আমার ক্রাশ বর

আমার ক্রাশ বর !! Part- 22

অনু নিজেকে নিজে বোঝাতে থাকে, “দেখ অনু এসব দশ বছর আগের পাগলামি বাদ দিয়ে আরিয়ান কে নিয়ে সুখে থাক
তুই তো আরিয়ান কে দেখেও ক্রাশ খেয়েছিস।এখন আরিয়ান তোর ক্রাশ বর,,
ঐ সব রাজ আয়াত এদের কথা বাদ দে।

শেষ পর্যন্ত অনু নিজেকে অনেক বুঝিয়ে চুপচাপ ভাবতে থাকে আমার গোবরগণেশ বর টাকে মনের কথা কি ভাবে বলবো।।
সে কি আমাকে গ্রহণ করবে?



রাতে আরিয়ান বাড়িতে আসে,,নিজের রুমে এসে দেখে অনু সুন্দর করে সেজেগুজে বসে কিছু ভাবছে।

আরিয়ান বলে,”কি বেপার তোমাকে কি আজ ছেলে পক্ষ দেখতে আসবে না কি? যে এতো সুন্দর করে সেজে গুঁজে বসে অাছো “?

অনু :আচ্ছা ছেলে পক্ষ দেখতে আসলে বুঝি মেয়েরা সাজে,?আপনি বোধহয় ভুলে গেছেন আমি বিবাহিত!!

আরিয়ান :তোমাকে দেখে কেউ বলবে না,,তুমি বিবাহিত। তোমার আবার বিয়ে দেওয়া যাবে।

অনু :ভালো কথা,,ছেলে খুঁজুন, যে আমার বউয়ের বিয়ে দিবো,, সুপাত্র চাই।

আরিয়ান বল,”কথাটা কিন্তু খারাপ বলো নাই,,
তুমি যখন রাজী তখন আমি ছেলে খুঁজতে পারি”।

অনু ছুটে গিয়ে আরিয়ানের বুকের উপর কিল ঘুষি দিতে থাকে আর বলে,”ফাজিল ছেলে,,ফাইজলামি না কি আমাকে অন্য কারো সাথে বিয়ে দিবে,,,না আমি করবো বিয়ে না আপনাকে কোনোদিন অন্যকাউকে বিয়ে করতে দিবো “।

আরিয়ান অনুর দু হাত ধরে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলে,,পাগলি বউ আমার ,, একটু ফাইজলামি করেছি তাতে এতো রিয়াক্ট,,বাবাহ ভাবা যায়।

অনু আরিয়ান কে জড়িয়ে ধরে বলে, “আর যাই করেন আমাকে অন্য কারো কাছে দিতে চাইবেন নাহ”।

আরিয়ান অনুর মুখটা একটু উঁচু করে দেখে অনু কান্না করছে।

আরিয়ান বলে,”আরে বোকা মেয়ে তোমাকে কান্না করলে একদম মানায় না সো একদম কান্না করবা না”।

অনু মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলে, তারপর আবার আরিয়ান কে জড়িয়ে।

এমন সময় ওদের দরজাতে নক পড়ে।

আরিয়ান অনুকে ছাড়িয়ে দেখে দরজার বাহিরে আয়াত।

আয়াত বলে,,”ভাইয়া নিচে হল রুমে আসো,,সবাই সেখানে আছে,বলে চলে যায়”।

আরিয়ান আর অনু একসাথে সেখানে যায়।
আজ কেনো জানি অনুর মনের মাঝে অজানা এক ভয় কাজ করছে।

তার জন্য অনু আরিয়ানের হাত শক্ত করে ধরে থাকে।

আরিয়ান ও চোখের ইশারা তে বুঝিয়ে বলে আমি আছি তোমার সাথে চিন্তা করো না।

এতোদিন পর অনু আজ প্রথম এভাবে আরিয়ানের হাত ধরে আছে,,
ওর মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ দুটি হাত তার হাতের মাঝে।



এরপর ওর ফুপু যা বলে তা শোনার জন্য বাড়ির কেউ মোটেই প্রস্তুত ছিলো না।

ফুপু :আমার ছেলে রওনা দিয়েছে কাল সকালে এবাড়িতে পৌঁছে যাবে সে।

একথা শোনার সাথে সাথে আরিয়ান অনুর হাত ছেড়ে দেয়।

অনু হঠাৎ এভাবে হাত ছেড়ে দেওয়া দেখে অবাক।

রাজের আসার কথা শুনে আরিয়ানের মনে হচ্ছে কেউ তার কাটা ঘায়ে নূনের ছিটে দিচ্ছে।

বাড়ির সবাই অবাক,,

আরিয়ানের বাবা বলে, “রাজ হঠাৎ এভাবে দেশে কেনো আসছে”?

ফুপু :তোমার ছেলে যদি আসতে পারে তাহলে আমার ছেলে কেনো আসতে পারবে না?

আরিয়ানের মা :রাজ আসলে এবাড়িতে কতো দিন থাকবে?

ফুপু :আমার ছেলের যতোদিন ইচ্ছা সে এ বাড়িতে থাকবে।

তারপর আর কেউ কোনো কথা না বলে চলে যায়।
শুধু আরিয়ান মূর্তির মতো দাড়িয়ে থাকে।

অনু আরিয়ান কে বলে,”কি হলো সবাই তো চলে গেছে আপনি ঘরে যাবেননা “?

আরিয়ান অনুর দিকে ফিরে অনুকে জড়িয়ে ধরে বলে,”প্লিজ আর যাই হয়ে যাক না কেনো তুমি আমাকে ছেড়ে যাবে না,, সবাই আমার বিপক্ষে যায় কেউ আমাকে ভালবাসে না,,তোমাকে ভালবাসতে হবে না,শুধু আমার সাথে থেকো”।

আরিয়ান আজ নিজের সব শক্তি ভালবাসা ভয় সব কিছু দিয়ে অনুকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাচ্ছে।অনু বুঝতেছে না,,,এমন কেনো করছে উনি।

একটু পর আরিয়ান অনুকে ছেড়ে দিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে যায়।

তখন মৌ এসে বলে,”ভাবী তোমাকে একটা কথা বলি,যদি পারো একটু সাবধানে থেকো,আর আরিয়ান ভাইয়াকে ভালো বাসা দিও “!

অনু :এসব কথার মানে কি মৌ?

মৌ :ভাবী সব কথার মানে হয় না,,
অতীত বড় খারাপ জিনিশ,যখন সামনে আসে তখন অতীতের ঝড়ে অনেক কিছু উল্টা পাল্টা হয়ে যায়।

অনু :হেয়ালি বন্ধ করে বলবা কি বলতে চায়ছো তুমি?

মৌ :একটা নাম যখন অভিশাপ হয়ে যায়।
তখন যে কি কষ্ট তুমি জানবে না।
বাকীটা সময়ের সাথে সব জানতে পারবে।


অনু রুমে গিয়ে দেখে আরিয়ান রুমে নেই,,বারান্দাতে গিয়ে দেখে অন্ধকারে একা দাড়িয়ে আছে।

অনু :অনেক রাত হয়েছে,,,রুমে আসেন ঘুমাবেন।

আরিয়ান বলে,”নাহ আজ আর ঘুম আসবে না,তুমি যাও ঘুমিয়ে পড়ো।

অনু জোর করে আরিয়ানের হাত ধরে রুমে আনে অনু বিছানাতে বসে আরিয়ানের মাথা নিজের কোলের উপর নিয়ে হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।

আরিয়ান এমন ভালোবাসার পরশ পেয়ে ঘুমিয়ে যায়।অনু বুঝতে পারে না।
অনু বলে,”জানিনা আপনার কি অতীত,, জানতেও চাই না,,
শুধু এতোটুকু জানি আমি আপনাকে কখন কোথায় কিভাবে জানি না ভালোবাসে ফেলেছি”।

