আমার ক্রাশ বর

আমার ক্রাশ বর !! Part- 35

এদিকে আরিয়ান রান্নাঘরে এসে অবাক কারণ রাজ আয়াত একটা মরা বিড়ালের পাশে দাড়িয়ে আছে।

আরিয়ান :বিড়াল টা মারা গেছে কি করে আর এখানে আসছে কি ভাবে?

আয়াত বলে,”বিষ খেয়ে। ”

আরিয়ান :বিড়াল বিষ কোথায় পাবে?

রাজ বলে,”বিড়াল টা একটু আগে এই পায়েস খেয়েছে তার মানে কেউ এই বাটিতে বিষ মিশিয়ে দিয়েছে। ”

আরিয়ান :কি বলছিস তোরা এই পায়েস তো শুধু অনুর জন্য রান্না করা।তাহলে কে এমন ক্ষতি করতে চাইছে অনুর।

রাজ বলে,”আমি তোদের সাথে ছিলাম সারাদিন। আমি খারাপ হতে পারি কিন্তু এতোটা খারাপ না যে কাউকে খুন করতে চাইবো।”

আয়াত :রাজ তোকে কিছু বলতে হবে না আমরা জানি তুই এমন কাজ করতে পারিস না।
কিন্তু যে করছে সে অবশ্যই আমাদের বাড়ির কেউ হবে।বাড়ির মানুষ আর কাজের মানুষ ছাড়া কেউ রান্নাঘরে ছিল না।

রাজ :এমন খারাপ কাজ কে করতে পারে তাকে হাতের কাছে পেলে তো একদম খুন করে দিবো।

আরিয়ান :আচ্ছা আমরা এই বিষয় নিয়ে পরে আলোচনা করবো।
এখন বাড়ির এই হাসিখুশির মাঝে কোনো বিষাদের ছাঁয়া না ফেলি।
আমরা তিনজন ছাড়া আর কেউ জানবে না।

তারপর সবাই কে আড়াল করে বিড়াল টা কে বাহিরে বাগানে আয়াত মাটি চাপা দিয়ে আসে।

এদিকে এবার তিন ভাই রান্না করবে।

তিনজন দাড়িয়ে ভাবছে কি রান্না করবে আর কে রান্না করবে।জীবনে তো রান্নাঘরে পা দিয়ে দেখেনি এরা,,কোথায় কি আছে তাও জানে না।আর কি ভাবে করে তাও জানে না কিন্তু হার মানবে না এরা আজ।।

আরিয়ান বলে,,”রাজ তুই এতো বছর বাহিরের দেশে থেকে আসছিস। তাই তুই ভালো রান্না করতে পারবি।”

রাজ বলে,”আরে আয়াত ডাক্তার ও বেশি সাইন্স জানে রান্নার সাইন্স আয়াত বেশি ভাল বুঝবে।”

আয়াত :এতো কথার কি আছে ভাবী খাবে।
তাই তার জন্য ভালোবাসে ভাই রান্না করবে।

রাজ আয়াত দুজন মিলে আরিয়ানের ঘাড়ে রান্নার দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়।

রাজ গাজর কাটে আয়াত চাল ধুয়ে দেয় আরিয়ান দুধ জ্বাল করে।

দুধের মাঝে আয়াত চাল দিয়ে দেয় আরিয়ান নাড়াচাড়া করতে থাকে, এদিক দিয়ে রাজ গাজর দুধের মাঝে দিয়ে দেয়।

আরিয়ান বলে,”আচ্ছা দুধ চাল গাজর দিয়ে কি রান্না করছি আমরা? ”

রাজ :আরে ভাই এটা একদম নতুন রান্না যার উদ্ভাবন আমরা করছি।

আরিয়ান :রান্না খাওয়া যাবে তো?

আয়াত :তোর নিজের উপর বিশ্বাস নেই?

আরিয়ান :আছে তো নিজের থেকে বেশি বিশ্বাস আছে।

তার মাঝে তারা দুধ ঘণ হবার জন্য গুরা দুধ দেয় অনেক যার কারনে দেখতে মনে হচ্ছে কেউ আটা সিদ্ধ করছে,এবার সব শেষে চিনি দেওয়ার পালা চিনির কৌটা কেউ খুঁজে পায়নি,,
অবশেষে দেখে উপরে এক কোণাকোণি তে রাখা মনের মতো পুরা চিনির বয়াম ধরে দিয়েছে। এদিকে তেজপাত, গরমসলা এক গাদা দিয়েছে।

তারপর প্লেটে সাজিয়ে অনুর সামনে নিয়ে যায়।

অনু বলে,”এটা খাওয়া যাবে তো? ”

আয়াত বলে,”ভাবী নিজের বরের রান্নাকে এভাবে অবহেলা অপমান করবেন না প্লিজ। ”

অনু বলে,”আমার বর এতো কষ্ট করে রান্না করছে তার খাবার কি ফেলে দিতে পারি কখনো না।”

রাজ :আচ্ছা তাহলে খাও এবার ভাবী।

তিন জন তো সেই স্টাইল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

এমন সময় অনু সেই রান্না বিসমিল্লাহ্ বলে মুখে নিয়ে সাথে সাথে ফেলে দিয়ে বেসিং এ গিয়ে বমি করতে শুরু করে।

মৌ পাশে গিয়ে বলে,”কি হলো ভাবী খারাপ লাগছে আমার কাছে মেডিসিন আছে দিবো?”

রিমা বলে,”অনুর মেডিসিনের দরকার হবে না।”

অনু বেশি করে পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে এসে বলে,”এই রান্না খাওয়াই আমাকে মারার ইচ্ছা ছিলো বুঝি? ‘”

আরিয়ান :কি বলছো তোমাকে কেন মারতে যাব।

অনু তিন জনের হাতে তিনটা চামুচ দিয়ে বলে নাও তিন জন এক সাথে খাও নিজেদের রান্না।

তিনজন একসাথে খাবার মুখে নিয়ে না গিলতে পারে না ফেলতে পারে।কারণ নিজেদের সম্মান শেষ আজ।

তাড়াতাড়ি বাথরুমে গিয়ে বমি করে ফ্রেশ হয়ে এসে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।

অনু বলে,”রান্নার বিবরণ শোনেন সবাই এর মধ্যে ময়দা, চাল, গাজর দিয়ে ঘেটে রাখছে তা ঠিক আছে নতুন চেষ্টা, কিন্তু লবনের বয়াম পুরা ঢেলে দিয়েছে,,সাথে গরমমসলা দিয়ে রাখছে।যদি কারো আত্মহত্যা করার শখ থাকে তাহলে সে এই খাবার শখ করে খেতে পারে। ”

অনুর শাশুড়ি বলে,”থাক বউমা ওদের আর লজ্জা দিও না,জীবনের প্রথম তিনজন রান্নাঘরে পা রেখেছে তাও তোমার আর পিচ্ছি দের জন্য এটাই বড় কথা। ”

রিমা বলে,”যাক হেরে তো গেছেন। এবার বোঝেন রান্না করা এতো সহজ কাজ না।রান্না করার জন্য পরিশ্রম করতে হয়।”

তিনজন একসাথে বলে,”আজ আমরা বুঝেছি রান্না করা আমাদের কর্ম না।আমরা নিজেদের স্থানে ভাল আছি।অন্যের কাজে কোনোদিন বিদ্রূপ করবো না।”

এদিকে অনুর শাশুড়ি রান্নাঘরে গিয়ে চিৎকার করে ওঠে।

সবাই রান্নাঘরে গিয়ে দেখে রান্নাঘর আর রান্নাঘর নেই ডাস্টবিন হয়ে আছে।রান্নাঘরের পুরা চেহারা বদলে গেছে।

সব মেয়েরা বলে,”মাফ চাই তোমাদের থেকে আর কোনো দিন ভুল করেও জীবনে রান্নাঘরে পাঠাবো না।”

আরিয়ান বলে,”মা বেবি হলে একদিন চেষ্টা করবো তারপর আর কোনোদিন করবো না।”

অনু বলে,”না থাক,আপনাদের আর বেবিদের উপলক্ষে কিছু করতে হবে না।আজকের টা সারাজীবন মনে থাকবে।”

তারপর সবাই ড্রয়িংরুমে বসে আড্ডা দিচ্ছিল, এমন সময় অনু সেখান থেকে উঠে যাবার সময় ফ্লোরে পা পিছলে পড়ে যেতে লাগে এমন সময় আরিয়ান এসে ধরে ফেলে অনুকে।

অনু তো ভয় পেয়ে কান্নাকাটি শুরু করে,যদি পড়ে যায় তাহলে সব এখানে শেষ হয়ে যেত আজ।

সবাই সেখানে এসে অনুকে সান্তনা দিতে থাকে।

এমন সময় রাজ বলে,”মেঝেতে তেল পড়েছে কি করে?? কে এই খারাপ কাজ করেছে? ”

মৌ বলে,”কেউ ইচ্ছে করে কেনো তেল ফেলতে যাবে, বাড়িতে এতো মানুষ কারো হাত থেকে হয়তো পড়ে গেছে।ভাবীর দেখে শুনে চলা উচিৎ ছিল।”

অনু বলে,”হুম আমারি ভুল আমি যদি খেয়াল করে দেখতাম তাহলে এমন ভুল হতো না।”

অনুর শাশুড়ি বলে,”থাক বউমা এমন ঘটনা হতেই পারে,আমরা আগে থেকে খেয়াল রাখবো তুমি টেনশন করো না।যাও রেস্ট করো।সারাদিন অনেক মজা করা হয়েছে।

আরিয়ান অনুকে রুমে নিয়ে গিয়ে বিছানাতে শুয়াই দেয়।

অনুর মাথাতে হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।অনু ঘুমিয়ে যায়

কিন্তু আরিয়ানের চোখে ঘুম নেই এইসব কোনো দূর্ঘটনা হতে পারে না।কেউ হয়তো ইচ্ছা করে অনুর ক্ষতি করতে চাইছে কিন্তু কে?
অনেক প্রশ্ন কিন্তু কোনো উওর নেই অারিয়ানের কাছে।
এভাবে চলতে থাকলে হয়তো কোনো বড় বিপদ হতে পারে।



মাঝে মাঝে অনুর সাথে এমন ঘটনা ঘটতে থাকে,,কিন্তু আল্লাহর রহমতে অনুর কোনো কিছু হয়না।
আরিয়ান, রাজ,আয়াত তিন জনে সব সময় অনুর সাথে ছায়ার মতো থাকতে চেষ্টা করে।

এভাবে অনু মানুষিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ে।

তা দেখে আয়াত আরিয়ান কে বলে,”যদি এমন ভাবে চলতে থাকে তাহলে ভাবীর ডেলিভারি তে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।তাই ভাবীর এখন একটু পরিবেশ চেঞ্জ করা দরকার।

আরিয়ান :অনুর এখন সাড়ে আট মাস চলছে,এমন সময় কোথাও নিয়ে যাওয়া কি সেফ হবে?

আয়াত :আরে কিছু হবে না নিজেদের গাড়ি করে কাছে কোথাও যাবো রাস্তার মাঝে সে ভাবে বিশ্রাম করে নিয়ে যাবো।

রাজ বলে,”তাহলে এ কাহিনী যেখানে শুরু হয়েছে সেখানে না হয় শেষ করতে যাওয়া যাক কি বলো সবাই? ”

আরিয়ান :আবিরের কাছে শুনেছি অনুর পাহাড় পছন্দ কিন্তু অনুকে কি এত দূর নিয়ে যাওয়া ঠিক হবে?

আয়াত :আরে কিছু হবে না।তাহলে আমি সব ব্যবস্থা করছি কাল পরশু রওনা দিবো এটাই ফাইনাল।

আরিয়ান অনুর কাছে গিয়ে বলে,” অনু আমরা পাহাড়ে ঘুরতে যাব তুমি কি যাবে? ”

অনু বলে,”যাবনা তা কখনো হতে পারে না অবশ্যই যাব আমার তো এমন সময় ঘুরতে খুব ইচ্ছে করতেছিল যাক তুমি আমার মনের আশাটা পূরণ করতে চাইছো এর জন্য আলহামদুলিল্লাহ এটাই অনেক বড় কিছু আমার জন্য।

অনু এতোটা খুশি পাহাড়ে বেড়াতে যাবে।
সাথে টুইন বেবি পেটে নিয়ে। উফফ সেখানে গিয়ে কি করবে কি করবে না সেসব ভেবে নিজের খুশি ধরে রাখতে পারছে না অনু।

আরিয়ান নিজের বাড়ির মানুষদের সহ অনুর বাড়ির সবাইকে বলে যাওয়ার কথা।
সবাই এই অবস্থায় অনুকে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাগ করে।
কিন্তু আরিয়ান সবাইকে সবটা বোঝানোর পড়ে সবাই রাজি হয়ে যায়
যে অবশ্যই অনুর ভালর জন্য নিয়ে যাওয়া উচিত।

ইতিহাস আবার দ্বিতীয়বার রিপিট হওয়ার জন্য পাহাড়ের যাচ্ছে।
সবাই রেডি হয়ে পাহাড়ের দিকে রওনা দিয়েছে..

(দেখি আজ কার কি মনে হয় সামনে কি হতে পারে কেমন ধারণা বা ভালবাসা অনুর প্রতি সবার)



চলবে…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *