আমার ক্রাশ বর

আমার ক্রাশ বর সিজন- 2 !! Part- 14

পাঁচ বছর পরে….
এতো বছর পরে চৌধুরী গ্রূপ এন্ড ইন্ডাস্ট্রি তে মালিকের ছোট ছেলে আজ নতুন বস হিসাবে জয়েনিং করবে।
সবাই তো ভয়ে ভয়ে না জানে তাদেন নতুন বস কেমন হয়।
সবাই লোকমুখে শুনেছে নতুন বস না কি খুব রাগী। একটু ভুল ও সে সহ্য করে না।
সোজা তাকে অফিস থেকে বাহির করে দেয়।
মোটকথা নতুন বস কোনো রকম কাজে ভুল সহ্য করে না।
একজন তো বলে,”মালিক তো ভালই ছিলো তার ছেলেও ইনশাআল্লাহ ভালো হবে।
আমরা আমাদের কাজ মন দিয়ে করলে নতুন বস কে কিসের এতো ভয় কি বলেন সবাই? ”
পেছন থেকে আরিয়ান চৌধুরী বলে,”আমার কোম্পানি তে যদি ফাঁকি না দিয়ে কাজ করতেন তাহলে আমি খুশী হতাম।আমাকে নিয়ে গবেষণা না করে যার যার নিজের স্থানে কাজে যান।আমার যখন দরকার হবে আমি সবাই কে ডাক দিবো।”
আরিয়ানের ম্যানেজার বলে,”স্যার আজ আপনার প্রথম দিন সবাই আপনাকে স্বাগতম জানাতে এখান অপেক্ষা করছে যদি একটু সবার সাথে কথা বলতেন ভালো লাগতো সবার।”
আরিয়ান বলে,”আমি কি এখন সবার ভালো লাগার চুক্তিবদ্ধ না কি যে আমাকে কথা বলতে হবে।একবার যখন বলেছি এসব বরণের দরকার নেই নিজের স্থানে সবাই কাজে গেলে খুশি হবো তখন কেনো কেউ কাজে যাচ্ছে না বুঝি না।”
সবাই বুঝতে পারে বসের মুড খারাপ নিজেদের কাজে মন দেওয়া ভাল হবে তাই সবাই যার যার কাজে চলে যায়।
আরিয়ান কে তার কেবিনে ম্যানেজার সাহেব নিয়ে যায়।
এদিকে পেছন থেকে সবাই কে রাজ এসে বলে,”প্লিজ কেউ আরিয়ানের কথায় মন খারাপ করবেন না।আসলে কাজের সময় সবার এখানে জমা হওয়াটা সে পছন্দ করে নাই তো তাই।

আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে কেউ চিন্তা করবেন না।”
সব কর্মচারীগণ রাজের কথায় খুশী হয়ে নিজেদের কাজে গিয়ে মন দেয়।
এমন সময় রাজের সাথে আয়াতের দেখা হয়।
রাজ বলে,”আচ্ছা ভাইয়া আরিয়ান সবার সাথে এতো রুড বিহেভিয়ার করলো আপনি কিছু বললেন না কেনো? ”
আয়াত বলে,”রাজ আরিয়ানের এই বদলে যাওয়ার কাহিনীর স্বাক্ষী তুমি।পাঁচ বছর আগে কেনো আমার ভাই বদলে গেছে তা তুমি জানো তাই অযথা আরিয়ান কে নিয়ে আর কোনো কথা বাড়াতে চাই না।আমি হসপিটালে যাচ্ছি আমার কাজ আছে এদিকে সবটা সামলে নিও। ”
রাজ একবুক আফসোস নিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজে নিজেকে বলে,”সত্যি সময় মানুষ কে বদলে দেয়।যে সময় চলে যায় তা আর কখনো ফিরে আসে না।সময় মানুষ কে যে থাপ্পড় দেয় তা অন্য কেউ কখনো দিতে পারবেনা। ”
এরপর রাজ নিজের কেবিনের দিকে এগিয়ে যায়।
আরিয়ান নিজের কেবিনে বসে অফিসের সব নতুন পুরাতন কাজেন হিসাব নিকাশ বুঝে নিচ্ছে।

এদিকে চৌধুরী ভিলাতে আরিয়ানের দেশে ফিরে আসার জন্য উৎসব মুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।
আরিয়ানের মা বলে,”আরিয়ান যখন দেশে ফিরে এসেছে, এবার আমি ভালো তিনটা মেয়ে খুঁজে আমার তিন ছেলের বিয়ে দিবো।”
রাজের মা বলে,”জ্বি অবশ্যই ভাবী। আমিও চাই তিন ভাই এবার সংসারী হোক।ওদের তিন জনের একসাথে বিয়ে দিতে চাই আমি।”
আরিয়ানের মা কর্কশ গলায় বলে,”কি বলো রাজের মা তুমি? আমি আমার বড় ছেলে আয়াতের বিয়ে না দিয়ে তো এবাড়িতে অন্য কোনো ছেলের বউ কে পা রাখতে দিবো না।”

রাজের মা বলে,”ভাবী বলা তো যায় না,হয়তো রাজ অথবা আরিয়ান যদি আগে বিয়ে করে তখন কি করবেন? ”
আরিয়ানের মা বলে,”দরকার হলে ওদের বউদের আমি পা ভেঙ্গে দিবো তাও আমার বাড়িতে পা রাখতে দিবো না।”
এমন সময় আরিয়ান এসে ওর মাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,”কার পা ভাঙ্গার প্লানিং করবেন আম্মাজান? ”
আরিয়ানের মা (আয়েশা বেগম) :ছেলেকে সামনে টেনে এনে বলে তোর বউয়ের পা ভেঙ্গে দিবো সেই প্লানিং করছি রে।
আরিয়ান বলে,”আমার কপালে বউ নেই তাই তার পা ভাঙ্গার চিন্তা করে তোমার চুল গুলোতে পাক ধরাতে হবে না আম্মাজান। ”
আয়েশা বেগম বলে,”দেখো শোনো সবাই পাগল ছেলের কথা।তার কপালে না কি বউ নেই।আমি তো হাতে হারিকেন বিয়ে তোর জন্য বউ খুঁজবো।এক হাজারে একটা মেয়ে হবে সে।”
আরিয়ান বলে,”তাই তা কেমন মেয়ে খুঁজবে তুমি? ”
আয়েশা বেগম বলে,”একদম নরম,
যাকে এক ধমক দিলে একটা জবাব দিবে না।একশো থাপ্পড়েও একটা আহ শব্দ করবে না।আমরা যা বলবো একদম চুপচাপ মেনে নিবে।আমাদের কোনো কাজে সে বাধা দিবে না।বড়দের কথার উপর সে কথা বলবে না।
বাড়ির শান্ত-শিষ্ট ভদ্র সরল সোজা মনের মেয়ে হবে।যার মনে থাকবে না কোনো ভেজাল।”
আরিয়ান বলে,”মা এমন মেয়ে তুমি খুঁজে পাবে না।আর আমার কপালে সে বউ হয় আসবে না।তোমার পছন্দের মেয়ে কে হতে হবে বোবা কানা,আর নয়তো একদম গবর গণেশ মার্কা।

তাও এমন মেয়ে পাবে কি না তাতে সন্দেহ আছে।”
আয়েশা বেগম বলে,”হুহ দেখে নিবি আমি ঠিক তোর জন্য এমন নরম তুলোর মতো মনের মেয়ে বাড়ির বউ করে আনবো।”
রাজের মা বলে,”আচ্ছা ঠিক আছে ভাবী সমস্যা নেই।আপনি প্লিজ আমার রাজের জন্য এমন একটা মেয়ে খুঁজবেন যাতে এ বাড়িতে সবাই শান্তিতে বসবাস করতে পারি।”
আয়েশা বেগম বলে,”তা তো অবশ্যই। কোনো প্রতিবাদী মেয়ে আনবো না বাড়িতে।প্রতিবাদী মেয়ে মানে সংসারে অশান্তি। সারাদিন আমাদের নাকের আগায় দড়ি দিয়ে ঘোরাতে চেষ্টা করবে।”
এমন কথা শুনে আরিয়ান সোজা নিজের ঘরে চলে যায়।
রাজের মা বলে,”ভাবী এটা কি হলো ছেলে এমন হনহন করে নিজের ঘরে চলে গেলো কেনো? ”
আয়েশা বেগম বলে,”আরে বিয়ের কথা শুনে ছেলে আমার লজ্জা পেয়েছে তাই চলে গেছে।”
রাজের মা বলে,”হয়তো এতোদিন পর দেশে এসেছে ফ্রেশ হতে উপরে চলে গেছে।”
আয়েশা বেগম বলে,”আরে বলছি না লজ্জা পেয়ে চলে গেছে।তুমি এর মাঝে এতো কথা বলো কেনো? ”
আয়াত এসে বলে,”মা ফুপি ভুল কোনো কথা বলে নাই।তুমি আর কথা বাড়িও না তাহলে দুজনের মাঝে ঝগড়া সৃষ্টি হতে পারে।”
আয়েশা বেগম বলে,”আয়াত তুমি আমার ভুল ধরছো? ‘”

আয়াত বলে, “নাহ মা তেমন কোনো কিছু না।এখন যদি আরিয়ান এসে এসব শোনে দেখো বাড়ি ছেড়ে না চলে যায়।”
আয়েশা বেগম বলে,”আচ্ছা আমি তোদের সবার জন্য খাবার রেড়ি করছি।খাবার খেতে আয় সবাই।”
আয়াত ফুপিকে বলে,”উফ মায়ের সাথে কথায় পারা যায় না।সে কেঁদে হলেও জিতবে।”
এরপরে সবাই খাওয়া _দাওয়া কমপ্লিট করে যার যার রুমে চলে যায়।
আরিয়ান নিজের রুমের বারান্দায় চাঁদের আলো তে দাঁড়িয়ে নিজেকে বলছে,”আমার জীবন থেকে পাঁচটা বছর তোমার জন্য নষ্ট হয়েগেছে অনু শুধু মাএ তোমার জন্য।
তোমার অতিরিক্ত পণ্ডিতি তোমাকে আমার থেকে দূরে নিয়ে গেছে।
আমাদের সম্পর্কটাও তো নরমাল আর পাঁচটা মানুষের মতো হতে পারতো।
কিন্তু তা হয়নি আমি তোমাকে ঘৃণা করি অনু I just hate you বলে বারান্দায় থাকা ফুলের টব ভেঙ্গে চুরমার করে রুমে এসে ঘুমের মেডিসিন খেয়ে ঘুমিয়ে যায়।”
এদিকে রাজ নিজের ঘরের বারান্দায় রেলিং এর উপরে বসে ভাবতে থাকে,”জীবনে যে ভালোবাসার পিছনে ছুটেছি সবটা মিথ্যে ছিলো।জীবনে ভালোবাসা বলে কিছু নেই।
সবটা মনের ভুল ধারণা,সবটা মিছেকান্না।
সবটা জীবনের ছলনা।

আমি সবার মন নিয়ে খেলা করতে
ভালোবাসতাম আজ আমার মন নিজে আমাকে নিয়ে খেলা করেছে।
সবার মন ভাঙ্গার মাসুল নিজের জীবনের খুশি কুরবানি করে দিতে হচ্ছে আজ তা বুঝতে পারছি।”
এদিকে পাঁচবছরে সত্যি সবটা বদলে গেছে।
কেউ আগের মতো নেই দেখা যাক সামনে কি হয়।
পরেরদিন সকালে আরিয়ান তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে রাজকে না নিয়ে অফিসের জন্য বেড়িয়ে যায়।আয়াত ও হসপিটালে চলে যায় খুব সকালে।
রাজ বলে,”বাহ মামী তোমার ছেলে কতো ভাল দেখছো এতো বছর আমার সাথে ছিলো আর আজ আমাকে না নিয়ে একা চলে গেলো? ”
আয়েশা বেগম বলে,”কি আর করার তুমি ও তাড়াতাড়ি অফিসে যাও নয়তো আরিয়ান রাগ করবে।তখন আবার বাচ্চাদের মতো বিচার নিয়ে চলে আসবে।”
রাজ বলে,”আচ্ছা মামী বিচার নিয়ে আসবো না আরিয়ানের নামে। ”
রাজ তাড়াতাড়ি খাবার খেয়ে অফিসের জন্য রেডি হয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়।
এদিকে…
(কালকে থেকে মন ভালো নেই
তারপর ও যেটুকু সম্ভব সুন্দর করে গুছিয়ে লেখার চেষ্টা করেছি।।)



চলবে….