আড়ালে ভালোবাসার সংসার

আড়ালে ভালোবাসার সংসার !! Part- 21

বিধানঃ এই ছেলেটা কে ছিলো?
বিথীঃ ও নীলাভ্র দিপ্তর ফুপাতো ভাই।
বিধানঃ দীপ্তের ফুপাতো ভাইয়ের সাথে তোমার এতো হাসাহাসি কিসের হ্যাঁ! ( রেগেমেগে )
বিথীঃ আমাকে নিচে নামান আগে! ( ছুটাছুটু করতে করতে )
বিধানঃ এই মেয়ে শান্ত হয়ে থাকো নাহলে একটা আছাড় দিবো! ( ধমক দিয়ে )
বিথী বিধানের কথাটায় বেশি গুরুত্ব না দিয়ে ছুটাছুটি করছেই। বিধান বিথীর এমন ছটফট করায় রেগে যেয়ে আজ সত্যি সত্যিই বিথীকে আছাড় দেয়। বিথী প্রথমে এমন আচমকা ঘটনায় স্তব্ধ হলেও হুশ আসতেই দেয় এক চিৎকার।
বিথীঃ আহহহহ! (চিৎকার করে )
বিধানঃ উফফ! একদম চুপ! ( চিৎকার করে ধমক দিয়ে )
বিথীঃ নিশ্চুপ।
বিথী বিধানের আচমকা ধমকে ভয় পেয়ে চুপ করে থাকে। কিন্তু বিথীর চোখের কোণে পানি জমে গিয়েছে যা দেখে বিধান চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে বিথী পাশে বসে। বিথীকে আলতো জড়িয়ে ধরলো এবং কপালে পড়ে থাকা চুল সরিয়ে চুমু খেলো।
বিধানঃ কি হয়েছে কাঁদছো কেনো? ( শান্ত কণ্ঠে )
বিথীঃ নিশ্চুপ। ( টপ টপ করে পানি বেয়ে পড়ছে চোখ জোড়া দিয়ে )
বিধানঃ বলো না পাখিটা?
বিথীর মাথাটা বুকে নিয়ে চুলে বিলি কাটতে কাটতে বলল। বিথী বিধানের এমন ভালোবাসার স্পর্শ পেয়ে নিজের মাথাটা বিধানের বুকে এলিয়ে দিলো।
বিথীঃ তুই পচা আমাকে মেরেছিস! পচা একটা! তুই বান্দর! তুই গরু! তুই ইন্দুর আর……আর মনে পড়ছে না!
বিধানঃ কখন মারলাম? ( অবাক হয়ে )
বিথীঃ এই যে আমাকে নিচে ফেলে দিলি শয়তান!
বিধানঃ বিথী পাখি একটু তাকিয়ে দেখো তো তুমি কোথায় বেডে না নিচে? ( দাঁতে দাঁত চেপে )
বিথীঃ হ্যাঁ তাই তো! না! না তুই ফেলেছিস তো! আমি আম্মি আব্বি মামনি সবাইকে বলে দিবো তুই আমাকে মেরেছিস! তুই শয়…….
বাচ্চাদের মতে করে বিধানের বুকে কিল-ঘুসি দিতে দিতে বলল। এদিকে বিধান বিথীর এসব কথা শুনে রেগে ফায়ার হয়ে গেলো। কারণ বিধান তুই তুকারি একদমই সহ্য করতে পারে না তাছাড়াও তো বিথীর আজব বকাবকি আছেই। তাই বিথীর যেই ঠোঁট জোড়া তার মেজাজ গরম করছিলো সেই ঠোঁট জোড়াকেই নিজের আয়ত্বে নিয়ে নিলো।
,
,
,
বিথীর ছুটাছুটিতে বিরক্ত হয়ে বেশ কিছুক্ষণ পর বিথীকে ছেড়ে দিলো বিধান। বিথী ছাড়া পেতেই প্রথমে সাইড টেবিল থেকে পানি নিয়ে এক নিশ্বাসে এক গ্লাস পানি পান করে নিলো। তারপরও গলাটা যেনো শুকনোই লাগছে বিথীর। পানি পান করে সামনে তাকাতেই দেখতে পেলো এক জোড়া রক্তিম লাল চোখ। বিধান রেগেমেগে তাকিয়ে আছে বিথীর দিকে। বিথী তা দেখেই ঢোক গিললো।
বিথীঃ এ–এমন ক-ক-করে কি-ক-কি দেখে–ন! ( তুতলিয়ে আমতা আমতা করে )
বিধানঃ দেখছিলাম তোমার সাহস কতটা বেড়েছে বিধান চৌধুরীকে তুই তুকারি করো? ( চোখ রাঙিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল )
বিথীঃ স-স-সরি! ( ভয় পেয়ে তুতলিয়ে )
বিধানঃ হোয়াট সরি? তুমি জানো আমি তুই তুকারি সহ্য করতে পারি না আর তুমি কিনা সেই তুই তুকারিই করলে কতক্ষণ ধরে? ( জোরে ধমক দিয়ে )
বিথী এবার বিধানের এমন জোর গলায় দেয়া ধমকে ভয়ে কেঁদেই দিলো।
বিথীঃ আই এম সরি! আমি আসলে কারো সাথে রাগ করলে তুই তুকারি করে ফেলি। বড় ছোট দেখি না। আমি আর কোনদিনও আপনাকে তুই তুকারি করবো না! সরি! ( জোরে জোরে কাঁদতে কাঁদতে )
বিধান আচমকা বিথীর এমন কান্নায় অবাক হয়ে যায় কারণ ও ভাবেই নাই যে বিথী এমন প্রতিক্রিয়া দেখাবে। বিধানের এখন অনেক অপরাধবোধ হচ্ছে বিথীকে ধমক দিয়ে। বিথীর কান্না আর সহ্য করতে না পেরে বিথীকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরে।
বিধানঃ সরি জান! আমি যে রাগটা কন্ট্রোল করতে পারি না! ( বলে বিথীর চোখের পানি গুলো মুছে দেয় )
বিথীঃ নিশ্চুপ।
বিধানঃ সরি তো জান!
বিথীঃ নিশ্চুপ।
বিধানঃ এই যে কানে ধরলাম। ( বলে বিথী সামনে কানে ধরলো )
বিথীঃ নিশ্চুপ।
এতে বিথির কান্না থামলেও গালটা বেলুনের মতো ফুলিয়েই রেখেছে। বিধানের কাছে বিথীকে এখন একটা অভিমানী ছোট্ট বাচ্চা লাগছে যাকে দেখলেই ভালোবাসতে মন চায়।
বিধানঃ আচ্ছা কানে ধরে উঠ-বস করছি তারপর হাসেন মায়াবী রাজকন্যা।
বলে বিধান খাট থেকে নেমে কানে ধরে উঠ-বস করতে লাগলো যা দেখে বিথী আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না।
বিথীঃ হা হা হা! ( পেটে ধরে জোরে হাসতে লাগলো )
বিথীর হাসির ঝংকারে যেনো পুরো ঘরটাই হাসছে। বিধান তো বিথীর হাসির মায়ায় আবার ফেসে গেলো। সে ঘোরে চলে গেলো বিথীর জাদুকরী হাসিতে।
,
,
,
বিধান সেই ঘোরেই বিথীর দিকে এগুতে লাগলো। বিথীর হাসি থামলো গালে কারো ছোঁয়ায়। বিথী জানে এটা বিধান কারণ এতোদিনের বিধানে ছোঁয়া, গন্ধ, দোষ, গুণ সবই ওর চেনা, জানা ও ভালোলাগার বিষয়। বিথী বিধানের দিকে তাকাতেই দেখে বিধান ওর দিকে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বিধানের চোখে অদ্ভুত এক মুগ্ধতা এক নেশা দেখতে পাচ্ছে যেটাতে বিথী নিজেও গ্রাস হচ্ছে বারংবার। হারিয়ে যাচ্ছে এ চোখ জোড়ায়। বিধান হাটু গেড়ে ফ্লোরে বিথীর সামনাসামনি হয়ে বসলো। বিথীর মুখটা দুই হাতে উঠিয়ে আলতো করে কপালে চুমু খেয়ে বিথীর সারা মুখে, ঘাড়ে ও গলায় এলোপাথাড়ি চুমু দিতে লাগলো। বিথীও বিধানকে জড়িয়ে ধরে আবেশে চোখ জোড়া বন্ধ করে ফেলল। তাদের দুজনেরই ঘোর ভাঙলো দরজায় বারি দেয়ার শব্দে।
ঠক! ঠক!
বিথী আওয়াজে ঘোর ভাঙায় ও বিধানকে আলতো ধাক্কা দিলো সরানোর জন্য। কিন্তু বিধান তো বিধানই সে এক চুলও সরলো না।
ঠক! ঠক!
বিথীঃ সরেন না প্লিজ!
বিধানঃ উফফফ! কি! আই ডোন্ট লাইক ডিস্টার্বেন্স ইন আওয়ার টাইম! সো জাস্ট কোয়াইট! ( ঘোর লাগা ও ধীর কণ্ঠে )
ঠিক তখনই খুব জোরে নক হলো।
ঠককক! ঠককক! ঠককক!
বিথী এবার জোরে ধাক্কা দিয়ে বিধানকে সরিয়ে দিল। আর নিজের জামা ঠিক করে ওরনা ভালো ভাবে মাথায় জড়িয়ে দরজা খুললো। বিধানও বিরক্তি নিয়ে কাপড় ঠিক করে বেডে যেয়ে বসলো। বিথী হালকা দরজা খুলতেই দেখলো নীলাভ্র দাঁড়িয়ে আছে ঠান্ডা পানির ট্রে হাতে নিয়ে।
বিথীঃ নীল ভাই আপনি? তাও ট্রে হাতে!
নীলাভ্রঃ হ্যাঁ আমি। কেনো বিরক্ত হয়েছো বুঝি?
বিথীঃ না না! তা কেনো হবে?
নীলাভ্রঃ হা হা হা! আসলে বিধান নাকি ঠান্ডা পানি চেয়েছিলো। তা নিয়ে আসলাম।
বিথীঃ ওহ! ধন্য………
আর বলতে পারলো না কারণ তার আগেই বিধান বিথীকে রুমের মধ্যে টেনে নিয়ে গেলো এবং নিজে নীলাভ্রের সামনে দাঁড়ালো।
বিধানঃ আসলে ভাইয়া আমি একটু ক্লান্ত তাই আপনি যদি……….. দিন পানিটা দিন……..
বলেই নীলাভ্রের হাত থেকে ট্রেটা নিয়ে নীলাভ্রের মুখের উপর দরজা লাগায় দিলো। বেচারা নীলাভ্র অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

চলবে,,,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *