আমার ক্রাশ বর

আমার ক্রাশ বর !! Part- 37 (শেষ পর্ব)

অনুর অপারেশন চলছে ভেতরে আর এদিকে বাহিরে সবার প্রতিটা নিঃশ্বাস যেনো শেষ নিঃশ্বাস।

বাহিরে সবার মনে হাজারো ভয় না জানি কখন কি খবর আসে বাহিরে।

এইভাবে দীর্ঘ তিন চার ঘণ্টা অঅপারেশন করার পরে O.T রুমের বাহিরে দুইজন নার্স বেবি দের নিয়ে বাহিরে আসে।

আয়াত আরিয়ান আবির সামনে এগিয়ে যায়।

আরিয়ান মেয়েকে কোলে নেয় প্রথমে।
আবির ছেলে বাবুকে কোলে নেয়।

একজন ডাক্তার বাহিরে এসে বলে,,”সরি আপনাদের তিন নাম্বার বাবুটাকে আমরা বাঁচাতে পারি নাই।”

সবাই তিন নাম্বার বাবুর কথা শুনে একদম অবাক হয়ে যায়।

আয়াত বলে,”আমরা তো জানি দুইটা বেবি হবে।”

ডাক্তার বলে,”আমরা বুঝতে পারি নাই যে দুই বেবির আড়ালে তৃতীয় জন ছিলো। সিজারের সময় দেখা তাকে দেখতে পাই।আপনাদের দুইটা ছেলে বাবু আর একটা মেয়ে বাবু ছিলো,,প্রথম ছেলে বাবুটা পড়ে আঘাত পাবার জন্য মারা গেছে।”

আরিয়ান মেয়ে বাবুটা কে আয়াতের কাছে দিয়ে তাদের ছেলে বাবুটাকে দেখত যায়।
আরিয়ান বাবুটাকে কোলে করে তার কপালে চুমা দিয়ে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে কান্না করতে থাকে,নিজের অংশ যার জন্য এতো দিন অপেক্ষা করেছে তাকে আজ হারিয়ে দিয়েছে।

আরিয়ান তখন ডাক্তার কে অনুর কথা জিজ্ঞাস করে বলে,”ডাক্তার অনু কেমন আছে? ”

ডাক্তার বলে,”সে বেঁচে আছে কিন্তু সে কোমাতে চলে গেছে জানি না কবে ঠিক হবে বলে ডাক্তার চলে যায়।”

এদিকে আরিয়ানের সামনে তার দুইটা অবুঝ বাচ্চা,, আর একদিকে অসুস্থ বউ যে কবে ঠিক হবে সে জানে না।”

এসবের মাঝে হঠাৎ রক্তাক্ত অবস্থায় রাজ হসপিটালে এডমিট হয়।

আরিয়ান সেখানে নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে,,
এমন সময় রাজ কে আরিয়ানের সামনে দিয়ে O.T তে নিয়ে যাবার সময় রাজ আরিয়ানের হাত ধরে বলে,”ভাবী কে আমি ধাক্কা দিয়ে পাহাড় থেকে ফেলেদিতে যাইনি। মৌ ভাবী কে ধাক্কা দিতে যায়।আমি ভাবী কে মৌয়ের হাত থেকে বাঁচাত গেলে মৌ আমাকে পাহাড় থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।প্লিজ ভাই তুই মৌ কে ওর গুনাহের শাস্তি দিবি বল আমাকে? ”

আরিয়ান রাজের হাত ধরে বলে,” আমি মৌ কে মাফ করবো না,,ওর জন্য আমার একটা অনাগত সন্তান কে হারিয়েছি।অনু জীবন মৃত্যুর মাঝে ঝুলে আছে।আমার দুই বাচ্চা এখন মাকে ছাড়া কি ভাবে থাকবে।আমি মৌ কে কোনোদিন মাফ করবো না।”

এদিকে ডাক্তারগন রাজের চিকিৎসা করতে থাকে।

আরিয়ান আবির বাবুদের রিমা আর ওর মার কাছে দিয়ে পুলিশের কাছে গিয়ে মৌয়ের নামে কেস করে আসে।

