আমার ক্রাশ বর

আমার ক্রাশ বর সিজন- 2 !! Part- 15

এদিকে হসপিটালে আয়াতের সামনে একটা ছোট বাচ্চা মেয়ে বয়স হয়তো চার কি সাড়ে তিন বছর হবে তাকে নিয়ে হয়তো তার মা বসে আছে।
আয়াত বলে,”আপনার বাচ্চার সমস্যা কি?”
বাচ্চার মা বলে,”আমার মেয়ে মিষ্টি অতিরিক্ত বেশি কথা বলে। বয়সের তুলনায় একটু বেশী পাকনামি করে যা আমার পছন্দ না।ওর কথা বলা একটু কমাতে চাই যাতে সে পাকনামি কম করে।”
মিষ্টি বলে,”এই জন্য ডাক্তার দেখাতে হয়?
দেখি সাদা কাকু আমাকে কি মেডিসিন দেয় এর জন্য।”
মিষ্টির মা বলে,”এই তোরে চুপ থাকতে বলছি না?”
মিষ্টি বলে,”এই ডাক্তার কাকু আম্মুর পটপটানো বন্ধ করার ঔষধ দিন তো।”
আয়াত বেচারা পুরো শকড এখানে হচ্ছেটা কি?
এমন সময় তাড়াতাড়ি কেবিনে আরেকজন মহিলা ঢুকে চলে আসে।
তাই দেখে আয়াত বলে,”এভাবে অভদ্র দের মতো কেবিনে ঢোকার মানে কি? ”
মেয়েটা বলে,”বাহ ডাক্তার এতো ইয়াং, স্মার্ট, ডেশিং কি আর বলবো আপনার উপরে তো আমি ক্রাশ খাইলাম। ”
আয়াত বলে,”ধন্যবাদ তবে ডাক্তারের উপর ক্রাশ খাওয়া উচিৎ না।”
মেয়েটা বলে,”কেনো কেনো?ক্রাশ খাওয়া উচিৎ না কেনো? ”

আয়াত বলে,”সারাদিন কতো রোগবালাই নিয়ে টানাটানি করি।কেউ ক্রাশ খাইলে রোগবালাই তার পিছু নিতে পারে।”
এমন সময় মিষ্টি দৌড় দিয়ে মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে বলে,”ফুপি দেখো তোমার ভাবী আমাকে ডাক্তারখানায় নিয়ে আসছে অযথা।”
মেয়েটা বলে,”ঐ ভাবী তোমার সাহস তো কম না আজারে কামে মাইয়ারে নিয়ে ডাক্তারের কাছে চলে আসছো? ”
মিষ্টির মা বলে,”ডাক্তার আপনি মেডিসিন আমাকে দেন,, এদের জ্বালায় অামি অতিষ্ঠ হয়ে গেছি।”
মেয়েটা তার ভাবীর হাত ধরে দাঁড় করিয়ে বলে,”আজারে টাকা গচ্ছা দিতে ডাক্তারখানায় আসছো কেনো? টাকা কি কামড় দেয় তোমাকে?”
মিষ্টির মা বলে,”থাক বইন তুই আমার মাথা নষ্ট করিস না।তোর ভাইয়ের বউ হয়ে ঐ বাড়িতে যাবার পর থেকে আমার জান জ্বালাতন করে শেষ করে দিলি।নিজে বিয়ে করবি না আমাদের মুক্তি দিবি না।আমার মেয়েটা একদম তোর কার্বন কপি হয়েছে।”
মেয়রটা কিছু ঝাড়ি দেওয়ার আগে আয়াত বলে,”অাপনারা এখানে ঝগড়া করতে আসছেন? আমি আপনাদের ঝগড়া শুনতে পারবো না।বাহিরে আমার রোগীরা অপেক্ষা করছে। আপনাদের নিজেদের সমস্যা বাড়িতে গিয়ে মিটমাট করুণ।”
মিষ্টিকে কোলে নিয়ে হনহন করে ওর ফুপি বাহিরে চলে যায়।
পেছনে মিষ্টির মাও হনহন করে বাহিরে চলে যায়।

মিষ্টিকে ফুপি গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে ড্রাইভার কে বলে, “সোজা ওদের বাড়িতে নিয়ে যাবেন। ”
মিষ্টির মা এসে বলে,”তোর সব স্থানে এসে কেনো পণ্ডিতি করতে হয়? সংসার আমার আমাকে সবটা বুঝে নিতে দে।সব কিছুতে তোর নাক গলানো আমার ভালো লাগে না।”
মিষ্টির ফুপি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে রাস্তার অন্য দিকে গিয়ে ট্যাক্সি থামিয়ে তাতে বসে চলে যায়।
মিষ্টির মা নিজের মাথার চুল নিজে ছিঁড়া শুরু করে।
তা দেখে মিষ্টি বলে,”মাম্মা চুল ছিঁড়তে না পারলে বলো আমি আর ফুপি খুব ভালো করে ছিঁড়ে দিবো।”
মিষ্টির মা জোড়ে একটা ধমক দিয়ে বলে,”চুপ বেয়াদব মেয়ে সব কথার মধ্যে নাক গলানো শিখছে।”
মিষ্টি মন খারাপ করে চুপচাপ গাড়ির এক সাইডে বসে থাকে।’

এদিকে আরিয়ান অফিসে এসে চিৎকার চেঁচামেচি করে পুরো অফিস মাথায় তুলে নেয়।
তা দেখে অফিসের সব কর্মচারীরা ভয় পেয়ে যায়।
ম্যানেজার সাহেব তাড়াতাড়ি আরিয়ানের কেবিনে গিয়ে বলে,”স্যার কোনো সমস্যা? ”
অারিয়ান বলে,”আমার কেবিনের এই অবস্থা কেনো? কোনো ফাইল গোছগাছ করা নেই।নোংরা পরিষ্কার না কেনো? ”
ম্যানেজার সাহেব বলে,”স্যার আসলে বড় স্যার দেশের বাহিরে যাবার সময় তার পিএ কে কয়েকদিনের ছুটি দিয়েছিল।তার পিএ তো জানে না আপনি জয়েন করবেন তাহলে সে অবশ্যই সব কিছু ঠিকঠাক করে রাখতো। ”
আরিয়ান বলে,”সেই পিএ কি মরে গেছে যে অফিসে আসার নাম গন্ধ নাই তার?”
কেবিনের দরজা খুলে মেয়েলি কন্ঠি একজন বলে,”আমি মরি নাই স্যার বেঁচে আছি তবে জানতাম না। নতুন বস জয়েন করবে।
জানলে অবশ্যই আমি কালকেই চলে আসতাম।”
আরিয়ান দরজার সামনে তাকিয়ে বলে,”অনু তুমি এখানে কি ভাবে?”
অনু বলে,”আপনি আমার নতুন বস? ”
আরিয়ান বলে,”কোন সাহসে তুমি আমাদের কোম্পানি তে জয়েন করেছো বেয়াদব মেয়ে?”
অনু সোজা আরিয়ানের সামনে গিয়ে ওর ঠোঁটের উপর হাত রেখে বলে,”স্যার এটা অফিস আপনার বাড়ি না যে পারসোনাল আলাপ করবো এখানে? আমি জানতাম না এটা আপনাদের কোম্পানি তাহলে কোনোদিন জয়েন করতাম না এখানে।”
অারিয়ান বলে,”এখন তো জানতে পারছো এটা আমার অফিস তাহলে এখুনি এই অফিস থেকে চলে যাও! ”
অনু বলে,”কেনো চলে যাবো? শুধু মাএ আপনি আমাকে আগে থেকে চেনেন সেই জন্য? ”
আরিয়ান বলে,”নাহ তোমার মতো মেয়ে হবে আমার পিএ আমি তা কখনো মেনে নিতে পারবো না।”
অনু বলে,”মানা না মানা আপনার বেপার। আমি ইচ্ছা করলেও চাকুরী ছেড়ে চলে যেতে পারবো না।তাহলে আমাকে মোটা অংকের টাকা দিতে হবে অফিস কে।কি বলেন ম্যানেজার সাহেব?”

ম্যানেজার সাহেব বলে,”জ্বি স্যার মিস অনু কোম্পানির সাথে দুই বছরের চুক্তি করেছেন। সে চাইলেও দুই বছরের মধ্যে চাকুরী ছাড়তে পারবেন না।এমনকি কোম্পানি তাকে বাহির করে দিতে পারবে না।দুই বছর পর সে ইচ্ছা করলে চাকুরী করতে পারে বা ছেড়ে দিতে পারে।”
অারিয়ান বলে,”যতোসব ফালতু নিয়ম।এই সব ফালতু নিয়ম কোন হারামি তৈরি করেছে? ”
অনু পেছনে থেকে বলে,”আপনার দাদা হারামি তৈরি করে রেখে দিয়েছি চাইলে সব নিয়ম বদলে দিতে পারেন।”
অারিয়ান বলে,”এই বেয়াদব মেয়ে একদম চুপ।আমার কথার মাঝে একদম নাক গলাতে আসবে না।”
অনু বলে,”সরি স্যার ভুল হয়ে গেছে আমার।”
অারিয়ান বলে,”গুড,আমার সাথে কাজ করতে হলে মুখ বন্ধ করে কাজ করে যাবে।”
ম্যানেজার সাহেব বলে,”স্যার আপনারা পূর্ব পরিচিত। তাহলে তো ভালই হবে।”
আরিয়ান বলে,”কিসের ভালো হবে।ওর মতো মেয়ের ছায়াও মাড়াতে আমার গাঁ গুলিয়ে ওঠে।”
অনু বলে,”স্যার কাউকে এতোটা ঘৃণা করবেন না। যে একটা সময় তাকে ভালবাসার কোনো অধিকার টা হারিয়ে যায়।”
আরিয়ান বলে,”মানুষ যাকে ঘৃণা করে তাকে কখনো ভালো বাসে না।”
অনু বলে,”মানুষ যাকে সব থেকে বেশী ভালোবাসে তাকে একটা সময় পর সবথেকে বেশী ঘৃণা করে কথাটা মনে রাখবেন।
আরিয়ান বলে,”তোমার মতো মেয়ের মুখে এমন কথা মানাই না মিস অনু? ”
অনু বলে,”স্যার আমার নাম আরিয়াত ইসলাম অনু।আরিয়াত বলে ডাকলে খুশি হবো।আপনার মুখে অনু নামটা শোনার ইচ্ছা আমার মরে গেছে।আর অনুও পাঁচ বছর আগে মারা গেছে।”

ম্যানেজার সাহেব এদের কথার আগা মাথা কিছু বুঝতেছে না।তাই হ্যাঁ করে দাঁড়িয়ে ওদের কথা গিলতে থাকে।
আরিয়ান বলে,”মারা গেছো তো আমার জীবর নষ্ট করতে পাঁচ বছর পরে ফিরে কেনো আসছো?”
অনু বলে,”ভাগ্যটা খুব খারাপ তো তাই আপনার সামনে এসে পড়তে হলো পাঁচ বছর পরে।
কে জানতো সময় ঘুরে ফিরে একই জায়গায় চলে আসবে।সময় আমাকে আপনার সামনে এনে দাঁড় করিয়েছে আমি ইচ্ছা করে এখানে আসি নাই।দেখা যাক সময় কি চাই আমাদের থেকে। ”

আরিয়ান বলে,”তোমাকে আমি আমার কোম্পানি থেকে তাড়াতাড়ি বিদায় করতে যা কিছু করার দরকার তাই করবো।”
অনু বলে,”স্যার আপনারা বাহিরে গিয়ে অপেক্ষা করেন আমি আপনাদের মনের নোংরা পরিক্ষার করবো!”
অারিয়ান বলে,”what?? কি বলতে চাইছো? ”
অনু বলে,”স্যার আপনার কেবিনের নোংরা পরিষ্কার করবো।তা আপনি কি এখানে নোংরার মাঝে থাকতে চান।”
আরিয়ান বলে,”আমি কেনো নোংরার মাঝে থাকবো।”
অনু বলে,”তাহলে বাহিরে চলে যান।”
আরিয়ান হনহন করে কেবিনের বাহিরে চলে যায়।
অনু কেবিন পরিষ্কার করতে থাকে আর আরিয়ান কে মনের সুখে গালি দিতে থাকে।বলে,”শালা খচ্চর তোর সাথে পাঁচ বছর পড়ে আবার দেখা হবে ভাবতে পারি নাই। এইবার তোর অফিস থেকে যাবার আগে যদি তোর ঘাড় মটকাই উগান্ডা কুরিয়ার না করে দিছি তো আমার নাম অনু না বলে দিলাম। তুই কোনো দিন ও আমার ক্রাশ না।রং নাম্বার ক্রাশ।তোর উপর ক্রাশ খেয়ে জীবন টা আমার তেজপাত হয়ে গেল। ”
অনু মন দিয়ে নিজের কাজ করতে থাকে।
এদিকে আরিয়ান এসে রাজের কেবিনে বসে নিজে নিজে বকবক করতে থাকে।
এমন সময়…
(আরিয়ান কি পারবে অনুকে অফিস থেকে তাড়িয়ে দিতে?আর তাদের সম্পর্ক কি আগের মতো সুন্দর হবে??দেখা যাক সময় কি বলে😒)



চলবে…