আরিয়ানের কোনো উওর না পেয়ে সে
একটু ধাক্কা দিয়ে দেখে আরিয়ান গভীর ঘুমে।
অনু আরিয়ানের মাথার নিচে বালিশ দিয়ে ওর কপালে একটা চুমা দিয়ে।
রুমের লাইট বন্ধ করে দিয়ে এসে আরিয়ানের বুকের উপর মাথা রেখে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে যায়।

সকালে আরিয়ান অনুর আগে ঘুম থেকে উঠে দেখে অনু তাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে।

আরিয়ান মনে মনে বলে,”আল্লাহ ভাবা যায় এই মেয়ে নিজে থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে।থাক ঘুমিয়ে আমি বরং ওর ঘুমন্ত মুখটা দেখি “।

অনু একটু পর ঘুম ভেঙ্গে দেখে আরিয়ান তার দিকে তাকিয়ে আছে।

অনু বল,”কি বেপার আগে কখনো কোনো মেয়ে দেখেন নাই যে এভাবে তাকিয়ে আছেন “?

আরিয়ান :হুম মেয়ে দেখেছি কিন্তু নিজের বউকে কখনো চুরি করে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে দেখি নাই।

অনু আরিয়ান কে ছেড়ে দিয়ে বলে,”দেখেননি তো ভালো কথা এখন থেকে প্রতিদিন দেখবেন “।

আরিয়ান অনুকে বলে,,””যাও অনেক কথা হয়েছে এবার তাড়াতাড়ি রেডি হবে,,আজ থেকে রেগুলার অফিসে যাবে অনেকদিন কাজে ফাঁকি দিয়েছেন ম্যাডাম””।

অন,, এই আমি ফাঁকি দেই নি,নিজের বরের অফিসে একটু তো এডভান্টেজ নিতেই পারি।

আরিয়ান অনুর নাক ধরে বলে,”ওরে দুষ্টু বউ আমার “।

অনু বলে, “ওরে আমার নিমপাতা বর রে “।

আরিয়ান :আমি কি এতোটা তিতা?

অনু বল,”খেয়ে তো দেখি নাই মিষ্টি কি তিতা আপনি “।

আরিয়ান একটা দুষ্টু হাসি নিয়ে বলে,”আসো তিতা কি মিষ্টি এখুনি প্রমাণ করে দিচ্ছি বলে অনুর দিকে এগুতে থাকে “!!

অনু আরিয়ান কে ধাক্কা দিয়ে তাড়াতাড়ি বাথরুমে চলে যায়।

আরিয়ান বলে,”কি হলো,,এতোটুকু সাহস নিয়ে আমার সাথে সংসার করতে আসছো বউ “?

অনু বাথরুমের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বলে,”সময় হলে আমার কতোটা সাহস তা আপনাকে প্রমাণ দিয়ে দিবো স্যার “।।

তারপর অনু রেডি হয়ে নিচে যায়।আরিয়ানের জন্য নাস্তা রেডি করবে তাই।

অনু নিচে গিয়ে আরিয়ানের নাস্তা রেডি করবে তাই রান্না ঘরে যায়।

শাশুড়ি মা নাস্তা রেডি করে দিতে চাইলেও সে তাকে বলে আপনি টেবিলে যান আমি এখুনি নাস্তা নিয়ে আসছি।

অনুর শাশুড়ি মা চলে যায়।

আরিয়ান নাস্তার টেবিলে বসে আছে। আরিয়ান তার মায়ের কাছে নাস্তা চাইলে সে বলে আজ অনু নাস্তা রেডি করছে।

আরিয়ান বলে,,”ওহ আজ বউয়ের হাতের খাবার খেয়ে দিন শুরু করবো “।

এমন সময় কেউ একজন এসে অনুকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে…..

(আজ গল্প সম্পর্কে আমি কিছু বলবো না।
গল্প সম্পর্কে আজ আপনারা বলবেন 😊 )



চলবে…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *