আমার ক্রাশ বর

আমার ক্রাশ বর !! Part- 21

অনু বাড়িতে এসে দেখে আজ পুরা বাড়ি কেমন জানি নীরবতা পালন করছে।

রহিমা খালা দরজা খুলে দিয়েছে সেও কিছু বলছে না।শুধু মিট মিট করে হাসছে।

অনু :কি গো খালা এতো হাসির কারণ রহস্য কী?

রহিমা :কিছু না আম্মাজান আপনি রুমে যান,,আমি ঘুমাতে গেলাম।

অনু :আমি আমার রুমে যাবো তা এতো মাইকিং না করে বললেও চলবে।তাই বলে সে হন হন করে নিজের রুমে চলে যায়।

রুমের লাইট জালিয়ে অনু সোজা ফ্রেশ হতে বাথরুমে চলে যায়।
ফ্রেশ হয়ে বিছানার দিকে যাবার সময় দেখে আরিয়ান অনু তো অবাক!

আরিয়ান অনুকে দেখে Hi বউ বলে,,

অনু চমকে ওঠে,, নিজের চোখ দুটো ভালো করে কচলে আবার তাকিয়ে দেখে না এখনো বিছানাতে আছে আরিয়ান।

এবার অনু নিজের হাতে জোরে চিমটি কাটে, উহহ করে ওঠে, এবার বলে,,চিমটি তো জোরে দিয়েছি নিজেকে তাহলে এখনো খচ্চরটা চোখের সামনে থেকে যাচ্ছে না কেনো।

আরিয়ান বলে,,আজব কোয়ালিটির মেয়ে তো তুমি?? দেখতে পাচ্ছো না,,তোমার সামনে তোমার বিছনাতে আমি তোমার একমাত্র বর বসে আছি”?

অনু সালা খচ্চর বর সত্যি আসবে না,,প্রতিদিন জাগা স্বপ্ন হয়ে এসে আমাকে কষ্ট দেওয়া তাই না
আজ দেখাচ্ছি মজা তোমাকে শয়তান বর থামো।

তাই বলে, “অনু আরিয়ানের কাছে গিয়ে ওর হাত নিয়ে তাতে জোড়ে কামড় দিয়ে ধরে রাখে।

আরিয়ান জোরে চিৎকার দিয়ে ওঠে,,ওর চিৎকার দেওয়া দেখে অনু মুখ থেকে হাত সরিয়ে দেয়।

অনু, “ওহ তাহলে সত্যি আপনি আসছেন”?

আরিয়ান নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে রক্ত বাহির করে দিয়েছে রাক্ষুসী মেয়ে।

আরিয়ান হাত ধরে বলে,”রাক্ষুসী মেয়ে আমি আসছি বলে এভাবে কামড় দিয়ে দেখতে হবে “?

অনু বলে,”কি করবো বলেন,প্রতিদিন তো এমন কতো বার আপনাকে দেখি তাই,
একটু কনফার্ম হতে কামড় দিয়েছে আর দেখেন আপনার কপালটা কী খারাপ আজ কে আপনাকে আসতে হলো”।

তারপর অনু আরিয়ান কে জড়িয়ে ধরে বলে,”জানেন আমি আপনাকে কতো মিস করেছি,,আপনি একবার ও আমাকে নিতে আসলেন না,,,আবার কথাও বলেন না,,,
আমি একা আসছি বলে কি একাই যেতে হবে।আপনি এতো খারাপ কেনো?? আমার ভালোবাসা বোঝেন না কেনো”??

আরিয়ান বলে,”তুমি আমাকে ভালোবাসো এটা কি আমি ঠিক শুনেছি “?

অনু এবার জিভে কামড় দেয়, তারপর মনে মনে বলে,”মুখ ফসকে না হয় মনের কথা মুখে বলে দিয়েছি তাতে কি হয়েছে,,আমাকে এতোদিন দূরে রাখার মজা আজ হারে হারে বোঝাবো শয়তান বর কোথাকার”!!

অনু আরিয়ানের কথার কোনো উওর না দিয়ে ওর ঠোটে একটা চুমা দিয়ে সোজা গলা চেপে ধরে বলে,”এতোদিন পর আমাদের বাড়িতে কি মনে করে আসছেন শুনি? আসছেন ভালো কথা আমার রুমে আসছেন কোন সাহসে ইগো শুধু আপনার আছে আমার নাই না কী??শালা খচ্চর,, রামছাগল,,বজ্জাত বস,,ঘোড়ার ডিম,,,উগান্ডার বান্দর,,,, কচ্ছপের দাদা।মন তো চাই রামধোলাই দিতে খালি বর দেখে বেশী কিছু বলছি না।

আরিয়ান বেচারা এসবের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না,,একবার জড়িয়ে ধরে কান্না, তারপর ঠোঁটে চুমা,,এখন গলা টিপে মারতে চাইছে।

আরিয়ান অনুর দু হাত ধরে বহু কষ্টে নিজেকে ছাড়িয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে কাশতে শুরু করে
আরিয়ানকে কাশতে দেখে অনু পাশে থেকে পানির বোতল হাতে ধরিয়ে দেয়।

আরিয়ান বোতলে পানি খেয়ে অনুর দিকে তাকায়।

অনু আরিয়ানকে দেখে চমকে ওঠে,আল্লাহ ওর চোখ মুখ পুরা লাল হয়ে গেছে,,
চোখদুটো দিয়ে মনে হয় রক্ত বাহির হবে।
গলায় দাগ হয়েগেছে কি করবে ভেবে পায় না।

আরিয়ান এবার নিজের হাত ধরে বসে আছে,,
এমন জোড়ে কামড় দিয়েছে যে রক্ত প্রচুর বাহির হচ্ছে।

অনু আরিয়ানের হাতে রক্ত দেখে তাড়াতাড়ি মেডিসিনের বক্স এনে হাতে ব্যান্ডেজ করে দেয়।

আরিয়ান বসে ভাবে,”যাকে আমরা ভালোবাসি তার একটু কষ্ট সহ্য করতে পারি না,তার জন্য নিজের ইগো ছেড়ে দিতে রাজী “।

আরিয়ানের হাতে ব্যাথা করছে আবার অনুর চেহারা দেখে মায়া কাজ করছে কি করবে কি বলবে বুঝতেছে না।

অনু এবার নিজের কান ধরে কান্না করে বলে, “সরি আমি বুঝতে পারি নাই এমন কিছু হবে”।

আরিয়ান বলে,,”অন্যায় যখন করছো শাস্তি তো পেতেই হবে”।

অনু শাস্তি পাবার কথা শুনে আবার রেগে যায়,
বলে ফাজিল পোলা আমার রুমে এসে আমাকে শাস্তি দিতে চায় শখ কতো,,মগেরমুল্লুক তাই না,,

আরিয়ান বলে,”তুমি ভুল করছো আমি আমার বউয়ের ঘরে আছি,, কোনো মগেরমুল্লুকে না “।

অনু খাট থেকে নেমে আরিয়ানের হাত ধরে বারান্দায় এনে বলে,,আমার বাবার বাড়ি,
আমার ঘর আপনার কোনো শাসন চলবে না,
আমাদের বাড়িতে আসছেন ভালো কথা এখন সারা রাত বারান্দাতে থাকাবেন বলে যেতে লাগে,

তখন আরিয়ান অনুর হাত ধরে বলে,”তোমাকে এতো দিন ইগনোর করার জন্য সারারাত বারান্দাতে থাকতে রাজী কিন্তু কাল সকালে তোমাকে আমার সাথে আমাদের বাড়িতে যেতে হবে।

অনু বলে,”যদি না যাই আপনার সাথে তাহলে কি করবেন “?

আরিয়ান :আমি যে কি করতে পারি আর না পারি তুমি ভালো করে জানো তারপর ও এতোদিনের এসবের জন্য সরি।আমাকে মাফ করে দাও প্লিজ এবং আমার সাথে ফিরে চলো।আমাদের সম্পর্ক টাকে আমরা নতুন করে শুরু করি।

অনু আরিয়ানের হাত ছাড়িয়ে বলে,”আমার ভাবার জন্য সময় লাগবে “!

আরিয়ান বলে,”সারারাত আছে তোমার সকালে তোমার সিদ্ধান্তে অপেক্ষায় থাকবো আমি”।

অনু আর কিছু না বলে সোজা বারান্দার দরজা লাগিয়ে দিয়ে বিছানায় বসে ভাবতে থাকে,।
আমি তো তাকে ভালো বাসি তাহলে তো আমাদের সম্পর্ককে নতুন ভাবে শুরু করার জন্য একটা সুযোগ দিতেই পারি।।
নিজের ভালোবাসা কে এভাবে ঠকাতে পারবো না
তাছাড়া বিয়ের পর সম্পর্কের ভালোবাসা মায়া তৈরি হবে এটা আল্লাহ প্রদত্ত তা আমি কি ভাবে অস্বীকার করবো।



পরেরদিন সকাল বেলা অনু একটা নীল শাড়ী পরে হাতে কাচের চুড়ি পরে রেড়ি হয়ে বারান্দার দরজা খুলে দেয়।

আরিয়ান অনুকে এমন সাজে দেখে একদম হা হয়ে যায়।

অনু বলে,”এভাবে তাকিয়ে না থেকে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিজে আসেন ঐ বাড়িতে যেতে হবে বলে অনু চলে যেতে লাগে তখন আরিয়ান অনুর হাত ধরে এক টান দিয়ে নিজের শরীরের সাথে মিশিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে,”রাতের কিছু ভুলি নাই আমিও শোধ নিতে জানি জানে “!

অনু :আমি তো কামড় দিয়েছি তাই বলে, “আপনিও আমাকে কামড় দিবেন এটা ঠিক না”।

আরিয়ান কিছু না বলে,”আস্তে আস্তে ওর মুখটা অনুর মুখের কাছে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

আরিয়ানের এমন কান্ড দেখে অনু তার চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে রাখে।

আরিয়ানের নিশ্বাসপ্রশ্বাস অনুর মুখের উপর পরছে,,তাতে অনুর পুরা শরীর কেপে উঠছিল।

আরিয়ান তার ভালবাসার প্রথম পরশ অনুর কপালে একেঁ দেয়।তারপর অনুর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,নেক্সট টাইম এমন রুপে সামনে এসো না বউ তাহলে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে পারি তোমার মাঝে বলে অনুকে ছেড়ে দিয়ে সোজা বাথরুমে চলে যায়।

অনু অবাক হয়ে ভাবছে কি বলে গেলো উনি এসব কিছু তো বুঝলাম না।

তারপর অনু নিচে গিয়ে নাস্তার টেবিলে বসে অারিয়ানের জন্য অপেক্ষা করছে।

আরিয়ান একটু পরে একদম রেডি হয়ে নিচে চলে আসে ,,

তা দেখে অনুর বাবা বলে,,”কি জামাই অনু আর তুমি একদম রেডি যে বেপার কি “?

আরিয়ান বলে,”আসলে বাবা আমরা এখুনি নাস্তা করে বাড়িতে চলে যাবো “।

আরিয়ানের মুখে বাবা ডাক শুনে অনু বিষম খায়।
আরিয়ান তাড়াতাড়ি অনুকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দেয়।

অনুর মা এসে বলে,”সে কি কথা বাবা আজ তোমরা চলে যাবে তা কি করে হয় বলো তো “?

আরিয়ান বলে,”মা চিন্তা করবেন না।আবার সময় পেলে আমি আর অনু চলে আসবো “।

তারপর নাস্তা করতে গিয়ে আরিয়ানের হাতে ব্যান্ডেজ দেখে বাবা বলে,,”বাবাজি তোমার হাতে ব্যান্ডেজ হাত কাটছে কি করে “?

আরিয়ান অনুর দিকে তাকিয়ে বলে,”রাতে পানি খেতে গিয়ে গ্লাস ভেঙ্গে কেটে গেছে “।

অনু মনে মনে বলে, ” আল্লাহ বাঁচালো “।

রহিমা এসে বলে,,”আমি তো অনু মার ঘরে কোনো কাচের গ্লাস ভাঙ্গা পাইনি”?

অনু এবার রেগে বলে,”আমার ঘরের জিনিশ তুমি কেমন করে পাবে “?

রহিমা বলে,”এতো বছর তো আমি সব কিছু দেখি জানি তাই “।

বাকিদের বুঝতে সময় লাগেনা যে এ অকাজ টা অনু করেছে।

তারপর সবার থেকে অনু আরিয়ান বিদায় নিয়ে চলে আসে।


এবাড়ি অনুকে দেখে তো সবাই খুব খুশি শুধু ফুপুআম্মা ছাড়া।

অনু কি ফুপুর কেয়ার করে যে মন খারাপ করবে।

এবাড়ি এসে অনুকে সবাই খুব যত্ন করছে,,বেচারির কি বেহাল অবস্থা।

অনুর শাশুড়ি বল,”মেয়েটা যার চিন্তায় এ অবস্থা করছে সে তো ঠিকঠাক আছে “।

এভাবে অনুর কয়েকদিন বেশ মান অভিমান করে কেটে যায়।এক কয়েকদিন অনুকে অফিসে যেতে হয় না।

একদিন অনু ভাবে আজ আমি আমার মনের কথা আরিয়ান কে বলবো।

যেই ভাবা সেই কাজ,,,বিকালবেলা সে সুন্দর করে রেডি হয়ে বসে আছে।

হঠাত মৌ এসে বলে,”আরে ভাবী ভাইয়ের আসা দেরী আছে,তুমি আমার সাথে আসো তোমার বিয়ের সব ছবি দেখবো “।

অনুও খুশি মনে মৌয়ের সাথে ছবি দেখতে তার রুমে চলে যায়।

রুমে গিয়ে দেখে একগাদা ছবির এলবাম রাখা।

নিজেদের বিয়ের ছবি দেখা শেষে পুরাতন ছবির এলবাম দেখতে শুরু করে।

হঠাৎ একটা ছবিতে গিয়ে অনু থমকে যায়।
অনু সে ছবি দেখে বাকরোধ হয়ে যায়।

এখন আমি কি করবো যাকে ভুলে সামনে যেতে চাচ্ছি সে আবার সামনে হাজির কি করবো আমি মনে মনে।

মৌ অনুকে ধাক্কা দিয়ে বলে,”আরে ভাবী তুমি এ ছবি দেখে এমন চুপচাপ হয়ে গেছো কেনো “?

অনু এ ছবি গুলা কার?

মৌ বল,রাজ, আয়াত, আরিয়ান ভাইয়া। দেখো তিনজন কে কতো সুন্দর লাগছে তাই না।

অনু এবার রাগে দুঃখে কান্না করতে করতে নিজের ঘরে চলে যায়।

অনু :শেষ পর্যন্ত আমি কি না রাজ মনে করে যাকে ভালো বাসলাম সে কি না আমার বর টা না আয়াত…..

(রাজের কাহিনী যারা জানতে চান তাদের জন্য রাজ এবার সামনে আসবে।আর কাল রাতে নেক্সট পার্ট পাবেন। )



চলবে….

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *