Childhood marriage 2 !! Part- 25
#পর্ব-২৫
#লেখিকা-সানজিদা সেতু
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পেছন দিকের একটা বেঞ্চে চুপচাপ বসে আছে ছোঁয়া,আপাতত লোপার জন্য ওয়েট করছে।
ছোঁয়াঃ উফ!এই শয়তানটা যে কখন আসবে…আরতো বসে থাকতে পারছি না,এমনিতেই সারারাত জার্নি করে এসেছি।হোস্টেলে উঠেছি সকালের দিকে তাই কোনকিছুই গোছগাছ করা হয়নি তার উপর আবার এই হাত…তখন অতটা বুঝতে পারিনি কিন্তু এখন প্রচণ্ড ব্যথা করছে।ইশ..কেমন কালচে দাগ হয়ে গেছে!এত শক্ত করে কেউ কাউকে ধরে…বেটা বজ্জাত তোর কপালে দুঃখ আছে,তোকে যদি উচিত শিক্ষা দিতে না পারি তাহলে আমার নামও ছোঁয়া না…
– এক্সকিউজ মি…আপনি কি আমাকে কিছু বলছেন?
(হঠাৎ ছেলে কণ্ঠ শুনে পেছনে ফিরে তাকালো ছোঁয়া,এই ছেলেটা কিছুক্ষণ আগে ওদের ক্লাসে এসেছিল,ওদের ডিপার্টমেন্টেরই সিনিয়র,এই মুহূর্তে নামটা ঠিক মনে পড়ছে না)
– এই তুমি সিএসই ফার্স্ট ইয়ার না?হ্যাঁ তাইতো,আমরাতো একটু আগেই তোমাদের সাথে মিট করে আসলাম…
ছোঁয়াঃ জ্বি ভাইয়া…সরি ভাইয়া আমি আসলে আপনাকে খেয়াল করিনি তাই…
– (হাত বাড়িয়ে দিয়ে)It’s okey,Hi this is Ayaan Sharif.ফাইনাল ইয়ার চলছে তুমি?
ছোঁয়াঃ ভাইয়াটা আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু আমার হাত মেলাতে খুব আনইজি লাগছে,কি করব কিছুই বুঝতে পারছি না
আয়ানঃ Any problem?বুঝতে পেরেছি,আচ্ছা ঠিক আছে হাত মেলাতে হবে না বাট এটলিস্ট নামটাতো জানতে পারি তাইনা?
ছোঁয়াঃ জ্বি ভাইয়া,আমি ছোঁয়া
আয়ানঃ শুধুই ছোঁয়া?
ছোঁয়াঃ না মানে তাসনিয়া মাহবুব ছোঁয়া
আয়ানঃ Hm nice name,nice to meet you miss Chowa
ছোঁয়াঃ Nice to meet you too
আয়ানঃ এখানে কি কারো জন্য অপেক্ষা করছো?
ছোঁয়াঃ জ্বি ভাইয়া
আয়ানঃ বয়ফ্রেণ্ড?
ছোঁয়াঃ না না একটা ফ্রেণ্ডের জন্য…
আয়ানঃ Okey…Then bye and see you
ছোঁয়াঃ জবাবে শুকনো একটা হাসি দিলাম।(লোপার বাচ্চা..কই মরছিস তুই?তাড়াতাড়ি আয় নাহলে যে আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি)
আয়ানঃ বাই দ্য ওয়ে এভাবে একা একা কথা বলাটা কিন্তু ঠিক না,মানুষ পাগল ভাববে।সো নেক্সট টাইম সাবধানে ওকে…
(আয়ান চলে যাচ্ছিল,ফিরে এসে কথাটা বলেই আবার চলে গেল।ছোঁয়া কি বলবে বুঝতে পারছে না তাই হা করে ওদিকেই তাকিয়ে আছে)
লোপা আসলো আরও কিছুক্ষণ পরে,ছোঁয়া ততক্ষণে বসে থাকতে থাকতে রীতিমত বিরক্ত হয়ে গেছে।তাই লোপাকে দেখেই রীতিমত কথার বৃষ্টি ঝরাতে লাগলো…
ছোঁয়াঃ ওই বান্দরনী,এতক্ষণ লাগে?সেই কখন বলছি আসতেছি আর আসছিস এতক্ষণে!তুই যতক্ষণে আসলি ততক্ষণে আমার একটা ঘুম হয়ে যেত…
লোপাঃ আরে আগে আমার কথাটাতো শোন…
ছোঁয়াঃ কি শুনব হ্যাঁ?আর কি বলার আছে তোর?একেতো নতুন জায়গা,তার উপর যেদিকে তাকাচ্ছি শুধু কাপল আর কাপল,এত কাপলের ভিড়ে আমি একলা একটা মেয়ে..সবাই কত কি ভাবছিল আমার সম্পর্কে বলতো…
লোপাঃ আচ্ছা বাবা সরি
ছোঁয়াঃ সরি বললি আর সব ঠিক হয়ে গেল!হায়রে বাঙালী…তুই জানিস ওই ইম্পর্টেড বান্দরটা আজকে আমার সাথে কি করেছে?এত জোরে কেউ কাউকে চেপে ধরে!হায় হায় এখন আমার কি হবে..ওই রাক্ষসটাতো আমাকে আর আস্ত রাখবে না…
(হঠাৎ)
সায়নঃ আমাকে কিছু বললে?
ছোঁয়াঃ (চমকে উঠে)আ..আপনি!
সায়নঃ হ্যাঁ আমি,এনি প্রবলেম?
ছোঁয়াঃ আপনি এখানে কি করছেন?লোপা…
লোপাঃ আ..আমি কিছু করিনিতো আসার সময় ভাইয়ার সাথে দেখা হয়ে গেল তাই…
ছোঁয়াঃ তাই সাথে করে নিয়ে আসলি!
সায়নঃ আহ হা শুধু শুধু ওকে বকাবকি করছো কেন?আমি আসতে চাইলাম বলেইতো…
ছোঁয়াঃ সে যাই হোক আপনি এখানে কি করছেন?
সায়নঃ কি করছি তাইনা?মারুফ…
ছোঁয়াঃ এই লোক আবার কাকে ডাকছে কেন?(মনে মনে)
(ততক্ষণে মারুফ চলে এসেছে,এসে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়েই সায়নের হাতে একটা আইস ব্যাগ ধরিয়ে দিল)
ছোঁয়াঃ এটা কি?
সায়নঃ সেটা একটু পরেই জানতে পারবে,দেখি হাতটা একটু এগিয়ে দাওতো…
ছোঁয়াঃ কেন হাত কেন দিব,কিছুতেই দিব না
সায়নঃ দেবে না তাইনা,ওয়েট…
ছোঁয়াঃ মানে?এই আপনি কি উল্টো পালটা কিছু…
সায়নঃ এক রকম জোর করেই ওর হাত দুটো টেনে আমার পায়ের উপর রাখলাম
ছোঁয়াঃ কি আশ্চর্য!এই আপনি সবসময় সবার উপর এমন জোর খাটান কেন বলুনতো..কি সমস্যা আপনার?
সায়নঃ শসসস…চুপ একদম চুপ,আর একটাও কথা না।সারাক্ষণ শুধু বকবক আর বকবক,একটা মিনিটও কি চুপ করে থাকতে পারো না?
ছোঁয়াঃ আমি শুধু শুধু বকবক করি!তারমানে আমি বাচাল?
সায়নঃ তা নয়তো কি?এই যে একটু চুপ করে থাকতে বললাম অথচ এই মেয়ে বকেই যাচ্ছে!
ছোঁয়াঃ আপনি কিন্তু…
সায়নঃ চুপ করে থাকতে বললাম না…
মারুফঃ ইয়ে মানে আমার মনে হয় আমাদের এখন এখান থেকে যাওয়া উচিত,আপনি কি বলেন মিস….
লোপাঃ ওহ হ্যাঁ চলুন যাওয়া যাক
মারুফ আর লোপা চলে গেল,সায়ন আলতো হাতে আইস ব্যাগটা ছোঁয়ার হাতে ধরে রেখেছে।ছোঁয়া শুরুতে একটু আপত্তি করলেও এখন আর কিছু বলছে না,ওর বেশ ভালই লাগছে।তাছাড়া হাতের ব্যথাটাও মনে হচ্ছে একটু একটু কমছে তাই চুপ করে বসে আছে আর মাঝে মাঝে সায়নের দিকে তাকাচ্ছে।সবচেয়ে অদ্ভূত ব্যপার হচ্ছে শুধু ছোঁয়াই না,আশেপাশে যত মেয়ে আছে কম বেশি সবাই বেশ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে।ব্যাপারটা ছোঁয়া খেয়াল না করলেও সায়ন কিন্তু ঠিকই খেয়াল করেছে কিন্তু এখন আর ওসব নিয়ে মাথা ঘামানোর টাইম নেই,যার যা ভাবার ভাবুক তাতে ওদের কি?
।
(মারুফ আর লোপা হাঁটতে হাঁটতে বেশ খানিকটা দূরে চলে এসেছে।এখন পর্যন্ত কেউ কারো নামটা পর্যন্ত জানে না)
মারুফঃ আচ্ছা আপনি যে আমার সাথে একা একা এভাবে চলে আসলেন আপনার ভয় করছে না?
লোপাঃ ভয় কেন করবে?আপনি কি বাঘ নাকি ভাল্লুক?
মারুফঃ সুযোগ পেলে হতেওতো পারি তাইনা?
লোপাঃ সেই সুযোগ আর আপনি পাচ্ছেন না মি. আর তাছাড়া আমি কিন্তু সবসময় পেপার স্প্রে সাথে রাখি সো সাবধান…
মারুফঃ পে..পেপার স্প্রে!হাহাহা আপনিতো তাহলে বেশ বুদ্ধিমতি আর সাহসী অফকোর্স মিস…সরি আপনার নামটাইতো জানা হয়নি
লোপাঃ লোপা,আমার নাম লোপা,ছোঁয়ার ফ্রেন্ড
মারুফঃ ওহ হাই আমি মারুফ,সায়নের ফ্রেণ্ড প্লাস রুমমেট
লোপাঃ রিয়েলি!আমিও কিন্তু ছোঁয়ার রুমমেট
মারুফঃ আচ্ছা চলুন আমরা একটু ওদিকটায় ঘুরে আসি,ওদিকে বটতলা বলে একটা জায়গা আছে।ওখানকার স্ট্রিট কফি আর চটপটিটা পুরো ক্যাম্পাসে ফেমাস
লোপাঃ তাই নাকি?আচ্ছা চলুন আমার মনে হয় ওদেরকে আরও কিছুক্ষণ ঝগড়া করার সুযোগ করে দেয়া উচিত…
মারুফঃ তারমানে আপনি ওদের ব্যাপারটা আগে থেকেই জানতেন!
লোপাঃ জানব না কেন,আফটার অল সেই ছোটবেলা থেকেই আমি ছোঁয়ার বেস্টফ্রেণ্ড আর আমাদের ফ্রেণ্ডশিপটাতো শুরুই হয়েছে ওদের বিয়ের পর থেকে…
মারুফঃ ওহ আই সি…
লোপাঃ আচ্ছা শোনেন আমি যেহেতু ক্যাম্পাসে নতুন সো আমাকে কিন্তু পুরো ক্যাম্পাসটা ঘুরিয়ে দেখাতে হবে
মারুফঃ ওকে…
লোপাঃ আর আজকে কিন্তু আপনার পক্ষ থেকে আমার ট্রিট
মারুফঃ At your service mam…
(দুজনে একসাথে হেসে উঠল)
(সন্ধ্যায়)
সায়ন নিজের রুমে বালিশে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে,ঠিক আগের মতই জানালার দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবছে
মারুফঃ দোস্ত যাই বলিস মেয়েটা কিন্তু অনেক সুন্দর,আমারতো খুব পছন্দ হয়েছে
সায়নঃ কোন মেয়েটা?
মারুফঃ কে আবার ছোঁয়া
সায়নঃ ওই খবরদার,ওর দিকে একদম নজর দিবি না,ও তোদের ভাবী না…
মারুফঃ নজর আর কই দিলাম,ভাবীইতো আর ভাবীকে আমার অনেক পছন্দ হয়েছে
সায়নঃ মারুফ…
মারুফঃ যাই বলিস,মেয়েটা কিন্তু তোর জন্যে একদম পারফেক্ট,তুই শুধু শুধু রিয়ার পেছেনে…
সায়নঃ জানি সেই জন্যেইতো টেনশন হচ্ছে
মারুফঃ কিসের টেনশন?
সায়নঃ রিয়া আবার ওর সাথে খারাপ কিছু করে না বসে,ওই মেয়েকে কোন ভরসা নেই।ও যদি একবার জানতে পারে যে ছোঁয়ার জন্যই আমি ওকে…তাহলে আর রক্ষা নেই
মারুফঃ এটা অবশ্য তুই ঠিকই বলেছিস বাট টেনশন নিস না,আমরা আছিতো তাইনা…
সায়নঃ আচ্ছা ভাল কথা রাকিব কি এখনও আমার উপর রেগে আছে?
মারুফঃ তাতো একটু থাকারই কথা বাট তুই কোন চিন্তা করিস না,সবকিছু খুলে বললে সব রাগ এক নিমিষে পানি হয়ে যাবে আর বন্ধু ট্রিট দেওয়ার জন্য রেডি হ
সায়নঃ ট্রিট?কিসের ট্রিট?
মারুফঃ কিসের আবার,বিয়ের সময়তো কাউকে খাওয়াসনি তাই এখন ভাবীকে ফার্স্ট টাইম দেখার সুবাদে বড়সড় একটা ট্রিটতো লাগবেই…
সায়নঃ সে নাহয় দিয়ে দিব বাট প্লিজ এখনই কাউকে কিছু জানাস না
মারুফঃ মানে?
সায়নঃ মানে ছোঁয়া আর আমার বিয়ের কথাটা এখনই কাউকে বলিস না প্লিজ,ইনফ্যাক্ট আমাদের ব্যাপারে কাউকেই কিছু বলার দরকার নেই
মারুফঃ কিন্তু….
সায়নঃ এই মুহুর্তে ছোঁয়ার জন্য এটাই বেস্ট হবে আর বিলিভ মি কিছুদিন যেতে দে আমি নিজেই সবার সাথে ওকে পরিচয় করিয়ে দিব
মারুফঃ ওকে বাট রাকিবকে কিভাবে…
সায়নঃ ওকে শুধু বলিস আমি যেই মেয়েটার জন্য রিয়ার সাথে ব্রেক আপ করেছি সেই ছোঁয়া তাহলেই হবে
মারুফঃ ওক্কে বস
সায়নঃ আজ নাহয় কাল সবাইকেতো সব জানাবোই কিন্তু তার আগে আমাকে জানতে হবে ছোঁয়ার মনের মধ্যে এক্স্যাক্টলি কি চলছে?ও ঠিক কি চাইছে?এসব কেন করছে?আজকেতো উত্তর না দিয়েই চলে গেল কিন্তু আমাকে যে উত্তরগুলো সব খু্ঁজে বের করতে হবে (মনে মনে)
মারুফঃ কি রে,আবার কি ভাবছিস?
সায়নঃ কিছু না,ভাবছি ছোঁয়া হঠাৎ একমন কেন করল…
মারুফঃ কেমন?
সায়নঃ ও তোর না জানলেও চলবে,আপাতত রাকিব আর বাকিদের কিভাবে ম্যানেজ করবি সেটা ঠিক কর…
।
রুম নম্বর-২২২
হলের পূর্বদিকের একেবারে কর্ণারের একটা রুম,আগামী চার বছর ওদের হাজারো সুখ দুঃখের সাক্ষী হয়ে থাকবে এই রুমটা।ছোঁয়া যেই বেডে উঠেছে তার পাশের জানালাটা দিয়ে পাশের দোতলা বিল্ডিংয়ের ছাদ দেখা যায়,রুমে ঢুকেই ব্যাপারটা ও খেয়াল করেছে।আপাততঃ জানালের পাশে বসে সেদিকেই তাকিয়ে আছে ছোঁয়া…
লোপাঃ নে ধর
ছোঁয়াঃ কি এটা?
লোপাঃ অয়েন্টমেন্ট জেল,সায়ন ভাই তোকে দিতে বলেছে
ছোঁয়াঃ লাগবে না,এটা তুই তোর সায়ন ভাইকেই দিয়ে আয়
লোপাঃ ভাইয়া কিন্তু আরেকটা কথাও বলেছে
ছোঁয়াঃ কি কথা
লোপাঃ সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুলটা বাঁকাতে বলেছে
ছোঁয়াঃ মানে?
লোপাঃ মানে তুই যে এক্সট্রিম লেভেলের ঘাড়ত্যাড়া সেটা ভাইয়া খুব ভাল করেই জানে
ছোঁয়াঃ কিহ!!!
লোপাঃ এতে এত অবাক হওয়ার কি আছে,যেটা সত্যি সেটাইতো বলেছি
ছোঁয়াঃ তুই…তুই…কি আমার বান্ধবী নকি শত্রু?
লোপাঃ যা ভাবার ভাবতে পারিস,আপাতত চুপ করে বস আমি ঔষধটা লাগিয়ে দিচ্ছি
ছোঁয়াঃ বললামতো লাগবে না,কেন শুধু শুধু জোর করছিস?
লোপাঃ তোর না লাগলেও আমার লাগবে,এখন চুপ করে বোস বলছি…
(লোপা একরকম জোর করেই ছোঁয়ার হাতে অয়েন্টমেন্টটা লাগিয়ে দিল তারপর হুট করেই ফোনের ব্যাক ক্যামেরাটা ওর দিকে বাড়িয়ে ধরল)
ছোঁয়াঃ এই আবার কি করছিস?
লোপাঃ দেখতে পাচ্ছিস না,ছবি তুলছি
ছোঁয়াঃ সেটাতো দেখতেই পাচ্ছি কিন্তু কেন?
লোপাঃ ভাইয়া বলছিল তাই
ছোঁয়াঃ ভাইয়া বলছিল মানে?
লোপাঃ মানে তোর না,আমার ভাইয়া মানে সায়ন ভাই
ছোঁয়াঃ মানে!তুই কি এখন এই ছবি উনাকে পাঠাবি নাকি?
লোপাঃ তাছাড়া আর কাকে পাঠাবো শুনি?তোর কি আর দুই একটা বর আছে নাকি…
ছোঁয়াঃ লোপার বাচ্চা তোরেতো আমি…
(লোপা ততক্ষণে ছুটে পালিয়ে গেছে আর ছোঁয়ার ছবিটাও পাঠিয়ে দিয়েছে)
মারুফঃ নে ধর
সায়নঃ কি?
মারুফঃ ছবি,তুই না পাঠাতে বলেছিলি
সায়নঃ কিসের ছবি?
মারুফঃ দেখ তাইলেই বুঝবি
(সায়ন একবার দেখেই বুঝে ফেলল)
সায়নঃ এটাতো…এই লোপা এটা তোকে কেন পাঠালো?ওকেতো বলেছিলাম আমার আইডিতে পাঠাতে…
মারুফঃ সেটা তুই ওকেই জিজ্ঞেস করে দেখিস,এখন আমাকে ঘুমাতে দে অনেক রাত হয়ে গেছে…
ছোঁয়াদের রুমটাতে ছোঁয়া আর লোপা ছাড়াও আরও দুটো মেয়ে আছে,ওরাও ওদের মতই নিউকামার।সচরাচর চারজন ইয়ারমেটকে কখনোই এক রুমে দেয়া হয় না কিন্তু ওদের বেলায় কিভাবে কিভাবে জানি সব গুলিয়ে গেছে,ব্যাপারটা বোধহয় হল অথোরিটির কেউ খেয়ালই করেনি।যাই হোক মেয়েদুটোকে ছোঁয়ার বেশ পছন্দ হয়েছে,ওরা দেখতে যেমন মিষ্টি নামদুটোও তেমনি সুন্দর,অনামিকা আর তিয়াশা।ওদের এখানে আসা বেশ কিছুদিন হয়ে গেছে তাই ওদের সাথে বেশ বন্ধুত্ব হয়ে গেছে।পাশের ছাদটার প্রতিও ছোঁয়ার আকর্ষণ দিন দিন বেড়েই চলেছে,মাঝে মাঝেই ইচ্ছে করে ছুটে চলে যায়,ছাদের কিনারায় বসে কিছুক্ষণ চারপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করি কিন্তু…
আর ঝড় উঠলেতো কথায় নেই,সায়নের সাথে সেদিন পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে যেই পাগলামীটা করেছিল এখানে এই ছাদের কিনারে দাঁড়িয়ে আবারও সেটা করতে ইচ্ছে করে কিন্তু কোন উপায় নেই।ওই ছাদে যাওয়ার কোন ব্যবস্থায় হল কর্তৃপক্ষ করেনি,ইনফ্যাক্ট স্টুডেন্টদের ছাদে যাওয়া সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।অগত্যা দূর থেকে দেখেই তাই চোখ আর মন দুটোই ভরাতে হচ্ছে…
সেদিনের পর থেকে সায়ন আর ছোঁয়াকে জ্বালাতন করেনি কিন্তু ও কখন কি করছে না করছে,কি খাচ্ছে,কোথায় যাচ্ছে সবকিছুর খবরই আড়ালে থেকে নিয়ে যাচ্ছে।ছোঁয়া কিন্তু এসবের কিছুই জানে না,সব কিছুই সায়ন লোপা আর রাকিবকে দিয়ে করাচ্ছে।
ছোট থেকেই ছোঁয়া বেশ সংস্কৃতিমনা,বেশ ভাল নাচতেও পারে তাইতো ক্যাম্পাসে এসেই কালচারাল একটা অরগানাইজেশনের সাথে যুক্ত হয়ে গেছে।আজ ওটারই অরিয়েন্টেশন তাইতো সবাই বেশ সেজে গুজে এসেছে।রুলস অনুযায়ী আর সবার মতই ছোঁয়া আর লোপাও শাড়ী পরেই এসেছে কিন্তু এজ ইউজুয়াল সাজ গোজের ধারেকাছেও যায়নি মেয়েটা।লোপা অনেক চেষ্টা করেছে ওকে সাজানোর,কিন্তু হাজার চেষ্টা করেও কোন লাভ হয়নি ছোঁয়া ছোঁয়ার মতই রেডি হয়েছে…
ওরা যখন অডিটোরিয়ামের এনট্রেন্সে পৌঁছল,তখন প্রোগ্রাম প্রায় শুরু হওয়ার পথে।হলে ঢোকার মুখেই থমকে দাঁড়ালো ছোঁয়া,এত্ত সুন্দর ডেকোরেশন!এটা ওদেরই মত স্টুডেন্টরা মিলে করেছে ভাবা যায়?হলে ঢুকতেই মারুফের সাথে দেখা,ও ওদেরকে সামনের দিকে একটা জায়গায় বসিয়ে দিয়েই ভেতরে চলে গেল।ছোঁয়া হঠাৎই খেয়াল করল সেদিন যারা ওর র্যাগিং করছিল তাদের ইনেকেই এখানে উপস্থিত আছে আর তদের মধ্যে বেশিরভাগই ওর দিকে কেমন যেন আড় চোখে তাকাচ্ছে আর একটু পর পর মুচকি মুচকি হাসছে!ব্যাপারটা ওর কাছে খুব অদ্ভূত লাগছে কিন্তু একটু পরেই সভাপতির আসনে যেই ব্যক্তি মঞ্চে গিয়ে বসল তাকে দেখে আশ্চর্যের চরম সীমায় পৌঁছে গেল ছোঁয়া।
ছোঁয়াঃ (অবাক হয়ে)উনি এখানে কি করছেন!!!
চলবে….