আমার ক্রাশ বর

আমার ক্রাশ বর সিজন- 2 !! Part- 16

এদিকে রাজ নিজের কেবিনে এসে দেখে আরিয়ান ওর কেবিনে বসে কি যেনো বিড়বিড় করছে আর নিজের চুল গুলো টেনে ছিঁড়তে চেষ্টা করছে।
তা দেখে রাজ বলে,”নিজের চুল তো নিজে ছেঁড়া যায় না যতোই রাগ হোক।”
আরিয়ান রাজের দিকে তাকিয়ে বলে,”মানে কি বলতে চাইছিস তুই? ”

রাজ বলে,”তুই নিজের চুল নিয়ে টানাটানি কেনো করছিস জানতে পারি? ”
আরিয়ান বলে,”একবার আমার কেবিন থেকে ঘুরে আয় তারপর দু ভাই একসাথে চুল ছিঁড়বো আচ্ছা। ”
রাজ সোজা আরিয়ানের কেবিনে ঢুকতেই কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে লাগে।
কিন্তু কেউ একজন রাজের হাত ধরে
পড়ার হাত থেকে বাঁচিয়ে দেয়।
রাজ তাকে ধন্যবাদ দিতে সামনে তাকালে অনুকে দেখে ভুত বলে ভয়ে ধপাস করে মেঝেতে পড়ে যায়।
তা দেখে অনু খিলখিল করে হেসে ওঠে।
রাজ তো আরো ভয় পেয়ে যায়।
বেচারা ভয়ে কাপাকাপি শুরু করে দেয়।
অনু তা দেখে রাজের পাশে বসে বলে,”মিস্টার রাজ আমি পাঁচ বছর আগে মারা যায় নি।আপনারা তো আমার কবরটা খুব সুন্দর ভাবে তৈরি করে রাখছিলেন।
কিন্তু জানেন তো ভাগ্য বলে একটা কথা আছে।আপনাদের পাপের শাস্তি না দিয়ে কি ভাবে মরে যাই বলেন।
অবশ্য সেদিন মরে গেলে ভালো হতো। আপনারা তো আমাকে সম্মানের সাথে ফিরে আসতে দেন নাই।অপমানিত হয়ে সেদিন চিটাগাং ছেড়েছি আমি।
নিজের মৃত্যু খুব কাছে থেকে দেখেছি।
এখন পাঁচ বছর পরে যখন এসেছি আপনাদের জীবনে ঘূর্ণিঝড় তো উঠবে।”
রাজ বলে,”দেখো অনু তুমি ভুল বুঝতেছো।
আমি তোমার সাথে সেদিন এমন কিছু করি নাই।আমি তো ঢাকাতে ছিলাম সেদিন।
তাহলে কি ভাবে সম্ভব বলো? ”

অনু বলে,”ঘুড়ি যতোই আকাশে উড়ুক না কেনো লাটাই কিন্তু একজনের হাতে থাকে।
ঘুড়ি দূর আকাশে উড়ে।
কেউ জানেনা তার লাটাই কার হাতে থাকে।”
রাজ বলে,”কি বলতে চাইছো তুমি? ”
অনু বলে,”আমার কেবিন পরিষ্কার করার কাজ শেষ।এবার স্যার কে ডেকে আনি।”
রাজ বলে,”অনু শোনো আমার কথা।
আমি এর আগে তোমার আর রিদির সাথে যতো খারাপ করেছি তার জন্য দুঃখিত। ”
অনু রাজের এসব কথা না শুনে আরিয়ান কে খুঁজে তার সামনে গিয়ে বলে,”স্যার আপনার কেবিন রেডি সেখানে গিয়ে কাজ করতে পারেন।”
আরিয়ান হনহন করে নিজের কেবিনের দিকে এগিয়ে যাবার সময় থেমে বলে,”আমার জন্য এক কাপ কফি নিয়ে আসবে পাঁচ মিনিটের মধ্যে।”
অনু আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি কেটে চলে যায়।
আরিয়ান ভাগ্যিস দেখে নাই দেখলে তো অনুর কপালে দুঃখ ছিলো।
আরিয়ান নিজের কেবিনে গিয়ে দেখে রাজ মেঝেতে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।
আরিয়ান বলে,”কি দোস্তো মাথায় হাত কেনো? কে করলো তোমার সর্বনাশ? ”
রাজ আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,”পাঁচ বছর আগে অনু মরে নাই সে কথা তুই জানতিস? ”
অারিয়ান বলে,”কেনো তা জেনে তোর কি লাভ? ”
রাজ বলে,”হ্যাঁ আর না একটা বল।”
আরিয়ান বলে,”হ্যাঁ জানতাম। তাতে কি হয়েছে?”
রাজ বলে,”শালা আমি জানতাম না তাই ওকে দেখে অনুর ভুত ভেবে ভয় পেয়েছি। ”
আরিয়ান বলে,”তোর মতো ফাজিল ভুতে ভয় করে বলে হাসি দেয়।”
রাজ বলে,”অনু তো আর অনু নেই দোস্তো! ”
আরিয়ান বলে,”তাহলে অনু কি রাজ হয়ে গেছে?”
রাজ বলে, “শয়তানি রাখ বলছি আরিয়ান।
ভাল হবে না কিন্তু বলছি। ”

এমন সময় অনু আরিয়ানের জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে চলে আসে।
রাজ কে ফ্লোরে দেখে বলে,”রাজ স্যার কি অফিস পরিষ্কার করার চাকুরী পেয়েছেন? ”
রাজ বলে, ” মানে? ”
অনু বলে,”সেই তখন থেকে এই মেঝেতে বসে আছেন তো তাই ভাবছি একটা কাপড় এনে দেয় মেঝেটা ভালো করে মুঝে দেন।”
আরিয়ান বলে,”এই বেয়াদব মেয়ে অফিসের বসের সাথে কি ভাবে কথা বলতে হয় তা শেখো নাই বুঝি।”
অনু বলে,” কেউ যদি নিজের সম্মান রক্ষা করতে না পারে তাহলে কেউ তাকে সম্মান দেয় না।”
অনু আর কথা না বাড়িয়ে আরিয়ানের টেবিলের উপর কফির মগটা রেখে চুপচাপ সাইডে দাঁড়িয়ে থাকে।
আরিয়ান কফির মগে এক চুমুক দিতেই মুখ থেকে কফিটা কুলি করে অনুর গায়ে ফেলে দেয়।
অনু খেঁকিয়ে উঠে বলে,”বজ্জাত বস মনে হয় ল্যাট্রিন আমেরিকার বাসিন্দা।
বেয়াদব পোলা কেউ মুখের নোংরা অন্যের গায়ে এভাবে ছুঁড়ে ফেলে।”
আরিয়ান বলে,”বজ্জাত মেয়ে এটা কফি না কি নিমের জুস কোনটা?
নিমের জুস ও এর থেকে স্বাদের হয়।”
অনু বলে,”দেখুন মিস্টার বস আপনি এক মগ কফি চেয়েছেন।বলেন নাই তো যে অনু আমি সাদা কফি খাবো, কি কালা কফি খাবো,মিষ্টি কি তেতো খাবো।”
আরিয়ান বলে,”ব্লাক কফি এতো তেতো হয় আগে জানা ছিলো না।”
অনু বলে,”এতো তেতো হয়না ঠিকি বলছেন। কিন্তু আমার মুখে তো মধু নাই তাই সেই জন্য আমি কফি গুঁড়ো বেশী করে দিয়ে তিতা বিষ বানিয়ে আনছি যাতে আর কোনোদিন কফি খেতে না চান আমার কাছে।”
আরিয়ান অনুর সামনে একটা ফাইল দিয়ে বলে,”এটা ভালো করে পড়ো!”
অনু ফাইলটা হাতে নিয়ে ভালো করে পড়ার পড়ে অারিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,”বলেন স্যার কি বলবেন।”
আরিয়ান বলে,”এখানে স্পষ্ট ভাবে লেখা আছে।পিএ যদি বসের সাথে খারাপ ব্যবহার করে তাহলে বস তাকে কোম্পানি থেকে বহির করে দিতে পারে।সাথে কর্মচারী কে মোটা অঙ্কের টাকা পরিশোধ করতে হবে অফিস কে।”
অনু হুহ বলে সেখান থেকে চলে যায় কফির মগটা নিয়ে।
রাজ এসে আরিয়ান কে বলে,”বাহ ভাই কি ব্যাটিং করলি এক বলে বাউন্ডারির বাহিরে।”
আরিয়ান বলে,”চুক্তির ফাইলে আমাদের বাঁশের ব্যবস্থা করা আছে খোকা। ”
রাজ বলে, “মানে? ”

আরিয়ান বলে,”কিছু না নিজের কাজে যা।”
এরপর অনু আরিয়ানের জন্য ভালো করে কফি বানিয়ে এনে দেয়।
তারপর আর কোনো ঝামেলা না করে দুজন শান্তি মতো কাজ করে।
তারা যে যার বাড়ির উদ্দেশ্যে চলে যায়।
অনু বাড়িতে ঢুকতেই মিষ্টি এসে ফুপি বলে জড়িয়ে ধরে।
অনু মিষ্টি কে কোলে নিয়ে ওরে আমার আম্মাজান।
এমন সময় অনুর মা এসে বলে,”তোর মা এখানে দাঁড়িয়ে আছে তাকে তো ভালোবেসে আম্মাজান বলে ডাক দিস না। মিষ্টিকে এতো আম্মাজান আম্মাজান করিস কেনো সারাদিন? ”
অনু মিষ্টিকে বলে,”মিষ্টি মনি জানো এখানে তোমার আমার ভালোবাসা দেখে অন্য কেউ জ্বলে ছাই হয়ে যাচ্ছে। ”
মিষ্টি বলে,”ফুপি ছাই হলে ভালো হবে।আমি শুনেছি ছাই দিয়ে থালাবাসন মাজলে চকচক করে।দাদি ছাই হলে অনেক ছাই পাবো।
তা দিয়ে অনেক দিন থালাবাসন ধৌত করা যাবে।”
অনু বলে,”ওরে আমার দুষ্টু মেয়ে। এতো পাকনা কি করে হয়েছিস? ”
অনুর মা বলে,”আমার মেয়ে যেমন শয়তান নাতনি টাও ঠিক তেমন নাতনি টাও হয়েছে আমার।”
রিমা এসে সোজা মিষ্টি কে অনুর কোল থেকে নামিয়া একটা থাপ্পড় দিয়ে দেয়।
অনু বলে,”ভাবী আপনি মিষ্টি কে মারছেন কেনো?”
রিমা বলে,”আমার মেয়েটা তোমার সাথে থেকে খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আমি চাইনা সে তোমার মতো হোক কোনোদিক দিয়ে তাই। ”
অনু আর কথা না বাড়িয়ে সোজা নিজের রুমে চলে যায়।
অনুর মা বলে,”বৌমা তুমি মিষ্টি কে মেরে কিন্তু কাজটা একদম ভালো করো নাই।”
রিমা বলে,”কেনো মা? আমি চাইনা আমার মেয়েটা অনুর সাথে থেকে ওর মতো হয়ে যাক।”
অনুর মা বলে,”আমার মেয়ে খারাপ না কি যে ওর মতো হলে সমস্যা? ”
রিমা বলে,”আম্মা পাঁচ বছর আগে কি কাহিনী করছে অনু তা ও নিজে জানে বলে মিষ্টি কে নিয়ে চলে যায়।”
অনুর মা বলে,”এদের পাঁচ বছর আগে কি সমস্যা হয়েছিলো তা এরাই ভালো জানে।”
মিষ্টি মায়ের চোখে ফাঁকি দিয়ে অনুর রুমে চলে আসে।
অনু মিষ্টিকে দেখে নিজের চোখের পানি মুছে একটু হাসি দিয়ে মিষ্টিকে কোলে নিয়ে বলে,”জানো মিষ্টি খাবারে যদি লবন বেশী হয়ে যায় তাহলে সে মিষ্টি খাওয়া যায় নাআবার মিষ্টি যদি অতিরিক্ত বেশি হয়ে যায় তা মুখে যাবার পর গালে থাপ্পড় দেয়।”
মিষ্টি বলে,”ফুপি আমি কিছু বুঝি নাই।”

অনু বলে,”থাক তোমার এতো বুঝে কাজ নাই।নিজের রুমে যাও মা দেখলে বকা দিবে।”
মিষ্টি বলে,”আমার মা এতো দজ্জাল তা বলে শেষ করা যাবর না ফুপি।”
অনু বলে,”মিষ্টি মাকে নিয়ে এমন কথা কেউ বলে না।”
মিষ্টি বলে,”মা হয়েছে সেই হাঁসের মতো সারাদিন প্যাঁকপ্যাঁক করে।”
অনু বলে,”মিষ্টি এমন কথা আর কখনো বলবা না।তাহলে আমি তোমার সাথে কথা বলবো না।”
এমন সময়…
(সিজন দুই একটু আলাদা টুইস্টের হবে তা আগেই বলেছি।এখন পাঁচ বছরের গ্যাপ আছে।সেই কাহিনী সময় হলে জানতে পারবেন।ততোদিন সিজন ১এর মতো অনুকে ভালবাসা দিবেন সবাই আশা করছি)




চলবে…..