আগেই ফুপু মৌ কে পুলিশের কাছে দিয়ে আসে।
বাকি কাজ আরিয়ান এসে পুরণ করে দেয়।

এভাবে কয়েকদিন কেটে যায়।ছোট দুই বাচ্চা মাকে ছাড়া কি ভাবে কষ্টে আছে তা দেখে।

আরিয়ান বাবা হয়ে তার ছোট বাচ্চা দের মাকে ছাড়া থাকতে কষ্ট দেখে সে খুব কান্না করে।

তাই আরিয়ান সিদ্ধান্ত নেয় সবাই ঢাকাতে ফিরে যাবে।

অনুকে ঢাকা বড় হাসপাতা শিফট করা হয়।
আর বাড়িতে সবাই চলে আসে,,

আরিয়ান বাড়িতে এসে আয়াত আর রাজ কে জড়িয়ে ধরে খুব কান্না করে।

রাজ বলে,,”আমার বোনের ভুলের মাসুল আমি দিবো।আজ থেকে বাচ্চাদের দায়িত্ব আমাদের ভাবীর অনুপস্থিতি তে কেউ বাবুদের কষ্ট বুঝতে দিবো না।”

আয়াত বলে,”ভাবী মরে যায়নি যে এভাবে আমাদের ভেঙ্গে পড়তে হবে।সে যেদিন সুস্থ হয়ে আসবে সেদিন আমরা কি বলবো।”

এরপর দেখতে দেখতে ছয় মাস কেটে যায়।

আরিয়ান আয়াত রাজ তিন জন যে ভাবে পিচ্ছি দের খেয়াল রাখে তাতে অনু থাকলে সেই খুশি হতো।

আজ বাবুদের মুখে ভাতের অনুষ্ঠান।

রাজ আনিফা কে কোলে নিয়ে বসে আছে আর আয়াত আয়ান কে কোলে নিয়ে বসে আছে।(প্রথম ছেলে মারা গেছে তাই দ্বিতীয় জনের নাম আয়ান রাখে)
তাদের কে আরিয়ান পায়েস খাওয়াই দিবে।

এমন সময় দরজার সামনে এসে অনু দাঁড়িয়ে যায়।

আয়াত রাজের কোলে নিজের বাবুদের দেখে দৌড়ে গিয়ে তাদের জড়িয়ে ধরে হাজার চুমা দিয়ে ভরিয়ে দিতে থাকে।

আরিয়ান জানতো অনু সুস্থ হয়ে গেছে।
কিন্তু ইচ্ছে করে যায়নি,,আরিয়ান চেয়েছিল অনু একাই বাড়িতে চলে আসুক

অনুকে দেখে বাড়ির সব মানুষ আবেগ আপ্লুত হয়ে যায়। অনু নিজের ছেলে মেয়েকে কোলে নিয়ে বলে,”আমি নিজের বাচ্চা দের থেকে এতো দূরে ছিলাম আমি অদের এতোদিন বড় হওয়া দেখতে পারি নাই।”

আবির বোন কে জড়িয়ে ধরে বলে,”তুই চিন্তা করিস না আজ থেকে তুই নিজের বাচ্চা দের দেখাশোনা করবি।এখনো কতো দিন আছে ওদের বড় হতে দেখার। আমার অনু মনু কখনো এমন ভেঙ্গে পড়তে পারে না, সে খুব স্ট্রং ”

তারপর অনু নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে এক চিলতে হাসি ঠোঁটের কোণে নিয়ে আসে।বাচ্চাদের আদর করতে থাকে নিজের সব মায়া_মমতা উজাড় করে দিতে থাকে।

কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ছয়মাস অনু তাদের থেকে দূরে থাকার জন্য অনুর কাছে থাকতে চাইছে না।
অনুর কোলে আয়ান খুব কান্না করছে।

তা দেখে আয়াত বলে,”ভাবী আয়ান কে আমার কাছে দাও তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো।”

অনু বলে,”আয়ান মানে কি নতুন নাম কেনো রাখছেন আমার ছেলের?”

পেছন থেকে রিমা এসে অনুর পাশে বসে সেদিনের সব কথা বলে দেয় অনুর কাছে।যে ওর দুইটা না তিনটা বাবু ছিলো পেটে।
সেদিন পড়ে যাওয়ার কারনে একজন মারা যায়।
অনু তো সেই কান্নাকাটি তে ভেঙ্গে পড়ে যা বলার বাহিরে।

আরিয়ান অনুকে জড়িয়ে ধরে বলে,”প্লিজ তুমি আর সেই নিকষকালো দিনের কথা বলো না।
সব ভুলে আমরা আবার নতুন করে শুরু করি চলো।”

পেছন থেকে রাজ আয়াত বলে,”নতুন করে শুরু করতে তোমার পাশে আমরা সবাই আছি।

তারপর শুরু হয় অনুর নতুন জীবনের কাহিনী।
ঐ দিকে মৌ জেলখানাতে বন্দী।
আর এইদিকে অনু নিজের বাচ্চা দের বড় করতে চেষ্টা করছে কিন্তু বাচ্চা গুলা রাজ আর আয়াত কে ছাড়া কিছু বোঝে না।
এই জ্বালাতে অনুর দিন পাড় হয়ে যাচ্ছে।



পাঁচ বছর পরে,,,,

আজ রাজের বাসর রাত তাই বাড়িতে সবাই খুব ব্যস্ত।

এদিকে রাজ বাসর ঘরে প্রবেশ করে নিজের নতুন বিয়ে করা বউয়ের হাত ধরেছে এমন সময় দরজার বাহিরে খুব জোড়ে কেউ নক করে।

রাজ দরজা খুলে দিতেই,,,আনিফা রাজ কে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করতে থাকে।

তা দেখে রাজের বউ বলে,”এ মেয়ে কার আর এমন করে আপনাকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করছে কেনো। ”

আনিফা বলে,”এই নতুন মা তুমি জানো না আমি তোমার মেয়ে।। রাজ আমার বাবা আজ থেকে তোমাদের সাথে থাকবো।বাবার সাথে একা থাকতে কষ্ট হয় দেখে তো বাবা তোমাকে আমার জন্য আনছে।”

রাজের বউ তো জোড়ে জোড়ে সেই কান্নাকাটি শুরু করে দেয় বলে,”বাবাগো তুমি শেষে কি না এক বাচ্চার বাপের সাথে আমার বিয়ে দিয়ে দিলে গো।”

তখন আয়ান এসে বলে,”খালি আনিফা হবে কেনো,,আমিও তোমার ছেলে। তুমি আমার ও মা হও।”

রাজের বউ বলে,”আব্বা গো শেষে দুই বাচ্চার বাপের ঘাড়ে আমাকে চাপিয়ে দিতে পারলে।।ওরে আমার পোড়া কপাল শেষে দুই বাচ্চার বুইড়া বেটার বউ আমি।”

রাজ জোড়ে একটা ধমক দিয়ে বলে,”একদম চুপ রাহা, ন্যাকা কান্নাকাটি করবা না।পুরা কাহিনী না জেনে ফ্যাঁ ফ্যাঁ করে কাঁদবে না।”

রাহা বলে,”আপনি চুপ করেন আপনার দুই বাচ্চার সাথে আমি করবো না সংসার চললাম আমি বাপের বাড়ি।”

তখন দরজার সামনে অনু এসে বলে,”তোমাকে আমার সতীন করে আনছি কি বাপের বাড়ী যাবার জন্য না কি? ”

রাজের দিকে তাকিয়ে রাহা বলে,আপনার বউ আছে আগে তো বলেন নাই,,এই জন্য দেখতে গিয়ে হুট করে বিয়ে করে সতীন সহ বাচ্চা দের সংসারে নিয়ে আসছে গো।

রাজ বলে,”তোমরা আমার বাসরঘরে এমন আগুন দিতে পারলে।”

অনু বলে,”তুমি এভাবে না বলে বাচ্চা দের জন্য নতুন মা নিয়ে আসতে পারেলে,আমি ছাড় দিবো কেনো? ”

রাজ বলে,”ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি।”

আয়াত এসে বলে,”কেন আমার বাসরঘরে আমাকে ছেড়ে দিয়ে ছিলে যে আজ তোমাকে ছেড়ে দিবো।”

রাজ বলে,”আয়াত তুই তো এমন কাজ করিস না প্লিজ। ”

আরিয়ান এসে বলে,”উফফ তোমরা আর ভালো হবে না কোনোদিন। এই আয়ান আনিফা আমার কাছে আসো।”

অনু আরিয়ানের কাছে এসে বলে,”তোমাকে এখানে আসতে কে বলছে,, আমাদের মজাটা মাটি করে দিবা।”

আরিয়ান বলে,”দেখো রাহা এরা সব মজা করছে এই বাচ্চা দুইটা আমার আর বউটা আমার।তোমাকে জ্বালানোর জন্য এমন করছে।”

রাহা বলে,”আপনার বাচ্চা আমার বরের ঘাড়ে চাপাতে কেনো আসছে।”

অনু বলে,”এই একদম চুপ #আমার_ক্রাশ_বরের বউ আমি আর আমার বাচ্চা এরা।তুমি এদেন নতুন মা এই কথা মাথায় ঢুকিয়ে রাখবে ভালো করো।”

আরিয়ান অনু আর বাচ্চা দের নিয়ে নিজেদের রুমে চলে যাই।

এদিকে রাজ তার বউকে সবটা বুঝিয়ে বলে,,, রাহা তো রাজের মুখে সবটা শুনে কান্না করে দেয়।
রাহা বলে,”আজ থেকে আমি ও আপুর সাথে মিলে মিশে সুখের সংসার করবো আমাদের দুই বাচ্চা কে নিয়ে।”

এদিকে আরিয়ান বাচ্চা দের আলাদা রুমে ঘুমপাড়িয়ে দিয়ে নিজেরদের রুমে আসে।

অনু আরিয়ানকে জড়িয়ে ধরে বলে,”ওরা বাসরঘর করছে চলোনা আমরাও ভালবাসার সাগরে হারিয়ে যায়। ”

আরিয়ান অনুকে কোলে করে বিছানাতে নিয়ে যায় ।

অনু কোমরে হাত রেখে চোখ পাকিয়ে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,”এইযে #আমার_ক্রাশ_বর চলোনা আমরা দ্বিতীয় বাচ্চার প্লানিং করি।”

আরিয়ান বিষম খেয়ে বলে,”প্রথমে একসাথে তিনজন এবার তাহলে কয় জোড়া হবে কে জানে আমি রিস্ক নিতে আর রাজী নাই।”

অনু আরিয়ানের বুকের উপর কিল ঘুশি দিতে থাকে আর বলে,”যতো গুণ তোমার এক সাথে তিনটা গিফট এমন ভালবাসা আমি সারা জীবন পেতে চাই। আমাদের এই পরিবার নিয়ে তোমার সাথে আজীবন সুখের সাগরে ভাসতে থাকবো আমি।”

এভাবে কেটে যাচ্ছে তাদের সুখের সংসার।খুনশুটি আর ভালবাসা দিয়ে।

(ধন্যবাদ সবাইকে এতোদিন এতো ভালবাসা দিয়েছেন আমাকে তার জন্য।
দোয়া করবেন যেনো আপনাদের সামনে আরো সুন্দর সুন্দর গল্প উপহার দিতে পারি।
আর দেশ ও জাতির জন্য সবাই দোয়া করবেন।)



“”সমাপ্ত””

One thought on “আমার ক্রাশ বর !! Part- 37 (শেষ পর্ব)

  • সুজিত

    খুভ ভালো লাগলো। আপনাকে এতো ধন্যবাদ এতো সুন্দর গল্প উপহার দেবার জন্য।।।

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *