আমার ক্রাশ বর

আমার ক্রাশ বর !! Part- 36

পাহাড়ে আসার পথে অনু যে পরিমাণে সবাই কে ডিস্টার্ব করছে তা বলার বাহিরে।

রাজ অনু আরিয়ান আয়াত চার জন এক গাড়িতে।

রাজ গাড়ি ড্রাইভ করে,তারপাশে আয়াত পেছনে আরিয়ান অনু।

অনু :কখনো মাঝ পথে গাড়ি থামিয়ে বাহিরে হাটাহাটি করেছে।

আবার একটু পর রাস্তার পাশে গাড়ি থামিয়ে সেলফি তুলেছে।

কখনো এইটা খাবো ঐ টা খাবো বলে হাজার বাহানা তার।

শেষ পর্যন্ত রাজ আয়াত আরিয়ান বিরক্তি হয়ে কান্নাকাটি শুরু করে দেয়।

অনু তাদের বলে,”এতো কান্নার কি হয়েছে তোমাদের? ”

আরিয়ান :কিছু হয়নি, তুমি ঘুমিয়ে যাও তাহলে হবে।

অনুকে আরিয়ান অনেক কষ্টে ঘুম পাড়িয়ে নিয়ে আসে পাহাড়ে।শেষ পর্যন্ত অনু ঘুমিয়ে পুরা জার্নি কমপ্লিট করে।

এতো মানুষ একসাথে থাকবে সেই জন্য আরিয়ান একটা ডাকবাংলো বুকিং করে।

সবাই সেখানে চলে আসে।সারাপথ অনু সবাই কে খুব জ্বালিয়েছে।

অবশেষে সবাই সেখানে এসে যার যার রুম বুঝে নিয়ে নিজেদের রুমে গিয়ে বিশ্রাম করতে থাকে।

এতো দূরে জার্নি করে সবাই ক্লান্ত,,
কোনো রকম খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে যায়।



এদিকে সকালে সবার আগে ঘুম থেকে অনু উঠে রুমের জানালা খুলে দেখে বাহিরের পরিবেশ সেই সুন্দর। নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারে না, কাউকে কিছু না বলে অনু পাহাড়ি এলাকা ঘুরতে বাহির হয়ে যায়।

অনু বাহিরে এসে সবুজে ঘেরা পাহাড়ি গ্রাম গুলা দেখতে থাকে।(গল্পের আসল লেখিকা Angel frozen Nishi)পাহাড়ের মানুষ গুলা কতো সহজ সরল মনের না হলে কি তারা এই সবুজ পাহাড়ের মাঝে বসবাস করতে পারে।

অনু নিজের মনের সুখে সবুজের মাঝে হারিয়ে যায়।একা একা ঘুরে পাহাড়ে সে।
এই সেই পাহাড় যে পাহাড়ে দশ বছর আগে সে তার রাজ কে দেখতে পায়,,
আর সেই রাজ তার বর।
শুধু বর না আমার ক্রাশ বর সে।


এদিকে আরিয়ান ঘুম থেকে উঠে দেখে পাশে অনু নেই।আরিয়ান তাড়াতাড়ি অনুকে খুঁজতে সবার রুমে যায়।কিন্তু কেউ জানে না অনু কোথায়।

আরিয়ানের সাথে বাকী সবাই অনুকে খুঁজতে বাহিরে চলে আসে,এমন অবস্থায় একা একা ঘুরাঘুরি ভাল না। কখন কোন বিপদে পড়বে তা কেউ জানে না।

চারিদিকে সবাই অনেক খোঁজা খুঁজি করেও অনুকে পায়না।সবাই খুব ভয় পেয়ে যায়।

আরিয়ানের তো কলিজা টা কেউ ছিঁড়ে নিয়ে যাচ্ছে এমন অবস্থা।

হঠাৎ কি মনে করে আরিয়ান সামনে পাহারের দিকে যায়।সেখানে গিয়ে দেখে অনু একটা ব্রেঞ্চের উপর বসে এক মনে পাহাড় দেখছে।

আরিয়ান দৌড়ে গিয়ে অনুকে জড়িয়ে ধরে বলে,”এই ফাজিল মেয়ে কেউ এইভাবে কাউকে কিছু না বলে চলে আসে,জানো তোমার চিন্তায় আমার প্রাণ যায় যায় অবস্থা।”

অনু :ওরে আমার প্রাণের বর বউকে নিয়ে এতো টেনশন করার মতো কিছু হয়নি বুঝেছো,?

আরিয়ান বলে,”শুধু তোমার চিন্তা করি না,আমার দুইটা বেবি আছে আমি তাদের চিন্তা ও করি বুঝেছেন ম্যাডাম জ্বি? ”

অনু বলে,”জানো এইটা সেই পাহাড় যে পাহাড়ে আমি দশবছর আগে আমার ক্রাশ রাজ কে দেখেছিলাম।যাকে ভালোবাসে এতো গুলা বছর পার করে দিয়েছি। ”

আরিয়ান :আমাকে পেয়ে তুমি খুশি না,সেই কোন রাজ কে নিয়ে পড়ে আছো।কেন আমার মতে সুন্দর ভাল মনের ছেলে এখন পছন্দ হচ্ছে না যে সেই রাজের স্মৃতি চারণ করতে বসে পড়ছেন এখানে? ”

অনু বলে,”আরে আমার বোকা বর,রাগের খনি,,কুমোর বড়ি,,পুরা কথাটা তো শুনবে।”

তখনি সেখানে সবাই এসে অনুকে নানা রকম কথা বলে,”এখন এই অবস্থায় একা বাহিরে আস্ উচিৎ না,সবাই কে না বলে কেনো একা আসছে ইত্যাদি। ”

তারপর সবাই অনুকে সাথে করে ডাকবাংলো তে নিয়ে যায়।

সেখানে যাবার পর সবাই এক সাথে সকালের নাস্তা করে, তারপর একটু আশেপাশে ঘুরাঘুরি করে লাঞ্চ করে সবাই বিশ্রাম করে।
বিকালে সবাই ঘুরাঘুরি করে।

কিন্তু আরিয়ান অনুর উপরে রাগ করেছে সে কোনো কথা বলবে না অনুর সাথে কারণ সে রাজ কে ভুলতে পারে নাই তাই।

এভাবে কয়েকদিন কেটে যায় অনু আরিয়ানের রাগ আর ভাঙ্গাতে পারে না।

তাই সেদিন বিকালে অনু রিমার সাহায্য নিয়ে একটা সবুজ শাড়ী পরে দুহাত ভরা সবুজ কাচের চুড়ি পরে চুল গুলা হালকা উঁচু করে একটা কাঠি দিয়ে খোঁপা করে ।
খোঁপার চারপাশে সাদা ফুলের মালা পেঁচিয়ে সে পাহাড়ের সেই জায়গা তে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে যেখানে অনু প্রথম রাজ কে দেখে।

অনুর সামনে পাহাড়ের খাদ যদিও কেউ পড়ে মরবে না আশা করা যায় কিন্তু বাঁচবে কি না বলা যায় না।

পাহাড়ে অন্য দিকে সবাই বসে আড্ডা করছে।আয়াত রাজ আরিয়ান।

সেখানে এসে রিমা বলে,”দুলাভাই অনু আপনার জন্য পাহাড়ের ঐ দিকে অপেক্ষা করছে।”

আরিয়ান বলে,”যাও তুমি আমি যাচ্ছি। ”

রিমা আবিরের কাছে চলে যায় দুজন মনের সুখে অন্যদিকে ঘুরাঘুরি করতে থাকে।

এমন সময় রাজ বলে,”তোরা থাক আমি আসছি বলে কোথাও চলে যায়।”

