অচেনা আমি ! পর্বঃ- ৩
লেখাঃ শারমিন আক্তার
তনয়াঃ ভাবছি কথা গুলো শুনে তুমি না আবার আমায় ভুল বুঝে উত্তেজিত হয়ে পরো।
আয়াতঃ তনয়া তোমাকে কি আমি ভুল বুঝতে পারি? বলো কি হয়েছে? আই বিলিভ ইউ।
তনয়া তারপর ফোনের মেসেসটার কথা আয়াতকে খুলে বলে। আয়াত সেটা শুনে হা হয়ে তাকিয়ে থাকে। তারপর বলে—-
ও মাই গড! মানুষ এতটা সাইকো কিভাবে হয়? কাউকে না দেখে না চিনে কিভাবে এত ভালোবাসতে পারে? আর তার কাছে নিজের অস্তিত্ব প্রমান করার জন্য কিভাবে এরকম মানুষের জীবন নিয়ে খেলতে পারে? আমার তো মনে হয় লোকটা মেন্টালি সিক! তারপর কোন মেসেস এসেছে?
তনয়াঃ তোমাকে নিয়ে এতটা টেনশনে ছিলাম যে, ফোনের দিকে কোন খেয়ালই ছিলো না। ফোন ব্যাগে পরে আছে!
আয়াতঃ কৈই দেখি!
তনয়া ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে আয়াতের হাতে দিলো। তারপর বললো
তনয়াঃ আয়াত——
আয়াতঃ হুমম।
তনয়াঃ তুমি আবার আমায় ভুল বুঝবে নাতো?
আয়াতঃ শোন এখানে এসে কাছে বসো তারপর বলছি। তনয়া আয়াতের কাছে বসতেই আয়াত তনয়ার গালে হাত দিয়ে বলে তনয়া আমাদের সম্পর্কটা এতটা সস্তা না যে, সামান্য একটা মেসেস এর কারনে ভুল বুঝাবুঝি হবে। আমাদের সম্পর্কটা সয়ং আল্লাহ্ তৈরী করে দিয়েছেন এ সম্পর্ক সে ছাড়া কেউ ভাঙতে পারবে না। তাই এসব ফালতু ছোট খাটো বিষয় নিয়ে নিজেদের ভিতর ভুল বুঝাবুঝি করার মত লোক না তো তুমি আর না আমি। তনয়া আমি এ কথা গুলো আমাদের ভালোবাসায় বিশ্বাস করে যতটা না বলছি তার থেকে বেশি আল্লাহর উপর বিশ্বাস করে বলছি। কথায় আছে যারা আল্লাহর উপর অটুট বিশ্বাস রাখে আল্লাহ তাদের সাথে সবসময় থাকে। হ্যা হয়তো মাঝে মাঝে তাদের বিপদ-আপদ, রোগ-শোক, দিয়ে তাদের পরীক্ষা করে কিন্তু তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেননা। তিনি তার বান্দাদের এসব দিয়ে তাদের পরীক্ষা করে, তাদের ধৈর্য্যের পরীক্ষা নেন। তাই শুধু শুধু টেনশন করো নাতো। আমাদের সম্পর্ক যখন আল্লাহ্ নিজে হাতে বানিয়েছেন তেমনি সেটার মধ্যে ভালোবাসার মাধুর্য্যতাও তিনিই বজায় রাখবেন। সো চিন্তা না করে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করো।
তনয়াঃ (এতক্ষন মনোযোগ দিয়ে আয়াতের কথা শুনছিলো) আয়াত তুমি কি সুন্দর করে কথা বলো!
আয়াতঃ কিন্তু তোমার থেকে বেশি না। আর এখন একটু জড়িয়ে ধরো তো! কাল থেকে একবারও জড়িয়ে ধরোনি।
তনয়াঃ পাগল।
তারপর আয়াতকে জড়িয়ে ধরতেই আয়াত আহ বলে উঠলো।
তনয়াঃ স্যরি স্যরি। মাফ করে দাও। খেয়াল ছিলো না যে, তোমার ওখানে ব্যাথা।
আয়াতঃ ইট’স ওকে। ওয়েট মেসেসটা দেখি।
আয়াত তনয়ার ফোনটা ওপেন করে মেসেস দেখতে গিয়ে দেখলো ছেলেটা আরো দুটো মেসেস করেছে।
প্রথম মেসেস
তনয়া
আই এ্যাম রিয়েলি রিয়েলি স্যরি। আয়াত যে, এতটা আঘাত পাবে সেটা কল্পনা করিনি। আমিতো জাস্ট সামান্য আঘাত দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু আমার সামান্য ভুলে ও অনেকটা আঘাত পেয়েছে। যাই হোক তুমি আয়াতের জন্য খুব কষ্ট পাচ্ছো দেখে আমারও খুব কষ্ট হচ্ছে। নাহ্ আর আয়াতকে পারতে সাধ্যে আঘাত করবো না। কারন আয়াত কষ্ট পেলে তুমি তিনগুন বেশি কষ্ট পাও।
২য় মেসেস
তনয়া
তুমি কি হ্যা? সবসময় চোখ মুখ এমন ঢেকে রাখো কেন? সন্ধ্যায় হসপিটালে আসলে দুজন মেয়ে মিলে, দুজনারই নাক মুখ ঢাকা আবার চশমা পরা। বুঝতেই পারছিলাম না তুমি কোনটা? তারপর যখন আই সি ইউ এর সামনে দপ করে বসে পরলে তখন আন্দাজ করলাম ওটা তুমি। কিন্তু সবসময় বোরকা পরে এমন মুখ ঢেকে রাখো কেন? মানুষ তোমায় দেখলে কি এমন হবে? আমি কাল থেকে কতবার তোমায় দেখার চেষ্টা করছি কিন্তু তোমার চোখ ছাড়া কিছু দেখতে পারলাম না, তাও কখন, যখন চোখের জল মোছার জন্য চশমা খুললা। তোমার চোখ জোড়া কি সুন্দর, আমি কনফ্রম কবি সাহিত্যিকরা তোমার চোখ দেখলে অনায়াসে ওখানে বসে দু চারটা কবিতা বানিয়ে ফেলতো। আচ্ছা দুদিন ব্রেক দিলাম তোমাকে, আয়াতের খেয়াল রেখো। দুদিন পর আবার নক দিবো। খুব শিগ্রই আমাদের দেখা হচ্ছে। মেবি দু এক দিনে। কিন্তু আফসুস তোমার সামনে থাকলেও তুমি আমায় চিনতে পারবে না। ভালো থেকো কেমন?
#অচেনা আমি
আয়াত মেসেসটা পড়ে বললো আমি কনফ্রম এ কোন পাগলা গারদ থেকে পালিয়ে যাওয়া বদ্ধ পাগল। তনয়া তুমি টেনসন করো না, আমার বন্ধু জয় এই থানার এসিপি, নতুন জয়েন করছে কিছুদিন আগে। ওকে ফোন করে এখানে আসতে বলবো বাকিটা ওই দেখবে।
তনয়াঃ দেখো যা ভালো বোঝ করো । তবে প্লিজ যা করার তারাতারি করো আমি এ টেনশন আর নিতে পারছি না।
আয়াতঃ তোমায় টেনশন নিতে কে বলছে? তুমি টেনশনের ভার আমায় দাও আর আমায় ভালোবাসার দায়িত্ব নাও।
তনয়াঃ যাহ্ (লজ্জা পেয়ে)
আয়াতঃ আরে লজ্জা পাবার কি আছে? ঠিকই তো বললাম! আর তুমি কেমন বৌ বলো তো?
তনয়াঃ মানে?
আয়াতঃ আরে তোমার স্বামী অসুস্থ কোথায় তাকে একটু সেবা যত্ন করবে, তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিবে, দু একটা কিসিমিসি দিবা তা না করে পরস্ত্রীর মত দূরে বসে আছো। পঁচা বৌ!
তনয়াঃ আয়াত গত তিন বছরে তোমার সব বাজে অভ্যাস বদলাতে পারলেও তোমার এই ড্রামাবাজি বন্ধ বন্ধ করতে পারি নি। তুমি ডাক্তার না হয়ে অভিনেতা হলে ভালো হতো। ভিষন নাম কামাতে, দেখতেও তো কোন হিরোর থেকে বেশি ছাড়া কম না, তোমার লম্বা সিল্কি চুল, গভীর কালো চোখ, জোড়া ভ্রু, দেখে যে কোন মেয়ে ক্রাস খেয়ে যাবে, তাই অভিনেতা হলে ভালো হতো।
আয়াতঃ আহা! নিজের বৌ এর মুখে নিজের প্রশংসা শুনতে কতই না ভালো লাগে। কিন্তু গায়ে তো এখন বড় বড় দুটো পোড়া দাগ থেকে যাবে। মন খারাপ করে।
তনয়াঃ তাতে কি? তুমি কি খালি গায়ে মেয়েদের মাসল’স দেখাতে যাবে?
আয়াতঃ গেলে দোষের কি? বডি তো খারাপ না!
তনয়াঃ খুন করে ফেলবো আয়াত, তোমার শরীর আমি ছাড়া অন্য কোন মেয়ে দেখার আগে সে মেয়ের চোখ আমি অন্ধ করে দিবো। আর তোমার লুচ্চামি করার শখ হইছে। আমার বান্ধবীরা ঠিক বলে ডাক্তার ছেলেদের চরিত্রের দোষ থাকে।
আয়াতঃ নাাাাাাাা। হে খোদা তুমি আমায় এ কেমন বিপদে ফেললে? আমার বৌ আমার চরিত্র নিয়ে সন্দেহ করে? এ মুখ আমি কাকে দেখাবো?
তনয়াঃ চুপ করো! নাটক বন্ধ করে একটু ঘুমাও তো। সারাদিন বকবক করতেই থাকে, নিজের মুখ, ঠোট, আর কন্ঠনালীকে একটু বিশ্রাম দাও।
আয়াতঃ ঠোঁটের বিশ্রাম তুমি চাইলে দিতে পারো।
তনয়াঃ ঠোঁট কেটে দিবো। চুপচাপ ঘুমাও।
আয়াতঃ হুহহ। আনরোমান্টিক বৌ।
তনয়াঃ হাসপাতালের বেডে শুয়ে ওনার রোমান্স করতে ইচ্ছা করে। ও ইচ্ছা তুমি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত চেপে রাখো। তুমি না ডাক্তার? কি জানো না বোঝো না , নাকি?
আয়াতঃ ভেংচি কেটে। জানি জানি।
দুপুরের পর নার্স আসলো আয়াতের ড্রেসিং করার জন্য।
নার্সঃ ম্যাডাম আপনি কি বাইরে যাবেন! স্যারের ড্রেসিং করতে হবে!
তনয়াঃ কেন বাইরে কেন যাবো? আমি ওর স্ত্রী , আমি এখানে থাকলে কোন প্রবলেম হবে না, বরং ভালো হবে। আর তার থেকে বেশি ভালো হবে যদি আপনি আমায় দেখিয়ে দেন কিভাবে ড্রেসিং করতে হয়? তাহলে আপনাকে কষ্ট করে করতে হবে না, আমি করে দিবো।
নার্সঃ কিন্তু ম্যাম আপনি কি পারবেন?
তনয়াঃ কেন পারবো না? আপনি বলে দিন কিভাবে কি করবো? আর তাছাড়া আয়াত তো আছেই, কোন ভুল হলে আয়াত দেখিয়ে দিবে।
তনয়ার কথা শুনে আয়াত মিটমিট করে হাসছে।
নার্সঃ কিন্তু ম্যাম!
তনয়াঃ কোন কিন্তু না!
নার্সঃ ঠিক আছে ম্যাম আমি প্রথম বার করে আপনাকে দেখিয়ে দিচ্ছি, আপনি নাহয় আমায় এখন হেল্প করলেন। পরের বার থেকে আপনি করলেন।
তনয়া কিছু একটা ভেবে বললো ঠিক আছে।
নার্সঃ স্যার আপনার শার্টটা খুলে ফেলুন, ওয়েট আমি হেল্প করছি। তনয়া চোখ বড় বড় করে আয়াতের দিকে তাকালো। আয়াত ভয় পেয়ে বললো।
আয়াতঃ তনয়া তুমি খুলে দাও।
তনয়া আয়াতকে শার্ট খুলতে আর নার্সকে ড্রেসিং করতে সাহায্য করলো। নার্স ড্রেসিং করে যাবার পর তনয়া আয়াতের কাছে এসে চোখ বড় বড় করে বললো।
তনয়াঃ মেয়েরা শার্ট খুলতে বললেই নাচতে নাচতে শার্ট খুলে ফেলা লাগবে? ঐ নার্সের নজড় ভালো না, তোমার দিকে কেমন চুন্নির মত তাকিয়ে ছিলো, কেমন করে তোমার শরীরে হাত দিচ্ছিলো। ঐ নার্সকে আর যেনো তোমার চারপাশে না দেখি।
আয়াতঃ আরে মেয়েটা যথেষ্ট ভালো।
তনয়াঃ তুমি চুপ করো।
আয়াতঃ একটা কথা বলো, তোমরা মেয়েরা এমন কেন? নিজের স্বামীর দিকে কোন মেয়ে ভালো নজড় দিলেও তোমাদের এমন হিংসা হয় কেন?
তনয়াঃ কারন স্বামী একান্তই স্ত্রীর সম্পদ। সম্পদ বোঝো যা বিক্রি বা ভাগ করা সম্ভব না। হিসাব বিজ্ঞানতো পড়োনি তাই সম্পদ আর সম্পত্তির পার্থক্য বোঝ না।
আয়াতঃ দুঃখিতো ম্যাডাম, ভুল হয়ে গেছে। পরে নাহয় সময় করে আপনার সব হিসাবের খাতা খুলে দেখবো! (চোখ মেরে)
তনয়াঃ তুমি ইদানিং খুব বেসরম হয়ে যাচ্ছো।
আয়াতঃ বা রে নিজের বৌয়ের কাছে বুঝি লজ্জা রাখতে হয়। ওহ ভালো কথা আজ সন্ধ্যার পর আমার সেই পুলিশ বন্ধু জয় আসবে।
তনয়াঃ ওহ! ভালো। কিছুক্ষন পর বাড়ির সবাইও তোমায় দেখতে আসবে। বাবাতো দুপুরে আসছিলো তুমি ঘুমিয়ে ছিলা, তাই সে ডাকতে নিষেধ করলো। কিছুক্ষন থেকে চলে গেছে।
আয়াতঃ ওহ।
তনয়াঃ আয়াত!
আয়াতঃ হুমমমম
তনয়াঃ আই লাভ ইউ।
আয়াত তনয়াকে জড়িয়ে ধরে লাভ ইউ টু আমার ময়নাটা।
চলবে——–
ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।
#বিঃদ্রঃ আপনারা দয়াকরে নেক্সট নেক্সট না লিখে গঠন মূলক কমেন্ট করবেন। কারন আপনাদের গঠনমূলক কমেন্টে আমাদের লেখার আগ্রহ আরো বেড়ে যায়। একবার চিন্তা করুন আমরা ঘন্টার পর ঘন্টা বসে হাজার হাজার শব্দ লিখি আপনাদের আনন্দ দানের জন্য কিন্তু আপনারা গল্পটা পড়ে মাত্র দুুমিনিট সময় নিয়ে দু লাইনের একটা কমেন্ট করতে পারেন না? এটা কেমন কথা? অনেকে তো এতোটা অলস যে Nice এর বদলে শুধু N বা Nc দিয়ে রাখে। আপনারা আমাদের লেখা পড়েন আনন্দ পান তার বিনিময়ে আমরা লেখকরা শুধু এতটুকু চাই আপনারা ভালো গঠনমূলক কিছু কমেন্ট করেন, যাতে আমাদের লেখার আগ্রহ বাড়ে। আমার কথায় কেউ মনে কষ্ট নিবেন না। ভালো থাকবেন সবাই। আল্লাহ্ হাফেজ।