আমার ক্রাশ বর

আমার ক্রাশ বর সিজন- 2 !! Part- 20

এদিকে আরিয়ানের ফোনে ওর মা কল দিয়ে তাড়াতাড়ি ওদের বাড়িতে আসতে বলে দরকার তাই।
আরিয়ান বলে,”চল ভাই মাদার তেরেসা কল দিয়েছে,বাড়িতে গিয়ে নতুন নাটক দেখতে পারবো বলে মনে হয়।”
রাজ বলে,”নাহহ এই মা আর মামী কে নিয়ে পারি না।কেউ কারো থেকে কম না।আল্লাহ এদের ভাল বুদ্ধি দান করো। নয়তো বাড়িতে এমন বউ দিও যে এদের সঠিক রাস্তা দেখাবে আমিন।”
আরিয়ান বলে,”তোর মিলাদ পরা শেষ।

তুই কি এখানে বসে বিয়ে বাসর সব কিছু করবি?”
রাজ বলে,”ধুর শালা মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে এইসব চিন্তা করবো না কি! চল বাড়ির দিকে যাওয়া যাক।নয়তো বাড়ি থেকে কলের পর কল দিয়ে ঝড় তুলে দিবে।”
এরপর দু ভাই মিলে বাড়িতে আসতেই দেখে সবাই রেডি হয়ে বসে আছে।
আরিয়ান আর রাজ বাড়ির ভেতর যাবার আগে তারা ওদের সাথে করে বাড়ির বাহিরে নিয়ে চলে আসে।
গাড়িতে বসে সবাই রওনা দেয়।রাজ আরিয়ান তো আবুল হয়ে বসে আছে।কাউকে কিছু জিজ্ঞাস করলে কোনো উওর দিচ্ছে না।
এমন সময় অনেকটা দূরে এসে একটা বাড়ির সামনে ওদের গাড়ি থেমে যায়।
তারপর সবাই গাড়ি থেকে নেমে পড়ে।
বাড়ির ভেতরে গিয়ে তাদের বাড়ির গোছানো পরিবেশ দেখে মুগ্ধ হয়ে যায়।
আয়াত রাজ আরিয়ান এক সিরিয়ালে এক সাথে বসে থাকে।
এমন সময় একটা মেয়ে শাড়ি পড়ে খুব সুন্দর করে সেজে গুঁজে হাতে শরবতের ট্রে নিয়ে এগিয়ে আসতে থাকে।
হঠাৎ করে মেয়েটা সামনে বসা ছেলেদের দিকে তার চোখ পড়তেই হাত থেকে শরবতের ট্রে পড়ে যায়।
ট্রে পড়ার শব্দে সবাই মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে।রাজ আরিয়ান এক সাথে বলে,”রিদি।”
আয়াত বলে,” তোরা চিনিস মেয়েটাকে? ”

রাজ বলে,”আরে নাহ চিনবো কি করে আগে কোনোদিন দেখি নাই।”
আরিয়ান রাজের দিকে এক ভ্রূ কুঁচকে তাকিয়ে থাকে।
মনে মনে বলে,”বেয়াদব পোলা পাঁচ বছর আগে তোর জি এফ ছিলো আর তুই আজ অস্বীকার করছিস? তোরে তো কানে গালে থাপ্পড় দেওয়ার দরকার। ”
রাজ মনে মনে বলে,”ভাইরে পাঁচ বছর আগের কাহিনী যদি বাড়ির মানুষ জানে তাহলে তো খুব বিপদ আমাকে আস্ত মাটি চাপা দিয়ে দিবে।”
এমন সময় আয়েশা বেগম রিদির কাছে গিয়ে বলে,”আরে মামুনি তুমি ঠিক আছো তো? ”
রিদি বলে,”জ্বি আন্টি! আসলে আজ প্রথম শাড়ি পরেছি তো তাই বুঝতেই পারছেন। সরি আমার জন্য সবার এমন পরিস্থিতিতে পরতে হলো।”
আয়েশা বেগম বলে,”আরে কি যে বলো না তুমি।প্রথম শাড়ি পরলে একটু ভুল হতে পারে এটা তেমন কোনো বড় বেপার না। এসো তুমি আমার সাথে এসো।”
আয়েশা বেগম রিদির হাত ধরে নিজের পাশে বসিয়ে নানা রকম প্রশ্ন করতে থাকে।
রিদি খুব ভদ্র সহজ সরল মনে সে সব উওর দিতে থাকে এক এক করে।
রিদি বার বার আড় চোখে রাজ কে দেখতে থাকে।পাঁচ বছর আগে তো সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
যদি আজ থাকতো তাহলে কতো ভাল না হতো।তবে আজ কেনো আবারো সেই অজানা অনুভূতি রাজের জন্য হচ্ছে।
না রিদি তুই রাজকে দেখে নিজেকে ভেঙ্গে যেতে দিতে পারিস না তুই নিজেকে শক্ত রাখ।
রাজ তোর অতীত আর বর্তমানে রাজের কোনো স্থান নেই তোর জীবনে।
এসব মনে মনে ভেবে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে রিদি।
এমন সময় রাজের মা বলে,”তা তোমার নাম কি?”
রিদি বলে,”রাহা ইসলাম রিদি।”
রাজের মা বলে,”মা শা আল্লাহ যেমন মিষ্টি নাম ঠিক তেমন দেখতে সুন্দর। ভাবী যদি আয়াতের জন্য মেয়ে পছন্দ না করতে আসতাম তাহলে রাজের জন্য রিদিকে আমি অবশ্যই চাইতাম।”

এমন কথা শুনে রাজ বিষম খায়।
তা দেখে আরিয়ান রাজের পিঠের উপর ধরাম করে একটা কিল বসিয়ে দেয়।
আয়েশা বেগম ওদের দিকে না তাকিয়ে বলে,”আরে সমস্যা নাই এর থেকে সুন্দরি মেয়ে রাজের জন্য খুঁজে দিবো চিন্তা করো না।”
রাজের মা আয়াত কে বলে,”কি রে আয়াত তোর মেয়ে পছন্দ হয়েছে তো?
আয়াত কোনো কিছু বলে না চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে থাকে।
আয়েশা বেগম বলে,”আমার ছেলে লজ্জা পাচ্ছে তা দেখে তুমি কিছু বোঝ না রাজের মা? ”
রাজের মা বলে,”ছেলে লজ্জা পাচ্ছে তা বুঝলাম কিন্তু কোন ইশারা দিয়ে তো বলবে মেয়ে কেমন।”
আয়াত রিদিকে উদ্দেশ্য করে বলে,”আপনি দেখতে মা শা আল্লাহ অনেক সুন্দর। ‘”
আরিয়ান বলে,”দেখো ছেলের মুখে কথা নেই কিন্তু ভাবীর জন্য মুখে ঠিকি খই ফুটেছে।”
আয়াত বলে,”আহ আরিয়ান একটু চুপ করবি?”
আরিয়ান বলে,”নাও চুপ করলাম এবার কি বলবে বলো তুমি।”
আয়াত বলে, “কিছু বলার নেই, বাড়ির মানুষের যা সিদ্ধান্ত আমি তাতে রাজী। ”
রাজ আরিয়ানের কানে কানে বলে,”শেষ পর্যন্ত আয়াতের জন্য রিদি সিলেক্ট? এক্স কে ভাবী ডাকতে হবে আমার! ”
আরিয়ান ওর হাত দিয়ে রাজের কোমরে এমন জোড়ে চিমটি কাটে যাতে রাজ জোড়ে আহ বলে,” চিৎকার করে ওঠে।”
সবাই বলে,” কি হয়েছে রে?”

রাজ বলে,”কিছু হয়নি মশা কামড় দিয়েছে তাই।”
আরিয়ান বলে,”বাব্বাহ মশা এত বড় ছিল যে এক কামড়ে এত জোরে চিৎকার দিতে হলো? ”
রাজ বলে,”থাক তোর এতো বুঝে কাজ নেই ভাই। মানুষের বাড়ি এসে এতো কথা বলতে নাই।
এদিকে আয়েশা বেগম রিদির দু হাত ধরে বলে,”মামুনি তোমার এ বিয়েতে আপত্তি নেই তো? ”
রিদি একবার রাজের দিকে তাকিয়ে দেখে ওর মুখে একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব।
এরপর রিদি বলে,”না আন্টি এ বিয়েতে আমার কোনো আপত্তি নেই।”
আয়েশা বেগম আলহামদুলিল্লাহ্‌ বলে,”ব্যাগ থেকে দুটো বালা বাহির করে রিদির দু হাতে পড়িয়ে দেয়।”
তারপর বলে,”আমাদের মেয়ে পছন্দ তাই আপনাদের মেয়েকে বুকিং করে রেখে যাচ্ছি। আমাদের আরেক ছেলে রাজের জন্য বউ খুঁজবো তারপর দুই ভাইয়ের এক সাথে এক দিনে বিয়ে দিবো।

ততোদিন না হয় রিদি মা তার বাবা মায়ের কাছে আমাদের আমানত হয়ে থাকবে।”
রিদির মা বলে,” কি যে বলেন বিয়ান! আমাদের কোনো আপত্তি নেই।আপনাদের আমানত যেদিন দরকার হবে সেদিন এসে বাড়ির বউ করে নিয়ে যাবেন। ”
আয়েশা বেগম বলে,”তাহলে আজ আমরা আসি।এখন থেকে তো আশা যাওয়া লেগেই থাকবে।”
সবার থেকে বিদায় নিয়ে আরিয়ানেরা নিজেদের বাড়িতে চলে আসে।
সবাই যাবার পর রিদি তার বাবা মা কে বলে,”এবার তোমরা খুশী তো? বলে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।”
এমন সময় রিদির মা অাবির দের বাড়িতে কল করে।
রিমা ফোন রিসিভ করতেই রিদির মা বলে,”আপা দুলাভাই কোথায় বউমা?”
রিমা বলে,”সবাই ড্রয়িংরুমে খালা,,ফোন স্পিকারে দেওয়া আছে আপনি যা বলবেন সবাই শুনতে পারবে।”
রিদির মা বলে,”আমাদের রিদির বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে ওর হবু বর ডাক্তার। ”
বাড়ির সবাই এ কথা শুনে আলহামদুলিল্লাহ্‌ বলে।
অনু তো দৌড়ে গিয়ে রিমার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে বলে,”খালামনি তা আমাদের বিয়ের কনেটা কোথায়? তার সাথে কি কথা বলবো না আমরা? তার জামাই কেমন,পছন্দ হলো না কি সবটা জানতে হবে তো।আমি একমাএ শালী বলে কথা।”
রিদির মা বলে,”তুই তাড়াতাড়ি চলে আয়।

এখন তো তোদের অনেক কাছেই থাকি।
কিন্তু তোদের কারো সময় হয় না আমাদের বাড়িতে আসার।”
অনু বলে,”আরে খালামণি চিন্তা করো না।আপুর বিয়ের এক সপ্তাহ আগে চলে যাবো।”
রিদির মা বলে,”দেখা যাবে তোরা কয়দিন আগে আসিস আমাদের বাড়িতে।”
আবির বলে,”চিন্তা করো না খালা এবার সত্যি এদের সবাই কে আগে পাঠিয়ে দিবো।
কেউ না গেলে আমার মিষ্টি কে রেখে আসবো দশ দিন আগে।”
মিষ্টি বলে,”কি মজা,কি মজা,ফুফু মনির বিয়ে।লাল শাড়ি দিয়ে।পাপ্পা আমাকেও লাল শাড়ি কিনে দিবা আচ্ছা। ”
ফোনের ওপাশ থেকে রিদির মা বলে,”মিষ্টি সোনা তুমি আসো আমি তোমাকে সব অনুষ্ঠানের আলাদা ড্রেস কিনে দিবো।”
আবির বলে,”তা বিয়ে ঠিক হলো কবে খালা? ”
রিদির মা বলে,”এখনো ডেট ফিক্সড হয় নি।
তারা তাদের দুই ছেলের এক দিনে বিয়ে দিবে। তার জন্য তাদের মেয়ে খুঁজতে হবে।
একটু তো সময় লাগবে।

ততোদিন রিদি আমাদের সাথে থাকবে।”
অনু বলে,”যাক আপু দুলাভাই এর সাথে প্রেম করার সুযোগ পাবে অনেক দিন ধরে।”
রিদির মা বলে,”আচ্ছা তাহলে এর মাঝে তোরা একদিন সময় করে এসে রিদির সাথে দেখা করে যা।আজকের মতো তাহলে ফোন রাখছি।”
রিদির মা ফোনের লাইন কাটার পর অনুর মা বলে,”রিদির ও বিয়ে হয়ে যাচ্ছে,আমার অনুর কি হবে।”
অনু বলে,”অনুর কিছু হবে না।অযথা চিন্তা বাদ দিয়ে নাকে তেল দিয়ে ঘুমাও বলে চলে যায়।”
এদিকে তিন ভাই একসাথে রাতে আড্ডা দিবে
তাই ছাদে এসেছে।
(গঠনমূলক মন্তব্য আশা করবো সবার থেকে)



চলবে……