এদিকে অনু অনেক সময় ধরে আরিয়ানের জন্য অপেক্ষা করতে করতে বিরক্ত হয়ে যায়।

এমন সময় হঠাৎ কেউ অনুকে পেছন থেকে ধাক্কা দিতে যায় কিন্তু সে সময় অনু সাইডে শরে যায় আরিয়ানের কাছে যাবার জন্য।

তাই যে ধাক্কা দেয় সে নিচে পড়ে যায়।অনু দেখতে পায় না কে পড়ে গেছে।

এমন সময় মৌ জোড়ে চিৎকার করে ওঠে ভাইয়া..

মৌ দৌড়ে এসে অনুর দু বাহুতে হাত রেখে বলে,”ডাইনি মেয়ে তুই আমার ভাইয়া কে ধাক্কা দিয়ে পাহাড়ের নিচে ফেলে দিয়েছিস।
তোকে আজ আমি মেরে ফেলবো,
তোর জন্য আমি আমার ভালোবাসার মানুষ আরিয়ান কে পাইনি।
দশ বছর ধরে আমি ভালো বেসে আসছি আর তুই এসে কোথা থেকে আমার জায়গা কেড়ে নিয়ে বসে আছিস।
তোর নামে নানা রকম কথা বলে রাজ কে দেশে আনছি,কিন্তু তোর সাথে খারাপ কিছু করা বাদ দিয়ে সে ভাল মানুষ হয়েগেছে।
তাতে আমার আফসোস নেই তোকে কতো বার মারতে চেয়েছি তুই নিজেও জানিস না।
সিঁড়ি থেকে ধাক্কা দিয়েছি তাও পড়ে মরিস নাই,
মেঝেতে তেল দিয়েছি তাও বেঁচে গিয়েছিস।পায়েসের বাটিতে বিষ দিয়েছি তাও তুই বেঁচে গেছিস আজ তোকে কে বাঁচাতে আসবে।”

সবাই মৌ আর অনুর থেকে অনেকটা দূরে দাড়িয়ে আছে,, কিন্তু মৌ যে কখা বলছে তারা সব শুনতে পারছে।
মৌ এর মুখে এমন কথা শুনে আকাশ থেকে পড়ছে।
যে মেয়ে অনুকে এতো ভালোবাসে তার অন্তরে এতো বিষ ভরা।

অনু বলে,”তুমি আমার সাথে এতোদিন ভালো মানুষের নাটক করেছ শুধু আমার ক্ষতি করার জন্য।তুমি মানুষিক ভাবে অসুস্থ মৌ,তুমি অসুস্থ।।

আরিয়ান আয়াত কে বলে,”তার মানে এতোদিন বাড়িতে যা কিছু করেছে মৌ করতো। ছিঃ এসব ভাবতেও খারাপ লাগছে আমাদের। ”

মৌ চিৎকার করে বলে,”হা আমি অসুস্থ আরিয়ানকে পাবার জন্য আমি সব কিছু করতে পারি এমন কি তোমাকে তোমার বাচ্চাদের সাথে মেরে দিতে পাড়ি। ”

অনু ভয় পেয়ে যায় খুব বলা যায় না যদি মৌ কিছু করে তাহলে খুব খারাপ কিছু হতে পারে।

অনু মৌ কে জোড়ে ধাক্কা দিয়ে দৌড়ে চলে আসতে চায় পারে না,,এতো বড় পেট আর ভারী শরীর নিয়ে কি দৌড় দেওয়া যায়

তবুও অনু চেষ্টা করে কিন্তু শেষ রক্ষা আর হয় না,
মৌ অনুর পায়ে লেঙ্গ মেরে ফেলে দেয় তাতে অনু
উপড় হয়ে খুব জোড়ে পড়ে যায়।এতে করে পেটে খুব আঘাত পায়।

অনুর ব্যাথা সহ্য করতে না পেরে পেটে দু হাত দিয়ে চিৎকার করে কান্না শুরু করে।

এদিকে বাড়ির সবাই অনুর কাছে এসে দেখে অনুর অবস্থা ভালো না খুব ব্লিডিং হচ্ছে।

অনুকে এমন রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে আরিয়ানের মাথা কাজ করছে না।কেনো আগে অনুর কাছে চলে আসলাম না।তাহলে এমন কিছু হতো না।

ফুপি এসে মৌ কে মনের সুখে চড় থাপ্পড় দিতে থাকে আর বলে,”তোর মতো মেয়েকে আমি পেটে ধরেছি এটা ভাবতে আমার ঘৃণা হচ্ছে।তুই অনুর সাথে এতো খারাপ আচরণ কি ভাবে করতে পারছিস? ”

এদিকে অনুর অবস্থা ভাল না তাকে তাড়াতাড়ি হসপিটালে নিয়ে আসা হয়েছে।

অনেক ব্লিডিং হয়েছে রক্তের প্রয়োজন।
আবিরে অনুকে রক্ত দিবে তাই সে নার্সের সাথে চলে যায়।

এদিকে অপারেশন থ্রিয়েটারের বাহিরে সবাই খুব কান্নাকাটি করছে।নিজেদের সামনে মেয়েটার এমন অবস্থা হয়েছে শুধু তাকিয়ে থেকে তারা দেখেছে।

এদিকে হঠাৎ O.T.রুম থেকে একজন ডাক্তার বাহিরে এসে অদের সামনে একটা কাগজ দিয়ে বলে,”পেশেন্টের অবস্থা খুব ভালো না তাই আমরা যেকোন একজনকে বাঁচাতে পারবো হয় বাচ্চাদের না হয় মাকে, সিদ্ধান্ত আপনাদের হাতে।”

আরিয়ান কাগজটা হাতে নিয়ে তা ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে বলে,আমি এদের মধ্যে যে কোন এক জনকে বেছে নিতে পারবো না।”

এমন কথা শোনার পর অনুর বাবা মা অসুস্থ হয়ে যায় তাদের পাশেের কেবিনে এডমিট করে রাখা হয়।

ডাক্তার বলে,”প্লিজ তাড়াতাড়ি করুন আপনার। ”

আয়াত বলে,”সরি ডাক্তার আমাদের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়,আপনারা যা ভালো মনে করেন তাই করেন।”

ডাক্তার আর কিছু না বলে চলে যায়।

একটু পর একজন নার্স এসে বলে,”এখানে পেশেন্টের হাজবেন্ডকে পেশেন্ট তার সাথে কথা বলতে চাইছেন। ”

আরিয়ান নার্সের সাথে O.T রুমে যায়।

আরিয়ান অনুর হাত ধরে চুপচাপ বসে চোখেরজল ঝড়াতে থাকে।

অনু আরিয়ানের হাত ধরে বলে,”প্লিজ আমার উপর রাগ করবেন না।আমার সে দশ বছর আগের রাজ আর কেউ না আপনি!! আপনি আমার সেই দশ বছর আগের ক্রাশ রাজ।
আপনি #আমার_ক্রাশ_বর।প্লিজ আমার উপর রাগ করে থাকবেন না।তাহলে আমি মরেও শান্তি পাবো না।

আরিয়ান বলে,”প্লিজ তুমি এমন কথা বলো না। আমি তোমার উপর রাগ করি নাই।তুমি আমাকে মাফ করে দিও।”

তারপর ডাক্তার এসে আরিয়ান কে বাহিরে বাহির করে দিয়ে অপারেশন শুরু করে দেয়।।

আবিরের বুকে মুখ গুঁজে রিমা কান্নাকাটি করতে থাকে।

এদিকে আয়াত নিজেন ভাইয়কে জড়িয়ে ধরে থাকে।

জানি না অপারেশন শেষে কি হবে কেউ জানে না।…

(গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি সবার কাছ থেকে 😇)



চলবে…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *