আমার ক্রাশ বর

আমার ক্রাশ বর সিজন- 2 !! Part- 33

এদিকে আয়াত আর রাজ নিজেদের রুমে প্রবেশ করবে বাসরঘর করতে তবে তার আগে দু জনের বুকের মাঝে ভয়ে ধুকধুক করা শুরু করে দিয়েছে।
আয়াত ভাবছে আল্লাহ রিমির সাথে জেদ করে যা করেছি তার সব কিছু তো আজ সে সুদে আসলে উশুল করে নিবে।
এদিকে রাজ ভাবছে যে মেয়ে বোনের সাথে মিলে নির্দয়ের মতো আমাকে পাঁচ বছর আগে পিটানি দিতে পিছ পা হয়নি আজ তার বোনের জীবন উল্টা পাল্টা করতে আমিও দায়ী তা জানার পর সে যে আমাকে শুটকি মাছ বানিয়ে ছাড়বে না তার ভরসা নেই।
তবুও দুই ভাই দোয়া ইউনুস পরে বুকে ফুঁ দিয়ে ঘরের দরজা খুলে প্রবেশ করে।
আয়াত ঘরে ঢুকতেই রিমি তেড়েমেরে এসে আয়াতের পাঞ্জাবির কলার ধরে বিছানাতে নিয়ে গিয়ে ফেলে দিয়ে ওর গলা টিপে ধরে বলে,”বেয়াদব স্বামী ১০০ বছর প্রেম করে সাধ মেটে নাই।

আমাকে ছেড়ে দিয়ে অন্য জন কে বউ বানানোর শখ ছিলো তাই না?
তোর সে শখের মুখে আমি ছাই দিয়ে দিলাম।থুড়ি আমি না আমার স্বাদের দেবর দিয়েছে।”
আয়াত বহু কষ্টে রিমির হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে উঠে বসে বলে,”আহারে আমার ধোয়া কদুর পাতা।আমি একা বুঝি বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলাম নিজে বিয়ের পিঁড়িতে বসো নাই বুঝি? ”
রিমি বলে,”আগে বিয়ের জন্য হ্যাঁ নিজে বলছো তারপর আমি বলছি।বজ্জাত বেডা তোর এতো বউ এর দরকার যে মনোমালিন্য দূর করার প্রয়োজন বোধ করলে না? ”
আয়াত বলে,”ওরে আমার কয়লার খনি নিজে বুঝি খুব চেষ্টা করছো এইসব দূর করতে? ”
রিমি বলে,”না করি নাই তাতে কি হয়ছে রাগের সময় মাথা ঠিক ছিলো না।”
আয়াত বলে,”আচ্ছা বুঝলাম ভুল হয়েছে এখন রাগ করে আমার বাসররাত কেনো নষ্ট করে দিচ্ছেন ম্যাডাম? ”
রিমি আয়াতের গাল টেনে বলে,”ওরে আমার কয়লার খনির বরটা বাসরঘর করবে!
তোমার সে শখের ঘরে আগুন দিবো আমি।”
আয়াত বিনয়ী সুরে বলে,”জান আগুন দিবে কেনো?'”
রিমি বলে,”আমার বোন যতোদিন না এই বাড়িতে এসে সংসার করছে ততোদিন তোমার বাসরঘর করার স্বপ্ন অসমাপ্ত থাকবে।”
আয়াত বলে,”এই আরিয়ানের ভুলের মাসুল আমি কেনো দিবো? ”
রিমি বলে,”এই আরিয়ানের জন্য আজ আমাকে বউ হিসাবে পেয়েছো সে কথা ভুলে যাবে না।”
এভাবে রিমি নানা রকম ভাবে আয়াতের বারোটা বাজাতে থাকে সারারাত ভর।
এদিকে রাজ বেচারা বাসর ঘরে ডুকতেই রিদি এসে ওর সামনে দাঁড়িয়ে কোমরে কাপুর গুঁজে বলে,”আমার রুমে ঢুকতে লজ্জা করলো না? ”
রাজ নিজের ঘরের চারপাশে তাকিয়ে বলে,”এটা তো আমার রুম।
নিজের রুমে প্রবেশ করতে লজ্জা কেনো লাগবে আজব কাহিনী তো? ”
রিদি বলে,”আপনাকে বিয়ে করার পর থেকে আপনার স্থাবর -অস্থাবর যা কিছু আছে সব কিছুর অর্ধেক মালিক আমি আর সেই হিসাবে এই রুমের অর্ধেকের মালিক ও আমি।”

রাজ বলে,”মগেরমুল্লুক পাইছো না কি এই সব।মাঝ রাতে ফাইজলামি রাখে যাও ঘুম দাও।”
রিদি বলে,”তাই না! আমি তো কিছু বুঝিনা ভাবছো? আমি বিছানায় শুয়ে পরি আর তুমি মনের সুখে বাসর করবে! তোমার সে স্বপ্নের মুখে ছাই।আমি এইটা কখনো হতে দিবো না।”
রাজ বলে,”আজব তো মাথা ঠিক আছে তো তোমার। আমি উল্টা পাল্টা কাজ কেনো করতে যাবো বলো তো? ”
রিদি বলে,”তোমার মতো ছেলেকে এক ফোঁটা বিশ্বাস নেই।কি থেকে কি করে বসো আল্লাহ জানে।”
রাজ বলে,”রিদি এইসব কিন্তু একটু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে। ”
রিদি বলে,”কোথায় বেশি হয়ে যাচ্ছে? তুমি নিজে হাজার মেয়ের মন ভেঙ্গেছো আর তোমার করা সে পাপের শাস্তি আমার বোন আর তার বর পাচ্ছে কেনো বলতে পারো? ”
রাজ মাথা নিচু করে বসে আছে হয়তো তার করা ভুলের অনুশোচনা বোধ তার মাঝে কাজ করছে।
রিদিও সারারাত রাজ কে নানা ভাবে কথা শোনাতে থাকে।

এদিকে সকালে ঘুম থেকে উঠে আরিয়ান ড্রয়িংরুমে বসে আছে এমন সময় সেখানে আয়াত চোখ ডলতে ডলতে চলে আসে।
আরিয়ান :-কি রে ভাইয়া সাত সকালে তোর এই অবস্থা কেনো? ভাবীর ভালোবাসা বুঝি বেশী হয়ে গিয়েছিল যে ঘুমাতে পারিস নাই?
আয়াত চুপচাপ আরিয়ানের কথা শুনতে থাকে।
এদিকে রাজ ও সেখানে এসে উপস্থিত। সে এসে আয়াতের পাশে বসে ওর কাধে হেলান দিয়ে বসে থাকে।
তা দেখে আরিয়ান বলে,”আহারে রাজ তোর তো দেখছি ভাইয়ের থেকেও খারাপ অবস্থা তা রাতে ঘুম দিয়েছিস তো ভালো ভাবে?”
এবার রাজ আর আয়াত দুজনের একসাথে গিয়ে আরিয়ানের গলা টিপে ধরে বলে,”শালা তোর জন্য রাতের ঘুম মাটি হয়ে গেছে।
না জানি কতোদিন এমন ভাবে বউয়ের হাতে নির্যাতিত হতে হবে।”
আরিয়ান নিজেকে বাঁচিয়ে বলে,”বাহ বউ তোদের স্বামীর কষ্ট না বুঝলে দোষ আমার বাহ কি নিয়ম তোদের।”
রাজ বলে,”যা তুই এখুনি গিয়ে তোর বউকে বাড়িতে নিয়ে আসবি।”
আরিয়ান বলে,”মগেরমুল্লুক পেয়েছিস না কি? আমি শ্বশুরবাড়ি গেলাম আর আমার সুমুন্দি বউয়ের হাত আমার হাতে দিয়ে দিবে? ”
আয়াত বলে,”জানি না তুই কি করবি তবে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব বাড়ির বউকে বাড়িতে নিয়ে চলে আয়।”
এমন সময় আয়েশা বেগম এসে বলে,”আরিয়ান বউ পাবে কোথায়? ”
সবাই আয়েশা বেগমের মুখে এমন কথা শুনে থতমত খেয়ে যায়।তারপর রাজ নিজেকে ঠিক করে কথার মোড় ঘোড়াতে বলে,”মামী আমরা তো আরিয়ান কে বিয়ে করে বউ বাড়িতে নিয়ে আসার কথা বলছিলাম।”
আয়াত বলে,”মা তুমি তিন ভাইয়ের মাঝে কেনো আসতে যাও বুঝি না তো?”
এমন সময় রিদি এসে আয়েশা বেগমের কাধে মুখ রেখে বলে, ”মামী আপনি বোঝেন না দুই ভাইয়ের নতুন বউ বাড়িতে ঘুরঘুর করলে অবিবাহিত দেবরের খারাপ লাগতেই পারে।”

রিদি এসে বলে,”বেপার না খুব সুন্দর ভালো মেয়েই এই বাড়ির বউ হয়ে আসবে আশা করা যায়।”
রাজের মা এসে বলে,”এই তিন ভাইকে নিয়ে আর পারি না।সাত সকালেও এদের ঝগড়াফসাদ শুরু।”
মৌ এসে বলে,”মা তোমরা এবার আরিয়ান ভাইয়ের জন্য একটা মেয়ের খোঁজ শুরু করে দাও নয়তো আমাকে তার সাথে বিয়ে দিয়ে এইবাড়ির বউ করে রেখে দাও।”
মৌ এর মুখে এমন কথা শুনে রিদি আর রিমা ক্ষেপে যায়।রিদি এগিয়ে গিয়ে একটা রাগ আড়ালে লুকিয়ে ঠোঁটে হাসি এনে বলে,”ননদী আপনি এবাড়ির মেয়ে।আরিয়ান আপনার বড় ভাই।অন্য মেয়ে তার বউ হয়ে আসবে এই বাড়িতে।”
রিদি বলে,”ননদী তুমি অন্য বাড়ির বউ হয়ে চলে যাবে।বাবার বাড়িতে মেয়ে বউ হয়ে থাকলে ভালোবাসা কমে যায়। তাই আমরা তো এটা হতে দিতে পারি না।যতোই হোক তুমি আমাদের একমাত্র ননদ বলে কথা।”
রাজের মা বলে,”আজব তো মৌ না হয় মজা করে কথা বলছে তাই বলে তোমরা নতুন বউ হয়ে বিয়ের পরের দিন আমার মেয়ের সাথে এভাবে কথা বলতে পারো না।”
রিদি বলে,”কেনো মা নতুন বউ কি সারাজীবন থাকবো? বিয়ের দিন নতুন ছিলাম রাত ফুরিয়ে গেছে কথা শেষ।”
রিমি বলে,”মা এটা আমাদের ও বাড়ি তাই এই বাড়ির সবার খেয়াল রাখার দায়িত্ব আপনাদের মতো আমাদের ও আজ থেকে বলে দু জন চলে যায়।”
রাজের মা আর আয়েশা বেগম বলে,”আল্লাহ এরা দেখি এখুনি অধিকার নিয়ে পরে আছে।আরোদিন তো পরেই আছে ভবিষ্যৎ এ কি হবে কে জানে? ”
আয়াত বলে,”কেনো মা তোমাদের পছন্দের মেয়েরাই তো বাড়ির বউ হয়ে এসেছে।
এখন এই বিষয়ে আমাদের কিছু বলার নেই তোমরা বোঝো কি ভাবে মিলেমিশে থাকবে।”
তিন ভাই নিজেদের কাজে চলে যায়।

দুই ননদ ভাবী আফসোস করতে থাকে এতো খুঁজে কি না শেষ পর্যন্ত এই জুটেছে তাদের কপালে?
এদিকে পরেরদিন ওদের বউ ভাতের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
রিদি আর রিমি খুব সাজগোজ করে বউএর আসনে বসে আছে।
এদিকে ওদের দুই জনের বাড়ির সবাই চলে এসেছে তা দেখে দুজনা ছুটে গিয়ে তাদের জড়িয়ে ধরে।
একটু পর রিদি ওর বাবাকে বলে,”বাবা আবির ভাইয়ার বাড়ির সবাই আসবে না? ”
রিদির বাবা বলে,”জানি না আবির কি করবে।”
রিমি ওর বাবাকে বলে,”বাবা রিমা আমার শ্বশুরবাড়ি আসবে না? ”
রিমির বাবা বলে,”যদি ওর বর ননদ না আসে সেখানে রিমা কোন মুখে আসবে শুনি? ”
ওদের বাবারা বেয়াইদের সাথে অন্য দিকে চলে যায়।
রিদি আর রিমি মন খারাপ করে নিজেদের আসনের দিকে চলে যেতে এমন সময় পেছন থেকে কারো ডাক শুনে ওরা থমকে দাঁড়ায়।
(নতুন কেউ না কি পুরাতন কেউ তা ওরাই ভালো জানে।আমি সবার কাছে থেকে গঠনমূলক মন্তব্য আশা করবো।)




চলবে….