতো তাড়াতাড়ি মরার সখ নেই! ( ঝাঁঝালো গলায় )
বিধানঃ যাক বাবা বউ তো রেগে বোম হয়ে আছে নাহ কিছু বলা যাবে না এখন। বাসায় যেয়ে দেখবোনে………( মনে মনে )
তারপর বিধান ও বিথী বাসায় চলে গেলো। বাসায় যেতেই আচমকা একজন রূপসী কন্যা ছুটে এসে বিধানকে জড়িয়ে ধরলো। ঘটনার আকস্মিকতায় বিথী ও বিধান উভয়ই অবাক।
মেয়েটিঃ ওহ বিধান! ডিয়ার আই মিসড ইউ আ লট! বাট ইউ ডিডেন্ট মিসড মি এট অল। এতো পুরোনো ভালোবাসাকে ভুলে গেলো। সো রুড এন্ড ব্যাড ডিয়ার!

চলবে,,,,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *