আমার ক্রাশ বর

আমার ক্রাশ বর সিজন- 2 !! Part- 21

এদিকে তিন ভাই একসাথে রাতে আড্ডা দিবে
তাই ছাদে এসেছে।
রাজ বলে,”আয়াত ভাই তা তুমি যে মেয়েটাকে একবার দেখে এভাবে হ্যাঁ করে দিলি এটা কি ঠিক করেছো?”
আয়াত বলে,”কেনো বলতো? ”
রাজ বলে,”ধরো মেয়েটা আগে রিলেশন করতো এখন করে না। সে সব না জেনে বিয়ের জন্য রাজি হওয়াটা কি ঠিক হলো? ”
আয়াত বলে,”সে ১০০ টা রিলেশন করুক তাতে আমার সমস্যা নেই।তবে তার অতীত নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা নেই।আমারো তো অতীত থাকতে পারে? মেয়েটা সে সব কথা না জেনে তো বিয়ের জন্য রাজি হয়েছে তাহলে আমি কেনো তার অতীত নিয়ে মাতামাতি করতে যাবো?
অযথা সন্দেহ বাড়িয়ে সম্পর্ক নষ্ট করার ইচ্ছা নাই। ”
আরিয়ান এসে আয়াতের পিঠে হাত দিয়ে সাবাসি দিয়ে বলে, “এই না হলে আমার ভাই!একদম ভাইয়ের মতো ভাই। যার মন অনেক উদার।”
আয়াত বলে,”সবার চিন্তা ভাবনা চেঞ্জড করা উচিৎ।সমাজে অনেক ছেলে মেয়ে আছে যারা রিলেশন করে সময় কাটাতে।
কিন্তু তারা জানে না।

এই সময় কাটাতে গিয়ে কেউ হয়তো সত্যিকারের ভালবাসা জীবন থেকে হারিয়ে ফেলে।
আরে ভাই যার সাথে সংসার করতে পারবি না। তার সাথে তোদের রিলেশন করার কি দরকার। তারপর ও কে শোনে কার কথা।
সমাজে এমন স্বার্থের রিলেশনে জড়ানো অনেক ছেলে মেয়ে আছে।
যারা ভুল মানুষকে ভালবেসে ভাঙ্গা মন নিয়ে বসে আছে।”
আয়াতের মুখে এসব কথা শুনে রাজের কলিজায় সেকা লাগছিল।কারণ পাঁচ বছর আগে রিলেশন করাটা তার কাছে একটা গেমের মতো ছিলো।
আরিয়ান বলে,”ভাই আশেপাশে কোথাও কিছু পোড়ার গন্ধ পাচ্ছো কি? ”
আয়াত বলে,”কই কিসের গন্ধ! আমি তো কোনো গন্ধ পাচ্ছি না।”
আরিয়ান বলে,”আরে ভাই এখানে কারো মনের ঘরে তোমার কথা গুলো আগুন দিয়েছে। ”
আয়াত বলে,”আরিয়ান তোর কথা কোনো মানে আমি বুঝতে পারছি না।”
রাজ বলে,”এই ডাক্তার মানুষের মুখে এতো গভীর কথা? ভাই তুমি কি সেকা খেয়েছিলে কোনোদিন?”
আয়াত বলে,”রাজ তোর ফালতু কথা রাখ তো বলছি !আমার কাজ আছে আমি নিচে যাচ্ছি। ”
আয়াত সোজা নিচে চলে যাবার পর আরিয়ান রাজের কান টেনে ধরে বলে,”কি রে অনুভূতি কেমন তোর? ”
রাজ নিজের কান ছাড়িয়ে বলে,”কিসের অনুভূতির কথা বলছিস তুই? ”
আরিয়ান বলে,”আরে তোর এক্ম কে ভাবী ডাকতে হবে।সব সময় তোর চোখের সামনে ঘুরে বেড়াবে। বড় ভাই এর বউ হয়ে সারা বাড়ি তার বিচরণ হবে।এসব কিছু সহ্য করতে পারবি তো? তবে আমার মনে হয় তোর কাছে এসব কোনো বেপার না।”
রাজ বলে,”বেপার না কে বলছে তোকে? রিদি মেয়েটা অনেক ভাল ছিলো।ওরে চিট করা আমার ঠিক হয়নি। তবে সে সময় আর আজকের মধ্যে অাকাশ-পাতাল পার্থক্য আছে।”
আরিয়ান বলে,”এখনো সময় আছে রিদির
সাথে আয়াতের বিয়ে হয়নি।বিয়ে ঠিক হয়েছে মাএ।ইচ্ছা করলে নিজের ভুল এখনো ঠিক করতে পারিশ।”
রাজ বলে,”আমি একবার ব্রেকআপ করা সম্পর্ক দ্বিতীয় বার জোড়া লাগায় না। তাই রিদি আমার জীবনে আসবে না।”
আরিয়ান বলে,”এটা তোর ইচ্ছা! তবে তোকে বাঁশ সব সময় আমি দিবো চিন্তা করিশ না বলে নিজের রুমে চলে যায়।”
রাজ বলে,”তোর বাঁশ বন বিক্রয় করে আমি বড়লোক হবো চিন্তা করিশ না তুই। ”

এদিকে রাতের বেলা রিদির মা খাবার খাওয়ার জন্য ওর রুমে ডাকতে যায়।
রিদি দরজা খোলার পর মুখ গোমড়া করে নিজের বিছানার উপর বসে থাকে।
রিদির মা বলে,”জানিস এই বিয়ের খবর তোর খালাম্মাদের দিয়েছি তা শুনে তারা সবাই কতো খুশী হয়েছে!”
রিদি বলে,”হ্যাঁ জোড় করে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ের জন্য রাজি করালে মেয়ে বাদে সারা দুনিয়া খুশী হয়।”
রিদির মা বলে,”তোর ভালোর জন্য আমরা এমন করেছি।”
রিদি বলে,”এটা কোন দিক দিয়ে ভাল? মেয়ে রাজি না তারপর ও জোড় করে তাকে রাজি করাবে? ”
রিদির মা বলে,”আমরা জোড় কেনো করতে যাবো তোর ভাল জন্য এমন করছি। সব বাবা মার ইচ্ছা থাকে তার মেয়ে সুখে সংসার করবে তা দেখার এক বুক আশা।তাহলে আমরা কেনো আমাদের মেয়ের সুখ চাইবো না? ”
রিদি বলে,”এতো বছর যখনে বিয়ের জন্য রাজি হয়নি আজও রাজি করাতে পারতে না।শুধু বাবা অসুস্থ তার মুখের দিকে তাকিয়ে এই বিয়েতে মত দিতে বাধ্য হয়েছি।”
রিদির মা বলে,”জানি না তোর বিয়েতে কিসের এতো এলার্জি।তারপর এবার যখন রাজি হয়েছিস তখন আর মত চেঞ্জ করবি না সেই আশা করবো।”
রিদি চুপচাপ বিছানা থেকে উঠে বারান্দায় চলে যায়।রিদির মা আর কথা না বাড়িয়ে চলে যায় রুম থেকে।
রিদি একা রাতের অন্ধকারের গভীর ভাষা বুঝতে চেষ্টা করছে।

পরেরদিন সাত সকালে হঠাৎ করে রিমির আবির্ভাব হয় অনুদের বাড়িতে।
এদিকে সবাই রিমি কে দেখে অনেক খুশী হয়।
মিষ্টি এসে সোজা রিমির কোলে উঠে বলে,” আমার খালামনি! ”
অনু বলে,”আমার চাচাতো বোন তোমার কোন দিক দিয়ে খালামনি মনে হয় রে? আমার বোন মানে তোমার ফুপি হয়।ফুপি বলে ডাক দাও।”
মিষ্টি অনুর সাথে ঝগড়া করে বলে, “বললেই হলো আমার আম্মুর বড় বোন আমার খালামনি হয়।”
অনু বলে,” তোমার আম্মুর চাচাতো বোন তো আমিও হই।আমাকে তো ফুপি বলো!
কখনো তো খালামণি বলে ডাকো না? ”
মিষ্টি বলে,”তোমাকে খালামণি ডাকতে গেলে পাপাকে আমার মামু বলে ডাকতে হবে।”
এমন কথা শুনে রিমা রেগে গিয়ে মিষ্টির মুখ খুব জোড়ে চেপে ধরে বলে,”এই বেয়াদব মেয়ে বড় দের মুখে মুখে খুব বাজে তর্ক করতে শিখেছো তাই না?”
অনুর মা বলে,”আহ বউমা মিষ্টি ছোট মানুষ এভাবে ওর সাথে খারাপ ব্যবহার কররে হবে? ছোটদের ভালবেসে আদরের সাথে বুঝিয়ে বলতে হয়।এভাবে রাগ দেখিয়ে কি লাভ।
মিষ্টি বুঝলে কি এমন কথা বলতো বলো তো?”
এরপর আবির মিষ্টি কে রিমির কোল থেকে নিয়ে বলে,”আজ সারাদিন আমার মামুনি টা আমার সাথে থাকবে।শুক্রবারের দিনটা শুধু মিষ্টির জন্য অন্য কারো জন্য না।”
মিষ্টি বলে,”তাহলে আমার জন্য আজ আইসক্রিম আর চকলেট কিনে আনলে সেখানে আম্মু আর ফুপির কোনো ভাগ থাকবে না।”
আবির বলে,”ওকে ডান মামুনি।চলো আমরা বাগানে গিয়ে খেলা করি।”

এবার রিমা রিমি কে বলে,”তা আপু কেমন আছো তুমি এতো বছর পর দেশে আসলে।শেষ পর্যন্ত আমাদের সবার কথা মনে পড়লো তোমার? ”
রিমি বলে,”সব সময় তো তোমাদের কথা মনে পড়ে তবে নিজের ক্যারিয়ার নষ্ট করতে পারি না।”
রিমা বলে,”কিসের ক্যারিয়ার? যেখানে বড় বোন থাকতে ছোট বোনের বিয়ে হয়ে চার বছরের একটা বাচ্চা আছে।সেখানে এখনো বড় বোনের বিয়েটা হলো না।এর জন্য সমাজের মানুষ বাবা মা কে কতো কথা বলে তা তুমি জানো? ”
রিমি বলে,”সমাজের মানুষের কাজ হচ্ছে নিজের খেয়ে পরের বনের মহিষ তাড়ানো।
ওরা পারে শুধু পরের জীবনযাত্রা নষ্ট করতে। পরকে কিভাবে ছোট করা যায় সে কাজ করতে।অন্যের ভালো দেখতে পারে না কখনোই।
তাই তো ভাল কিছু করলে তা মনে রাখে না।
একটু ব্যতিক্রম কিছু দেখলে তা নিয়ে কানাকানি শুরু করে দেয়।”
রিমা বলে,”থাক আপু অনেক হয়েছে জ্ঞান দেওয়া।অনেক দিন পরে আমার শ্বশুরবাড়ি এসেছে আসো নাস্তা করে নাও সবার সাথে একসাথে বসে।”
রিমি নাস্তার টেবিলে বসে বলে,”অনেক দিন পর তো দেশে আসছি।তাই দেশে পরার যোগ্য কিছু ড্রেস কিনতে মার্কেট যাবো।একা যেতে ভাল লাগছিল না। তাই অনুকে সাথে করে নিয়ে যাবার জন্য আমি এখানে এসেছি।”
অনু বলে,”বাহ কি ভালো,কর্মজীবী বড় বোনের সাথে গেলে তো নিজের জন্য শপিং টা ফ্রি করা হয়ে যাবে।”
এমন সময় অনুর মা বলে, “তোমরা দুই বোন কর্মজীবী তাইনা? আর এইজন্য তোমরা দুজন বিয়ে করতে রাজি না!!বাহ কি ভালো মিল দুজনের। কেউ এখনো বিয়ের খাতায় নিজেদের নাম লেখাতে রাজি নাই।”

অনু বলে,”আহ মা সাত সকালে বিয়ে নিয়ে লাফালাফি করো না তো।এই রিমি আপু আমার রুমে চলে আমি রেডি হয়ে মার্কেট এ যাবো।শুক্রবার তার উপর সারাদিন তোমার সাথে ঘুরাঘুরি করতে পারবো।”
এরপর অনু রেডি হয় শপিংমলের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বাহির হয়।
একটু পর তারা শপিং মলে পৌঁছে যায়।
রিমি তার পছন্দ মতো ড্রেস কিনতে থাকে।এদিকে অনু নিজের সাথে রিমা আর রিদির জন্য কিছু ড্রেস আর শাড়ি পছন্দ করতে থাকে।
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
গঠনমূলক মন্তব্য সবার কাছ থেকে আশা করবো।😊)



চলবে….