আমার ক্রাশ বর সিজন- 2 !! Part- 53
সময়ের সাথে বেদনাময় কালো আরেকটা দিনের সূচনা হয় আবিরের জ্ঞান ফিরে আসে।
আবিরের হাত পায়ে ব্যান্ডজ করা এগুলোতে সমস্যা হয়েছে কিছুদিন রেস্ট করলে ঠিক হয়ে যাবে আশা করা যায়।
কিন্তু আবির জ্ঞান ফিরে পাবার পর থেকে সে বার বার সবার কাছে রিমার খবর জানতে চাইছে।
নিজের গর্ভবতী বউয়ের খবর জানতে চাওয়াটা তো স্বাভাবিক একটা বেপার।
বাড়ির কেউ মুখ ফুটে কিছু বলার সাহস করে উঠতে পারছে না।ছেলের এমন অবস্থা তার মাঝে কি কোনো মা, বাবা তার ছেলেকে সহধর্মিনী হারানো শোকের খবর দিতে পারে?
অনুর মা এক কোণায় দাঁড়িয়ে শাড়ির আঁচলে মুখ লুকিয়ে নিরবে চোখের পানি ফেলতে থাকে।
অনু রিমি রিদি চুপচাপ পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে।ওদের কাছে যে আজ আবিরের করা কোনো প্রশ্নের উওর নেই।
আবির বার বার প্রশ্ন করতে থাকে এই অনু রিমা কেমন আছে রে?রিমার কিছু হয়নি তো?
ওর যদি কিছু হয় তাহলে তো বেবির ক্ষতি হবে।
অনু তার বান্ধবীর মতো বোন +ভাবী কে হারিয়ে সে কষ্টের স্মৃতি ভুলতে পারছে না তার মাঝে নিজের ভাই কে তো অার মিথ্যা শান্তনা দিতে পারে না।
কিন্তু বাড়ির সবাই কোন মুখে এ কথা আবির কে জানবে?কারো বুকে এতো সাহস নেই যে আবির কে রিমার মৃত্যুর খবর বলবে।
সবাই যখন সংকোচিত হয়ে ভাবছিল কি ভাবে বলা যায় তখন সকলের কষ্ট কম করে দেয় মিষ্টি এসে।
তার বাবার জ্ঞান ফিরে আসার কথা শুনে মৌ ‘য়ের সাথে ছুটে চলে আসে হাসপাতালে বাবাকে দেখতে।
মিষ্টি দৌড়ে গিয়ে তার বাবার গলা জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে।
আবির তার অপর হাত দিয়ে মেয়েকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে রাখে।
এরপর আবিরের সামনে মিষ্টি বসে কান্না করতে থাকে।
আবির বলে,”আরে আমার মেয়েটা এমন বোকাদের মতো কান্না করছে কেনো?
মিষ্টি বলে,”জানো বাবা আজ কতোদিন আম্মু কে জড়িয়ে ধরে ঘুমাইতে পারি না?
আম্মু আমাকে খাওয়াই দেয় না।
একটু আদর করে না।
গোসল করাই খাবার খাওয়াই ঘুমপাড়ানি কবিতা বলে ঘুম পাড়িয়ে দেয় না।
জানো বাবা আমার আম্মুর জন্য খুব কষ্ট হয় তাই বলে নিজের বুকের ঠিক বাম পাশে হাত দিয়ে কথাটা বলে।”
আবির মিষ্টি কে জড়িয়ে ধরে বলে,”মিষ্টি মামুনি আম্মুর উপর রাগ করেনা সোনা মেয়ে আমার।তোমার আম্মুর শরীর হয়তো ভালো না এই জন্য তোমার খেয়াল রাখতে পারছে না।
আমাদের বাড়িতে যখন নতুন বেবি আসবে।তখন থেকে ঠিক আগের মতো খেয়াল রাখবে তোমার তুমি মিলিয়ে নিও আমার কথা।”
মিষ্টি বলে,”আমি আম্মুর উপর রাগ করবো কেনো? আর আম্মু তো অসুস্থ না।জানো বাবা আমাদের বাড়িতে আর নতুন বেবি আসবে না সে আর আম্মু আমার উপরে রাগ করেছে আমি যে সেদিন রাতে আম্মুর সাথে ছিলাম না তাই। ”
আবির বলে,”না সোনা মেয়ে আম্মুর উপর অভিমান করতে নেই।সে তোমাকে বাড়ির সবার থেকে বেশি ভালো বাসে।তাই তোমার উপর তার রাগ করার প্রশ্নই আসে না।”
মিষ্টি বলে,”জানো বাবা, আম্মু আমার উপর অভিমান করে তার নিজের বাড়িতে চলে গেছে।
সে আর কোনোদিন ও আমার কাছে আসবে না।
অনেক মানুষ এনেছিলো সেদিন আমাদের বাড়িতে।সবাই মিলে আম্মুকে সাদা কাপড়ে মুড়িয়ে কাঁধে করে তার নিজের বাড়িতে রেখে আসছে।জানো আম্মুর সাথে সাথে নতুন বেবি ও চলে গেছে।সবাই আম্মুকে রেখে একা ফিরে আসছিলো।”
আবির মিষ্টির মুখে এমন কথা শুনে অনুর দিকে তাকিয়ে থাকে? প্রশ্ন করে মিষ্টি এসব কি বলছে?ওর তো এমন কোনো কিছু জানার কথা না।এসব তো মানুষ মারা গেলে তার সাথে হয়।
অনু আবির কে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করতে শুরু করে দেয়।
রিমি বলে,”আবির আমার বোনটা আর এই পৃথিবীতে নেই গো।সে আমাদের সবাইকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে।আর কোনোদিন তাকে আমাদের মাঝে পাবো না।”
আবির কোনো ভাবে এই কথা মেনে নিতে রাজি না। যে রিমা মারা গেছে।তাকে এভাবে কোনোদিনও রিমা ছেড়ে যেতে পারে না।
আবির বলে, “তোমরা আমার সাথে মজা করছো তাই না? আরে দেখো জীবিত মানুষ কে নিয়ে এভাবে মজা করতে নেই।রিমার গর্ভবতী ওর নামে এমন মিথ্যা কথা বললে তার প্রভাব বাচ্চার উপর পরবে।”
আবিরের মা বলে,”আবির কেউ মিথ্যা কথা বলছে না।এটাই সত্যি রিমা আর আমাদের মাঝে নেই।”
আবির চিৎকার দিয়ে মিষ্টিকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে।
আবিরের কান্না করা দেখে বাড়ির বাকী সদস্য রা কেউ নিজেদের সামলে রাখতে পারে না।
সবাই আবিরের সাথে কান্না করতে শুরু করে দেয়।
একটু পর ডাক্তার এসে সবাইকে বলে,”রোগীর অবস্থা তো বেশি ভালো না। আপনারা সবাই যদি এভাবে ভেঙ্গে পড়েন তাহলে রোগী র কি হবে? আপনার সবাই মিলে তাকে মেন্টাল সার্পোট দিয়ে সুস্থ রাখবেন না কি আরো অসুস্থ করে দিতে চাইছেন?”
ডাক্তারের কথা শোনার পর সবাই মিলে আবির কে নানা ভাবে শাত্বনা দিতে থাকে।
আবির যখন কোনো কিছুই বুঝতে রাজি হচ্ছিলো না তখন ডাক্তার আবির কে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুমপাড়িয়ে রাখে।
এভাবে বেশ কিছুদিন কেটে যায়,,,,,
আবির কে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।আবির মোটামুটি একটু সুস্থ এখন।
আবির বাড়িতে এসে সারাদিন নিজের রুমের মাঝে চুপচাপ মনমরা হয়ে বসে থাকে।
না নিজের খেয়াল রাখে না মিষ্টির কোনো খবর রাখে সে।একদম উদাসী হয়ে গেছে নিজের প্রতি।আবির রিমাকে হারিয়ে নিজেকে ঠিকভাবে গুছিয়ে নিতে পারছিল না।
অনু এভাবে চোখের সামনে নিজের ভাই আর মিষ্টির কষ্ট পাওয়া সহ্য করতে পারছে না।
বাবা সাথে আছে কিন্তু আগের মতো নেই।
আর কোনোদিন চাইলেও মায়ের আদর পাবে না।
এইসব টেনশন আর অনু নিতে পারছে না।
তার মধ্যে বাড়ির মানুষেরা তাদের সাথে যে কাজ করেছ তা বোধগম্য না কারো কাছে।
অনু নিচে ড্রয়িংরুমে বসে ভাবতে থাকে,”সেদিন আমি আরিয়ানের সাথে খারাপ ব্যবহার করার পর তো আর যোগাযোগ করি না।
বেপার টা কিন্তু সত্যি খারাপ দেখায়।
কিন্তু রাগ আমি আরিয়ানের উপর করেছি?
না নিজের উপর তাই তো বুঝতে পারছি না।
আমার ভাই আর আরিয়ানের বোন দুজন মিলে তো আমাদের জীবনে অন্ধকারের কালোরঙ লেপে দিয়েছে! সেই অন্ধকার যদি মিটিয়ে নিতে না পারি। তাহলে এই অন্ধকারের কালো রং আমাদের জীবনে সুখের সকাল আর আসতে দিবে না কোনোদিন ও।
তবে আরিয়ানের সাথে সবটা ঠিক করার আগে আমার ভাইয়ের জীবনে যে অন্ধকার নেমে এসেছে সেই অন্ধকার মিটিয়ে আলোর ব্যবস্থা তো করতেই হবে আমাকে।”
এইসব সাত পাঁচ ভেবে অনু সিঁড়ি দিয়ে উপরে যাবে ঠিক তখনি সিঁড়ি সামনে মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যায়।
অনুর মা অনুকে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে অনুইইই বলে চিৎকার করে ওঠে।
আবির মা’য়ের চিৎকার শুনে নিচে এসে দেখে অনু অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছ মেঝেতে কপালের পাশে একটু কেটে রক্ত ঝড়ে পড়ছে।
আবির তাড়াতাড়ি করে অনুকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
সেখানে ডাক্তার অনুর চেকআপ করার পর বলে,”আপনার বোন অতিরিক্ত টেনশন করে যার জন্য তার শরীর খুব দুর্বল। আর এই সময় এতো টেনশন করলে বাচ্চা এবং মা দুজনের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।আপনার বোনকে সব সময় হাসি খুশি ভালো পরিবেশে রাখবে।তাহলে বাচ্চা আর মা দু জনে ভালো থাকবে।আমি মাথায় ব্যান্ডেজ করে কিছু মেডিসিন লিখে দিচ্ছি তা রেগুলার খাওয়াবে। আর এখন থেকে রোগীর প্রতি বাড়ির সবাইকে যত্নশীল হতে বলবেন।এরপরে থেকে রোগীকে সাবধানে চলাফেরা করতে হবে।এখন আর সে একা নেই তার মাঝে আরেকটা প্রাণ বড় হচ্ছে।”
অনুর মা হবার কথা শুনে আবির খুশি হবে না কি কষ্ট পাবে রিমার জন্য কিছুই সে বুঝতে পারে না।
অনুর জ্ঞান ফিরে ডাক্তারের মুখে এমন কথা শুনে নিজের পেটে হাত দিয়ে শুয়ে থাকে।
এমন সময় অনুর দু চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরতে থাকে।
অনুর সামনে আবির দাঁড়িয়ে আছে।
অনুর নিজের ভাইকে দেখে বুঝতে চেষ্টা করছে আসলে আবির মামা হবে তার জন্য খুশি না কি রিমার কথা মনে পড়ে যাওয়ার জন্য দুঃখি সে?
এমন সময় আরিয়ান অনুর খবর পেয়ে সেখানে ছুটে চলে আসে।
আবিরের সাথে কথা না বলে সোজা অনুকে জড়িয়ে ধরে বলে,”তুমি ঠিক আছো তো? তোমার কোনো সমস্যা হয়নি তো? আর আমাদের বেবি সে ভালো আছে তো? ”
অনু আরিয়ানের মুখে বেবির কথা শুনে বলে,”তুমি বেবির কথা জানলে কি করে? আমরা তো মাএ জানতে পেরেছি? ”
আরিয়ান বলে,”আমি অনেকদিন আগে থেকে জানি তুমি গর্ভবতী। রিমা ভাবী যেদিন মারা গেছেন সেদিন তুমি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলে তোমার মনে আছে? “।
অনু বলে,”হ্যাঁ! কিন্তু তাতে কি হয়েছে? ”
অারিয়ান বলে,”সেদিন ডাক্তার তোমার কিছু টেস্ট করাই তাতে জানতে পারি তুমি প্রেগন্যান্ট।”
অনু বলে,”ওহহ,,তুমি এতোদিন ধরে জনতে আমি প্রেগন্যান্ট আর আমাকে এই কথাটা বলার প্রয়োজন মনে করো নাই?”
আরিয়ান বলে,”আসলে সেদিন পরিস্থিতি এমন ছিলো না যে তোমাকে এই খবরটা জানাতে পারি। ”
অনু বলে,”পরিস্থিতি এমন ছিলো না বুঝলাম।
তবে এরপরে কি আমাকে জানানো যেতো না,
না কি জানানোর প্রয়োজন বোধ করো নাই?
আজ যদি আমার সাথে এর থেকে বেশি খারাপ কিছু হয়ে যেতো তাহলে কি সারাজীবন আফসোস করার জন্য আমি বেঁচে থাকতাম?
না কি আপনি এমন কিছু চাইছিলেন হোক আমার সাথে? ”
আরিয়ান বলে,”অনু! আমি তোমাদের দু জনকে ভালোবাসি এমনটা স্বপ্নেও ভাবতে পারি না আমি।”।
অনু বলে,”আমার বাচ্চা হবে।আমার জীবনের এতো বড় খুশির খবর আপনি একা জেনে বসে রইলেন। এটা ঠিক কাজ করেন নাই আপনি।”
এমন সময় আবির অনুর হাত ধরে ওকে আরিয়ানের সামনে থেকে নিয়ে সোজা বাড়িতে চলে আসে।
আরিয়ান সেখানে আবুলের মতো দাঁড়িয়ে থাকে।
নিজেকে বলে,”পরিস্থিতি কি আমার অনুকে আমার কাছে আসতে দিবে না? উফফ বউ আমার বাচ্চা আমার।আমি আছি বনবাসে।
এটা মোটেই ঠিক কাজ না।”
‘
‘
‘
চলবে….