আমার ক্রাশ বর

আমার ক্রাশ বর সিজন- 2 !! Part- 34

পেছনে দাঁড়িয়ে আর কেউ না অাবির রিমা মিষ্টি আর অনু।তবে অনু একা দাঁড়িয়ে নেই দরজার সামনে তার সাথে আরেকজন সদস্য দাঁড়িয়ে আছে।
অনুর সাথের ব্যক্তি কে দেখে রিদি ছুটে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে।
আরিয়ান দূরে দাঁড়িয়ে বুঝতে চেষ্টা করছে অনুর সাথে ঐ ছেলেটা কে যার হাত ধরে অনেক ক্লোজ হয়ে অনু দাঁড়িয়ে আছে।
রাজ আরিয়ান কে ধাক্কা দিয়ে বলে,”কি ব্রাদার তোমার বউ যে অন্যজনের হাতে।”
আরিয়ান একটা রাগি লুক নিয়ে রাজের দিকে তাকিয়ে থাকে।

রাজ বলে,”আমাকে এভাবে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।নিজের বউকে পারলে নিজের করে নিয়ে আয়।”
আরিয়ান অনুদের সামনে গিয়ে রিদিকে বলে,”ভাবী আপনার বোনের সাথে ছেলেটা কে জানতে পারি? ”
রিদি ছেলেটার হাত ধরে বলে,”অয়ন খান আমাদের মামাতো ভাই।”
রিমি এসে বলে,”ভাইয়া এতো বছর পরে তাহলে সবার কথা মনে পড়েছে বুঝি?
আর কয়দিন আগে আসলে কি হতো বলেন তো?আমি না হয় আপনাকে বিয়ে করে নিতাম।”
রিদি বলে,”রিমি আপু এটা কেমন কথা শুনি ভাই তো আমারো তাই না! তাহলে তাকে বিয়ে করার সিরিয়ালে আমি কেনো বাদ যাবো? ”
আয়াত রাজ কে বলে,”কি রে বিয়ের পর এই শালা কই থেকে উদয় হলো?
শান্তি মতো এখনো সংসার করতে পারলাম না তার আগেই বেডা খচ্চর এসে হাজির না জানি এই কপালে বউয়ের সুখ আছে কি না।”
রাজ রিদির হাত ধরে অয়নের কাছে থেকে সরিয়ে নিয়ে এসে বলে,”বিয়ে হয়ে গেছে এখন আর বিয়ে করার শখ করতে হবে না।”
রিদি বলে,”কেনো বিয়ের পরো প্রেম করা যায় তাই না অয়ন ভাইয়া? ”
অয়ন খান বলে,”রিদি আমার মনে হয় আমার সাথে তোমাকে এতো ক্লোজ দেখে তার জ্বলছে।”
রাজ বলে,”মোটেই আমার জ্বলছে না বুঝলেন মিস্টার! ”

অয়ন বলে,”আপনি বললেই তো হবে না আপনার কথার স্টাইল চেহারা সবটা বলে দিচ্ছে। ”
আয়াত বলে,”বাহ আপনি তো দেখছি মানুষের মুখে নিজের কথা ভালো করে বসিয়ে দিতে পারেন।”
রিমি বলে,”আয়াত এই সব কি হচ্ছে অয়ন ভাইয়াকে অযথা অপমান করার কোনো মানে হয় না।”
আয়াত বলে,”আজব তাকে অপমান কোথায় করছি আমি? ”
আরিয়ান এতো কিছুতে কান না দিয়ে এক মনে অনুকে দেখে যাচ্ছে।
তা দেখে অয়ন আরিয়ানের মুখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলে,”এই যে মিস্টার ওর দিকে এভাবে তাকিয়ে থেকে লাভ নেই।
সে আগে থেকে আমার নামে বুকিং করা আছে।”
আরিয়ান বলে,”মানে কি বোঝাতে চাইছেন আপনি?”

অনু স্টাইল করে এসে অয়নের হাত ধরে ওর পাশে দাঁড়িয়ে বলে,”অয়ন ভাই অযথা মানুষের সাথে এতো বেশি কথা বলতে হয় না বাদ দেন এইসব মানুষের কথা।”
আরিয়ান বলে,”অনু তুমি কিন্তু আমাদের বাড়িতে এসে আমাকে অপমান করছো।”
আবির এসে বলে,”থাক অনেক কথা হয়েছে। সব কথার এক কথা অয়নের সাথে অনুর বিয়ে নেক্সট শুক্রবার। ”
রিদি আর রিমি এসে অনুকে জড়িয়ে ধরে তো অভিনন্দনের ঝড় তুলে দেয়।
আরিয়ান আবির কে বলে,”এই সব কিছুর মানে কি? আপনি আমাদের সম্পর্ক জোড়া না দিয়ে ভেঙ্গে দিতে চাইছেন কেনো? ”
আবির বলে,”যে সম্পর্ক কোনোদিন ছিলো না সেই সম্পর্ক ভাঙ্গা গড়ার প্রশ্ন আসে কোথা থেকে তাই তো বুঝি না।”
এদিকে আয়েশা বেগম বলে,”কি পোড়া কপাল বউ গুলো তো দেখছি আমাদের চিন্তা ভাবনার পুরো বিপরীত।”
রাজের মা বলে,”হ্যাঁ ভাবী সব কিছু আমাদের কপাল।না জানি আরিয়ানের বউটা কেমন হবে।”
আয়েশা বেগম বলে,”আরিয়ানের জন্য তো আমি দরকার হলে হাতে হারিকেন নিয়ে বউ খুঁজবো তাও এমন ঝাঁঝ মরিচ বউ আনবো না।”
এদিকে অনুষ্ঠান শেষে সবাই অনুদের বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দেয়।
কারণ রিদি রিমি সবার থাকার ব্যবস্থা আবির নিজেদের বাড়িতে করেছে।
এক গাড়িতে অনু রিদি রিমি অয়ন বসে।
তা দেখে রাজ বলে,”এগুলো আমাদের বউ না কি পারা প্রতিবেশীর বউ ধার করে আনছি তাই বুঝছি না।”
আয়াত বলে,”আমার তো মনে হচ্ছে আমি দেবদাস হয়ে যায় আরিয়ান তোর কি মনে হয়।”
আরিয়ান বলে,”এই অয়নের বাচ্চা কে আমি শিক কাবাব বানিয়ে খেয়ে ফেলবো এমন মনে হচ্ছে।
শালা আমার বিয়ে করা বউকে আবার বিয়ে করতে চাইছে।”
রাজ বলে,”আরে তোর জন্য তো ভালো।তুই আবারো ধুমধাম করে অন্য মেয়েকে বিয়ে করতে পারবি।”
আরিয়ান একটা আফসোস নিয়ে বলে,”না রে বিয়ে জীবনে এক বার হয় বার বার না।
বিয়ে কোনো খেলার বিষয় না।

যে ভালো লাগলো না বদলে নিলাম।”
আয়াত বলে,”বাহ তুই তো দার্শনিক হয়ে গেছিস অনুর শোকে।”
তিন ভাই এক গাড়িতে।
আবির রিমা মিষ্টি আর মৌ আরেক গাড়ি করে মোট তিনটা গাড়ি এসে অনুদের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়ে যায়।
এরপর সবাই বাড়ির ভেতরে গিয়ে নানা রকম আলোচনা করতে থাকে।
এদিকে এক সাইডে বসে তিন ভাই নিজেদের বউয়ের কীর্তি দেখছে আর রাগে ফুলতে থাকে।
আরিয়ান বলে,”এই ছ্যাঁচড়া পোলা তিনটা বিবাহিত মহিলা সাথে নিয়ে কিসের এতো গল্প করে তা তো বুঝি না।”
একটু পর অনু একটা ট্রে তে করে শরবত এনে আয়াত আর রাজ কে খাবার জন্য দেয়।
আরিয়ান কে দেওয়ার সময় বলে,”বিয়াই এই শরবত আপনার জন্য স্পেশাল করে বানানো।”
আরিয়ান বলে,”তোমার হাতে ভালোবেসে বিষের শরবত ও খেতে আমি রাজি আছি গো বউ।”
অনু বলে,”বউ শব্দটা ব্যবহার করবেন না।আমি অন্যকারো হবু বউ।”
আরিয়ান বলে,”ফাইজলামি রাখো অনু আমাদের ডির্ভোস হয়নি যে তুমি আরেকটা বিয়ে করবে।”
অনু বলে,”আপনার সাথে যে আমার বিয়ে হয়েছে তা আগে প্রমাণ করেন তারপর ভেবে দেখবো।”
আরিয়ান বলে,”আচ্ছা সময় হলে আমি প্রমাণ করে দিবো তুমি আমার বউ।”
অনু বলে,”শরবত খেয়ে বলেন কেমন স্বাদ হয়েছে।”
আরিয়ান শরবত মুখে নিয়ে চুপচাপ বসে আছে এমন সময় মৌ এসে বলে,”ভাইয়া আপনার জন্য আমি স্পেশাল করে শরবত টা বানিয়েছি কেমন স্বাদ হয়েছে বলবেন? ”
আরিয়ান তাড়াতাড়ি করে পাশে কুলি করে ফেলেদিয়ে বলে,”তুই স্পেশাল করে আমার জন্য বিষ বানিয়ে এসেছিস ফাজিল মেয়ে।তোকে কে শরবত বানিয়ে আনতে বলেছে? ”

মৌ বলে,”অনু আপু শরবত বানানো দেখে আমার খুব শখ হয়েছিল তাই আমি তোমাদের জন্য বানিয়েছি।”
রাজ বলে,”মানে তিনজনের জন্য তুই বানিয়েছিস তাই তো? আর কাজ করিস না বইন আমার। আমাদের অখাদ্য খেয়ে মরার শখ হয় নি ”
মৌ মন খারাপ করে সেখান থেকে চলে যায়।
একটু পর এসে অনু আবার ওদের শরবত দিয়ে যায়।
ওরা সবাই অনুর দিকে হ্যাঁ করে তাকিয়ে থাকে।
তা দেখে অনু বলে,”এটা আমি বানিয়েছি আপনারা খেতে পারেন।”
অারিয়ান তাড়াতাড়ি খেয়ে বলে,”যাক জীবনে প্রথম বার শ্বশুরবাড়ি এসে নিজের বউয়ের হাতে কোনো কিছু খাওয়ার মজাই আলাদা।”
রাজ বলে,”হ্যাঁ তুই ভালো করে খেয়ে নে।
তোর বউ দুইদিন পর আর তোর থাকবে না।”
আরিয়ান বলে,”আমার থাকবে না বললেই হবে? আমি ঐ অয়নের বউ জীবনে হতে দিবো না আমার বউ কে বলে সোজা অনুদের বাড়ির ছাদে চলে যায়।”
অারিয়ান কে ছাদে যেতে দেখে অনুও তার পিছনে পিছনে এসে বলে “কী বেপার ছ্যাঁকা খেয়ে বাঁকা হয়ে গেছেন না কি যে দেবদাসের মতো মাঝ রাতে ছাদে এসে বসে আছেন? ”

আরিয়ান বলে,”বউ যখন বরের সামনে অন্য পুরুষের হাত ধরে ঘুরাঘুরি করে তখন সে বর জানে তার অন্তরে কেমন জ্বালা পোড়া করে।”
অনু বলে,”সে দিন আমাকে অসম্মান করার সময় তো সবটা ভুলে গিয়েছিলেন।
আজ আমি আপনাকে ভুলে গিয়েছি এটাই আমার দোষ?”
আরিয়ান এগিয়ে এসে অনুকে দেওয়ালের সাথে মিশিয়ে ধরে রেখে বলে,”তোমাকে যদি এ হৃদয়ের মাঝে ঢুকিয়ে দেখাতে পারতাম এখানে কতোটা অনু শোচনা বোধ আর তোমার জন্য ভালবাসা জমা হয়ে আছে তাহলে হয়তো তুমি বুঝতে পারতে।”
অনু নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে আর বলে,”নাহ আমার আর বোঝার ইচ্ছা নেই।আপনাকে ভালোবাসি বলে আপনার সামনে নিজেকে অনেক ছোট করেছি।তবে আর নিজের আত্মসম্মান নষ্ট করতে পারবো না।”
আরিয়ান বলে,”নিজের বরের সামনে যদি কেউ নিজেকে ছোট করাতে অসম্মান মনে করে তাহলে তো বিয়ের সম্পর্ক কোনোদিন সুন্দর ভাবে গড়ে উঠতে পারবে না।”
অনু বলে,”আমি সারাদুনিয়ার কাছে প্রতিবাদী শুধু তোমার কাছে না।
কারণ ভালবাসার মানুষের কাছে কেনো ফর্মালিটি করতে নেই।”
আরিয়ান অনুর কপালে হঠাৎ করে একটা চুমা দিয়ে দেয়।
অনু তাতে একটু বিচলিত হয়ে পড়ে এতোটা কাছে আরিয়ান তার উপর তার ভালোবাসার স্পর্শ্য মনের মাঝে অন্য রকম শিহরন জাগাতে শুরু করে।
কিন্তু সে সময় নিচে থেকে অনুর ডাক পরে যায়। তাই তাড়াতাড়ি করে আরিয়ান কে সরিয়ে অনু নিচে নেমে আসে।
অনু চলে যাবার পর আরিয়ান বলে,”ধুর শালার শ্বশুরবাড়ির কিছু বলি।আমার রোমান্সের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে।
আমি কোনোদিন ও বউকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি আসবো না হুহ।”
অনু নিচে আসার পর অয়ন অনুকে বলে,”কি গো তুমি এতো রাতে ছাদে কি করতে গিয়েছিলে?”
অনু বলে,'”এমনি ভালো লাগছিল না তাই একটু ছাদে গিয়েছিলাম।”
আরিয়ান পেছন থেকে এসে বলে,”যদি বলি অনু আমার সাথে রোমান্স করতে গিয়েছিল তখন কি করবেন? ”
অয়ন বলে,”বিয়ের আগে যা ইচ্ছা করতে পারে সমস্যা নেই।বিয়ের পর ওর মনের মাঝে আমি ছাড়া অন্য কারো কোনো স্থান না থাকলে হবে।”
আরিয়ান বলে,”যাক বউয়ের মনের মাঝে বর থাকলে হবে।”
এদিকে….
(সবার কাছে থেকে গঠনমূলক মন্তব্য আশা করবো)



চলবে…….